দেশের নদ-নদীতে আরও ৩ দিন পানি বৃদ্ধির আভাস
Published: 30th, May 2025 GMT
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের ফলে দেশের বেশিরভাগ জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর প্রভাবে দেশের নদ-নদীতে আরও তিন দিন পানিবৃদ্ধির আভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
পাশাপাশি দেশের ছয় জেলা- ফেনী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরির আভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
আজ শুক্রবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টা চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী ইত্যাদি নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে; এবং এই সময় মুহুরী নদীর পানি সমতল বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে ও মাতামুহুরী নদী সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। ফেণী জেলার মুহুরী নদীর সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যাপরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। নদীসমূহের পানি সমতল আগামীকাল স্থিতিশীল থাকতে পারে। আগামী রোববার পানি কমতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারিগোরাইন, যাদুকাটা, মনু, ধলাই, খোয়াই ও সোমেশ্বরী নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ৩ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এই সময়ে নদীসমূহের পানি সমতল বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এই সময়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার নদীসমূহের সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যাপরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেছে, রংপুর বিভাগের ভিন্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ৩ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে; এবং ভিস্তা নদী সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে।
বুলেটিনে বলা হয়েছে, আগামী ১ দিন পর্যন্ত বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীসমূহে স্বাভাবিক অপেক্ষা অধিক উচ্চতায় জোয়ার পরিলক্ষিত হতে পারে।
বন্যার পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, সুরমা-কুশিয়ারা নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৩ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে; তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
বুলেটিনে আরও বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীসমূহের পানি সমতল স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ১ দিন স্থিতিশীল ও পরবর্তী ৪ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে; তবে বিপৎসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গঙ্গা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে অপরদিকে পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ৫ দিন পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে; তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গতকালের সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘণীভূত হয়ে প্রথমে নিম্নচাপ তারপর গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি পরবর্তীতে উত্তর অথবা উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে স্থলনিম্নচাপ আকারে টঙ্গাইল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর অথবা উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝড়িয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও রংপুর বিভাগ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, আগামীকাল শনিবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বেশ খানিকটা কমে আসতে পারে; বিশেষ করে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে অপেক্ষাকৃত কম বৃষ্টি হতে পারে।
অভ্যন্তরীণ নৌপথের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ঢাকা, ময়মনসিংহ এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত (পুনঃ) ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারী সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এছাড়া দেশের অন্যত্র একই দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ১ নম্বর (পুনঃ) ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বরিশাল নদী বন্দরে একটিও লঞ্চ ছেড়ে যায়নি বলে জানিয়েছেন বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম রেজা। তিনি বলেন, এখনও চালু হয়নি লঞ্চ চলাচল।
এদিকে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে উপকূলীয় এলাকা। মঙ্গলবার সৃষ্ট লঘুচাপটি বৃহস্পতিবার গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়। ভোর থেকে শুরু হয় ভারী বৃষ্টি। মাঝেমধ্যে ছিল ঝোড়ো হাওয়া। ফুঁসতে থাকে নদনদী। বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় গ্রামের পর গ্রাম। জোয়ারে ডুবেছে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা। ১ থেকে ৩ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বন য ব পৎস ম র ন চ সমতল ব বর শ ল নদ নদ সতর ক
এছাড়াও পড়ুন:
নরসিংদীতে ভূমিকম্পে দুজন নিহত, আহত ৬৭
নরসিংদীতে ভূমিকম্পে দুজন নিহত এবং কমপক্ষে ৬৭ জন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন—পলাশ উপজেলার কাজল আলী এবং গাবতলীর ওমর মিয়া।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে পলাশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনির হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা একজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হয়েছি। এখনো উদ্ধার তৎপরতা চলছে।”
গাবতলীতে ভূমিকম্পে দেয়াল ধসে পড়ে আহত হন ওমর মিয়া। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নরসিংদী জেলা সদর ও আশপাশের বিভিন্ন স্থানে মোট ৬৭ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
ভূকম্পনে নরসিংদী জেলার বিভিন্ন স্থানে অনেক ভবনে ফাটল ধরেছে। কিছু ভবন হেলে পড়েছে। বেশকিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
সুমন মিয়া নামের এক ব্যক্তি সাংবাদিকদের বলেছেন, “এত জোরে কাঁপছিল যে, দৌড়ে বাইরে বের হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। আমাদের বাড়ির দেয়ালে বড় ফাটল ধরেছে।”
দোকানি রহিম উদ্দিন বলেছেন, “দোকানের কাঁচের শোকেস ভেঙে গেছে। মালামাল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। জীবনে এমন ভয়াবহ কম্পন দেখিনি।”
নরসিংদীর সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ শামিম আহমেদ বলেন, “আমরা আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। যাদের অবস্থা গুরুতর, তাদের দ্রুত ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।”
ভূমিকম্পের পরপরই ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। জেলা প্রশাসন ক্ষয়-ক্ষতির নিরূপণে কাজ করছে।
ঢাকা/হৃদয়/রফিক