বিভিন্ন দেশে কাজ করতে যাওয়া কর্মীদের মধ্যে প্রবাসে যাঁরা মারা যান, তাঁদের মধ্যে ৩১ শতাংশের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ১৬ শতাংশের মৃত্যু হয় দুর্ঘটনায়। আর ১৫ শতাংশ আত্মহত্যা করেন। ২৮ শতাংশের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। বাকিরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তবে প্রবাসী কর্মীর মৃত্যুসনদে থাকা কারণ নিয়ে সন্তুষ্ট নয় তাঁদের পরিবার। মৃত্যুর যথাযথ কারণ জানতে চায় তারা।

মৃত প্রবাসী কর্মীর মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করতে যৌথভাবে কাজ করছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ ও অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রামরু। এ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৫৫৪ জন মৃত প্রবাসীর তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা হয়, প্রবাসে মারা যাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের গড় বয়স ৩৭ বছর।

জর্ডানে এক বছর তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেছেন সাজেদা। হঠাৎ করেই ভবন থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়। মৃত্যুর যথাযথ কারণ জানতে চান সাজেদার ভাই।

সংলাপে উপস্থাপন করা নিবন্ধে আরও বলা হয়, গত ১২ বছরে প্রবাসে ৪০ হাজার ৭১৩ কর্মীর মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ২০২৪ সালে দেশে এসেছে ৪ হাজার ৮১৩ কর্মীর মৃতদেহ। এত অল্প বয়সে মৃত্যুর বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। বিদেশে যাওয়ার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেই তাঁদের পাঠানো হয়। তাঁরা সেখানে গিয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রবাসের মৃতদেহের সঙ্গে পাঠানো মৃত্যুসনদ যাচাইয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ময়নাতদন্ত করা হয় না। অথচ স্বাভাবিক মৃত্যু বলে পাঠানো অনেক মৃতদেহে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। মৃত প্রবাসী কর্মীদের পরিবারের মধ্যে ৪৮ শতাংশ মৃত্যুসনদে থাকা কারণ বিশ্বাস করে না। তাই মৃতদেহ দেশে আসার পর ময়নাতদন্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে নিবন্ধে।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নেয়ামত উল্ল্যা ভূঁইয়া বলেন, দেশে আসার পর ময়নাতদন্ত করা সম্ভব। এতে মৃত্যুসনদে থাকা তথ্যের ভুল ধরলে যে দেশ থেকে কর্মীর মৃতদেহ এসেছে, তারা কী ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারে; সেটাও ভেবে দেখতে হবে। যারা কর্মী নেয়, তারা বিরূপ আচরণ করতে পারে। সেসব দেশে লাখো কর্মী থাকে। তবু প্রবাসীদের অধিকারের কথা বলে যেতে হবে।

নিবন্ধ উপস্থাপন করেন রামরুর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক তাসনিম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, মৃত্যুসনদ একেক দেশের একেক রকম। এতে মৃত্যুর কারণ বোঝাও যায় না। পরিবার মৃতদেহে ক্ষতের চিহ্ন পাচ্ছে, অথচ মৃত্যুসনদে সেসবের উল্লেখ থাকে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে একই রকম মৃত্যুসনদের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। অল্প বয়সে মৃত্যুর বিষয়টাও খতিয়ে দেখা উচিত।

৮ ঘণ্টা কাজের বদলে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে। মানুষ হিসেবে যাচ্ছেন একজন কর্মী, মারা গেলে ফিরে আসছেন কার্গো হয়ে। বিশ্বের সব দেশেই মৃতদেহকে কফিন হিসেবে কার্গোর মতো করে পরিবহন করা হয়। তবে ঢাকা বিমানবন্দরে এখন মৃতদেহ হস্তান্তর আগের চেয়ে সহজ ও দ্রুত করা হয়েছে।

