বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের ‘টার্গেট’ করে হামলা চালিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টির পরিকল্পনা ছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও তাঁর বাহিনীর। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমনটাই জানিয়েছেন সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ ও তাঁর সহযোগীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছে।

গত মঙ্গলবার কুষ্টিয়া শহর থেকে তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন হাতিরঝিল থানায় করা অস্ত্র আইনের মামলায় গ্রেপ্তার সুব্রত বাইনকে আট দিন আর মোল্লা মাসুদসহ তিনজনকে ছয় দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সুব্রত বাইনকে ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, সম্প্রতি ঢাকার হাতিরঝিল ও গুলশান এলাকার তিনটি খুনের ঘটনায় সুব্রত বাইনের নাম আসে। খুন ছাড়াও জমি, ফ্ল্যাট দখল ও চাঁদাবাজির একাধিক ঘটনায় সুব্রত বাইন ও তাঁর অনুসারীদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, রাজধানীর হাতিরঝিলে গত ২১ এপ্রিল সুব্রত বাইনের অনুসারীদের গুলিতে ওয়ার্ড যুবদলের সদস্য আরিফ সরদার (৩৫) নিহত হন। রিমান্ডে এসব বিষয়ে সুব্রত বাইন ও তাঁর সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে তাঁরা এ বিষয়ে এখনো মুখ খোলেননি বলে পুলিশের ওই সূত্র জানিয়েছে।

আরও পড়ুনকে এই সুব্রত বাইন, কীভাবে জড়ালেন অপরাধজগতে২৭ মে ২০২৫

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র বলছে, এসব সন্ত্রাসীকে সংগঠিত করার পেছনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের কোনো যোগসূত্র রয়েছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানিয়েছেন, হুন্ডির মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা মোটা অঙ্কের অর্থের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা করছিলেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কুষ্টিয়াকে কেন্দ্র করে অস্ত্র সরবরাহ ও ক্যাডার নিয়োগ হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ থেকে অস্ত্র এনে ঢাকার মগবাজার, শাহবাগ, গুলশান ও বাড্ডার বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের হাতে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের।

সুব্রত বাইনের পুরো নাম ত্রিমাতি সুব্রত বাইন। রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে এক নেতার সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। সেই সূত্র ধরে অস্ত্র হাতে নেওয়া। পরে মগবাজারে গড়ে তোলেন নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী।

১৯৯৩ সালে রাজধানীর মধুবাজারের এক সবজি বিক্রেতা খুনের ঘটনায় পুলিশের নজরে আসেন সুব্রত বাইন। ১৯৯১ সালে জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুরাদ খুনের ঘটনায় সুব্রত বাইনের যাবজ্জীবন সাজা হয়।

তালিকাভুক্ত এই শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামে ২০০১ সালে ইন্টারপোলের নোটিশ জারি হয়। এরপর কলকাতায় পালিয়ে যাওয়া সুব্রত বাইন ধর্মান্তরিত হন। সেখানেও অপরাধের জগতে সক্রিয় থাকেন। ২০০৮ সালে কলকাতা পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পরে পালিয়ে যান নেপালে; আবার ধরা পড়েন। শেষবার ২০১২ সালে কলকাতায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি।

আরও পড়ুনশীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের ৮ দিন রিমান্ড, মোল্লা মাসুদসহ ৩ জনের ৬ দিন ২৮ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

হাসপাতালে লঙ্কাকাণ্ড আহত ১৫, সেবা বন্ধ

রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের সঙ্গে ভর্তি থাকা জুলাই অভ্যুত্থানের আহতদের হাতাহাতি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচ চিকিৎসকসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ড সদস্যরা। গতকাল বুধবার সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চিকিৎসক, রোগী ও স্বজনরা হাসপাতাল ছেড়েছেন।

সংঘর্ষের ঘটনায় সকাল থেকেই সব ধরনের চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়েন চিকিৎসা নিতে আসা হাজারো রোগী। এরই মধ্যে সাত দিনের ছুটিতে যান হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ। তিনি নিরাপত্তার স্বার্থে হাসপাতাল বন্ধের সুপারিশ করেছেন।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন– হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শহীদুল ইসলাম, রেজিস্ট্রার ডা. মাহফুজুর রহমান, ডা. আরাফাত হোসেন, ডা. জাহিদ ও ডা. অভি। 
হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত চার রোগী হাসপাতালে বিষপান করেন। এটিকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের পরিচালক, চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা, গায়ে হাত তোলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বুধবার সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন। এতে হাসপাতালে আসা রোগীরা পড়েন বিপাকে। শিডিউল অনুযায়ী অস্ত্রোপচার করার কথা থাকলেও হয়নি। আউটডোরে দীর্ঘ সারি থাকলেও টিকিট দেওয়ার লোক ছিল না। শুধু জরুরি বিভাগ খোলা ছিল।

নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা গৃহবধূ ফাতেমা খাতুনের গতকাল চোখের ছানি অপারেশন হওয়ার কথা ছিল। তবে কর্মবিরতি থাকার কারণে সেটা করা সম্ভব হয়নি। তাঁর বড় ছেলে শাহিদুর ইসলাম বলেন, বুধবার সকালে আমার মায়ের অস্ত্রোপচারের কথা ছিল। হাসপাতালে এসে দেখেছি, নার্স ও কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করছেন। জানতে চাইলে কেউ কোনো কথা বলতে রাজি হননি। শুধু আমার মায়ের না, কয়েকশ রোগীকে সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে দেখেছি।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম বলেন, বেলা ১১টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। দুপুর দেড়টার দিকে সেনা ও কোস্টগার্ড সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে এরই মধ্যে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের অনেকে আহত হন এবং হাসপাতালের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।
জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের অভিযোগ, তারা উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। হাসপাতালের কর্মচারীরা তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। চিকিৎসা না দিয়ে হেনস্তা করা হয়েছে। তাদের চোখের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে।

জুলাই আন্দোলনে আহত হিল্লোল নামে একজন বলেন, সকাল থেকে সব ধরনের সেবা বন্ধ করে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করছিলেন। জরুরি সেবাও দিচ্ছিলেন না। এটি নিয়ে প্রতিবাদ জানালে হাসপাতালের স্টাফরা আমাদের ও সাধারণ রোগীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (তেজগাঁও) আলমগীর কবির বলেন, পরিস্থিতি এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে আমরা আরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করেছি, যাতে আবার সংঘর্ষ না হয়।

হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ বলেন, তিন দিন ধরে হাসপাতালে সমস্যা হচ্ছে। এত ঝুঁকি নিয়ে চাকরি করা যাবে না। আমি সাত দিনের ছুটি নিয়েছি। সকালে আমাদের কর্মীরা মনঃক্ষুণ্ন হয়ে কর্মবিরতিতে যান। এতে বহির্বিভাগের রোগীদের সঙ্গে মিলে চিকিৎসকদের নাজেহাল করেন জুলাই আহতরা।

কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। আনুমানিক ১৫ চিকিৎসক ও স্টাফ আহত হয়েছেন। তারা বেশির ভাগই পুরুষ। আর নারীদের তারা হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। 
তিনি জানান, জুলাই আহত ৫৫ জন ভর্তি ছিলেন। আত্মহত্যার চেষ্টা করে চারজন সোহরাওয়ার্দীতে এবং একজন সিএমএইচে ভর্তি আছেন।

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হাজারো ছাত্র-জনতা এ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। কয়েক মাস ধরে তাদের ৫৫ জন ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতালের পরিচালকের অভিযোগ, তাদের অনেককে ছুটি দেওয়া হলেও তারা হাসপাতাল ছাড়েননি। তারা এখান থেকে বিভিন্ন মিছিল-সমাবেশে অংশ নেন। এতে অন্য রোগীদের সমস্যা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান সমকালকে বলেন, চিকিৎসক ও নার্সদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাতের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বৃহস্পতিবার বৈঠক করে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বেলা সোয়া ৩টায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডাকা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চাঁদাবাজির অভিযোগে এনসিপি নেতা গ্রেপ্তার
  • সারাদেশে যৌথবাহিনীর হাতে আটক ৩৯০ জন
  • সাত দিনে যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার ৩৯০
  • কমলাপুরসহ দেশের ৪৫ রেলস্টেশনে আনসার মোতায়েন
  • হাসপাতালে লঙ্কাকাণ্ড আহত ১৫, সেবা বন্ধ
  • আলোচনায় সুব্রত বাইনের স্যাটেলাইট ফোন
  • ভারতীয় নাগরিকের মরদেহ হস্তান্তর
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে হবে
  • অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কতদিন লাগিবে?