আট বছর আগে শিরিনা আক্তারের বিয়ে হয় কেন্দুয়ার ফতেপুর গ্রামের সোহেল রানার সঙ্গে। সংসারে আছে দুই মেয়ে। দাম্পত্য কলহে বিচ্ছেদ হয় তাদের। সোহেল অন্যত্র বিয়ে করেন। শিরিনার অভিযোগ, সাত-আট দিন আগে তাঁর সাবেক স্বামী ফতেপুর এসে এক বছরের শিশুসন্তান নিয়ে পালিয়ে গেছেন।

শিরিনা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারেন, সোহেল শিশুটিকে অন্যত্র ‘বিক্রি করেছেন’। উপায় না পেয়ে কয়েকজনের পরামর্শে ৭ মে শিশু সহায়তা সুরক্ষার ১০৯৮ নম্বরে ফোন করেন। এরপর কেন্দুয়ার ইউএনও এবং সমাজসেবা কর্মকর্তাকে জানালে তারা উদ্যোগী হন। তাদের প্রচেষ্টায় শিশুটি ফিরেছে মায়ের কোলে।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ইউনুস রহমান জানান, শিরিনা ১০৯৮ নম্বরে কল দিলে তিনি সমাজসেবা বিভাগের শিশু সুরক্ষা সমাজকর্মী সুব্রত সরকারকে নিয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে চলে যান কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে। সেখানে সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদের পর শিশুটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।

সমাজসেবা কর্মকর্তা বলেন, শিরিনা তাঁর সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে সন্তানকে অন্যত্র বিক্রি করার অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে এক বছরের খাদিজাকে উদ্ধার করে ৮ মে মায়ের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। যদিও সোহেল সন্তান বিক্রির কথা অস্বীকার করেছেন।

সোহেল রানা ইউনুস রহমানকে বলেন, ‘আমার সন্তান আমি নিয়ে এসেছি। বিক্রি করব কেন?’ এ বিষয়ে কথা বলতে সোহেল রানার সঙ্গে মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

সুব্রত সরকার সোমবার শিরিনা ও তাঁর সন্তান খাদিজাকে সহায়তা করতে সমাজসেবা কর্মকর্তার কাছে মৌখিক আবেদন জানান। তিনি বলেন, খাদিজা সুস্থ এবং তার মায়ের কাছেই আছে। তাকে পুনর্বাসনের জন্য সহায়তা করা হলে সুন্দর জীবন গড়ে উঠবে। তিনি শিরিনাকে একটি আবেদন দেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। 

শিরিনা আক্তার বলেন, ‘আমার দুধের সন্তানকে ফিরে পেয়েছি। আমি সরকারের কাছে দুই মেয়ের ভরণ-পোষণের জন্য সহযোগিতা চাই।’ 

এ বিষয়ে কেন্দুয়া থানার পেমই তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, সমাজসেবা কর্মকর্তা সেদিন তাদের সঙ্গে নিয়েই এক বছরের শিশু সন্তানটি তার মায়ের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছেন। সন্তান পেয়ে মা খুশি। তাঁর কোনো অভিযোগ নেই।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ময়মনস হ কর মকর ত

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় যৌন নির্যাতনে অসুস্থ ছেলেশিশুটি এখন হাসপাতালে, ১ জন গ্রেপ্তার

মাস তিনেক আগে ১২ বছরের ছেলেশিশুটি ঢাকায় আসে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে ফুফাতো ভাইয়ের বাসায় ওঠে। জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনের ফুটপাতে ফাস্ট ফুডের দোকান আছে ফুফাতো ভাইয়ের। সেখানে সে টুকটাক কাজ শুরু করে। ২০ দিন ধরে শিশুটিকে পাশের দোকানের দুই কর্মী যৌন নির্যাতন করছেন বলে অভিযোগ ওঠে। সবশেষ গত শনিবার যৌন নির্যাতন ও মারধরে অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশুটি। আজ সোমবার শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিশুটিকে নির্যাতনের ঘটনায় এক দোকানকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে শেরেবাংলা নগর থানা-পুলিশ।