নিবন্ধে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরে বলা হয়, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ রাখতে বিমানবন্দরে হিমাগারের ব্যবস্থা করতে হবে। মৃত কর্মীর পরিবারকে প্রবাসী কর্মীদের পুনরেকত্রীকরণ কর্মসূচিতে যুক্ত করা যেতে পারে। বিদেশে পাঠানোর আগে কর্মীদের প্রশিক্ষণে বিভিন্ন রোগের বিষয়ে ধারণা দেওয়া উচিত।

সংলাপে যোগ দেন ২০১৭ সালে জর্ডানে মারা যাওয়া নরসিংদীর সাজেদার ভাই নূর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, জর্ডানে এক বছর তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেছেন সাজেদা। হঠাৎ করেই ভবন থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়। মৃত্যুর যথাযথ কারণ জানতে চান তিনি।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়। বিশেষ করে তাঁদের দ্রুত কিডনি নষ্ট হওয়ায় মুমূর্ষু রোগীর থেকে কিডনি নিয়ে রেখে বিক্রির অভিযোগ আছে। কোনো কর্মীর অঙ্গ যেন বিক্রি না হয়, সেটির বিষয়ে দূতাবাসকে সতর্ক থাকতে হবে।মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য সেলিম রেজা

বক্তারা বলেন, নারীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেন। আর উচ্চ অভিবাসন খরচ তুলতে গিয়ে বাড়তি পরিশ্রম করেও না পারার হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেন পুরুষ কর্মীরা। ৮ ঘণ্টা কাজের বদলে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে। মানুষ হিসেবে যাচ্ছেন একজন কর্মী, মারা গেলে ফিরে আসছেন কার্গো হয়ে। বিশ্বের সব দেশেই মৃতদেহকে কফিন হিসেবে কার্গোর মতো করে পরিবহন করা হয়। তবে ঢাকা বিমানবন্দরে এখন মৃতদেহ হস্তান্তর আগের চেয়ে সহজ ও দ্রুত করা হয়েছে।

মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য সেলিম রেজা বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়। বিশেষ করে তাঁদের দ্রুত কিডনি নষ্ট হওয়ায় মুমূর্ষু রোগীর থেকে কিডনি নিয়ে রেখে বিক্রির অভিযোগ আছে। কোনো কর্মীর অঙ্গ যেন বিক্রি না হয়, সেটির বিষয়ে দূতাবাসকে সতর্ক থাকতে হবে।

কর্মীদের বিদেশ পাঠানোর আগে মধ্যপ্রাচ্যের স্বীকৃত মেডিকেল সেন্টার থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। এ খাতে অরাজকতা আছে। টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা করানোর অভিযোগ আছে। তাই স্বাস্থ্য পরীক্ষা যথাযথ হচ্ছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী

ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ কামরুল হাসান বলেন, মৃত্যুর যথাযথ কারণ খুঁজতে হলে অবশ্যই ময়নাতদন্ত করতে হবে। যে বয়সে মারা যাচ্ছেন, তাতে প্রতিটা মরদেহের ময়নাতদন্ত করা উচিত। দূতাবাসেরও এটা তদন্ত করে দেখা উচিত, কেন কম বয়সে কর্মীরা মারা যাচ্ছেন।

বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, কর্মীদের বিদেশ পাঠানোর আগে মধ্যপ্রাচ্যের স্বীকৃত মেডিকেল সেন্টার থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। এ খাতে অরাজকতা আছে। টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা করানোর অভিযোগ আছে। তাই স্বাস্থ্য পরীক্ষা যথাযথ হচ্ছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।

সংলাপে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সচিব সেবাস্টিন রেমা। এতে আরও বক্তব্য দেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক মো.

