ঈদুল আজহা যেতে না যেতে দেখা দিয়েছে দাঁতের নানা রকম সমস্যা। উৎসবে–পরবে মাংস ও হাড় চিবানো এবং মিষ্টিজাতীয় খাবার দাঁতের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এ সময় দাঁতের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
যেসব সমস্যা হয়
ঈদের সময় দাঁতের ফাঁকে মাংস আটকে গিয়ে ব্যথা, ইনফেকশন বা ফোলাভাব দেখা দেয়।
শক্ত হাড় বা চামড়া চিবাতে গিয়ে দাঁতের ফিলিং বা ক্যাপ উঠে যেতে পারে।
অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়ার ফলে দাঁতে ক্যাভিটি, সংবেদনশীলতা ও মাড়ির রোগ হতে পারে।
অতিরিক্ত ও ভারী ক্যালরিযুক্ত খাবার বারবার খাওয়ার কারণে মুখে জীবাণুর মাত্রা বেড়ে যায়।
কী করবেন
কোনো কারণে দাঁতে ব্যথা হলে ঈদের সময় আইবুপ্রফেন বা প্যারাসিটামল–জাতীয় ঘরোয়া ব্যথানাশক বড়ি খাওয়া যেতে পারে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্য ওষুধ নয়।
উষ্ণ লবণজল দিয়ে কুলি করলে সাময়িক আরাম পাওয়া যায়।
ইনফেকশন বা ফোলা হলে দাঁতের পাশে ঠান্ডা পানি বা বরফ দিয়ে সেঁক দেওয়া যেতে পারে।
দাঁতের কোনো অংশ ভেঙে গেলে যত দ্রুত সম্ভব ডেন্টাল ক্লিনিকে যোগাযোগ করা উচিত।
প্রতিকার ও প্রতিরোধ
সকালে ও রাতে অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করতে হবে।
খাওয়ার পর ফ্লস ব্যবহার করলে দাঁতের ফাঁকে কিছু আটকে থাকে না। এই ঈদে মাংস বেশি খাওয়া হয় বলে দাঁতের ফাঁকে মাংসের আঁশ জমে থাকে। শুধু ব্রাশ করে তা পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না। তাই প্রতিবার মাংসজাতীয় খাবার খাওয়ার পর ফ্লস করুন।
শক্ত হাড় সাবধানে খাওয়া উচিত। দুর্বল দাঁতে হাড়ে কামড় দিলে দাঁত ভেঙে যাওয়া বা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
শিশু ও বয়স্কদের দাঁতের প্রতি আলাদা মনোযোগ দিতে হবে। দাঁত দিয়ে রক্ত পড়লে ঠান্ডা পানি দিয়ে কুলকুচি করুন বা বরফ চেপে রাখুন, তারপর চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আঘাত, দাঁত ভাঙা, রক্তপাতের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ডা.
জেবিন জান্নাত: ডেন্টাল ইউনিট, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বকুলতলায় বৃষ্টির সুর
নীল-সাদা পোশাকে সজ্জিত হয়ে নানা বয়সী মানুষ এসে জড়ো হতে থাকেন। যেন শহরের হৃদয়ে নেমে আসে গ্রামবাংলার ঘ্রাণ। মেঘলা আকাশের নিচে কণ্ঠে সুর, পায়ে তাল, কল্পনায় বর্ষার রূপই দেখা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় গতকাল রোববার এভাবে উদযাপন হলো ‘বর্ষা উৎসব ১৪৩২’।
বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে আষাঢ়ের প্রথম দিনে রাগ, রস ও রং মিলে তৈরি হলো এক বর্ষামুখর ক্যানভাস। এবারের আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন নবীন সংগীতশিল্পী সোহানী মজুমদার। সেতারের কোমল তারে বেজে ওঠে রাগ ‘আহীর ভৈরব’। রাগভিত্তিক এ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মিলে যায় প্রাচ্যের সংগীত ঐতিহ্য ও বর্ষার আধ্যাত্মিকতা। সেই মুহূর্তে বকুলতলায় যেন ভেসে বেড়ায় বৃষ্টির সুর আর আকাশের নরম আলো।
‘বর্ষাকথন’ পর্বে বর্ষার ভাবনা, পরিবেশ ও সময়ের প্রেক্ষাপটে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শিল্পী কাজী মিজানুর রহমান।
ঘোষণা পাঠ করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট এবং সভাপতিত্ব করেন লেখক ও গবেষক অধ্যাপক ড. নিগার চৌধুরী। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সংস্কৃতিকর্মী নুসরাত ইয়াসমিন রুম্পা।
ঘোষণাপত্র পাঠে জানানো হয়, ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে আজ ঋতুচক্রে দেখা দিচ্ছে অসামঞ্জস্য। গ্রীষ্ম হয়ে উঠছে খরতর, বর্ষা রুষ্ট, বসন্ত ক্ষীয়মাণ। এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছে মানুষের সীমাহীন ভোগবাদী আচরণ, প্রকৃতির ওপর অনবরত অনাচার। ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত, সমুদ্রজল স্ফীত, ওজোনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত– প্রকৃতি আজ সংকটে।
এ প্রসঙ্গে মানজার চৌধুরী সুইট সমকালকে বলেন, এ উৎসব শহুরে জীবনে আমরা প্রায় ১৮ বছর ধরে পালন করে আসছি। উৎসবের শিকড় নিহিত রবীন্দ্রনাথের ‘বর্ষামঙ্গল’-এ। আমরা তারই উত্তরসূরি হয়ে আষাঢ়ের প্রথম দিনটিকে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিই। এতে শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, বরং তার সংকটও তুলে ধরা হয়। আমরা চাই, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক
গড়ুক, তার বিপন্নতাকে বুঝুক এবং তা রক্ষায় সক্রিয় হোক।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম, এ ধরনের উৎসবই সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপ। শিকড়ের দিকে ফিরে যাওয়ার মধ্যে নিহিত আমাদের সংস্কৃতি ও চেতনার পুনর্জাগরণ।
বর্ষা মানে নতুন জন্মের বারতা। সেই বারতা ছড়িয়ে দিতে উৎসবে প্রতীকীভাবে শিশু-কিশোরের হাতে তুলে দেওয়া হয় বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা। এই চারাগুলো শুধু বৃক্ষ নয়, বরং হয়ে উঠেছে সবুজ ভবিষ্যতের আশ্বাস।
উৎসবে একক সংগীত পরিবেশন করেন ইয়াসমিন মুশতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী ও নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা।
রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন অণিমা রায়, শামা রহমান, মকবুল হোসেন ও ফেরদৌসী কাকলি। লোকসংগীত পরিবেশন করেন বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, শ্রাবণী গুহ রায় ও এস এম মেজবাহ। আধুনিক গান গাইতে মঞ্চে ওঠেন রত্না সরকার।
দলীয় সংগীতে অংশ নেয় সীমান্ত খেলাঘর আসর (শিশু-কিশোর), সুর বিহার, বহ্নিশিখা, সুর নন্দন এবং সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। আবৃত্তি পরিবেশন করেন নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি ও আসান উল্লাহ তমাল। শিল্পবৃত্ত শিশু-কিশোর দল পরিবেশন করে আবৃত্তি ও নৃত্য কোলাজ।
নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেয় ধৃতি নর্তনালয়, নৃত্যাক্ষ, স্পন্দন, বেমুকা ললিতকলা কেন্দ্র, সিনথিয়া একাডেমি অব আর্টস ও নৃত্যম।