দীর্ঘ ৩৫ বছরের অচলাবস্থা কাটিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) আবারো সচল হতে চলেছে।সোমবার (২৮ জুলাই) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে রাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। তফসিল অনুযায়ি আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।

এ ঘোষণার পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে ক্যাম্পাসে।

প্রতিষ্ঠা ও সোনালী অতীত

আরো পড়ুন:

এক বছরেই ‘সমন্বয়ক’ রিয়াদের ভাগ্য বদল, গুলশানে গ্রেপ্তারের পর কানাঘুষা তুঙ্গে

কাঙ্ক্ষিত বাজেট চেয়ে বেরোবির শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ সংক্ষেপে রাকসু নামে পরিচিত, যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৬২ সালে। এর মূল লক্ষ্য ছিল- বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সৎ, মেধাবী এবং দেশপ্রেমিক ছাত্র নেতৃত্ব তৈরি করা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাকসু দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীতে সব স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাকসু ছিল শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর। বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র আন্দোলনের সোনালী অর্জনগুলোর পেছনে ছাত্র সংসদগুলোর অবদান অনস্বীকার্য।

নির্বাচন ও নেতৃত্ব

রাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ২১ জন প্রতিনিধিকে শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করা হয়। পদাধিকার বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রাকসুর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষার্থীরা সরাসরি ভোট দিয়ে সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং অন্যান্য পদ নির্বাচন করেন।

১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৪ বার রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৫৬-৫৭ সালে প্রথম রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম নির্বাচন ‘রাসু’ নামে অনুষ্ঠিত হলেও ১৯৬২ সাল থেকে এটি ‘রাকসু’ নামে পরিচিতি লাভ করে।

স্থবিরতা ও বিরতি

বিভিন্ন সময়ে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সামরিক শাসনের কারণে রাকসু নির্বাচন স্থগিত ছিল। ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের কারণে এবং পরবর্তীতে সামরিক শাসনের কারণে ১৯৭৫-১৯৮০ এবং ১৯৮১-১৯৮৮ সাল পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।

সর্বশেষ ১৯৮৯-৯০ মেয়াদের জন্য রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর থেকে দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে রাকসু অচল হয়ে পড়ে আছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে শিক্ষার্থীদের কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। এতে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া উপেক্ষিত এবং নতুন নেতৃত্ব তৈরিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান

গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাবির ১৪তম উপাচার্য হিসেবে উপাচার্য অধ্যাপক ড.

সালেহ্ হাসান নকীব। তিনি দায়িত্ব নেওয়া পর শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তা মেনে নিয়ে রাকসু নির্বাচন নিয়ে সদিচ্ছা প্রকাশ করে।

তবে উপাচার্য সদিচ্ছা প্রকাশ করলেও রাকসু সচলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত আন্দোলন করে আসছিলেন। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা নানা কর্মসূচির মাধ্যমে রাকসু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। অবশেষে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের এই দীর্ঘদিনের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩১ জুলাই আচরণবিধি প্রকাশ, ৬ আগস্ট খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ, ৭ ও ১০-১২ আগস্ট ভোটার তালিকায় আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি, ১৪ আগস্ট চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।

এছাড়া ১৭-১৯ আগস্ট মনোয়নপত্র বিতরণ, ২১ ও ২৪-২৫ আগস্ট মনোনয়নপত্র দাখিল, ২৭-২৮ আগস্ট মনোনয়নপত্র বাছাই, ৩১ আগস্ট প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ, ২ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার এবং ৪ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।

আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর রাবির সব আবাসিক হলে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। ভোটগ্রহণ শেষে ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

রাকসু প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন বলেন, “রাবির কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন ২০২৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার ও শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বিকাশে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন দশক পর এই বহুল প্রত্যাশিত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে আমরা ইতিহাসের নতুন অধ্যায় সূচনার পথে অগ্রসর হচ্ছি।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স প ট ম বর উপ চ র য আগস ট তফস ল গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা

মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।

আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।

জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।

দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।

সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতিআগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন টিআইবির
  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • ডাকসুর ব্যালট পেপারে ২ ভোট নিয়ে যা বলছে নির্বাচন কমিশন
  • নরসিংদীতে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি স্থগিত
  • দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • গাজায় পাগলের মতো বোমা ফেলছে ইসরায়েল
  • ফতুল্লা পুলিশের সহায়তায় আপন ঠিকানায় মানসিক প্রতিবন্ধী নারী
  • দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
  • ফতুল্লায় প্রতারণা করে ১৫ লাখ টাকার রড নিলো প্রতারক চক্র, কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ৩