রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা এক লাশের দুই চোখ গায়েব হয়ে গেছে। মৃত ব্যক্তির স্বজনদের দাবি, অজ্ঞাত একটি চক্র চোখ দুটি চুরি করেছে। তবে মর্গ থেকে বলা হচ্ছে, মর্গে লাশের দুই চোখ খেয়ে ফেলেছে ইঁদুর।

গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ময়নাতদন্তের সময় বিষয়টি জানাজানি হলে হাসপাতাল এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এতে হাসপাতালের মর্গে নজরদারি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

মৃত ব্যক্তি হলেন মাসুম মিয়া (৪৫)। তিনি রংপুর মহানগরের বুড়িরহাট বাহারদুর সিংহ গ্রামের বাসিন্দা।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার সকালে ধান কাটাকে কেন্দ্র করে মাসুম মিয়ার সঙ্গে তাঁর শ্যালক সাইদুর রহমানের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সাইদুরের লোকজন দেশি অস্ত্র নিয়ে মাসুম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালান। গুরুতর আহত অবস্থায় মাসুমকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় মাসুমের মেয়ে মারুফা বেগম বাদী হয়ে পরশুরাম থানায় সাইদুরসহ তিনজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। ওই দিন দুপুরে পুলিশ মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। গতকাল সকালে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি বের করা হলে দেখা যায় দুই চোখ নেই।

নিহত ব্যক্তির স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের অব্যবস্থাপনাই এ ঘটনার জন্য দায়ী। তাঁদের দাবি, একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে চোখ দুটি চুরি করেছে। নিহত ব্যক্তির প্রতিবেশী আবদুল জলিল বলেন, ‘এই হাসপাতালে আগে শুনেছি ওষুধ চুরি হয়, এখন লাশের চোখও চুরি হচ্ছে। লাশও এখানে নিরাপদ নয়।’

তবে হাসপাতালের মর্গে ইঁদুরের উৎপাত বেড়েছে। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে দাবি করেন ওয়ার্ড মাস্টার মানিক ইসলাম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মচারী বলেন, হাসপাতালের মর্গের অবস্থা খুবই খারাপ। ইঁদুরের উৎপাত বেড়েছে। বারবার বলার পরও মর্গের সুরক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আ এ আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। তদন্ত না করে আমরা এখনই কিছু বলতে পারছি না। মর্গের অবস্থা উন্নত করতে আমরা বহুবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

রংপুর মহানগরের পরশুরাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম বলেন, কী কারণে লাশের চোখ ছিল না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা

অবৈধ পথে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ১৪ তরুণ। কিন্তু দুবাই হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর পাঁচ মাস ধরে তাঁদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। স্বজনদের দাবি, দালালের প্রলোভনে পড়ে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণও দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সন্ধান না পাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।

ইউরোপের কোনো দেশে গেলে সচ্ছলতা আসবে, এমন ধারণা নিয়ে প্রতিবছর মাদারীপুর থেকে শত শত তরুণ সেখানে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন। তবে অবৈধ পথে ইউরোপ যেতে গিয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। কেউবা দালালের খপ্পরে পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে কাটাচ্ছেন বন্দিজীবন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত জেলার ৪৫ জন লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মারা গেছেন। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে পেরেছেন অন্তত ৩৫০ তরুণ। নিখোঁজ আছেন তিন শতাধিক।

সবশেষ নিখোঁজ তরুণদের সবার বাড়ি রাজৈরের বাজিতপুর ইউনিয়নে। তাঁরা হলেন পাখুল্লা গ্রামের জাহাঙ্গীর ব্যাপারীর ছেলে সালমান ব্যাপারী, চৌরাশী গ্রামের মোসলেম শিকদারের ছেলে বাবুল শিকদার, একই গ্রামের মজিবর বয়াতীর ছেলে সাজ্জাদ বয়াতী, জাকির মাতুব্বরের ছেলে বাদল মাতুব্বর, কানাই রায়ের ছেলে লিটন রায়, নিরঞ্জন বাড়ৈর ছেলে বাঁধন বাড়ৈ, কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামের আলম চৌকিদারের ছেলে ইমন চৌকিদার, অহিদুল মাতুব্বরের ছেলে নয়ন মাতুব্বর, আজিজ খালাসির ছেলে খলিল খালাসি, সোনা মিয়া চৌকিদারের ছেলে সোহেল চৌকিদার, নয়াকান্দি বাজিতপুর গ্রামের গৌরাঙ্গ বাড়ৈর ছেলে গৌতম বাড়ৈ, একই গ্রামের সামচু সরদারের ছেলে ইমরান সরদার, শ্রীনাথদী বাজিতপুরের জলিল বয়াতীর ছেলে আল আমিন বয়াতি ও শ্রীনদী গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান ঘরামির ছেলে আলী ঘরামি। তাঁদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে।

স্বজনদের অভিযোগ, মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য বাজিতপুর এলাকার বাবুল হাওলাদার ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে প্রথমে ১৬ লাখ টাকা করে নেন। পরে লিবিয়ায় বন্দী করে আদায় করেন আরও ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এর পর থেকে ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছেন অভিযুক্ত বাবুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

মাদারীপুরের ১৪ তরুণ ইতালি যেতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দালালের হাত ধরে ঘর ছাড়েন। নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানে তাদের ছবি হাতে স্বজনেরা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা
  • গ্রেপ্তারের পর পরিবারকে জানাতে ১২ ঘণ্টা কেন লাগবে
  • শাহজালাল বিমানবন্দরে একজন যাত্রীর সঙ্গে দুজনের বেশি প্রবেশ নিষিদ্ধ