চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বালু ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি, যৌথ বাহিনীর অভিযানে উদ্ধার
Published: 12th, June 2025 GMT
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় জহির উদ্দিন নামের এক বালু ব্যবসায়ীকে দুর্বৃত্তরা অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করেছিল। তবে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের ফুলতলা স্লুইসগেট এলাকা থেকে তাঁকে উদ্ধার করে। অভিযানে অপহরণকারী কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
জহির উদ্দিন উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা এলাকার মৃত আবদুল কাদেরের ছেলে ও বালু ব্যবসায়ী। তিনি নলুয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি।
যৌথ বাহিনী ও অপহৃত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জহির উদ্দিন দীর্ঘদিন ইজারার মাধ্যমে ডলু নদের গাটিয়াডেঙ্গা এলাকায় খননযন্ত্র বসিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে আসছিলেন। গতকাল বুধবার রাত নয়টার দিকে অপরিচিত এক ব্যক্তি মুঠোফোনে বালু কেনার কথা বলে এওচিয়া ইউনিয়নের বইক্যারপাড়া এলাকায় দেখা করতে বলেন তাঁকে। পরে জহির উদ্দিন তাঁর ছোট ভাই সোহেলকে সঙ্গে নিয়ে বইক্যারপাড়া এলাকায় যান। সেখানে সাত-আটজন অপরিচিত ব্যক্তি সোহেলকে মারধর করে তাড়িয়ে দেন এবং জহির উদ্দিনকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান। আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা কাঞ্চনা ইউনিয়নের ফুলতলা স্লুইসগেট এলাকা থেকে তাঁকে উদ্ধার করেন।
অপহৃত জহির উদ্দিনের ছোট ভাই মো.
সাতকানিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সুদীপ্ত রেজা জয়ন্ত প্রথম আলোকে বলেন, বালু ব্যবসায়ীকে অপহরণের খবর শোনার পর রাত থেকেই সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করেন। যৌথ বাহিনীর অভিযান দেখে অপহরণকারীরা ওই বালু ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে গেছেন। পরে আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে অপহৃত বালু ব্যবসায়ী জহির উদ্দিনকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাঁকে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস য় এল ক য় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
টানা ২৬ বছর কারাভোগ, ৬০ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে ‘শিবির’ নাছির
খুন, অপহরণ, অস্ত্র, চাঁদাবাজির মামলায় টানা ২৬ বছর কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার ১১ মাস পর বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন ৬০ বছর বয়সী নাছির উদ্দিন চৌধুরী ওরফে ‘শিবির নাছির’। গত বৃহস্পতিবার কুলসুমা বেগমকে জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাছিরের বিয়ের বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে।
নাছিরের বিরুদ্ধে জোড়া খুন, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও অস্ত্র আইনের মামলা ছিল ৩৬টি। একে একে খালাস পান ৩১টি মামলায়। দুটিতে সাজা হলেও আগে কারাভোগে শেষ হয়ে যায়। আছে আর তিনটি মামলা। এর মধ্যে দুটি মামলায় আগে থেকে জামিনে ছিলেন। শেষ মামলায় গত বছরের ১১ আগস্ট জামিন হওয়ার পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান নাছির। র্যাব-পুলিশের তালিকাভুক্ত নাছির একসময় শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় ‘শিবির নাছির’ নামের পরিচিত হয়ে ওঠেন।
কারা সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সালের ৯ এপ্রিল থেকে কারাগারে ছিলেন নাছির। দীর্ঘ ২৬ বছর পর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। বর্তমানে ফটিকছড়ির তিনটি হত্যা মামলা বিচারাধীন।
নাছিরের বড় বোন লিলি আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, হাটহাজারীর ছিপাতলী গ্রামের কুলসুমা বেগমের সঙ্গে তাঁর ভাই নাছিরের বিয়ে হয়েছে বৃহস্পতিবার। এতে ১৫ লাখ টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করা হয়। মেয়েপক্ষ থেকে তাঁরা কোনো যৌতুক নেননি। এখন তাঁর ভাই সংসারী হয়ে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে চান।
আরও পড়ুন২৬ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন ‘শিবির’ নাছির১১ আগস্ট ২০২৪আদালত সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর নাছিরের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রাবাসে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় রায় হয়। এতে তাঁর পাঁচ বছরের সাজা হয়েছিল। এর আগে ২০০৮ সালে অস্ত্র মামলায় ১০ বছরের সাজা হয়। ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জমির উদ্দিন হত্যা মামলায় খালাস পান নাছির। ১৯৯৪ সালের ২০ নভেম্বর জমিরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরি ও হাটহাজারীর তিন খুনের মামলায় খালাস পান নাছির। ২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর সকালে চট্টগ্রামের জামাল খান রোডে অধ্যক্ষ মুহুরির বাসায় ঢুকে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা তাঁকে হত্যা করে। এভাবে ৩১টি মামলায় খালাস পান নাছির। নাছিরের আইনজীবী মনজুর আহমেদ আনসারী দাবি করেন, রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে নাছিরকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। তাই খালাস পেয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুননাছিরের ভয় দেখিয়ে ‘বাচ্চাদের ঘুম পাড়াতেন মায়েরা’০১ জুলাই ২০২২বিবাহিত জীবনে যাতে সুখী হতে পারেন, এ জন্য দোয়া চেয়েছেন নাছির। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসা করে সংসার চালিয়ে সুন্দর জীবন যাপন করতে চান তিনি।
‘সন্ত্রাসী’ নাছির উদ্দিন ছাত্রশিবিরের সঙ্গে কখনো জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেন ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগরের (উত্তর) সভাপতি তানজীর হোসেন। তিনি বলেন, লোকজনের মুখে মুখে নাছিরের নামের সঙ্গে শিবির কথাটি জুড়ে যায়। তিনি হয়তো শিবিরের ভালো কাজকে সমর্থন করতেন। কিন্তু তিনি কখনো শিবিরের কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।’