বড় বিনিয়োগকারীদের মুনাফার তথ্য চেয়ে সকালে চিঠি, বিকেলে না
Published: 18th, September 2025 GMT
গত ২০২৪–২৫ অর্থবছরে বিনিয়োগ করে ৫০ লাখ টাকা বা তার বেশি মূলধনি মুনাফা করেছে, এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়ে সেটির কার্যকারিতা স্থগিত করেছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ বা সিএসই। আজ বৃহস্পতিবার সকালে এই তথ্য চেয়ে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে চিঠি পাঠিয়েছিল সিএসই। বিকেলে সিএসই সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কোনো তথ্য দিতে হবে না বলে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর কাছে বার্তা পাঠায়।
জানা যায়, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সিএসইর পক্ষ থেকে ওই চিঠি ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে বিতরণ করা হয়। বড় বিনিয়োগকারীদের মুনাফার ব্যক্তিগত তথ্য চেয়ে আজ সকালে চিঠিটি বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে পাঠানোর পর তা নিয়ে বাজারে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এরপর বিকেলে তা সিএসই ফিরতি এক বার্তায় তথ্য দিতে হবে না বলে ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে জানিয়ে দেয়।
জানা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি মুনাফা করেছে, এমন বিনিয়োগকারীর তথ্য চেয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর দুই স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে চিঠি পাঠায় বিএসইসি। চিঠিতে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করে বিএসইসিতে জমা দেওয়ার কথা বলা হয়। তবে তথ্য দেওয়ার কোনো সময়সীমা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এনবিআর থেকে এ ধরনের তথ্য চাওয়া হলে বাজারে সেটির প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, তা না ভেবেই বিএসইসির পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের এসব তথ্য চেয়ে স্টক এক্সচেঞ্জে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। তবে বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা না করে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর কাছে এ ধরনের চিঠি না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই। এর কারণ, চিঠিতে বিনিয়োগকারীদের যে তথ্য চাওয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং বিনিয়োগকারীদের ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য। তা ছাড়া এমন তথ্য পাঠানোর কোনো সময়সীমাও ছিল না। এ কারণে ডিএসইর পক্ষ থেকে এই চিঠি আর ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে বিতরণ করা হয়নি। তবে সিএসই আজ সকালে এই চিঠি বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে পাঠায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসইসির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, আপাতত এ বিষয়ে আর অগ্রসর না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা করে পরে বিষয়টির সমাধান করা হবে।
গত বছর শেয়ারবাজারে ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি মুনাফার ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপ করা হয়। সেই হিসাবে ২০২৪–২৫ অর্থবছরে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ৫০ লাখ টাকার বেশি মুলধনি মুনাফা করেছে, তাদের কর দেওয়ার কথা। সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা কর দিচ্ছেন কি না, তা যাচাইয়ে গত ২৫ আগস্ট এনবিআর থেকে এ বিষয়ে তথ্য চেয়ে বিএসইসিতে চিঠি পাঠানো হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ সেপ্টেম্বর এই তথ্য চেয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে ডিএসই ও সিএসইকে চিঠি দেওয়া হয়।
একাধিক ব্রোকারেজ হাউস জানিয়েছে, আজ সকালে সংস্থাটির সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউসে এই চিঠি পাঠিয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। তবে বিকেলে তথ্য পাঠাতে হবে না মর্মে নতুন বার্তা পাঠানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র ক র জ হ উসগ ল পর প র ক ষ ত ৫০ ল খ ট ক ব এসইস র এনব আর স এসই ম লধন
এছাড়াও পড়ুন:
জেনেক্স ইনফোসিসের নয় পরিচালককে সোয়া ৯ কোটি টাকা জরিমানা
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সোনালি পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে তালিকাভুক্ত আরেক কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিসের ৯ জন পরিচালকের প্রত্যেককে ১ কোটি ৩ লাখ টাকা করে মোট ৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর বাইরে একই ঘটনায় জেনেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডকে আলাদাভাবে ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৯ ব্যক্তি ও ১ প্রতিষ্ঠানকে ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে সোনালী পেপারের শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গতকাল বুধবারের সভায় এই জরিমানার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএসইসির এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। একই সভায় তালিকাভুক্ত একমি পেস্টিসাইডের প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়ে অনিয়মে জড়িত ১৫ ব্যক্তি ও ৭ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে কোম্পানিটির শেয়ারের ইস্যু ম্যানেজার প্রতিষ্ঠান শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। একমি পেস্টিসাইডের প্রি-আইপিও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে কোম্পানির বাস্তব আর্থিক চিত্র তুলে ধরতে ব্যর্থ হওয়ায় নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং-এর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি একই কোম্পানির আইপিওর অর্থ ব্যবহারসংক্রান্ত নিরীক্ষায় যথাযথ তথ্য নিশ্চিত করতে না পারায় আরেক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান শফিক বসাক অ্যান্ড কোং-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল বা এফআরসিতে পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়া বেশ কয়েকটি কোম্পানির আর্থিক অনিয়মের তথ্য নিরীক্ষা প্রতিবেদনে যথাযথভাবে তুলে না ধরায় বেশ কিছু নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে শেয়ারবাজার–সংক্রান্ত সব ধরনের কার্যক্রম পাঁচ বছরের জন্য কেন নিষিদ্ধ করা হবে না—তার ব্যাখ্যা তলবের সিদ্ধান্ত হয়েছে। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো এ হক অ্যান্ড কোং, আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং, সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং, ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং।
বিএসইসি জানিয়েছে, ২০২১ সালের ১ থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সোনালী পেপারের শেয়ার লেনদেনে কারসাজির ঘটনায় তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিসের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। এই কারসাজির মাধ্যমে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটায় কোম্পানিটি। এ কারণে জেনেক্স ইনফোসিসের চেয়ারম্যান টি আই এম নুরুল কবির, ভাইস চেয়ারম্যান প্রিন্স মজুমদার, ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ জালাল উদ্দিন, পরিচালক চৌধুরী ফজলে ইমাম, হাসান শহীদ সারওয়ার, মোহাম্মদ আদনান ইমাম, নিলুফার ইমাম, রোকেয়া ইসলাম ও জহরুল সৈয়দ বখতকে ১ কোটি ৩ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এসব পরিচালকের মধ্যে টি আই এম নুরুল কবির, রোকেয়া ইসলাম ও জহরুল সৈয়দ বখত ছিলেন কোম্পানিটির পর্ষদে নিযুক্ত স্বতন্ত্র পরিচালক। আর হাসান শহীদ সারওয়ার ছিলেন ওরাকল সার্ভিসেসের মনোনীত পরিচালক। এসব পরিচালকের বাইরে জেনেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
টাকা ছাড়া প্লেসমেন্ট শেয়ার
কোনো টাকা পরিশোধ না করে একমি পেস্টিসাইডের প্লেসমেন্ট শেয়ারের ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেওয়ার জন্য ছাগল–কাণ্ডে দেশজুড়ে আলোচিত কারাবন্দী মতিউর রহমানসহ নয়জন প্লেসমেন্টধারী, কোম্পানিটির চার পরিচালক ও দুই কর্মকর্তা এবং কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে দুদকে প্রতিবেদন প্রেরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এ ঘটনায় যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুদকে প্রতিবেদন পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে তাঁরা হলেন কোম্পানির চেয়ারম্যান শান্তা সিনহা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউর রহমান সিনহা, পরিচালক আহসান হাবিব সিনহা ও কে এম হেলোয়ার, কোম্পানি সচিব সবুজ কুমার ঘোষ ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সেলিম রেজা, প্লেসমেন্ট শেয়ারধারী ছাগল–কাণ্ডে আলোচিত মতিউর রহমান, আফজাল হোসেন, তফাজ্জল হোসেন ফরহাদ, জাভেদ এ মতিন, আঞ্জুমান আরা বেগম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শেখ মোহাম্মদ সারওয়ার, তৌহিদা আকতার, রুহুল আজাদ ও রানু ইসলাম। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, বিক্রমপুর পটেটো ফ্ল্যাক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, বেঙ্গল অ্যাসেটস হোল্ডিংস, চিটাগং পেস্টিসাইডস অ্যান্ড ফিশারিজ, হেরিটেজ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট, এনআরবি ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ও এনআরবি ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট (এমডিএ)।