নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় ভুয়া পরিচয়ে ভোটার হওয়ার চেষ্টার সময় দুই সহযোগীসহ এক রোহিঙ্গা যুবককে আটক করেছে নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মকর্তা। আটক রোহিঙ্গার নাম মো.নুরুল আমিন ওরফে মনছুর (৩০)। আর দুই সহযোগী হলেন উপজেলার জয়াগ ইউনিয়নের ভাউরকোট গ্রামের মো. বেলাল ও মো. সেলিম। আজ মঙ্গলবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ওই ঘটনা ঘটে।

নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুরের দিকে নুরুল আমিন নামের এক ব্যক্তি পাশের নদনা ইউনিয়নের জন্মনিবন্ধন দেখিয়ে জয়াগ ইউনিয়নের ভোটর হওয়ার জন্য আবেদন জমা দেন। যার সঙ্গে জয়াগ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহিন উদ্দিনের স্বাক্ষর করা নাগরিকত্বের সনদসহ অন্যান্য কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহজাহান মামুন ভুয়া পরিচয়ে ভোটার হতে চাওয়া রোহিঙ্গাকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, আজ বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে ভোটার হতে আগ্রহী নুরুল আমিন নামের এক ব্যক্তিকে সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য ডাকেন। ওই ব্যক্তির কথাবার্তায় তাঁর সন্দেহ হয়। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি একজন রোহিঙ্গা বলে স্বীকার করেন। এ সময় ওই রোহিঙ্গাকে এবং তাঁর সঙ্গে থাকা আরও দুজনকে আটক করা হয়। আটক নুরুল আমিন কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরের ২২নম্বর ক্যাম্পের আমির হোসেনের ছেলে।

নির্বাচন কর্মকর্তা শাহজাহান মামুন আরও বলেন, এ ঘটনায় জয়াগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিন উদ্দিনকে তাঁর কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয়। তাঁর কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে ভোটার হতে এসেছেন ওই রোহিঙ্গা তরুণ। তা ছাড়া ওই রোহিঙ্গা ছাড়াও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে একটি চক্র জড়িত রয়েছে। তাই রোহিঙ্গা ও তাঁর দুই সহযোগী, ইউপি চেয়ারম্যানসহ মোট সাতজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাছরিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ভুয়া পরিচয়ে ভোটার হওয়ার চেষ্টার সময় এক রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় আটক হয়েছেন ওই রোহিঙ্গার দুই সহযোগীও। এ ঘটনায় থানায় নিয়মিত মামলা করবে নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়। তবে চেয়ারম্যানকে এখনো আটক করা হয়নি।

সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভুয়া পরিচয় দিয়ে রোহিঙ্গা নাগরিকসহ তিনজনকে আটক করেছে নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের লোকজন। পরে থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ গিয়ে তাঁদের থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনায় নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অভিযোগের আলোকে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ওই র হ ঙ গ ন র ল আম ন দ ই সহয গ ভ ট র হত এ ঘটন য় উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘প্লাস্টিক দূষণ রোধ করার এখনই সময়’

‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়’-এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসে বাংলাদেশ সরকারের এই স্লোগান যেন প্লাস্টিক দূষণের বাস্তবতা। প্রতিদিন হাজার হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্যে সয়লাব হয়ে পড়ছে শহর-বন্দর, নদী-নালা ও সমুদ্র উপকূল। পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি বাড়ছে মানুষের দৈনন্দিন দুর্ভোগ।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ৮ লাখ ২১ হাজার ২৫০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য। বাকি প্রায় ৫ লাখ টন বর্জ্য থেকে যাচ্ছে প্রকৃতিতে, যা শত বছরেও নষ্ট হয় না। এই দীর্ঘস্থায়ী দূষণ মাটি, পানি ও বায়ুর সঙ্গে মিশে ইকোসিস্টেম ধ্বংস করছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

