চিকিৎসক প্রেসিডেন্ট ও কোচিং কিংবদন্তিতে নতুন অধ্যায় ব্রাজিলে
Published: 26th, May 2025 GMT
দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলে যেন নতুন সূর্যোদয়! একদিকে ইউরোপীয় কোচিং ধারার প্রতিনিধি কার্লো আনচেলত্তি, অন্যদিকে চিকিৎসাবিদ্যা ও ব্যবসা জগৎ পেরিয়ে ফুটবলে আসা সামির দাউদ। ব্রাজিল ফুটবলের ইতিহাসে এই প্রথমবার একসঙ্গে দায়িত্ব নিলেন এমন ভিন্নধর্মী দুই নেতা। যারা মাঠের বাইরে থেকেও খেলাটিকে পাল্টে দিতে পারেন ভিতর থেকে।
স্থানীয় সময় রোববার (২৫ মে) ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন এর নির্বাচনে চূড়ান্ত জয় নিশ্চিত করেন সামির দাউদ। ১৪৩ ভোটের মধ্যে ১০১ ভোটে জয়লাভ, ব্রাজিলের শীর্ষ ক্লাবগুলোর সরাসরি সমর্থন; সব মিলিয়ে তার জয় ছিল অপেক্ষাকৃত সহজ ও একচেটিয়া। চিকিৎসক থেকে ব্যবসায়ী, আর সেখান থেকে ক্রীড়া সংগঠক; তার এই যাত্রা যেন অনেকটাই অপ্রচলিত কিন্তু বিস্ময়কর।
এরই মধ্যে সোমবার (২৬ মে) রাতে রিও ডি জেনেইরোতে অবতরণ করেন ডন ‘কার্লো আনচেলত্তি। সঙ্গে ছিলেন সিবিএফের পরিচালক রদ্রিগো কায়তানো। রিয়াল মাদ্রিদে সময় শেষ করে এবার তার নতুন চ্যালেঞ্জ, পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের কোচিং করানো।
আরো পড়ুন:
আনচেলত্তির স্বপ্নদল: ঘোষণার আগেই ১২ তারকার নাম ফাঁস
ব্রাজিলের ফুটবল প্রধানকে অপসারণ, পুরো বোর্ড বরখাস্ত
সামির দাউদ আনুষ্ঠানিকভাবে আনচেলত্তিকে স্বাগত জানিয়ে জানান, ‘‘এটি আমাদের জন্য একটি নতুন যুগের শুরু। আমরা ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে নতুন ধারণা ও গঠনমূলক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।’’
এদিকে আনচেলত্তির সামনে আরেকটি চ্যালেঞ্জ, ব্রাজিল জাতীয় দলের প্রথম স্কোয়াড ঘোষণা করা। গুঞ্জন অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় সোমবার রাত ১২টায় তিনি দল প্রকাশ করতে পারেন। কারণ, সামনে আছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ। ৬ জুন ইকুয়েডরের বিপক্ষে খেলার পর ১১ জুন প্যারাগুয়ের বিপক্ষে খেলবে ব্রাজিল।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্রাজিল যেভাবে বড় টুর্নামেন্টে ধারাবাহিকতা হারিয়েছে, তাতে বোঝাই যাচ্ছে এই যুগল নেতৃত্ব শুধু নতুন নয়, একধরনের রিসেট বাটনও।
একজন ইউরোপের সফলতম কোচদের একজন, অন্যজন নেতৃত্বে আনছেন কর্পোরেট শৃঙ্খলা ও মেডিক্যাল প্রিসিশন। ফুটবল যখন শুধু মাঠের খেলা থাকে না, তখন এ ধরনের নেতাই হয়ে ওঠেন গেমচেঞ্জার।
এই জুটির ভবিষ্যৎ ফলাফল এখন সময়ই বলবে। তবে এটুকু নিশ্চিত, ব্রাজিল ফুটবলে ভিন্নমাত্রার এক অধ্যায় শুরু হয়ে গেছে।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