যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল শনিবার বলেছেন, ‘যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনের উচিত রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করা। কারণ, রাশিয়া খুব বড় একটি শক্তি। তারা (ইউক্রেন) তা নয়।’

আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প এমন মন্তব্য করেন। শোনা যাচ্ছে, যুদ্ধ বন্ধের শর্ত হিসেবে বৈঠকে পুতিন ইউক্রেনের আরও ভূমি দাবি করেছেন।

স্থানীয় সময় গত শুক্রবার আলাস্কায় ট্রাম্প আর পুতিনের বৈঠকটি হয়। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও কথা বলেন। ট্রাম্প জেলেনস্কিকে জানান, যদি কিয়েভের পক্ষ থেকে দোনেৎস্ক অঞ্চলের পুরোটা ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে রাশিয়া বেশির ভাগ জায়গায় যুদ্ধ থামাবে—এমন শর্ত দিয়েছেন পুতিন।

আরও পড়ুনট্রাম্প–পুতিন বৈঠক নিয়ে ক্ষুব্ধ ইউক্রেনীয়রা, কিন্তু কেন১১ ঘণ্টা আগে

এ বিষয়ে জানাশোনা আছে—এমন একটি সূত্র এ কথা নিশ্চিত করেছে। ইউক্রেনের শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত দোনেৎস্ক অনেক আগে থেকে পুতিনের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু।

জেলেনস্কি এমন চাওয়া প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে জানায় ওই সূত্র। এরই মধ্যে ইউক্রেনের এক–পঞ্চমাংশ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দোনেৎস্কের তিন ভাগ এলাকাও তার নিয়ন্ত্রণে। ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো এ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে রুশ বাহিনী।

ইউক্রেন ও দেশটির ইউরোপীয় মিত্ররা এর আগে যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি চেয়েছিল, সেটা ছাড়াই একটি শান্তিচুক্তি সইয়ের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে পুতিনের সঙ্গে একমত হওয়ার কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প।

আরও পড়ুনট্রাম্প–পুতিন বৈঠক কি যুদ্ধ থামাতে পারবে, ইতিহাস কী বলছে১৭ ঘণ্টা আগে

নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, সবার পক্ষ থেকে এটা নির্ধারণ করা হয়েছে যে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলা ভয়াবহ যুদ্ধের অবসান ঘটানোর সর্বোত্তম উপায় সরাসরি শান্তিচুক্তিতে যাওয়া। এটা যুদ্ধ বন্ধ করবে। তবে এ চুক্তি নিছকই একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি নয়, যা প্রায়ই টেকে না।

এদিকে জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জানান, যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সদিচ্ছা না থাকাটা স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলবে। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধ করার একটি মূল উপাদান হত্যা বন্ধ করা।’ জেলেনস্কি জানান, আগামীকাল সোমবার তিনি ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে গিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করবেন।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ট্রাম্প–জেলেনস্কির সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল। বৈঠকে দুই নেতার তুমুল বাগ্‌বিতণ্ডা বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। সেদিন জেলেনস্কির সঙ্গে তর্কে জড়ান যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সও।

এবার ট্রাম্প অবশ্য আশা প্রকাশ করেছেন, পুতিন আর জেলেনস্কিকে নিয়ে একসঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন তিনি।

আরও পড়ুনট্রাম্প-পুতিনের সংবাদ সম্মেলনে ‘সংবাদ সামান্যই’১৬ আগস্ট ২০২৫

যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা। তারা ইউক্রেনের পাশে থাকার ও রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, আগামীকাল হোয়াইট হাউসের বৈঠকে জেলেনস্কির পাশাপাশি ইউরোপীয় নেতারাও থাকবেন।

তবে ইউরোপের কোন কোন নেতা হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ পেয়েছেন, সে বিষয়ে কারও পক্ষ থেকে এখনো নিশ্চিত করে কিছু জানানো হয়নি।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে। বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপে গত ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী যুদ্ধ এটা। উভয় পক্ষে ১০ লাখের বেশি মানুষ হতাহত হয়েছেন। এর মধ্যে ইউক্রেনের হাজারো বেসামরিক মানুষ রয়েছেন।