গোলাম সরওয়ার ভূঁইয়া, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক এ টি এম আব্দুর রউফ মণ্ডল, বিএমইটির পরিচালক মাসুদ রানা প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব স থ য পর ক ষ কর ম র ম ত ম ত য সনদ কর ম দ র ন বন ধ ক জ কর প রব স পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

নিউ ইয়র্কে নিহত বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা সম্পর্কে যা জানা গেলো

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের সেন্ট্রাল ম্যানহাটনে একটি বহুতল অফিসে বন্দুক হামলায় নিহত হয়েছেন নিউ ইয়র্ক পুলিশের কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম (৩৬)। জানা গেছে, তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অভিবাসী ছিলেন। খবর রয়টার্সের।

নিহত কর্মকর্তা দিদরুল ইসলামকে একজন ‘বীর বাংলাদেশি অভিবাসী’ হিসেবে উল্লেখ বর্ণনা করেছেন নিউ ইয়র্কের মেয়র এবং নিউ ইয়র্কের পুলিশ কমিশনার। তারা বলেছেন, ওই কর্মকর্তা নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে অন্যদের জীবন রক্ষা করেছিলেন।

সোমবার ম্যানহাটনের মিডটাউন অফিস টাওয়ারের ভেতরে এক বন্দুকধারী হামলা চালিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম (৩৬) সহ চারজনকে হত্যা করে। হামলাকারী পরবর্তীতে আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

পুতিনকে এবার ১২ দিনের আল্টিমেটাম দিলেন ট্রাম্প

নিউ ইয়র্কে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত ৪

নিউ ইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “ভয়াবহ একটি বন্দুক সহিংসতার ঘটনায় আমরা চারটি প্রাণ হারিয়েছি, যার মধ্যে নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ বিভাগের একজন সদস্য ‘অফিসার ইসলাম’ রয়েছেন। 

অ্যাডামস জানান, নিহত অফিসার তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে নিউ ইয়র্ক পুলিশে কর্মরত ছিলেন এবং তিনি বাংলাদেশ থেকে আসা একজন অভিবাসী।

মেয়র বলেন, “হামলার সময় অফিসার ইসলাম অন্যদের জীবন রক্ষা করছিলেন, তিনি নিউ ইয়র্কবাসীদের রক্ষা করছিলেন। তিনি এই শহরকে ভালোবাসতেন এবং আমরা যাদের সাথে কথা বলেছি তারা সবাই বলেছেন যে, তিনি একজন সৎ মানুষ ও ঈশ্বরে বিশ্বাসী ব্যক্তি ছিলেন।”

মেয়র আরো জানিয়েছেন, সোমবার রাতে তিনি অফিসর ইসলামের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। 

মেয়র আরো বলেন, “আমি তাদেরকে বলেছি, অফিসার ইসলাম একজন একজন বীর এবং আমরা তার ত্যাগের প্রশংসা করি।”

নিউ ইয়র্কের পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ সংবাদ সম্মেলনে জানান, অফিসার ইসলাম বিবাহিত ছিলেন এবং তার দুটি সন্তান ছিল। তার স্ত্রী তৃতীয় সন্তানের মা হতে চলেছেন।

পুলিশ কমিশনার বলেন, “অফিসার ইসলাম নিজেকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছিলেন। তিনি চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন, তাকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।”

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
  • স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি দগ্ধ রোগীকেও বাঁচানো যায়
  • রাগ নিয়ন্ত্রণে হাদিসের ৭ উপদেশ
  • চুলে গুঁজে দিলেন ৭১১ গলফ ‘টি’
  • বাবা হারালেন চিত্রনায়িকা মিষ্টি জান্নাত
  • ‘নতুন একটি দলের কয়েকজন মহারথী’ বলার পর বক্তব্য বদলালেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে একজনের মৃত্যু
  • ভাসানীরা না থাকলে শেখ মুজিব কখনো তৈরি হতেন না: নাহিদ
  • কাভার্ড ভ্যানের পেছনে ধাক্কা দিয়ে দুমড়েমুচড়ে গেল যাত্রীবাহী বাস
  • নিউ ইয়র্কে নিহত বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা সম্পর্কে যা জানা গেলো