সময়ের কঠিন কষাঘাত সয়ে এখনো টিকে রয়েছে ঝালকাঠির নলছিটিতে ‘এক রাতে তৈরি পরীর মসজিদ’ খ্যাত একটি প্রাচীন মসজিদ।

তবে এর নির্মাণ শৈলি দেখে ধারণা করা হয় এটি আসলে মুঘল আমলে নির্মিত। নলছিটির মোল্লারহাট ইউনিয়নের হদুয়া সড়কের পাশে দক্ষিণ কামদেবপুর গ্রামে অবস্থিত মসজিদের বর্তমানে নাম দেওয়া হয়েছে ‘দক্ষিণ কামদেবপুর ব্যাপারী বাড়ী বায়তুল আমান জামে মসজিদ’। 

এক গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদের চারপাশে রয়েছে চারটি মিনার। ১২ ফুট লম্বা ও ১২ ফুট প্রশস্ত মসজিদ নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে চুন ও সুরকি। দেয়ালগুলো নির্মাণ করা হয়েছে খুবই মজবুত করে। প্রতিটি দেয়াল ২ থেকে ৩ ফুট প্রশস্ত। 

এক সময় মসজিদের ভেতরের দেয়ালে ছিল বিভিন্ন ধরনের কারুকার্য। তবে অপরিচর্যায় কারুকার্যগুলো এখন আর স্পষ্ট দেখা যায় না। গম্বুজসহ এর উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট। উপরের পলেস্তারা খসে পড়লেও মসজিদের মূল দেয়ালগুলো এখনো অক্ষত আছে। ভিতরে একটি মিম্বর রয়েছে, আর দুই পাশে দুটি জানালা। আয়তন অনুযায়ী এখানে ৮ থেকে ১০ জন মুসল্লী একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন। 

স্থানীয় বাসিন্দা রশিদ ব্যাপারী (৭০) ও লতিফ ব্যাপারী (৬০) বলেন, “বাড়ির সামনে অবস্থিত মসজিদটি আমরা ছোটবেলা থেকে ‘পরীর মসজিদ’ নামে চিনতাম। আমাদের বাবা-চাচাদের মতে একটি এক রাতে পরীরা নির্মাণ করেছেন। এরকম শুনে আসছি। তারাও এরকম শুনেই আমাদের বলেছেন। পরে মসজিদ বড় করার জন্য এর দেয়াল ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু এর পুরুত্ব আর মুসল্লীদের বাধার কারণে ভাঙ্গা সম্ভব হয়নি। তাই এর সাথেই নতুন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।”

তারা আরো বলেন, “বর্তমানে নতুন স্থাপিত মসজিদেই নামাজ আদায় করা হয়। পুরনো ‘পরীর মসজিদ’টি যেভাবে ছিল সেভাবেই রাখা হয়েছে। তবে এখন ভিতরে ময়লা আবর্জনায় ভরে গেছে। পলেস্তারাও খসে পড়েছে, উপরের দিকে অনেক পরগাছা জন্মেছে। আমাদের দাবি মসজিদটি যেনো সরকারীভাবে সংরক্ষণ করা হয়।”

মোল্লারহাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান সেন্টু জানান, এই মসজিদটি অনেক পুরনো। কেউ এর নির্মাণ সাল জানে না। তবে ধারণা হয় মুঘল আমলে নির্মাণ করা হয়েছিল। আমরা একবার চেষ্টা করেছিলাম প্রত্নতত্ববিভাগের সাথে যোগাযোগ করে এটাকে সরকারীভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার কিন্তু আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। এই মসজিদটি শত শত বছরের পুরনো ইতিহাসের অংশ, আমাদের দাবি এটাকে যেনো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়।”

মসজিদের ইমাম কবির আহমেদ জানান, মসজিদটি বেশ কয়েকবার স্থানীয়ভাবে সংস্কার করা হয়েছে। তবে আয়তন কম হওয়ায় সাথেই নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে বর্ধিত অংশে নিয়মিত নামাজ আদায় করা হয়। মসজিদের পুরনো অংশের ভবনটি স্মৃতি হিসেবে রাখা হয়েছে। এটা নিয়ে স্থানীয়দের অনেক রকমের ধারণা প্রচলিত আছে। এখনো অনেক মানুষ এই মসজিদে বিভিন্ন ধরনের মানত করে থাকেন। এর নির্মাণ কারুকার্য দেখে ধারণা করা হয় এটি মুঘল আমলে নির্মাণ করা হয়েছিল।

এ ব্যাপারে নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও) মো.

নজরুল ইসলাম জানান, পুরনো স্থাপনাগুলো ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। তাই এগুলো সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা/অলোক/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর র মসজ দ ন র ম ণ কর ত মসজ দ মসজ দ র আম দ র নলছ ট

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্র সংসদের দাবিতে ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দৃঢ অবস্থান

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (মাকসু) প্রতিষ্ঠার দাবিতে আমরণ ও প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (১১ আগস্ট) বেলা  ১১টার দিকে প্রশাসনিক ভবন প্রাঙ্গণে অপরাধ তত্ত্ব ও পুলিশবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী আক্তারুজ্জামান সাজু আমরণ অনশন শুরু করেন। তার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রতীকী অনশনে অংশ নেন। 

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মসূচি চলছে। অনশনরত আক্তারুজ্জামান অসুস্থ হওয়ায় স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা দাবির অন্যতম হলো দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা। এই লক্ষ্যেই ২১ জুলাই তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবিপত্র দেন। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও রিজেন্ট বোর্ড থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

পরবর্তীতে ২ আগস্ট প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে ১০ আগস্টের মধ্যে রিজেন্ট বোর্ডে প্রস্তাবটি পাস করানোর আহ্বান জানানো হয়। তবে সেই সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও দাবি বাস্তবায়িত হয়নি। 

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত  আমরণ অনশন চালিয়ে যাবেন।

অনশনস্থলে শিক্ষার্থীরা “ভাত নয়, আইন খাবো”, “তালা ভাঙছি, মাকসু আনবো”, “ইনকিলাব জিন্দাবাদ”সহ বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। 

গতকাল রাত ১০টার দিকে অনশনরত শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে এসে শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল করীম বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবিটি পরবর্তী রিজেন্ট বোর্ডে তুলব। যদি তখনও সমাধান না আসে, তারা পরবর্তী কর্মসূচি নিতে পারেন। আমরা অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেছি এবং সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছি যেন কোনো নিরাপত্তা বা স্বাস্থ্যঝুঁকি না হয়।”

বিশ্ববিদ্যলয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. ইমাম হোসেন বলেন, “শিক্ষার্থীদের আবেদনের বিষয়ে প্রশাসন আলোচনা করেছে এবং একটি মিটিংও হয়েছে। আবেদনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী কীভাবে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে, সেই প্রক্রিয়া চলছে।”

ঢাকা/আবিদ/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