আরও পড়ুনযুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ভূখণ্ড হারানোর ভয়—ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক নিয়ে হতাশ ইউক্রেনীয়রা১৫ আগস্ট ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য দ ধ বন ধ ইউক র ন র ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

বাণিজ্য আলোচনায় অংশ নিতে ভারতে আসছে না মার্কিন প্রতিনিধিদলপ্রতিনিধিদল

২৫ থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিনিধিদলের ভারত সফরের করার কথা ছিল, তা বাতিল করা হয়েছে। ফলে প্রস্তাবিত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা আপাতত স্থগিত হলো। বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল সূত্রের বরাতে এনডিটিভি এই সংবাদ জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চুক্তি নিয়ে আলোচনার বর্তমান পর্বটি অন্য কোনো সময় হতে পারে। ফলে ২৭ আগস্ট থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক স্থগিত বা প্রত্যাহারের সম্ভাবনা আপাতত ভেস্তে গেল; যদিও বিষয়টি রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করতে পারেনি।

চলতি আগস্ট মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। রাশিয়ার তেল আমদানির শাস্তি হিসেবে ট্রাম্প এই শুল্ক আরোপ করে।

২৭ আগস্ট থেকে এই শুল্ক কার্যকর হলে কিছু ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক ৫০ শতাংশে উন্নীত হবে। চলমান বাণিজ্যযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যত শুল্ক আরোপ করেছে, তার মধ্যে এটি অন্যতম সর্বোচ্চ হার।

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য আলোচানায় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল ভারতের বিশাল কৃষি ও দুগ্ধ খাত উন্মুক্ত করা। কিন্তু ভারত এ বিষয়ে একেবারে অনড়। নিজের কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় তারা এই ছাড় দিতে চায় না। এ ছাড়া আরও কিছু কারণে দেশ দুটির মধ্যে চুক্তি হলো না।

এমনকি ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারতের কৃষক ও মজুরের স্বার্থ রক্ষায় একবিন্দু ছাড়া দেওয়া হবে না। সে জন্য হয়তো তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে বড় মূল্য দিতে হবে, কিন্তু তিনি সে জন্য প্রস্তুত। এ পরিস্থিতিতে খবর এল, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল ভারতে আসছে না। ফলে বাণিজ্যচুক্তির ভবিষ্যৎ অনেকটা ঝুলে গেল বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

রয়টার্সের সংবাদে সাবেক মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি মার্ক লিন্সকট বলেন, একসময় দুই পক্ষই চুক্তি স্বাক্ষরের খুব কাছাকাছি ছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী মোদির মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ না হওয়া মূল বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা বলেন, অন্যান্য দেশের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে সরাসরি ফোন ছাড়াই।

ভারতের এক কর্মকর্তা বলেন, মোদি ফোন করতে চাননি। কেননা, তাঁর আশঙ্কা ছিল, তিনি ট্রাম্পের একতরফা কথার ফুলঝুরির মধ্যে পড়তে পারেন।

ওয়াশিংটনের একটি সূত্র জানায়, ট্রাম্প ভারতের কাছ থেকে বড় কিছুর আশা করছিলেন। যেমন তাঁর আশা ছিল, ভারতের বাজার আরও উন্মুক্ত হবে, বিনিয়োগ ও বড় ক্রয়ের প্রতিশ্রুতি আসবে। কিন্তু ভারতের এক কর্মকর্তা স্বীকার করেন, ভারত তেমন ছাড় দিতে প্রস্তুত ছিল না। দক্ষিণ কোরিয়া চুক্তির আগে ৩৫ হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ ও জ্বালানি আমদানির প্রতিশ্রুতি এবং চাল ও গরুর মাংস আমদানিতে ছাড় দিয়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক আদায় করে। কিন্তু ভারত তেমন কোনো চমকপ্রদ ছাড়ের কথা বলেনি, বরং তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় কট্টর অবস্থানে ছিল। যে বিষয়ে ট্রাম্পও বলেছেন, ভারত আলোচনার সময় অত্যন্ত কঠোর।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার পণ্য কেনা চালিয়ে যাচ্ছে, অথচ রাশিয়ার তেল কেনার জন্য শুধু ভারতকে আলাদাভাবে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