প্লাস্টিক বর্জ্যের বড় অংশজুড়ে রয়েছে একবার ব্যবহারযোগ্য পানির বোতল, পলিথিন, প্রসাধনী ও ঘরোয়া সামগ্রী।এগুলো নর্দমা ও ল্যান্ডফিলে গিয়ে বর্ষার পানিতে বাধা সৃষ্টি করে শহরে জলাবদ্ধতার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।বর্ষা মৌসুমে ঢাকা শহরে বৃষ্টি হলেই যে জলাবদ্ধতা তৈরি হয় সেটা এসব প্লাস্টিকের কারণেই হয় বলে মনে করেন অনেকে।

আরো পড়ুন:

কারখানায় ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারে দাম দিতে হবে : উপদেষ্টা  

কিশোরগঞ্জে পানি উঠছে না নলকূপে, খাবার পানির তীব্র সংকট

দেশের প্রধান তিন নদী-পদ্মা, মেঘনা ও যমুনায় প্রতিদিন পড়ছে প্রায় ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক ও পলিথিন। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) জানায়, দেশের নদীগুলোর পানিতে প্রতিদিন ১৫ হাজার ৩৪৫ টন প্লাস্টিক গিয়ে পড়ে, যা সরাসরি বঙ্গোপসাগরে জমা হচ্ছে। এর ফলে সমুদ্রের তলদেশে প্লাস্টিকের স্তর তৈরি হচ্ছে, মারা যাচ্ছে সামুদ্রিক প্রাণী, ধ্বংস হচ্ছে সামুদ্রিক প্রাণিবৈচিত্র্য।

ঢাকায় প্লাস্টিক দূষণ সবচেয়ে ভয়াবহ। দেশের মোট প্লাস্টিক বর্জ্যের ৩০ শতাংশের বেশি উৎপন্ন হয় রাজধানীতে। প্রতিদিন গড়ে ৬৮১ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার ৮০ শতাংশই একবার ব্যবহারযোগ্য পণ্য। মাথাপিছু বছরে যেখানে গড়ে ৯ কেজি বর্জ্য উৎপন্ন হয়, ঢাকায় তা দ্বিগুণ-১৮ কেজি। নগর ব্যবস্থাপনার জন্য একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্লাস্টিক ব্যবহারকারী শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় আছে বাংলাদেশ। ২০০৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দেশের প্লাস্টিক ব্যবহার বেড়েছে তিনগুণের বেশি। ২০১৫ সালের গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, ২০২৫ সাল নাগাদ দেশের শহরগুলোতে প্রতিদিনের বর্জ্য ৫০ হাজার টনে পৌঁছাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিনের প্যাকেটসহ সিঙ্গেল ইউজ প্রোডাক্টের কারণে শহর ব্যবস্থাপনায় ধস নেমেছে। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য নর্দমা ব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়ছে। অপরিকল্পিত নগরায়নে কংক্রিটের নিচে মাটি হারিয়ে ফেলায় পানির প্রাকৃতিক শোষণও হচ্ছে না। ফলে প্লাস্টিক বর্জ্যে আটকে থাকা ড্রেন ও খালে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দরিদ্র ও বস্তিবাসী মানুষ।

রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, “পরিবেশ দূষণের জন্য প্লাস্টিক ও পলিথিন অন্যতম দায়ী।বিশেষ করে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, প্যাকেট ও পলিথিন সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ। গত তিন মাসে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ১০৮ কিলোমিটর খাল পরিষ্কার করা হয়েছে যার অধিকাংশই প্লাস্টিকে ভরপুর ছিল। সোর্স থেকে প্লাস্টিক না কমালে শুধু পরিষ্কার করে কোন লাভ হচ্ছে না।”

এই বাস্তবতায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও অন্তর্বর্তী সরকার পরিবেশ দূষণ রোধ করতে সব সরকারি অফিসে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছেন।কিন্তু সার্বিকভাবে প্লাস্টিক দূষণের ফলে পরিবেশকে বিপর্যয় থেকে মুক্ত করতে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি টেকসই, বাস্তবসম্মত এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। পাশাপাশি জনসচেতনতা ও সরকারি নজরদারি বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