জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন দিন: গোলাম পরওয়ার
Published: 18th, September 2025 GMT
জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজনের জন্য ঐকমত্য কমিশনের প্রধান হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
তিনি বলেন,“এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হচ্ছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সবচাইতে উপযুক্ত সরকার। যেহেতু আপনি (ড.
আরো পড়ুন:
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এখন ১৮ কোটি মানুষের দাবি: জামায়াত
একবার হলেও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় জামায়াত
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর কর্তৃক পাঁচ গণদাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
গোলাম পরওয়ার বলেন, “জামায়াতে ইসলামী বরাবরই চেয়েছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাক। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একটি রাজনৈতিক মহলের প্রভাব খাটানোর ফলে সরকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে পারছে না।”
“আমরা দাবি করেছি, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির মাধ্যমে নির্বাচন দিতে হবে। ৫ আগস্ট ড. ইউনূস জুলাই ঘোষণা পেশ করেছিলেন। সেই ড্রাফটটা একটা বিশেষ মহলের প্ররোচণায় পড়ে জনআকাঙ্ক্ষাবিরোধী অনেক কিছু উপস্থাপন করা হয়েছিল। আমরা সেটা সংশোধন করতে বলেছিলাম। যদি নির্বাচনের আগে তা সংশোধন করা না হয়, তবে দেশ মহাবিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে পারে।”
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনি কথা দিয়েছিলেন যে আমরা বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোর সবটাই সংস্কার করব। কিন্তু যারা এখনই বলতে পারে যে আমরা আগামী সরকারে এসে সেটা মুছে দেব, আমরা জানি না কে আসবে, কিন্তু এই কথার মধ্যে দুরভিসন্ধি কাজ করছে।”
তিনি বলেন, “জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না দেওয়ায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। অনেকেই আমাদের বলছেন আলোচনায় থাকা সত্ত্বেও কেন আপনারা আন্দোলনে যাচ্ছেন। তার কারণ আলোচনা করা সত্ত্বেও কোনো সমাধান হচ্ছে না। কোনো কিছুর চাপের মুখে সরকার এক শুভঙ্করের ফাঁকির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের আন্দোলন রাজনীতির অংশ। জরিপে ৭০ শতাংশ জনগণ বলেছে, তারা পিআরের পক্ষে। আমরা চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি যে, গণভোট দিন। জনগণ যদি পিআর মানে, আপনাদেরও মানতে হবে। না মানলে জনগণ যে সিদ্ধান্ত দেবে, আমরা তা মেনে নেব।”
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন দলটির নেতাকর্মীরা। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেট থেকে মিছিল শুরু হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
এ সময় দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ল ই সনদ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি নির্বাচনমুখী কর্মসূচিতে যাবে
সংস্কার প্রশ্নে বাড়াবাড়িতে না গিয়ে দ্রুত নির্বাচনমুখী কর্মসূচির দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে শিগগিরই নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন এবং প্রার্থী বাছাইয়ের দিকেও মনোযোগ দেবে দলটি।
গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর এসব বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দলটির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এ ছাড়া জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দলের যৌথ কর্মসূচি ঘোষণা, জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্য না হলে এর প্রতিক্রিয়ায় কী হতে পারে, অথবা সরকারের দিক থেকে অমীমাংসিত সংস্কার চাপিয়ে দেওয়া হলে এর পরিণতিতে কী হতে পারে—এসব বিষয়ে নেতারা আলোচনা করেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সভায় অংশ নেন। তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুল সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন।
ওই সূত্র বলছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মনে করেন, জুলাই জাতীয় সনদ বা গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির দিক থেকে যে অবস্থান প্রকাশ করা হয়েছে, এর বাইরে আর তেমন কিছু করার নেই। এখন বিএনপির অপেক্ষায় থাকাই ভালো যে এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বা সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়। পাশাপাশি বিএনপির উচিত হবে এ নিয়ে কোনো ধরনের বাড়াবাড়িতে না গিয়ে দ্রুত নির্বাচনমুখী কর্মসূচির দিকেই যাওয়া—যাতে অন্য শক্তি নির্বাচনমুখী পরিবেশ সৃষ্টির পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকব। সংস্কারের ব্যাপারে সরকার যা খুশি করুক, ভবিষ্যতে যাতে এটা নিয়ে আইনি চ্যালেঞ্জ না হয়, সেটাই বিএনপির চাওয়া।’
এর আগে স্থায়ী কমিটির একটি সভায় সারা দেশে জাতীয় নির্বাচনের ঢেউ সৃষ্টি এবং মানুষকে নির্বাচনমুখী করে তুলতে মাঠের কর্মসূচি শুরুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দলটির নেতারা। কিন্তু সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার সমাপ্তি না হওয়ায় বিএনপি মাঠের কর্মসূচি থেকে বিরত থাকে।
জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ সাতটি দল জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজনসহ কয়েকটি দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বিএনপি মনে করে, ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা অমীমাংসিত রেখেই দলগুলো কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সে কারণে বিএনপিরও কর্মসূচি শুরু করা উচিত বলে মনে করেন দলটির নেতারা।
অবশ্য জামায়াতসহ কয়েকটি দলের কর্মসূচির বিষয়ে সোমবার রাতে প্রথম আলোকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকা অবস্থায় কর্মসূচি ঘোষণা স্ববিরোধিতা। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, এই আন্দোলন কাদের বিরুদ্ধে, সেটা দেখতে হবে। এটা কি অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে, নাকি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে, নাকি বিএনপির বিরুদ্ধে? এটা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার কোনো কৌশল কি না, সেটাও দেখতে হবে।
সোমবার স্থায়ী কমিটির সভায় বিএনপির নেতারা বিরোধী পক্ষের রাজনৈতিক কৌশলের বিপরীতে মাঠের কর্মসূচি দিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্যের মাধ্যমে জবাব দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মনে করছেন, মাঠপর্যায়ে নির্বাচনী হাওয়া উঠে গেলে বিরোধীদের সব চক্রান্ত এবং অযৌক্তিক দাবি হারিয়ে যাবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি একাধিকবার এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে এবং দেশবাসীকে দৃঢ়ভাবে আশ্বস্ত করেছেন। সে অনুযায়ী নির্বাচনের লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে ভোটের হাওয়া তৈরি করার কথা ভাবছেন বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনী অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি হিসেবে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির বিষয়েও নেতারা স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা করেন। ইশতেহার তৈরির জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থ-বাণিজ্য, পররাষ্ট্র, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন খাতভিত্তিক বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির সভায় জাতীয় পার্টিকে (জাপা) নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতির ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপি নীতিগতভাবে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের মতো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে। সেটি তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকেও বলেছিল।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে জনপ্রত্যাশা পূরণের অঙ্গীকারের পাশাপাশি সংস্কার বাস্তবায়নমুখী ইশতেহার হবে।