গড়ে ৩৭ বছর বয়সে মারা যাচ্ছেন প্রবাসী কর্মীরা: রামরুর সংলাপ
Published: 30th, May 2025 GMT
বিভিন্ন দেশে কাজ করতে যাওয়া কর্মীদের মধ্যে প্রবাসে যাঁরা মারা যান, তাঁদের মধ্যে ৩১ শতাংশের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ১৬ শতাংশের মৃত্যু হয় দুর্ঘটনায়। আর ১৫ শতাংশ আত্মহত্যা করেন। ২৮ শতাংশের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। বাকিরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তবে প্রবাসী কর্মীর মৃত্যুসনদে থাকা কারণ নিয়ে সন্তুষ্ট নয় তাঁদের পরিবার। মৃত্যুর যথাযথ কারণ জানতে চায় তারা।
মৃত প্রবাসী কর্মীর মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করতে যৌথভাবে কাজ করছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ ও অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রামরু। এ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৫৫৪ জন মৃত প্রবাসীর তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা হয়, প্রবাসে মারা যাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের গড় বয়স ৩৭ বছর।
জর্ডানে এক বছর তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেছেন সাজেদা। হঠাৎ করেই ভবন থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়। মৃত্যুর যথাযথ কারণ জানতে চান সাজেদার ভাই।সংলাপে উপস্থাপন করা নিবন্ধে আরও বলা হয়, গত ১২ বছরে প্রবাসে ৪০ হাজার ৭১৩ কর্মীর মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ২০২৪ সালে দেশে এসেছে ৪ হাজার ৮১৩ কর্মীর মৃতদেহ। এত অল্প বয়সে মৃত্যুর বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। বিদেশে যাওয়ার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেই তাঁদের পাঠানো হয়। তাঁরা সেখানে গিয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রবাসের মৃতদেহের সঙ্গে পাঠানো মৃত্যুসনদ যাচাইয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ময়নাতদন্ত করা হয় না। অথচ স্বাভাবিক মৃত্যু বলে পাঠানো অনেক মৃতদেহে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। মৃত প্রবাসী কর্মীদের পরিবারের মধ্যে ৪৮ শতাংশ মৃত্যুসনদে থাকা কারণ বিশ্বাস করে না। তাই মৃতদেহ দেশে আসার পর ময়নাতদন্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে নিবন্ধে।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নেয়ামত উল্ল্যা ভূঁইয়া বলেন, দেশে আসার পর ময়নাতদন্ত করা সম্ভব। এতে মৃত্যুসনদে থাকা তথ্যের ভুল ধরলে যে দেশ থেকে কর্মীর মৃতদেহ এসেছে, তারা কী ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারে; সেটাও ভেবে দেখতে হবে। যারা কর্মী নেয়, তারা বিরূপ আচরণ করতে পারে। সেসব দেশে লাখো কর্মী থাকে। তবু প্রবাসীদের অধিকারের কথা বলে যেতে হবে।
নিবন্ধ উপস্থাপন করেন রামরুর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক তাসনিম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, মৃত্যুসনদ একেক দেশের একেক রকম। এতে মৃত্যুর কারণ বোঝাও যায় না। পরিবার মৃতদেহে ক্ষতের চিহ্ন পাচ্ছে, অথচ মৃত্যুসনদে সেসবের উল্লেখ থাকে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে একই রকম মৃত্যুসনদের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। অল্প বয়সে মৃত্যুর বিষয়টাও খতিয়ে দেখা উচিত।
৮ ঘণ্টা কাজের বদলে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে। মানুষ হিসেবে যাচ্ছেন একজন কর্মী, মারা গেলে ফিরে আসছেন কার্গো হয়ে। বিশ্বের সব দেশেই মৃতদেহকে কফিন হিসেবে কার্গোর মতো করে পরিবহন করা হয়। তবে ঢাকা বিমানবন্দরে এখন মৃতদেহ হস্তান্তর আগের চেয়ে সহজ ও দ্রুত করা হয়েছে।নিবন্ধে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরে বলা হয়, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ রাখতে বিমানবন্দরে হিমাগারের ব্যবস্থা করতে হবে। মৃত কর্মীর পরিবারকে প্রবাসী কর্মীদের পুনরেকত্রীকরণ কর্মসূচিতে যুক্ত করা যেতে পারে। বিদেশে পাঠানোর আগে কর্মীদের প্রশিক্ষণে বিভিন্ন রোগের বিষয়ে ধারণা দেওয়া উচিত।
