গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একসময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। গ্রামীণ ব্যাংক–সংক্রান্ত নতুন অধ্যাদেশে মোট ১৩ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সেই শিক্ষক হবেন গ্রামীণ অর্থনীতি বা নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অথবা উক্ত বিষয়ে গবেষণাকাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।

পর্ষদে এ ছাড়া থাকবেন একজন নারী সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ (সিএ) এবং একজন নারী অধিকারবিষয়ক বিশেষজ্ঞ নারী গবেষক অথবা নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কোনো নারী অথবা নারী অধিকার বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নারী আইনজীবী।

পরিচালনা পর্ষদের এই তিনজন মনোনীত পরিচালক হিসেবে বিবেচিত হবেন। তাঁদের মনোনয়ন দেবেন নির্বাচিত ৯ জন পরিচালক, যাঁরা গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা শেয়ারহোল্ডার। পর্ষদের বাকি একজনকে সরকার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে নিয়োগ দেওয়া হবে। অধ্যাদেশে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির বয়সও সর্বোচ্চ ৬৫ বছর করা হয়েছে। এত দিন যা ছিল ৬০ বছর।

গ্রামীণ ব্যাংক আইন, ২০১৩ সংশোধন করে সরকার এসব পরিবর্তন এনেছে। বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর গেজেট প্রকাশিত হয়েছে গত সোমবার। তার আগে গত ১৭ এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ গ্রামীণ ব্যাংক (অধ্যাদেশ) সংশোধনের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়।

অনুমোদনের কথা জানিয়ে ওই দিন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের জানান, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে রাজনৈতিকভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। তখন গ্রামীণ ব্যাংককে তাঁর দর্শন থেকে অনেকাংশে সরিয়ে সরকারি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, আগে গ্রামীণ ব্যাংক কেবল ভূমিহীনদের জন্য কাজ করত। এখন ইউনিয়ন ও পৌরসভা উভয় পর্যায়েই বিত্তহীনদের নিয়ে কাজ করবে।

অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, পরিচালকদের মেয়াদ আগেও তিন বছর ছিল, এখনো তা–ই আছে। একজন পরিচালক পরপর দুই মেয়াদে পরিচালক থাকতে পারবেন। তিন বছরের বিরতি দিয়ে আবার তাদের পরিচালক হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।

গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের মালিকানা ছিল এত দিন ২৫ শতাংশ। তা কমিয়ে এখন ১০ শতাংশ করা হয়েছে। আর এ ব্যাংকে গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানা ছিল এত দিন ৭৫ শতাংশ। তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৯০ শতাংশ।

ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে সরকারের সদস্য বা পরিচালক ছিলেন এত দিন তিনজন। সংশোধন করে তা একজনে নামিয়ে আনা হয়েছে। এই ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৩০০ কোটি টাকা। ৯০ শতাংশ মালিকানা পেতে ব্যাংকটির ঋণগ্রহীতা-শেয়ারহোল্ডারদের এখন পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে হবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুই সপ্তাহ পর গত ২০ আগস্ট গ্রামীণ ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান এ কে এম সাইফুল মজিদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তাঁর পরিবর্তে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকসের শিক্ষক আবদুল হান্নান চৌধুরীকে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়।

আবদুল হান্নান চৌধুরী চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েই গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেন, যা এত দিন পর অধ্যাদেশ আকারে জারি হয়েছে। আগে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকলেও নতুন অধ্যাদেশ পাস হওয়ার পর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন পর্ষদ সদস্যদের মধ্য থেকে।

গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হলে বা তিনি দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে সরকার তার মনোনীত পরিচালকদের মধ্য থেকে একজনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিতে পারত। নতুন অধ্যাদেশে সেই ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান অক্ষম হলে পর্ষদ সদস্যরাই অন্য কোনো পরিচালককে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের অনুমোদন দিতে পারবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র এত দ ন র পর চ সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

সূর্যের সামনে স্কাইডাইভার, তৈরি হয়েছে এক অলীক আলোকচিত্র

প্রাচীন গল্পে আছে, ইকারাস মোমের ডানা নিয়ে সূর্যের খুব কাছে উড়ে গিয়েছিল। তখন মোম গলে গেলে ইকারাস নিচে পড়ে যায়। সৃজনশীল এক ফটোগ্রাফার সম্প্রতি সূর্যের দারুণ এক ছবি তুলে সেই দৃশ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় একজন স্কাইডাইভার মাত্র এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশের জন্য সূর্যের সামনে দিয়ে নেমে যান। ঠিক তখনই তাঁকে ক্যামেরাবন্দী করেন অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি। জ্বলন্ত সূর্যের মুখের ওপর দিয়ে যেন এক মানব প্রতিকৃতি নিচে নেমে গেল, এমন দৃশ্য ধরা পড়ে ক্যামেরা লেন্সে। দৃষ্টিবিভ্রমের এক অসাধারণ কীর্তি তৈরি করেছেন অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি।

অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি নিখুঁতভাবে তাঁর ক্যামেরা দিয়ে একজন স্কাইডাইভারকে ক্যামেরার সংকীর্ণ ফিল্ড অব ভিউয়ের মধ্য দিয়ে নেমে যাওয়ার সময় ধারণ করেন। ছবিটি বেশ পরাবাস্তব এক অনুভূতি তৈরি করেছে। ইকারাসকে নিয়ে প্রাচীন মিথের সঙ্গে ছবিটি তুলনা করেছেন অনেকেই।

অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি চাঁদ ও সূর্যের অত্যন্ত সূক্ষ্ম ছবি তোলার জন্য পরিচিত। তিনি সূর্যের সামনে স্কাইডাইভারের এই একটি মাত্র ছবির জন্য কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। সূর্যের ছবি তোলা এমনিতেই কঠিন কাজ। সেখানে সূর্যের সামনে গতিশীল একটি বিমান বা একজন পতিত মানবকে একই ফ্রেমে আনা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন চ্যালেঞ্জ। বিমানটির গতিপথ, সূর্যের কোণ, ক্যামেরার অবস্থান ও স্কাইডাইভারের অবতরণের মতো সব বিষয়কে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে এক করে কাজটি হয়েছে।

অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি বলেন, ‘বলা যায়, একেবারে অযৌক্তিক একটি কাজ করেছি। যদিও চূড়ান্ত ছবিটি দারুণ এক অনুভূতি দেয়। স্কাইডাইভার ছিলেন ইউটিউবার ও সংগীতজ্ঞ গ্যাব্রিয়েল সি ব্রাউন। সে সূর্যের উত্তাল হলুদ পৃষ্ঠের বিপরীতে একটি কালো সিলুয়েট বা ছায়ামূর্তি হিসেবে ছবিতে চলে এসেছে। সূর্যের অবস্থান ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল দূরে হলেও ক্যামেরায় দারুণভাবে দেখা যাচ্ছে সব। ইকারাসের সঙ্গে তুলনা করা ছবি অসম্ভব বলে মনে হয়। আগুনের মতো সৌর ক্রোমোস্ফিয়ারের আবহের বিপরীতে একটি সত্যিকারের মানব চিহ্ন আমাদের মুগ্ধ করে। দেখে মনে হবে যেন, মহাকাশে কেউ নিচে পড়ে যাচ্ছে।’

স্কাইডাইভাররা ব্রাউনের ৩ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতা থেকে পতন শুরু করলে প্রায় ১০ সেকেন্ড সময় ব্যয় করে প্যারাসুট খোলার আগে ছবি তোলার সুযোগ মেলে। ম্যাককার্থি একটি লুন্ট ৬০ মিলিমিটার এইচ–আলফা ক্যামেরায় তার ফ্রি ফলের ছবি তোলেন। একটি এএসআই ১ হাজার ৬০০ মিলিমিটারে একক এক্সপোজার ধারণ করা হয়। আসলে এই বিভ্রমের মূল কারণ হচ্ছে দূরত্বের সামঞ্জস্য। ব্রাউন একটি ছোট বিমান থেকে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ ফুট ওপর থেকে লাফ দেন। আর ম্যাককার্থি প্রায় আট হাজার ফুট দূরে অবস্থান করেছিলেন। স্কাইডাইভার অবশ্যই সূর্যের কাছে ছিলেন না। শুধু ক্যামেরার দৃষ্টিকোণ থেকে নিখুঁত অবস্থানের কারণে স্কাইডাইভারকে অসম্ভব কাছাকাছি দেখাচ্ছিল। আসলে লাফ দেওয়ার আগে বিমানটিকে সঠিক অবস্থানে আনার জন্য ছয়বার চেষ্টা করতে হয়েছে। স্কাইডাইভারকে ফ্রেমে ধরার জন্য মাত্র একবারের সুযোগ ছিল। ম্যাককার্থি তাঁর মনিটরে সেই ক্ষুদ্র অবয়বটিকে সূর্যের আলোর সঙ্গে মিলিয়ে একটি নিখুঁত অবয়ব ধারণ করেন।

এই ছবিকে অনেকেই পৌরাণিক রূপকথার সঙ্গে তুলনা করছেন। গ্রিক মিথের ইকারাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ম্যাককার্থির এ ছবিটি সেই আখ্যানকেই একটি আধুনিক ও স্পষ্ট রূপে যেন তুলে ধরছে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘১৫ হাজার সেফটিপিন শাড়িতে লাগালেও, তারা খুঁত বের করবে’
  • এপস্টেইনের নথি প্রকাশের পক্ষে হঠাৎ কেন অবস্থান নিলেন ট্রাম্প
  • এশিয়ার প্রভাবশালী নারী ব্যবসায়ী কারা, কীসের ব্যবসা তাঁদের
  • করদাতা মারা গেলেও যে কারণে কর দিতে হয়, কীভাবে দেওয়া হয়
  • ৩ কোটি টাকা, ব্যক্তিগত উড়োজাহাজসহ আরও যা যা পান একজন মিস ইউনিভার্স
  • গায়িকা থেকে বিধায়ক, মৈথিলীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসারী চমকে ওঠার মতো
  • সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিলেন উপদেষ্টার এপিএস
  • বিএনপি নেতা খুন: অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী ফেসবুকে লিখলেন ‘আউট’
  • সাজা হলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘কনভিকশন ওয়ারেন্টের’ আবেদন করা হবে
  • সূর্যের সামনে স্কাইডাইভার, তৈরি হয়েছে এক অলীক আলোকচিত্র