শিশুটি নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনায় তার ফুফাতো ভাই প্রথমে সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত শিশুসহায়তা হেল্পলাইন নম্বরে (১০৯৮) কল করেন। শিশুটির পরিবার, পুলিশ ও ১০৯৮ নম্বরের তথ্য অনুসারে, শিশুটির গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সুবর্ণচরে। শিশুটি টানা নির্যাতনের শিকার হলেও শনিবার অসুস্থ হয়ে পড়ার পরই তা জানাজানি হয়। পরে জানা যায়, পাশের ডিম ও ডাবের দোকানের দুই কর্মী হাসিবুর রহমান ও রিয়াজ নিয়মিত শিশুটিকে যৌন নির্যাতন করতেন।

শিশুর ফুফাতো ভাই প্রথম আলোকে বলেন, তিনি শনিবার রাতে দোকানের কেনাকাটা করতে বাজারে গিয়েছিলেন। তাঁর দোকানেও দুজন কর্মী ছিলেন। তাঁদের কাছ থেকে জানতে পারেন, তাঁর ভাইকে আঘাত করা হয়েছে চোখে। চোখ লাল হয়ে গেছে। আঘাত করার কারণ জানতে চাইলে শিশুটি জানায়, ২০-২২ দিন ধরে হাসিবুর ও রিয়াজ হাসপাতালের পেছনে বাগানে নিয়ে তাকে যৌন নির্যাতন করেন। সে বাধা দিলেও শোনেননি।

শিশুটির ভাই বলেন, নির্যাতনে তার ভাইয়ের পুরুষাঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শনিবার ওই দুজন আবার তাকে বাগানে নিয়ে যেতে চাইলে সে যেতে রাজি হয়নি। এরপরই তাকে আঘাত করেন ওই দুজন। আঘাতে তার ভাইয়ের চোখ লাল হয়ে যায়। আজ তার ভাই আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি চিকিৎসক দেখান এবং শেরেবাংলা নগর থানায় গিয়ে মামলা করেন। পরে বিকেলে তার ভাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মেহেদি হাসান প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটিকে যৌন নির্যাতন করার ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় হাসিবুর রহমান নামের একজনকে আসামি করে মামলা করা হয়। আজ দুপুরে মামলার পর আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত থেকে আসামিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০–এর ১০ ধারায় (যৌনপীড়ন ইত্যাদির দণ্ড) বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি যৌনকামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তাঁর শরীরের যেকোনো অঙ্গ বা কোনো বস্তু দিয়ে কোনো নারী বা শিশুর যৌনাঙ্গ বা অন্য কোনো অঙ্গ স্পর্শ করেন বা কোনো নারীর শ্লীলতাহানি করেন, তাহলে সেটা হবে যৌনপীড়ন। এই অপরাধে ওই ব্যক্তি সর্বনিম্ন ৩ বছর ও সর্বোচ্চ ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।

চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮–এর সমন্বয়ক চৌধুরী মোহাম্মদ মোহাইমেন প্রথম আলোকে বলেন, শুধু মেয়েশিশু নয়, ছেলেশিশুরাও যৌন নির্যাতনের ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই শিশুরা দীর্ঘমেয়াদি ট্রমার মধ্যে পড়ে। অনেক সময় যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুরা ভবিষ্যতে মা–বাবা হওয়ার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তাই পরিবারগুলোকে ছেলেশিশুদের দিকেও সমান নজর রাখতে হবে। তারা কোনো ধরনের নির্যাতনের কথা বললে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। তিনি জানান, এই শিশু নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনায় ১০৯৮ নম্বরে সহায়তা জানিয়ে কল দেন শিশুটির ভাই। তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন এবং এ কাজে সহায়তা দিতে একজন সমাজকর্মীকে নিয়োজিত করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকায় যৌন নির্যাতনে অসুস্থ ছেলেশিশুটি এখন হাসপাতালে, ১ জন গ্রেপ্তার