সংলাপে যোগ দেন ২০১৭ সালে জর্ডানে মারা যাওয়া নরসিংদীর সাজেদার ভাই নূর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, জর্ডানে এক বছর তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেছেন সাজেদা। হঠাৎ করেই ভবন থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়। মৃত্যুর যথাযথ কারণ জানতে চান তিনি।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়। বিশেষ করে তাঁদের দ্রুত কিডনি নষ্ট হওয়ায় মুমূর্ষু রোগীর থেকে কিডনি নিয়ে রেখে বিক্রির অভিযোগ আছে। কোনো কর্মীর অঙ্গ যেন বিক্রি না হয়, সেটির বিষয়ে দূতাবাসকে সতর্ক থাকতে হবে।মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য সেলিম রেজাবক্তারা বলেন, নারীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেন। আর উচ্চ অভিবাসন খরচ তুলতে গিয়ে বাড়তি পরিশ্রম করেও না পারার হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেন পুরুষ কর্মীরা। ৮ ঘণ্টা কাজের বদলে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে। মানুষ হিসেবে যাচ্ছেন একজন কর্মী, মারা গেলে ফিরে আসছেন কার্গো হয়ে। বিশ্বের সব দেশেই মৃতদেহকে কফিন হিসেবে কার্গোর মতো করে পরিবহন করা হয়। তবে ঢাকা বিমানবন্দরে এখন মৃতদেহ হস্তান্তর আগের চেয়ে সহজ ও দ্রুত করা হয়েছে।
মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য সেলিম রেজা বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়। বিশেষ করে তাঁদের দ্রুত কিডনি নষ্ট হওয়ায় মুমূর্ষু রোগীর থেকে কিডনি নিয়ে রেখে বিক্রির অভিযোগ আছে। কোনো কর্মীর অঙ্গ যেন বিক্রি না হয়, সেটির বিষয়ে দূতাবাসকে সতর্ক থাকতে হবে।
কর্মীদের বিদেশ পাঠানোর আগে মধ্যপ্রাচ্যের স্বীকৃত মেডিকেল সেন্টার থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। এ খাতে অরাজকতা আছে। টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা করানোর অভিযোগ আছে। তাই স্বাস্থ্য পরীক্ষা যথাযথ হচ্ছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরীফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ কামরুল হাসান বলেন, মৃত্যুর যথাযথ কারণ খুঁজতে হলে অবশ্যই ময়নাতদন্ত করতে হবে। যে বয়সে মারা যাচ্ছেন, তাতে প্রতিটা মরদেহের ময়নাতদন্ত করা উচিত। দূতাবাসেরও এটা তদন্ত করে দেখা উচিত, কেন কম বয়সে কর্মীরা মারা যাচ্ছেন।
বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, কর্মীদের বিদেশ পাঠানোর আগে মধ্যপ্রাচ্যের স্বীকৃত মেডিকেল সেন্টার থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। এ খাতে অরাজকতা আছে। টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা করানোর অভিযোগ আছে। তাই স্বাস্থ্য পরীক্ষা যথাযথ হচ্ছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সচিব সেবাস্টিন রেমা। এতে আরও বক্তব্য দেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব স থ য পর ক ষ কর ম র ম ত ম ত য সনদ কর ম দ র ন বন ধ ক জ কর প রব স পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
১৭ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে রাবি, হল বন্ধ নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
আসন্ন ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশ উপলক্ষে টানা ১৭ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)।
আগামীকাল শুক্রবার (৩০ মে) থেকে শুরু হয়ে এ ছুটি চলবে আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত। তবে এ ছুটি চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো ৫ মে থেকে ১৩ মে নয়দিন বন্ধ থাকবে।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক আকতার হোসেন মজুমদার ছুটির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আরো পড়ুন:
