সর্বাত্মক সতর্কতা দুর্ঘটনা কমাতে পারে
Published: 7th, June 2025 GMT
লম্বা ছুটি থাকায় পবিত্র ঈদুল ফিতরে মানুষের যাতায়াত অনেকটা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ ছিল। ঈদুল আজহায় সরকার ছুটি বাড়িয়ে দেওয়ায় ধারণা করা গিয়েছিল, এবারের ঈদযাত্রাও নিরাপদ হবে। কিন্তু ঈদের আগের দুই দিনে দৈনিক প্রথম আলোয় সড়ক, রেলওয়ে ও নৌপথের যে চিত্র উঠে এসেছে, তা উদ্বেগজনক।
একেক পথে একেক রকম সমস্যা। সড়কে যানবাহন বিকল হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে, বেপরোয়া যানবাহন চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। ট্রেন সময়সূচি ঠিক রাখতে না পারায় যাত্রীরা পড়েছেন দুর্ভোগে। বর্ষার মৌসুমে লঞ্চে মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী বহন করায় ঝুঁকি বেড়েছে।
সড়ক, ট্রেন ও লঞ্চ—প্রতিটি পরিবহনের জন্য আলাদা কর্তৃপক্ষ আছে। আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। এরপরও ঈদযাত্রায় মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন আটকা পড়ে থাকায় শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
শুক্রবার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থেকে মির্জাপুরের গোড়াই পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও ধীরগতিতে যানবাহন চলাচলের খবর পাওয়া গেছে। সেখানে বেশ কয়েকটি গাড়ি বিকল হওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়। ফরিদপুরে গরুবোঝাই ট্রাক উল্টে পুকুরে পড়ে যাওয়ার ঘটনায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে প্রায় ১০ কিলোমিটারজুড়ে যানজট হয়। কেবল ঢাকা-ময়মনসিংহ বা যমুনার দুই পাশে যানজট হয়েছে, তা নয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেটসহ অনেক মহাসড়কেই কমবেশি যানজটের খবর পাওয়া গেছে।
এরই মধ্যে কয়েকটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অসচেতনতার কারণে। এর একটি ঘটে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুতে। নিয়ম হলো ট্রেন সেতুটির পূর্ব প্রান্তে এসে দাঁড়াবে। এরপর লাইনম্যানের সংকেত নিয়ে সেতুতে উঠবে। কিন্তু ট্রেনটি সংকেত অমান্য করে সেতুতে উঠে গেলে অটো ও বাইকে থাকা তিনজন মারা যান। জামালপুরে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পথে অটোরিকশাকে সামনে থেকে একটি বাস ধাক্কা দিলে একটি শিশু মারা যায়। ৪ জুন টাঙ্গাইলে ট্রাক দুর্ঘটনায় বাবা মারা গেলে তাঁর লাশ দাফন করে ছেলেকে আসতে হয় গরু বিক্রি করতে।
এ রকম অকালে যাতে কাউকে প্রাণ হারাতে না হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। চালকেরা সজাগ থাকলে যানজট ঠেকানো না গেলেও দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমিয়ে আনা যায়।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে বুধবার দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা সেতু দিয়ে ৫১ হাজার ৮৪৯টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। অন্যদিকে বুধবার রাত ১২টার পর থেকে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত পদ্মা সেতু দিয়ে ৫২ হাজার ৪৮৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। টোল আদায় করা হয়েছে ৫ কোটি ৪৩ লাখ ২৮ হাজার ১০০ টাকা।
ঈদ সামনে রেখে দুই সেতু থেকে বড় অঙ্কের আয় নিশ্চয়ই দেশের জন্য সুখবর। একই সঙ্গে যাত্রীদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে। কোন পথে কার গাফিলতি বা দায়িত্বহীনতার কারণে সড়কে দুর্ঘটনা বা যানজট তৈরি হচ্ছে, সেটা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছিলেন, ফিটনেসহীন কোনো যানবাহন রাস্তায় নামতে দেওয়া হবে না। কিন্তু কেবল ঈদের সময় নয়, সারা বছরই রাস্তায় দেদার ফিটনেসহীন যানবাহন চলাচল করছে। এর বিরুদ্ধে জোরদার আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
প্রত্যেক মানুষের ঈদযাত্রা ও ঘরে ফেরা নিরাপদ হোক—এটাই প্রত্যাশা। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পরিবহনের মালিক ও চালকদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। কারও সামান্য ভুলে যেন অসামান্য ক্ষতি না হয়ে যায়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন র ত ১২ট য নজট
এছাড়াও পড়ুন:
জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।
গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’
২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।
থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’