রাজধানীর মিরপুরে বাজার করতে গিয়ে ‘মবের শিকার’ হয়েছেন পুলিশ পরিদর্শক মাসুদুর রহমান। বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনার সময় তাকে মারধর করা হয়। সেইসঙ্গে টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের চাঁদা। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মিরপুর থানার ওসি সাজ্জাদ রুমন সমকালকে বলেন, সকালে মিরপুর–৬ নম্বর কাঁচাবাজারে মবের শিকার হন এক পুলিশ কর্মকর্তা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার এবং জড়িতদের গ্রেপ্তার করে। ঘটনাস্থল পল্লবী থানার আওতায় হওয়ায় পরে তাদের সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মাসুদুর রহমান ২০১৭ সালের আগে পুলিশের মিরপুর বিভাগের বিভিন্ন থানায় এসআই হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেই কারণে তাকে স্থানীয় লোকজন চেনেন। পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর তিনি রাজবাড়ীর দুটি থানায় ওসি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তিনি এখন ফরিদপুরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) কর্মরত।

 গতকাল সকাল ১১টার দিকে তিনি মিরপুরে বাজার করতে গেলে স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০–১৫ জন নেতাকর্মী তাকে ঘিরে ফেলেন। ওই সময় তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে মোবাইল ফোন ও টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ নিয়ে হট্টগোলের মধ্যে সেখানে পৌঁছায় পুলিশ।

এ বিষয়ে জানতে পল্লবী থানার ওসি শফিউল আলমের মোবাইল ফোন কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মব

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর উপসাগরীয় অঞ্চলে সর্বাত্মক যুদ্ধের শঙ্কা বাড়ছে

গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েলের নৃশংস হত্যাযজ্ঞে উপসাগরীয় অঞ্চলের স্থিতিশীলতা অনেক আগেই টালমাটাল হয়ে পড়েছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য সফর এবং ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে পরমাণু আলোচনা শুরুর পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু ইরানে গতকাল শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলের বড় ধরনের বিমান হামলার পর অঞ্চলটির অস্থিতিশীলতায় নতুন উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

গতকাল ভোররাতে ইরানের পরমাণু স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কারখানা ও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ২০০ যুদ্ধবিমান দিয়ে ইরানের বিভিন্ন শহরের ১০০-এর বেশি নিশানায় হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এই অভিযানে ইরানের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) প্রধান কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি, আইআরজিসির বিমানবাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আলী হাজিজাদেহসহ অন্তত ২০ জন কমান্ডার নিহত হয়েছেন।

হামলার জবাবে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরান প্রায় ১০০টির মতো ড্রোন পাঠিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় সব ড্রোনই ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগে ধ্বংস করা হয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি শক্ত জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান নিহত প্রত্যেক নাগরিকের রক্তের প্রতিশোধ নেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন।

হামলার পরপরই ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একাধিক পোস্ট করেছেন। এক পোস্টে তিনি ইরানকে পরমাণু চুক্তিতে সম্মত হতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি লেখেন, ‘এরই মধ্যে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে এবং বহু মানুষ মারা গেছেন। তবে এই হত্যা এবং আরও নৃশংস হামলার পরিকল্পনা থামাতে এখনো সময় আছে। সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়ার আগে এবং একসময় পরিচিত ইরান সাম্রাজ্যকে টিকিয়ে রাখতে ইরানকে অবশ্যই একটি চুক্তি করতে হবে।’

রয়টার্সের এক মন্তব্যধর্মীয় বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এই অবস্থায় পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তার অনেক কিছু ইরান কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়, সেটার ওপর নির্ভর করছে। একটি সম্ভাবনা হলো, তেহরান পাল্টা আঘাত কেবল ইসরায়েলের ওপর সীমিত রাখবে। ইরান–সমর্থিত হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যার পর গত বছরের এপ্রিল ও অক্টোবর মাসে তেহরান এই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল।

ওই বছরের এপ্রিলে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরান ১৭০টি ড্রোন, ১২০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৩০টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল। অক্টোবর ছুড়েছিল প্রায় ২০০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রায় সবগুলো নিশানায় আঘাত হানার আগেই মাঝ আকাশে ধ্বংস করেছিল বা ভূপাতিত করেছিল ইসরায়েল।

আরেকটি সম্ভাবনা হলো, ইসরায়েলের এই হামলাকে ইরান ট্রাম্পের সঙ্গে তাদের পরমাণু আলোচনার একটি কৌশলগত অংশ হিসেবে বিবেচনা করতে পারে। ট্রাম্পের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদি তা–ই হয়, তাহলে কাতার ও বাহরাইনে থাকা মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালাতে পারে ইরান। এতে করে পুরো অঞ্চলে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেবে। হরমুজ প্রণালি দিয়ে বিশ্বের দৈনিক এক-পঞ্চমাংশ তেল পরিবহন হুমকির মুখে পড়তে পারে। এর ফলে ইরানের দৈনিক ১৫ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রপ্তানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং উপসাগরীয় অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগও কমে যেতে পেতে পারে।

সিএনএনের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বিশেষজ্ঞরা বহু আগে থেকেই সতর্ক করে আসছিলেন, ইসরায়েল যদি ইরানের পরমাণু স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালায়, তেহরান কঠোর জবাব দেবে। এতে করে ওই অঞ্চলে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ শুরু হতে পারে।

ইসরায়েল ও ইরান পুরোদমে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না। ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ও সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যে বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে। এসব সেনার মধ্যে প্রায় ৪ হাজার মোতায়েন রয়েছে ইরাক ও সিরিয়ায়।

রয়টার্সের আরেক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এ হামলা থেকে বড় ধরনের কোনো আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে কি না, তা এখনো কেউ নিশ্চিত নন। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, তেহরান মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে হামলার ‘ন্যায়সংগত লক্ষ্যবস্তু’ হিসেবে দেখতে পারে। যেমন ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা আবার লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা শুরু করতে পারে।

ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে স্থায়ী ক্ষতি করতে পারবে কি না, সেটাও স্পষ্ট নয়। বিশেষ করে ইরানের ফোর্ডো সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা মাটির গভীরে অবস্থিত। ফলে সেটি ধ্বংস করা কঠিন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসব স্থাপনায় আঘাত করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা দরকার, যা এ হামলায় ছিল না।

তেহরান কতটা জোরালোভাবে ইসরায়েলি হামলার পাল্টা জবাব দিতে পারবে, তা অনিশ্চিত। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে লক্ষ্য করেছে এবং এ অভিযান কয়েক দিন চলতে পারে।

সব মিলিয়ে এ পরিস্থিতি ট্রাম্পের ‘বিশ্বশান্তির মধ্যস্থতাকারী’ হয়ে ওঠার আশা পুরোপুরি শেষ করে দেবে, নাকি শুধু সাময়িক ধাক্কা, তা সময়ই বলে দেবে।

মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের সিরিয়া ইনিশিয়েটিভের প্রধান চার্লস লিস্টার বলেন, ইসরায়েলের বক্তব্য যদি সত্যি হয় যে আজকের হামলা ছিল ইরানের বিরুদ্ধে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ শুরুর প্রথম ধাপ, তাহলে ইরানের শাসনব্যবস্থা এখন একেবারে অস্তিত্বসংকট এবং জীবন-মরণ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছে।

চার্লস লিস্টার বলেন, ‘এ হামলা এখন একেবারে ভিন্ন মাত্রা পেল। এ রকম উত্তেজনা আগে কখনো দেখা যায়নি। নতুন এক বড় যুদ্ধের আশঙ্কা এখন অনেক বেশি বাস্তব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