বুধবার বেলা দেড়টা। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, মুক্তমঞ্চের কাছে দাঁড়িয়ে মাদক সেবন করছেন মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তি। দূর থেকেই মাদকের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। কিছুটা এগিয়ে গিয়ে দেখা যায়, আরও কয়েকজন মাদক সেবন করছেন।

আগের দিন মঙ্গলবার রাতে উদ্যানটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য খুন হওয়ার পরও গতকাল এভাবে মাদক সেবন চলছিল। পুলিশি তৎপরতাও দেখা যায়নি।

তবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গড়ে ওঠা অবৈধ ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটসহ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ইতিমধ্যে কয়েক শ দোকানপাট-স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনসোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অবৈধ দোকান–স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে৪০ মিনিট আগে

রাজধানীতে যে কয়টি বড় উদ্যান রয়েছে, তার একটি সোহরাওয়ার্দী। ঐতিহাসিক এ উদ্যানে প্রতিদিন বহু মানুষ সময় কাটাতে যায়, হাঁটতে যায়, খেলতে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে হওয়ায় শিক্ষার্থীরাও সেখানে যান। কিন্তু নিরাপত্তাব্যবস্থার অভাবে উদ্যানটি পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের আড্ডাখানায়। উদ্যানে প্রকাশ্যেই মাদক কেনাবেচা হয়।

শুধু মাদক সেবন ও ব্যবসা নয়, উদ্যানটিতে শত শত দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজি করা হয়। প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। বিগত কয়েক বছরে সেখানে কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে প্রায়ই।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নোংরা। যেখানে-সেখানে ফেলে রাখা হয় ময়লা-আবর্জনা। উন্মুক্ত স্থানে করা হয় মল ও মূত্রত্যাগ। সব মিলিয়ে সেটি সাধারণ মানুষের যাওয়ার উপযোগী নয়। তারপরও রাজধানীতে খোলা জায়গার অভাবে সেখানে যায় মানুষ। নানা অনুষ্ঠানও হয়। রাজনৈতিক সমাবেশের একটি বড় জায়গা হয়ে উঠেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।

শুধু মাদক সেবন ও ব্যবসা নয়, উদ্যানটিতে শত শত দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজি করা হয়। প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। বিগত কয়েক বছরে সেখানে কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে প্রায়ই।

এখনকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানটিতে একসময় ঘোড়দৌড় হতো। নাম ছিল রেসকোর্স ময়দান। এখানেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। এর আগে স্বাধীনতার পর প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নামে উদ্যানটির নামকরণ করা হয় ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান’।

এ উদ্যানের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব গণপূর্ত অধিদপ্তরের। তাদের তথ্য অনুযায়ী, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আয়তন ৬৩ একর। উদ্যানটির ভেতরে স্বাধীনতাস্তম্ভ, শিখা চিরন্তন, স্বাধীনতা জাদুঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এর প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। এরপর আরও কাজ যুক্ত করা হয়েছে। পুরো কাজ এখনো শেষ হয়নি।

ইতিমধ্যে কয়েক শ দোকানপাট-স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনে জোট গঠনে সতর্ক থাকার পরামর্শ হেফাজত আমিরের

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট গঠনের ক্ষেত্রে সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।

মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, আগামী নির্বাচনে এমন কোনো দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার চিন্তা করা যাবে না, যাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস সম্পর্কে বুজুর্গানে দ্বীন ও পূর্বপুরুষেরা আগেই সতর্ক করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলন ২০২৫’–এ লিখিত বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী এ কথা বলেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজত আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও অসুস্থ থাকায় তিনি কথা বলেননি। তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হক আজিজ।

ইসলামের মূলধারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে দলগুলোকে অনুরোধ জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে হেফাজত আমির বলেন, সহিহ আকিদার সব ইসলামি দলকে এক হওয়ার জন্য আগেও তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মতো তেমন পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, একদিকে যেমন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্র চলছে, অন্যদিকে তেমনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বহু রকম চক্রান্ত লক্ষ করা যাচ্ছে। গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা তিনি কল্পনাও করেননি।

অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে বাবুনগরী বলেন, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের চুক্তি দেশের স্বাধীনতার অখণ্ডতার জন্য এবং ধর্মীয় কৃষ্টির জন্য এক অশনিসংকেত। এ চুক্তির তীব্র নিন্দা জানিয়ে তা বাতিল করার দাবিও জানান তিনি।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা খলিল আহমদ কুরাইশী। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, সামনে কালো তুফান দেখা যাচ্ছে। কালো তুফানের সঙ্গে মোলাকাত নয়, মোকাবিলা করতে হবে। জনগণকে ওলামাদের নেতৃত্ব কবুল করতে হবে। তখনই তুফানকে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী আমলে পাখা দিয়ে নৌকাকে বাতাস করেছে, তাদের সঙ্গে কোনো ঐক্য হবে না। জুলাই আন্দোলন ছিল ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য। সামনে নির্বাচন। সেই নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। সেই পাঁয়তারা রুখে দিতে হবে।

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ইসলামের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আলেমদের মতামত উপেক্ষা করলে হাসিনার মতো পরিণতি হবে।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। এ সময় আরও বক্তব্য দেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আলেম এবং ওলামারা।

১৫ দফা প্রস্তাবনা

সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। প্রস্তাবনা পাঠ করেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।

১৫ দফার মধ্যে আছে—ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের চুক্তি বাতিল করা, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীতের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির মহড়া বন্ধ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; বিতর্কিত নারী কমিশনের সুপারিশ বাতিল ও শরিয়ার সীমারেখার আলোকে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