গ্রামীণ ব্যাংকের পর্ষদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকতে হবে, কমছে সরকারি শেয়ার
Published: 14th, May 2025 GMT
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একসময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। গ্রামীণ ব্যাংক–সংক্রান্ত নতুন অধ্যাদেশে মোট ১৩ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সেই শিক্ষক হবেন গ্রামীণ অর্থনীতি বা নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অথবা উক্ত বিষয়ে গবেষণাকাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।
পর্ষদে এ ছাড়া থাকবেন একজন নারী সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ (সিএ) এবং একজন নারী অধিকারবিষয়ক বিশেষজ্ঞ নারী গবেষক অথবা নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কোনো নারী অথবা নারী অধিকার বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নারী আইনজীবী।
পরিচালনা পর্ষদের এই তিনজন মনোনীত পরিচালক হিসেবে বিবেচিত হবেন। তাঁদের মনোনয়ন দেবেন নির্বাচিত ৯ জন পরিচালক, যাঁরা গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা শেয়ারহোল্ডার। পর্ষদের বাকি একজনকে সরকার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে নিয়োগ দেওয়া হবে। অধ্যাদেশে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির বয়সও সর্বোচ্চ ৬৫ বছর করা হয়েছে। এত দিন যা ছিল ৬০ বছর।
গ্রামীণ ব্যাংক আইন, ২০১৩ সংশোধন করে সরকার এসব পরিবর্তন এনেছে। বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর গেজেট প্রকাশিত হয়েছে গত সোমবার। তার আগে গত ১৭ এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ গ্রামীণ ব্যাংক (অধ্যাদেশ) সংশোধনের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়।
অনুমোদনের কথা জানিয়ে ওই দিন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের জানান, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে রাজনৈতিকভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। তখন গ্রামীণ ব্যাংককে তাঁর দর্শন থেকে অনেকাংশে সরিয়ে সরকারি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, আগে গ্রামীণ ব্যাংক কেবল ভূমিহীনদের জন্য কাজ করত। এখন ইউনিয়ন ও পৌরসভা উভয় পর্যায়েই বিত্তহীনদের নিয়ে কাজ করবে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, পরিচালকদের মেয়াদ আগেও তিন বছর ছিল, এখনো তা–ই আছে। একজন পরিচালক পরপর দুই মেয়াদে পরিচালক থাকতে পারবেন। তিন বছরের বিরতি দিয়ে আবার তাদের পরিচালক হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের মালিকানা ছিল এত দিন ২৫ শতাংশ। তা কমিয়ে এখন ১০ শতাংশ করা হয়েছে। আর এ ব্যাংকে গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানা ছিল এত দিন ৭৫ শতাংশ। তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৯০ শতাংশ।
ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে সরকারের সদস্য বা পরিচালক ছিলেন এত দিন তিনজন। সংশোধন করে তা একজনে নামিয়ে আনা হয়েছে। এই ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৩০০ কোটি টাকা। ৯০ শতাংশ মালিকানা পেতে ব্যাংকটির ঋণগ্রহীতা-শেয়ারহোল্ডারদের এখন পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুই সপ্তাহ পর গত ২০ আগস্ট গ্রামীণ ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান এ কে এম সাইফুল মজিদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তাঁর পরিবর্তে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকসের শিক্ষক আবদুল হান্নান চৌধুরীকে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়।
আবদুল হান্নান চৌধুরী চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েই গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেন, যা এত দিন পর অধ্যাদেশ আকারে জারি হয়েছে। আগে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকলেও নতুন অধ্যাদেশ পাস হওয়ার পর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন পর্ষদ সদস্যদের মধ্য থেকে।
গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হলে বা তিনি দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে সরকার তার মনোনীত পরিচালকদের মধ্য থেকে একজনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিতে পারত। নতুন অধ্যাদেশে সেই ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান অক্ষম হলে পর্ষদ সদস্যরাই অন্য কোনো পরিচালককে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের অনুমোদন দিতে পারবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র এত দ ন র পর চ সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯
ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে ৬৯ জন হয়েছে। দেশটির দুর্যোগ-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আজ বুধবার এ খবর জানান। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ও পানি-বিদ্যুতের সংযোগ আবার চালু করার চেষ্টা করছে ফিলিপাইন সরকার।
দেশটির সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা রাফি আলেজান্দ্রো সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার আগে সেবু প্রদেশের উত্তরে বোগো শহরের কাছে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। স্থানীয় হাসপাতালগুলো আহত মানুষের ভিড়ে রীতিমতো উপচে পড়ছে।
আঞ্চলিক সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা জেন আবাপো বলেন, সেবুর প্রাদেশিক দুর্যোগ দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৬৯ জন। অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, আহত হয়েছেন ১৫০ জনের বেশি।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবেরা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রিয়জন হারানো ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
সেবু ফিলিপাইনের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি। সেখানে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ম্যাকতান-সেবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এটা ফিলিপাইনের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর।
ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সান রেমিগিও শহরটিও। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য এ শহরে ‘দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের ভাইস মেয়র আলফি রেইনেস বলেন, উদ্ধারকর্মীদের জন্য খাবার ও পানি, সেই সঙ্গে ভারী সরঞ্জাম প্রয়োজন।
স্থানীয় ডিজেডএমএম রেডিওকে আলফি রেইনেস বলেন, ‘ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই। আমাদের সত্যিই সহায়তা দরকার। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট রয়েছে। ভূমিকম্পে সেখানে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
আরও পড়ুনফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ২৬, চলছে উদ্ধারকাজ৫ ঘণ্টা আগে