বরিশালে কোরবানির পশুর হাটের নিয়ন্ত্রক এখন বিএনপি নেতারা। কোথাও প্রকাশ্যে, আবার কোথাও আড়ালে থেকে তারা হাটগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। আগে আওয়ামী লীগ নেতারা এসব হাটের নিয়ন্ত্রক ছিলেন। এদিকে নগরীর বাইরে ঐতিহ্যবাহী তিনটি পশুর হাট আওয়ামী লীগ আমলের শেষ দিকে ইজারা বন্ধ করে খাস কালেকশনে (সরকারি প্রতিনিধির উপস্থিতিতে) খাজনা আদায় হতো। এতে বেশি লাভবান হতেন দলটির নেতাকর্মীরা। এখন এগুলোতে খাজনা আদায়ে জড়িত বিএনপির লোকজন। বার্ষিক ইজারা আবার চালু হবে কিনা, এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। 

উপজেলা পরিষদ নিয়ম অনুযায়ী স্থায়ী হাটগুলোর বার্ষিক ইজারার দরপত্র আহ্বান করে। তবে খাস কালেকশন ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে আগ্রহী সুবিধাভোগীরা। তারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে এবং কেউ দরপত্রে অংশ নেয় না। 

নগরীতে এ বছর অস্থায়ী তিনটি পশুর হাট হচ্ছে। এ ছাড়া আছে স্থায়ী একটি। বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) থেকে এসব হাটের ইজারা দেওয়া হয়েছে। ৩১ মে থেকে ৬ জুন হাটগুলোতে পশু কেনাবেচা হবে। নগরের একমাত্র স্থায়ী পশুর হাট বাঘিয়ায়। সাপ্তাহিক এ হাটে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৩১ মে থেকে টানা সাত দিন পশু বিক্রি হবে। অস্থায়ী হাটগুলো হলো– রূপাতলী দপদপিয়া সেতুর নিচে, কালিজিরা বাজার এবং ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বারুজ্জার হাট। এর মধ্যে কালিজিরা ও বারুজ্জার হাটে এবার প্রথম পশু বিক্রি হবে। 

নগরের পশ্চিম প্রান্তে ঝালকাঠি জেলার সীমানাসংলগ্ন কালিজিরা হাট। ৫৬ হাজার টাকায় হাটের ইজারা পেয়েছেন ২৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গাফফার মোল্লা। তিনি সমকালকে বলেন, একমাত্র দরদাতা হয়ে ইজারা পেয়েছেন। দপদপিয়া সেতুর নিচের হাটের ইজারা পেয়েছে হাওলাদার বিল্ডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তবে স্থানীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে, এর নেপথ্যের নিয়ন্ত্রক ২৪ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতারা। 

২৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২৪ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের যুবসমাজ হাওলাদার বিল্ডার্সের নামে পশুর হাট ইজারা নিয়েছে। চারটি দরপত্রের মধ্যে সর্বোচ্চ দর ২ লাখ ১৫ হাজার টাকায় এ প্রতিষ্ঠানের নামে ইজারা হয়। তবে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এ হাটের ইজারায় আগ্রহী ছিল জাতীয় নাগরিক পার্টির কয়েকজন সমর্থক। এ নিয়ে বিএনপিকর্মী ও তাদের মধ্যে উত্তেজনাও হয়েছে। 

২৫ হাজার টাকায় বারুজ্জার হাটের ইজারা পেয়েছেন ২৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো.

