রংপুর মেডিকেলে লাশের চোখ গায়েব: পরিবার বলছে চুরি, মর্গ দায় দিচ্ছে ইঁদুরকে
Published: 29th, May 2025 GMT
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা এক লাশের দুই চোখ গায়েব হয়ে গেছে। মৃত ব্যক্তির স্বজনদের দাবি, অজ্ঞাত একটি চক্র চোখ দুটি চুরি করেছে। তবে মর্গ থেকে বলা হচ্ছে, মর্গে লাশের দুই চোখ খেয়ে ফেলেছে ইঁদুর।
গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ময়নাতদন্তের সময় বিষয়টি জানাজানি হলে হাসপাতাল এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এতে হাসপাতালের মর্গে নজরদারি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মৃত ব্যক্তি হলেন মাসুম মিয়া (৪৫)। তিনি রংপুর মহানগরের বুড়িরহাট বাহারদুর সিংহ গ্রামের বাসিন্দা।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার সকালে ধান কাটাকে কেন্দ্র করে মাসুম মিয়ার সঙ্গে তাঁর শ্যালক সাইদুর রহমানের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সাইদুরের লোকজন দেশি অস্ত্র নিয়ে মাসুম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালান। গুরুতর আহত অবস্থায় মাসুমকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় মাসুমের মেয়ে মারুফা বেগম বাদী হয়ে পরশুরাম থানায় সাইদুরসহ তিনজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। ওই দিন দুপুরে পুলিশ মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। গতকাল সকালে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি বের করা হলে দেখা যায় দুই চোখ নেই।
নিহত ব্যক্তির স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের অব্যবস্থাপনাই এ ঘটনার জন্য দায়ী। তাঁদের দাবি, একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে চোখ দুটি চুরি করেছে। নিহত ব্যক্তির প্রতিবেশী আবদুল জলিল বলেন, ‘এই হাসপাতালে আগে শুনেছি ওষুধ চুরি হয়, এখন লাশের চোখও চুরি হচ্ছে। লাশও এখানে নিরাপদ নয়।’
তবে হাসপাতালের মর্গে ইঁদুরের উৎপাত বেড়েছে। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে দাবি করেন ওয়ার্ড মাস্টার মানিক ইসলাম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মচারী বলেন, হাসপাতালের মর্গের অবস্থা খুবই খারাপ। ইঁদুরের উৎপাত বেড়েছে। বারবার বলার পরও মর্গের সুরক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আ এ আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। তদন্ত না করে আমরা এখনই কিছু বলতে পারছি না। মর্গের অবস্থা উন্নত করতে আমরা বহুবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
রংপুর মহানগরের পরশুরাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম বলেন, কী কারণে লাশের চোখ ছিল না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
সিজারের সময় নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সিজারিয়ান অপারেশনের সময় এক নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠেছে ক্লিনিকের চেয়ারম্যান ও আবাসিক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে বিষয়টি নিয়ে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে নবজাতকসহ তাদেরকে ক্লিনিক থেকে বের করে দেওয়া হয়। ওই রাতেই শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম হাসপাতালে) নেওয়া হয়।
অভিযুক্ত চিকিৎসক পার্থ সমদ্দার কলাপাড়া পৌর শহরের জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আবাসিক চিকিৎসক এবং চেয়ারম্যান।শিশুটির
স্বজনদের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) প্রসব বেদনা নিয়ে জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হন লালুয়ার ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার মেয়ে ও রফিকুলের স্ত্রী মিম বেগম। ওই রাতেই মিমের সিজারিয়ান অপারেশন করেন ডা. পার্থ সমদ্দার। সিজারের কিছুক্ষণ পরই টিকার কথা বলে নবজাতকের পায়ে একটি ইনজেকশন পুশ করা হয়। পরের দিন থেকেই নবজাতকের বাম পা ফুলতে শুরু করে এবং কান্না বাড়তে থাকে। বিষয়টি চিকিৎসক ও নার্সদেরকে অবহিত করলে তারা তাতে কর্ণপাত করেননি। উল্টো ওই ক্লিনিকের কর্মী ও নার্সরা নবজাতকের স্বজনদের সঙ্গে অসদাচরণের পাশাপাশি তাদের ক্লিনিক থেকে বের করে দেন। পরে অন্যত্র এক্সরে করে জানা যায়, সিজারের সময় নবাজতকের পা ভেঙে ফেলেছেন চিকিৎসক।
নবজাতকের মা মিম আক্তার বলেছেন, বাচ্চা অনবরত কান্না করলে প্রথমে নার্স ও পরে চিকিৎককে অবহিত করা হয়। বাচ্চার বাম ফুলে গেলে তা জানানো হয়। কিন্তু, তারা এর কোনো প্রতিকার না করে আমাদের ধমকাতে থাকেন। ক্লিনিক ছেড়ে চলে যেতে চাপ প্রয়োগ করেন।
নবজাতকের নানা সিদ্দিক বলেন, টিকার কথা বলে আমার নাতিকে শরীর অবশ করার ইনজেকশন দিয়েছিল নার্সরা। ইনজেকশনের কার্যকারিতা শেষ হওয়ার পরপরই আমার নাতি অনেক কান্না করে। আমার স্ত্রী নার্সদের বললে তারা তাকে মারধরের চেষ্টা করে। আমাদের সঙ্গে ক্লিনিকের সবাই অনেক খারাপ আচরণ করেছে। এভাবে রোগীদের সঙ্গে প্রাইভেট ক্লিনিকের কর্মকর্তারাও যদি অসদাচরণ করে, তাহলে আমরা কোথায় যাব?
সিজারের সময় নবজাকের পা ভাঙেনি, দাবি করে জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেয়ারম্যান ডা. পার্থ সমদ্দার বলেছেন, আমি শিশু বিশেষজ্ঞ নই। নবজাতককে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেছেন, যদি সিজারিয়ান অপারেশনের প্রশিক্ষণ থাকে, তাহলে এনেস্থেসিস্টও সিজার করতে পারেন। তবে, এনেস্থেসিস্ট একাই সিজারিয়ান অপারেশন করতে পারেন না।
ঢাকা/ইমরান/রফিক