কোস্টগার্ডের মামলার পর কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল
Published: 8th, June 2025 GMT
ঢাকা-বরিশাল নৌপথে যাত্রীবাহী কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে। শনিবার রাতে লঞ্চটির রুট পারমিট বাতিলের আদেশ দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এর আগে শুক্রবার রাতে লঞ্চের মালিক মনজুরুল ইসলাম ফেরদৌসসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে বরিশাল কোতোয়ালী থানা মামলা দায়ের করেছে কোস্টগার্ড।
বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক মুহম্মদ মোবরাক হোসেনের স্বাক্ষরিত রুট পারমিট বাতিল আদেশে বলা হয়েছে, এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চটি বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে যাত্রী নিয়ে ঢাকা সদরঘাট থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। সদরঘাট টার্মিনাল ত্যাগ করার পর পোস্তগোলা ব্রীজ অতিক্রম করার আগে লঞ্চের একটি প্রপেলার ভেঙে যায়।
বিশ্বস্ত সূত্রে এ তথ্য জানার পর বিআইডব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম দায়িত্বরত মাষ্টার শুক্কুর ও ড্রাইভার মিজানুর রহমানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন। তারা প্রপেলার ভাঙ্গার কথা স্বীকার করেন। সম্ভাব্য দূর্ঘটনা এড়াতে লঞ্চের মাষ্টারকে যাত্রা বাতিল করে সদরঘাট টার্মিনালে ফেরত আসার নির্দেশ দেয়া হয়।
বিআইডব্লিউটিএ যুগ্ম-পরিচালক (নৌনিট্রা) লঞ্চের মাষ্টারের সঙ্গে ফোনে কথা বলে একই নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে মাষ্টারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। নির্দেশ অমান্য করে লঞ্চটি এক ইঞ্জিনে চালিয়ে শুক্রবার সকালে বরিশালে পৌঁছায়। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এবং ঈদ-উল-আযহায় ঘরমুখো যাত্রীদের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা ছিল। ফলে কর্তৃপক্ষের তথা সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট হতে পারতো। লঞ্চটির চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে।
এদিকে শুক্রবার সকালে কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চ বরিশাল নৌবন্দরে পৌঁছার পর যাত্রীদের সঙ্গে লঞ্চ কর্মচারীদের হট্টগোল হয়। যাত্রীদের অভিযোগ, তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হয়েছে। তখন কোস্টগার্ড ঘটনাস্থলে যায়। লঞ্চের মালিক ফেরদৌস দলবলসহ কোস্টগার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে অসাদচরণ করেন। সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে শুক্রবার রাতে মামলা করেন কোষ্টগার্ডের কনটিনিজ কমান্ডার শাহজালাল। এ ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের ম্যানেজার মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন ও মাস্টার শুকুর আলী।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঢ ক বর শ ল ন পথ ক র তনখ ল শ ক রব র বর শ ল
এছাড়াও পড়ুন:
দৌলতদিয়ায় ডুবোচরে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়লেন নদীতে, লঞ্চ ভাঙচুর, চালককে মারধর
মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটগামী একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ নদীর ডুবোচরে ধাক্কা খেয়ে চার থেকে পাঁচজন যাত্রী নদীতে পড়ে যান। এ সময় বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা লঞ্চের সামনের কাচ ভাঙচুর ও মাস্টার পলাশ মিয়াকে মারধর করেন। আজ শুক্রবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট থেকে যাত্রী বোঝাই করে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে আসে লঞ্চ এমভি ব্ল্যাকবার্ড। নদীর বেশির ভাগ অংশ পাড়ি দিয়ে দৌলতদিয়ার ৬ নম্বর ফেরিঘাটের বিপরীতে ডুবোচরের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে লঞ্চটির পেছনের অংশ ঘুরে যায়। এ সময় চার থেকে পাঁচজন যাত্রী নদীতে ছিটকে পড়ে যান। এ কারণে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা লঞ্চের সামনের কাচ ভাঙচুর ও মাস্টারকে মারধর করেন। স্থানীয় লোকজন তাৎক্ষণিক নদীতে পড়ে যাওয়া যাত্রীদের উদ্ধার করে টেনে নৌকায় তোলেন। একজন যাত্রী সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না বলে কয়েকজন অভিযোগ করেন। প্রায় ৩০ মিনিট পর বিকল্প আরেকটি লঞ্চের সাহায্যে ডুবোচর থেকে উদ্ধারের পর লঞ্চটি ঘাটে নোঙর করা হয়।
লঞ্চঘাটে কর্তব্যরত আরিচা লঞ্চ মালিক সমিতির দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক নুরুল আনোয়ার বলেন, দৌলতদিয়ার ৬ নম্বর ফেরিঘাটের সামনে থাকা চর বর্ষায় তলিয়ে গেছে। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই চরের সঙ্গে লঞ্চের ধাক্কা লাগলে কয়েকজন নদীতে পড়ে যান। এ সময় বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা লঞ্চের সামনের কাচের অংশ ভেঙে ফেলেন ও মাস্টারকে মারধর করেন।
লঞ্চযাত্রী রাজবাড়ীর মো. সবুজ মিয়া বলেন, ‘লঞ্চটির ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি যাত্রী নিয়ে আসছিল। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে মাস্টার সামনের কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না। ডুবোচরের সঙ্গে থাকায় আমার সঙ্গে থাকা তিন যাত্রী পদ্মা নদীতে পড়ে যান। পরে তাঁরা উঠলেও আরও এক-দুজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানতে পেরেছি।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয়ের টার্মিনাল সুপারভাইজার শিমুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্ঘটনার খবর পাওয়ামাত্র আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। তিনজন যাত্রী নদীতে পড়ে যাওয়ার সংবাদ পাই এবং তাঁদের উদ্ধার করা হয়। কোনো যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন, এমন খবর পাইনি।’ নিখোঁজ থাকলে অন্য যাত্রীদের কেউ বা তাঁর স্বজনেরা অবগত করতেন বলে মনে করেন তিনি। কর্তৃপক্ষের পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত লঞ্চটি ঘাটেই নোঙর করে রাখা হবে।
গোয়ালন্দ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনমাস্টার আবদুর রহমান বলেন, পাঁচজন যাত্রী পদ্মা নদীতে পড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ইতিমধ্যে চারজনকে উদ্ধার করেছেন। এর মধ্যে দুজনকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে। এখনো একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে যাত্রীরা জানিয়েছেন। তাঁর সন্ধানে ডুবুরি দল কাজ শুরু করেছে।
দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ওসি) ত্রিনাথ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা লঞ্চের সামনের কিছু অংশ ভাঙচুর করেন। এ ছাড়া চালককে মারধরের চেষ্টা করলে পুলিশ যাত্রীদের নিবৃত্ত করে। লঞ্চের চালক ও সহকারী নিরাপদ হেফাজতে আছেন। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান কার্যক্রম শেষে পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়া শুরু হবে। এখন পর্যন্ত কোনো যাত্রী নিখোঁজ নেই বলে তিনি জানতে পেরেছেন।