হল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ইবি শিক্ষার্থীদের অবস্থান
সড়ক দুর্ঘটনায় যবিপ্রবি শিক্ষার্থী নিহত
তিনি বলেন, “ঈদ ও গরমের ছুটি একসঙ্গে ১৭ দিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। ছুটি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম আগামী ১৬ জুন থেকে পুনরায় শুরু হবে। হলগুলো ১৪ জুন, অফিস ১৫ জুন এবং ১৬ জুন থেকে ক্লাস শুরু হবে।”
এদিকে, ছুটিতে স্বায়ত্ত্বশাসিত অন্য তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খোলা থাকলেও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে রাবি প্রশাসন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, আগামী সোমবার (৫ জুন) থেকে মঙ্গলবার (১৩ জুন) পর্যন্ত আবাসিক হলগুলো বন্ধ থাকবে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য এই ছুটিতে বাড়ি ফেরা সবসময় সম্ভব হয় না। বিশেষ করে যারা চাকরিসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত বা খণ্ডকালিন চাকরি করেন, তাদের জন্য হল বন্ধ থাকা বেশ ভোগান্তির কারণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেইসবুক গ্ৰুপগুলোর এক জরিপে দেখা গেছে, জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭৭৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৭ শতাংশই ঈদের ছুটিতে হল বন্ধ রাখার বিপক্ষে।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, “গত ঈদে রাবির হল খোলা রাখা নিয়ে এত আলাপ ওঠালাম, যারা হলে থাকবে তাদের তালিকা করলাম, খোলা রাখার হাজারটা যৌক্তিকতা দেখালাম- প্রশাসন সেসবের তোয়াক্কাই করেনি। প্রশাসনের এই আচরণগুলোকে ফ্যাসিজম বললে কাল আবার আমাদের নামে তদন্ত কমিটি গঠন হবে। প্রশাসন আর কিছুর রোডম্যাপ দিক আর না দিক, তারা পূর্ণাঙ্গ ফ্যাসিস্ট হয়ে যাওয়ার রোডম্যাপ দিয়ে দিচ্ছে। এদের মাথায় এখন নিয়োগ ছাড়া আর কিছুই কাজ করছে না।”
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঈদুল ফিতরের আগে হল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়। তখন কিছু শিক্ষার্থী প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নিলে প্রক্টর ও রেজিস্ট্রার মহোদয়ের সঙ্গে ধস্তাধস্তির মতো এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।”
তিনি আরো বলেন, “মুসলিম সম্প্রদায় ঈদ উদযাপন করলেও অন্যান্য সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা, এমনকি মুসলিম সম্প্রদায়েরও কিছু শিক্ষার্থী চাকরির প্রস্তুতি ও অন্যান্য কারণে হলে অবস্থান করতে চায়। হল খোলা রাখার এমন অনেক প্রাসঙ্গিক কারণ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের কাছে আহ্বান থাকবে-আপনারা বিষয়টি পুনর্বিবেচনায় নিয়ে ছুটির দিনগুলোতে হল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেবেন বলে প্রত্যাশা করছি।”
শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, “জীবনযুদ্ধে একজন শিক্ষার্থী যখন খুব খারাপ সময় মোকাবিলা করে, তখনই মূলত তিনি পরিবার, আত্মীয় স্বজন ব্যতিরেকে একাকী ঈদ করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সময়টা তাদের জন্য কতটুকু উপভোগ্য করা যায়- সে বিষয়ে হল প্রশাসনের পেরেশানি থাকা দরকার ছিল। কিন্তু উল্টা মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও কেড়ে নিচ্ছে। এটা শুধু একজন শিক্ষার্থীর অধিকার ক্ষুণ্নই নয়, বরং অমানবিক আচরণ। আমরা হল প্রশাসনকে গৃহীত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানাই।”
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, “প্রাধ্যক্ষ পরিষদের সুপারিশ অনুযায়ী ঈদের ছুটিতে আবাসিক হলগুলো বন্ধ থাকবে। তবে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যারা একান্তই থাকতে চায়, তাদের জন্য ব্যবস্থা থাকবে। এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী