সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দিনদুপুরে কী চলেছে
Published: 15th, May 2025 GMT
বুধবার বেলা দেড়টা। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, মুক্তমঞ্চের কাছে দাঁড়িয়ে মাদক সেবন করছেন মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তি। দূর থেকেই মাদকের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। কিছুটা এগিয়ে গিয়ে দেখা যায়, আরও কয়েকজন মাদক সেবন করছেন।
আগের দিন মঙ্গলবার রাতে উদ্যানটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য খুন হওয়ার পরও গতকাল এভাবে মাদক সেবন চলছিল। পুলিশি তৎপরতাও দেখা যায়নি।
তবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গড়ে ওঠা অবৈধ ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটসহ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ইতিমধ্যে কয়েক শ দোকানপাট-স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনসোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অবৈধ দোকান–স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে৪০ মিনিট আগেরাজধানীতে যে কয়টি বড় উদ্যান রয়েছে, তার একটি সোহরাওয়ার্দী। ঐতিহাসিক এ উদ্যানে প্রতিদিন বহু মানুষ সময় কাটাতে যায়, হাঁটতে যায়, খেলতে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে হওয়ায় শিক্ষার্থীরাও সেখানে যান। কিন্তু নিরাপত্তাব্যবস্থার অভাবে উদ্যানটি পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের আড্ডাখানায়। উদ্যানে প্রকাশ্যেই মাদক কেনাবেচা হয়।
শুধু মাদক সেবন ও ব্যবসা নয়, উদ্যানটিতে শত শত দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজি করা হয়। প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। বিগত কয়েক বছরে সেখানে কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে প্রায়ই।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নোংরা। যেখানে-সেখানে ফেলে রাখা হয় ময়লা-আবর্জনা। উন্মুক্ত স্থানে করা হয় মল ও মূত্রত্যাগ। সব মিলিয়ে সেটি সাধারণ মানুষের যাওয়ার উপযোগী নয়। তারপরও রাজধানীতে খোলা জায়গার অভাবে সেখানে যায় মানুষ। নানা অনুষ্ঠানও হয়। রাজনৈতিক সমাবেশের একটি বড় জায়গা হয়ে উঠেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
শুধু মাদক সেবন ও ব্যবসা নয়, উদ্যানটিতে শত শত দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজি করা হয়। প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। বিগত কয়েক বছরে সেখানে কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে প্রায়ই।এখনকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানটিতে একসময় ঘোড়দৌড় হতো। নাম ছিল রেসকোর্স ময়দান। এখানেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। এর আগে স্বাধীনতার পর প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নামে উদ্যানটির নামকরণ করা হয় ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান’।
এ উদ্যানের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব গণপূর্ত অধিদপ্তরের। তাদের তথ্য অনুযায়ী, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আয়তন ৬৩ একর। উদ্যানটির ভেতরে স্বাধীনতাস্তম্ভ, শিখা চিরন্তন, স্বাধীনতা জাদুঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এর প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। এরপর আরও কাজ যুক্ত করা হয়েছে। পুরো কাজ এখনো শেষ হয়নি।
ইতিমধ্যে কয়েক শ দোকানপাট-স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গল্প-আড্ডা-স্লোগানে ৪ দফায় অনঢ় জবি শিক্ষার্থীরা
চারদফা দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি অব্যহত রেখেছেন। বুধবারের (১৪ মে) চেয়ে তাদের আন্দোলনের ধরন ভিন্ন।
দীর্ঘ ৪০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা ক্লান্তিকর প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচিতে তাদের গল্প, আড্ডা, চা-নাস্তা আর স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) রাতে কাকরাইল মোড়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
আরো পড়ুন:
সাম্য হত্যার প্রতিবাদে জাবিতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ
ঢাবির মুরুব্বিয়ানা বন্ধ করতে হবে: শরিফ ওসমান
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দাবির ব্যাপারে তারা আপসহীন। দাবি আদায় না হলে আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫–২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি কার্যকর করতে হবে; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কোনো কাটছাঁট ছাড়াই অনুমোদন করতে হবে; জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়ন করতে হবে; শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
জবি শিক্ষার্থী মো. সাইফ হাসান বলেন, “আমরা উপাচার্য মহোদয় ও উপদেষ্টাদের সংবাদ সম্মেলনের অপেক্ষায় বসে আছি। সময় কাটাতে গল্প করছি। কিন্তু এই অবস্থান কোনো দুর্বলতা নয়। দাবি আদায় না হলে যেকোনো মুহূর্তে আমরা আরো বড় আন্দোলনে যেতে প্রস্তুত।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী সুজন মিয়া বলেন, “আমরা আন্দোলনকে বেগবান করতে বিভিন্ন স্লোগানে চত্বর মুখর রেখেছি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে এক কদমও সরব না।”
শিক্ষার্থী রিমা আক্তার বলেন, “আমাদের এই আন্দোলন শুধু দাবি আদায়ের জন্য নয়, এটি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের একটি সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছি, কিন্তু আমাদের উপেক্ষা করা হলে পরবর্তী কর্মসূচি হবে আরো জোরদার।”
শান্তিপূর্ণ এই অবস্থান কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানাচ্ছেন অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের একটি অংশও। তবে এখনো প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, দাবি দ্রুত মেনে নিয়ে সংকট সমাধানের পথ খুলে দেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী