Samakal:
2025-09-17@23:13:57 GMT

নির্বাসিত, তবুও অপরাজিত

Published: 12th, June 2025 GMT

নির্বাসিত, তবুও অপরাজিত

দেশে মেধার নিশ্চয়ই অভাব রয়েছে, কিন্তু তার অপচয়টা বড়ই মর্মান্তিক। এ দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া কেবল একালের ঘটনা নয়, বহুকালের; তবে একালে সেটা মর্মান্তিক, প্রায় অবিশ্বাস্য আকার ধারণ করেছে। মেধা অবশ্যই জাতীয় সম্পদ; এবং সেটাও সমানে পাচার হয়ে যাচ্ছে, নানাভাবে। দাউদ হায়দারের মৃত্যুসংবাদে ব্যক্তিগতভাবে যে অত্যন্ত পীড়িত হয়েছি সেই সত্যের সঙ্গে সমষ্টিগত ক্ষতির বোধটাও আমাকে মর্মাহত করেছে। 
দাউদ তো কেবল মেধাবান নয়, ছিল প্রতিভাবান। অতিঅল্প বয়সে সে অসাধারণ সব কবিতা লিখেছে। ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’ পঙ্‌ক্তিটি তো ভুলবার মতো নয়। সেটাই তার প্রথম কাব্যগ্রন্থের শিরোনাম। যে-কবিতাটির একটি পঙ্‌ক্তির জন্য ৫১ বছর ধরে নির্বাসনে থেকে শেষ পর্যন্ত  বিদেশের মাটিতেই তাকে মৃত্যুবরণ করতে হলো সেটির শিরোনামটিও মনে দাগ কাটে; ‘বলো সূর্যের কালো জোৎস্নায় কালো বন্যায়।’ ১৯৭৪-এ লেখা। দেশ তখন সদ্য স্বাধীন হয়েছে, এবং স্বাধীনতার জন্য দেশবাসীকে যে মূল্য দিতে হয়েছে ইতিহাসে তার তুলনা বিরল। কিন্তু প্রত্যাশিত ছিল যে মুক্তি সেটা আসেনি। বরং চতুর্দিকে দেখা গেছে সন্ত্রাস, লুণ্ঠন ও লোলুপতার অন্ধকার। দাউদরা সেই প্রজন্মের সন্তান, যুদ্ধের সঙ্গে যাদের প্রত্যক্ষ যোগ ছিল; হানাদারদের নৃশংসতা যারা সহ্য করেছে, দেখেছে এবং লড়েছেও। যুদ্ধ শেষে কবিতার চর্চাকেও দাউদ অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধেরই অপরিহার্য অংশ হিসেবে গণ্য করেছে। অত্যন্ত প্রাণবন্ত ছিল সে, টগবগ করছিল আবেগে, উত্তেজনায় এবং চিন্তায়। অনেক কিছু করা চাই, করা সম্ভব, ভাবছিল সে। সে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষ অনার্সের ছাত্র তখনই দায়িত্ব পেয়েছে দৈনিক সংবাদ-এর মতো জাতীয় দৈনিকের সাহিত্যপাতা সম্পাদনার। পাতাটিকে সে ভরপুর রাখত নবীন ও প্রবীণ লেখকদের প্রাণোচ্ছল নতুন নতুন লেখায়। নিজেও লিখত। এবং লিখেছিল ও ছেপেছিল অন্ধকার বিষয়ে নিজের ওই কবিতাটি, যার একটি পঙ্‌ক্তির জন্য সে প্রথমে কারাবন্দি ও পরে নির্বাসিত হয়। একটি মাত্র পঙ্‌ক্তির জন্য এমন কঠিন দুর্ভোগ সাহিত্যের ইতিহাসে বিরল ঘটনা বৈকি। তাও ঘটল দেশ যখন মুক্ত হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছিল তখন। আমাদের দেশের ধর্মীয় মৌলবাদীরা