না হয় একটু সময় লেগেছে, কিছুকাল খারাপ যাওয়ার জন্য। তাই বলে ব্রাজিলকে ছাড়া বিশ্বকাপ হয় নাকি কখনও! লবণ ছাড়া যেমন খাবারে স্বাদ মেলে না, তেমনি ব্রাজিলকে ছাড়াও বিশ্বকাপ হয় না! পেলে-গারিঞ্চাদের উত্তরসূরি ভিনি- রাফিনিয়ারাও যেন সেটা মনে করিয়ে দিলেন। যারা কিছুদিন গেল গেল ... রব উঠিয়েছিল তাদেরও স্মরণ করিয়ে দিলেন ব্রাজিলের অনন্য এক রেকর্ডের কথা। তা হলো, বিশ্বকাপে তারাই একমাত্র দল, যারা কিনা এ পর্যন্ত সব আসরেই অংশগ্রহণ করেছে। ১৯৩০ থেকে ২০২৬– বিশ্বকাপের ২৩তম আসরে খেলা নিশ্চিত করেছে ব্রাজিল। যেখানে জার্মানি এত গাম্ভীর্য দেখালেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ বার বিশ্বকাপ খেলেছে। আর্জেন্টিনা, ইতালি, মেক্সিকোও সব মিলিয়ে ১৮ বার এই বিশ্বমঞ্চে পা রাখতে পেরেছে।
পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের আর যাই হোক, বিশ্বকাপে যাওয়া নিয়ে কখনোই দুশ্চিন্তায় ঘুম হারাম করতে হয়নি। বিশ্বকাপের প্রথম তিন আসর তারা খেলেছিল আমন্ত্রণ পেয়ে। ১৯৫০ এবং ২০১৪ বিশ্বকাপে আয়োজক হিসেবে অংশগ্রহণ ছিল সেলেকাওদের। ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৯৮– বিশ্বকাপ খেলেছিল তারা চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। কারণ, তখন পর্যন্ত সেটাই ছিল নিয়ম– বিশ্বকাপ জিতলে পরের আসরে অংশগ্রহণ নিশ্চিত। এর বাইরে বাকি ১৪ আসরেই তারা বাছাই পর্ব খেলে যোগ্যতা অর্জন করে অংশগ্রহণ করেছে। ব্রাজিল ছাড়া এখনও পর্যন্ত কোনো বিশ্বকাপ আসর সম্পন্ন হয়নি। জিকো থেকে রোনালদো, কাফু থেকে কাকা– বিশ্বকাপের সঙ্গে ব্রাজিলের এই আত্মার সম্পর্ক কখনোই কেউ ছিন্ন হতে দেননি। এটা ঠিক যে আর্জেন্টিনা যেখানে বাছাই পর্বের চার রাউন্ড আগে মার্চে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিত করেছে, সেখানে ব্রাজিল জায়গা বুকিং দিয়েছে মঙ্গলবার প্যারাগুয়েকে ১-০ গোলে হারিয়ে।
বিশ্বকাপের ‘হেক্সা মিশন’-এ এবার ব্রাজিল উড়িয়ে এনেছেন ইউরোপিয়ান কোচ কার্লো আনচেলত্তিকে। যিনি এসেই ঘোষণা দিয়েছেন, ‘মেক ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন অ্যাগেইন’। ২০০২ সালে সেই শেষবার বিশ্বকাপ স্পর্শ করার সুযোগ পেয়েছিল সেলেকাওরা। তার পর থেকে শুধুই শূন্যতা। মাঝে ২০১৪ বিশ্বকাপে সেরা সাফল্য ছিল সেমিফাইনালে যাওয়া। এবার উত্তর আমেরিকার বিশ্বকাপ আসরে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে সেলেকাওরা। আগামী বছরের ১১ জুন মেক্সিকো সিটি থেকে শুরু হবে বিশ্বকাপ। নিউইয়র্কের ১৯ জুলাই হবে ফাইনাল। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা আর মেক্সিকো– তিন দেশের ১৬টি শহরে বসবে আগামী বছরের বিশ্বকাপ আসর। এবারই প্রথম সবচেয়ে বেশি ৪৮ দেশ নিয়ে শুরু হবে বিশ্বকাপ।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বিশ্বকাপে সব ধরনের রেকর্ডেই অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে লাতিনের দেশ ব্রাজিল। তা শুধু ২২ বার অংশগ্রহণ করেছে বলেই না। কিংবা পাঁচবার বিশ্বকাপ জয়ের কারণেও নয়। ব্রাজিল ফুটবলের সেই সৌন্দর্যের দেশ, যারা কিনা সবচেয়ে বেশি ১১৪টি বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলেছে। সবচেয়ে বেশি ৭৬ ম্যাচ জিতেছে এবং সর্বাধিক ২৩৭টি গোল উপহার দিয়েছে বিশ্বকাপ দর্শকদের। যার একেকটি গোলের সঙ্গে মিশে আছে কিংবদন্তিদের নাম। যুগের পর যুগ, প্রজন্মের পর প্রজন্মকে মোহিত করে রাখা এই ব্রাজিল আসলে ফুটবলেরই অলংকার, যাকে ছাড়া ফুটবলের সৌন্দর্যও থাকে অপূর্ণ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ টবল ব শ বক প র র ব শ বক প
এছাড়াও পড়ুন:
দণ্ডাদেশের রায় বাতিল, খালাস পেলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোবারক
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় খালাস পেয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার মো. মোবারক হোসেন।
দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে ১১ বছর আগে আপিল করেছিলেন মোবারক। তাঁর করা আপিল মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ আজ বুধবার এ রায় দেন। একই সঙ্গে মোবারককে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ডাদেশের রায় বাতিল করা হয়েছে।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলায় এই প্রথম আপিল করে কেউ খালাস পেলেন বলে জানিয়েছেন মোবারকের আইনজীবীরা।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর আপিল বিভাগে আপিল করেন মোবারক, যার ওপর ৮ জুলাই শুনানি শুরু হয়।
২২ জুলাই শুনানি শেষে আপিল বিভাগ রায়ের জন্য ৩০ জুলাই দিন রাখেন। সে অনুযায়ী আজ বেলা পৌনে ১১টার দিকে রায় ঘোষণা করেন আদালত।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে মোবারকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও ইমরান এ সিদ্দিক এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম উপস্থিত ছিলেন।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মোবারককে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তাঁর বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে দুটি প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে ১ নম্বর অভিযোগে মোবারককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আর ৩ নম্বর অভিযোগে মোবারককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। অপর তিনটি অভিযোগ (২,৪ ও ৫ নম্বর অভিযোগ) প্রমাণিত না হওয়ায় এগুলো থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালের রায় থেকে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় মোবারক জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি জামায়াতের ইউনিয়ন পর্যায়ে রুকন হন। পরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন।
আপিল বিভাগের রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘১ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড ও ৩ নম্বর অভিযোগে মোবারককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। দুই অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রায় বাতিল করা হয়েছে। অন্য কোনো মামলা না থাকলে তাঁর কারামুক্তিতে বাধা নেই।’