আল আমিন। তিনি বলেন, ‘এলাকার ছোট ভাইদের জন্য হাট ইজারা নিয়েছি।’ বিসিসির বাজার কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, গত বছর পাঁচটি অস্থায়ী হাট ছিল। এ বছর প্রকাশ্যে দরপত্রে তিনটি স্থানে অস্থায়ী হাটের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

ঐতিহ্যবাহী তিন হাট

বরিশাল জেলায় শতবর্ষী তিনটি পশুর হাট হলো– গৌরনদীর কসবা, বানারীপাড়ার গুয়াচিত্রা এবং বাকেরগঞ্জের বোয়ালিয়া। আওয়ামী লীগ আমলে দলের নেতারা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাদের তৎপরতায় বার্ষিক ইজারা বন্ধ হয়ে যায়। 

বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের পাশে বাকেরগঞ্জের বোয়ালিয়া বাজারে পশুর হাটের সর্বশেষ বার্ষিক ইজারা হয়েছিল ২০২০ সালে। এর পর থেকে মাসিক ইজারা দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ আমলে দলটির স্থানীয় নেতারা এর সুবিধাভোগী ছিলেন। এখন সুবিধা নিচ্ছেন বিএনপি নেতারা। কয়েক মাস ধরে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিজান মোল্লা মাসে ৬ হাজার টাকায় ইজারা নিচ্ছেন। মিজান বলেন, ‘পারিবারিক প্রভাবের জন্য স্থানীয় কিছু লোক আমার নামে হাট ইজারা নিচ্ছে। এর লাভ-লোকসানের সঙ্গে আমি নেই।’ 

বাকেরগঞ্জ ইউএনও রুমানা আফরোজ বলেন, ‘বার্ষিক ইজারা দেওয়ার জন্য নিয়মমাফিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু কেউ শিডিউল কেনেন না।’ 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বর শ ল ব র ষ ক ইজ র হ ট র ইজ র ব এনপ র দরপত র বর শ ল আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ক্যারিবীয় জাহাজে আবারো যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, নিহত ৩

ক্যারিবীয় সাগরে একটি জাহাজে আবারো হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। এতে জাহাজটিতে থাকা অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। 

রবিবার (২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।

আরো পড়ুন:

নাইজেরিয়ায় হামলার হুমকি ট্রাম্পের

কানাডার সঙ্গে আলোচনায় না বসার ঘোষণা ট্রাম্পের

শনিবার গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে হেগসেথ বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওই জাহাজটিকে অবৈধ মাদক চোরাচালানে জড়িত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছিল।”

তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক জলসীমায় পরিচালিত এই হামলার সময় জাহাজটিতে ‘তিনজন পুরুষ মাদক-সন্ত্রাসী’ ছিলেন। তিনজনই নিহত হয়েছেন।” 

শনিবারের এই হামলার আগে গত বুধবার ক্যারিবীয় সাগরে আরো একটি জাহাজে মার্কিন বাহিনীর হামলায় চারজন নিহত হন। গত সোমবার মার্কিন হামলায় নিহত হন ১৪ জন।

মাদক পাচারের অভিযোগ তুলে সেপ্টেম্বর মাস থেকে এই অঞ্চলে সামরিক অভিযান শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ার নাগরিকসহ ৬২ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এছাড়া ১৪টি নৌযান এবং একটি সাবমেরিন ধ্বংস হয়েছে।

তবে নৌযানগুলো মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্র এখনও দেয়নি।  ফলে হামলার বৈধতা নিয়ে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। কিছু আইনজীবী যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন। কলম্বিয়া এবং ভেনেজুয়েলার মতো প্রতিবেশী দেশগুলো এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

ভেনেজুয়েলা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র দেশটির বিরুদ্ধে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ শুরু করেছে। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, দেশটি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াই করবে।

যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে সাতটি যুদ্ধজাহাজ, একটি সাবমেরিন, ড্রোন এবং যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে এবং মেক্সিকো উপসাগরে মোতায়েন করেছে আরেকটি যুদ্ধজাহাজ।

ট্রাম্প প্রশাসন মাদক চোরাচালানকারী নৌযানের ওপর তাদের হামলাকে ‘আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। 

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের নৌযান সাধারণত আটক করা হয় ও ক্রুদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক মার্কিন অভিযানগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো নৌকা ধ্বংস করা হচ্ছে। জাতিসংঘ-নিযুক্ত মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা এই অভিযানগুলোকে ‘বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদণ্ড’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