কবিতার একনিষ্ঠ পাঠক বলে সুপরিচিত নয়। তাও আবার দৈনিক পত্রিকার সাহিত্যপাতাতে ছাপা কবিতার। নিশ্চয়ই কেউ তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন; এবং যারা করেছিলেন তারা সেটা এমনি এমনি করেননি, উদ্দেশ্য ছিল। উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। ইস্যুর খোঁজে ব্যস্ত ধর্মীয় মৌলবাদীরা একটি রাজনৈতিক ইস্যু পেয়ে গেছে, এবং সঙ্গে সঙ্গে ভীষণ হট্টগোল শুরু করে দিয়েছে। বিব্রত হয়ে সরকার দাউদকে গ্রেপ্তার করেছে। ওই কাজটা করা কেবল যে সরকারের জন্য আবশ্যক ছিল তা নয়, দাউদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্যও প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। 
দাউদ প্রথমে জেলে গেল, তারপর সরকারই তাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে ভারমুক্ত হলো। দাউদ কলকাতায় গেল। কিন্তু প্রতিভাবান ওই তরুণ ভেঙে পড়বার পাত্রটি ছিল না। কলকাতার এখানে-সেখানে সে আশ্রয় খুঁজে নিল। অন্নদাশঙ্কর রায়ের সহকারী হিসেবেও সে কাজ করেছে। কিন্তু নিজের অসমাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্ত করার কথাটা ভোলেনি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হয়ে যথারীতি অনার্স ও এমএ ডিগ্রি লাভ করে। এবং কলকাতার লেখকদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপন এবং নিজের লেখালেখির কাজেরও কোনো বিরাম ঘটেনি। 
অন্নদাশঙ্কর রায়ের মাধ্যমে জার্মান ঔপন্যাসিক গুন্টার গ্রাসের সঙ্গে দাউদ হায়দারের পরিচয় ঘটে। সাহিত্যের জন্য তথ্য ও অভিজ্ঞতা সংগ্রহের জন্য ওই ঔপন্যাসিক তখন কলকাতায় ছিলেন। দাউদ যে একজন প্রতিভাবান তরুণ গুন্টার গ্রাসের পক্ষে সেটা টের পেতে বেশি সময় লাগেনি। গুন্টার গ্রাসের মধ্যস্থতাতেই দাউদ জার্মানিতে গেছে ১৯৮৭ সালে। সেখানে গিয়ে জার্মান বেতারের বাংলা বিভাগে তার কর্মসংস্থান ঘটেছে। ১৯৮৯-তেই হবে, গুন্টার গ্রাস ঢাকায় এসেছিলেন। ঢাকাস্থ জার্মান সংস্কৃতি কেন্দ্রের আগ্রহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদে তাঁর একটি বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। ঘটনাক্রমে আমি তখন কলা অনুষদের ডিন। ডিন অফিসে আলাপকালে তিনি দাউদের কথা উল্লেখ করেছিলেন। দাউদের ভাইরা ঢাকায় থাকে এবং সাহিত্যচর্চা করে বলে তিনি উল্লেখ করেছিলেন। 
তা দাউদের ভাইয়েরা সাহিত্যচর্চা করতেন বৈকি। এক পরিবারে একই সময়ে এতজন সাহিত্যচর্চাকারীর উপস্থিতি সচরাচর দেখা যায় না। 

জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা জিয়া হায়দার ছিলেন নাট্যকার এবং নাট্যসংগঠক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় মাস্টার্স করে বিদেশে গিয়ে নাট্যকলায় ডিগ্রি নিয়ে আসেন। এমএ ক্লাসে পড়ার সময় আমার স্ত্রী প্রয়াত নাজমা জেসমিন তাঁর সহপাঠী ছিলেন। নাজমার মৃত্যুর পরে তাঁকে স্মরণ করে যে স্মারকগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়, জিয়া হায়দার তাতে লিখেছেনও। নাজমার কাছে জিয়ার কথা শুনতাম। তবে জিয়ার সঙ্গে আমার নিজেরও ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এবং সেটাও ঘটেছে তাঁর সাহিত্যচর্চার কারণেই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগ চালু হলে জিয়া তাতে যোগ দেন। আমাদের অনেকের আগ্রহ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও নাট্যকলা বিভাগ খোলা হোক, এবং জিয়া তাতে যুক্ত হোন। সে-বিভাগ শেষ পর্যন্ত খোলা হয়েছে, তবে অনেক বিলম্বে। ততদিনে জিয়া চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক জগতে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে নিয়েছেন, এবং ঢাকায় আসার ব্যাপারে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। নাটক ও নাট্যসাহিত্যের বিষয়ে জিয়ার ছিল খুব বড় এক গ্রন্থ সংগ্রহ; জিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর ইচ্ছানুসারে ওই সংগ্রহটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগকে অর্পণ করা হয়। জিয়া ছিলেন অত্যন্ত উদ্যোগী সংগঠক, নাগরিক নাট্যদল প্রতিষ্ঠার পেছনে জিয়ার কর্মোদ্যম সক্রিয় ছিল। ভাইবোন ও মা’কে ঢাকায় নিয়ে আসার ব্যবস্থাও তাঁর উৎসাহে উদ্যোগেই ঘটেছিল। জিয়ার ভাই রশীদ হায়দার, মাকিদ হায়দার, জাহিদ হায়দার, সবার সঙ্গেই আমার পরিচয় ও যোগাযোগ ঘটেছে। রশীদ ও মাকিদ আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। জাহিদ আছে। জাহিদও অন্য ভাইদের মতোই সাহিত্যচর্চায় নিবেদিতপ্রাণ। হায়দার ভাইদের যে চারজন চলে গেছে তাদের প্রত্যেকের বিদায় আমাকে আঘাত করেছে। জাহিদ হায়দার যে আছে সেটি সুখ ও সান্ত্বনার বিষয়। ওদের ভগ্নিপতিদের একজন, ওবায়েদুল্লাহ সাগরও সাহিত্যের অধ্যাপক ও গবেষক। 
দাউদকে স্মরণ করতে গিয়ে অনেক স্মৃতিই জেগে উঠল। যা তার করবার ছিল, সে তা করতে পারেনি। এবং যে সম্ভাবনা নিয়ে সে জন্মগ্রহণ করেছিল তাও পূর্ণতা পেল না। মূল কারণ তার নির্বাসন। এমনটা ঘটবে আমরা কেউ ভাবিনি, সবচেয়ে কম ভেবেছে অবশ্য সে নিজে। সে যেমন ছিল প্রতিভাবান, তেমনি ছিল দুরন্ত ও দুঃসাহসী। সৃষ্টিশীলতা ও তারুণ্যের প্রতীক। বিদ্যমান ব্যবস্থা তাকে সহ্য করতে পারেনি। সে জন্যই তার নির্বাসন ঘটেছে। প্রবাসে থেকেও সে সাহিত্যের চর্চা করেছে। লিখেছে, লেখা পাঠিয়েছে। কলকাতার স্টেটসম্যান পত্রিকার বাংলা সংস্করণে নিয়মিত লিখত। আমাদের ত্রৈমাসিক নতুন দিগন্ত পত্রিকার জন্য তার পাঠানো লেখা পেয়েছি, এবং প্রকাশ করে আনন্দিত হয়েছি। কিন্তু এসব তো সান্ত্বনা বৈ নয়। তার কবিতার বই ‘সম্পন্ন মানুষ নই’ সে উৎসর্গ করেছে দু’জনকে, একজন হচ্ছেন অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, অপরজন আমি। বছর দশেক আগে বিবিসির ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে আমার একটি সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছিল; দাউদ সেটি মনোযোগ দিয়ে শুনেছে, এবং শোনা শেষ করেই বার্লিন থেকে ফোন করে আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। জাহিদ হায়দার একবার বার্লিনে গিয়েছিল ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে। ইউরোপীয় ধ্রুপদি সংগীতে আমার আগ্রহের বিষয়ে দাউদ জানত, জাহিদকে সে অনেকগুলো সিডি দিয়ে দায়িত্ব চাপিয়েছিল আমাকে পৌঁছে দেবার। সেগুলো পেয়ে এবং বাজিয়ে শুনে বারবার দাউদের বহুমুখিতার কথা মনে পড়েছে। রেকর্ডগুলো এখনও আমার সংগ্রহে আছে। নির্বাসিত দাউদ জার্মানি থেকে কমপক্ষে বিশবার কলকাতা পর্যন্ত এসেছে, কিন্তু একবারও ঢাকায় প্রবেশাধিকার পায়নি।
দাউদকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দাউদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করা হয়েছে, সাংস্কৃতিকভাবে ক্ষতি হয়েছে আমাদেরও। বিদেশে থাকলেও সবসময়ই সে বাংলাদেশেই ছিল। একটানা একান্ন বছর একজন মানুষের জীবনে কম সময় নয়; দীর্ঘ সেই সময় ধরে দেশছাড়া আপনজনছাড়া অবস্থায় দুঃসহ যন্ত্রণায় সে দগ্ধ হয়েছে, কাতর হয়েছে সে তার সৃষ্টিশীলতাকে কাজে লাগাতে না-পেরে। কলকাতায় গিয়ে সে লিখেছিল, ‘মনে হয় মনুমেন্টের চূড়ায় উঠে/ চিৎকার ক’রে/ আকাশ ফাটিয়ে বলি;/ দেখো, সীমান্তের ওইপাশে আমার ঘর/ এইখানে আমি একা, ভীনদেশী।’ এই আর্তধ্বনি তার নিত্যসঙ্গী ছিল বলেই অনুমান করি। তবে এটাও জানি যে তার মনের জোর ছিল অসামান্য; যে জন্য সে নির্বাসিত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পরাজিত হয়নি। তাকে ভুলবার কোনো উপায় নেই। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স হ ত যচর চ ত র জন য কর ছ ল ন ন ট যকল আম দ র স গ রহ ত হয় ছ র একট কলক ত

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে