প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ঢাকা সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ। ছাত্র অবস্থায় কোন দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হওয়ার অঙ্গীকার করলেই এখানে ভর্তির সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা।

এসব অঙ্গীকার ভঙ্গ করে এবং নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই ১২ সদস্যকে নিয়ে গবি শাখা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বুধবার (১১ জুন) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি মো.

আবু হোরায়রা ও সাধারণ সম্পাদক এম. রাজিবুল ইসলাম তালুকদার বিন্দু স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে এ কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

আরো পড়ুন:

কুমার নদে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করোনা প্রতিরোধে নতুন নির্দেশনা জারি

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ২৭ বছর হতে চললেও এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের কমিটি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায়নি। এর আগে বেশ কয়েকবার নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ কমিটি দেয়ার চেষ্টা চালিয়েও সফল হয়নি। কারণ শিক্ষার্থীরা অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অঙ্গীকারের ব্যতয় ঘটলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিচিতিতে গণ বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সর্বশেষ গত ১৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হয়, ক্যাম্পাসে অধ্যয়নরত সব শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের সব ধরনের দলীয় রাজনীতি থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করা হলো। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম লোগো দলীয় রাজনীতিতে নিষিদ্ধ। এর ব্যত্যয় হলে বিশ্বিবদ্যালয়ের স্বার্থে প্রচলিত বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে সেসব ঘোষণা উপেক্ষা করেই গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় তিন দশকের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কমিটি ঘোষণা করলো বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল।

শিক্ষার্থীদের দাবি, বামপন্থী কয়েকটি সংগঠন ও ইসলামী ছাত্রশিবির বিভিন্ন মোড়কে সক্রিয় থাকলেও তাদের কমিটি ঘোষণা কিংবা প্রকাশ্যে নাম উল্লেখসহ কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরপরই গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সক্রিয় হতে শুরু করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ক্যাম্পাসের নাম ও লোগো ব্যবহারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণামূলক কর্মসূচি পালন করে বিএনপির এই সহযোগী সংগঠনটি। 

ছাত্রদলের গণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নবগঠিত ১২ সদস্যের কমিটির সভাপতি হয়েছেন আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. নির্জন এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছেন আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আসাদুর রহমান বিজয়।

কমিটিতে অন্যদের মাধ্যে আছেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মামুন হোসেন খান, সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল রাফি, মো. রাকিবুল হাসান, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল্লাহ আল রাইভার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. আকরাম হোসেন, মাশরুর মাহমুদ, মেহেদী হাসান, রওনক জাহান রওনক, সাংগঠনিক সম্পাদক সবুজ আহমদ এবং দপ্তর সম্পাদক উল্লাস কুমার দত্ত আকাশ।

কমিটির বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ হয়েছে, আগামী ১ বছরের জন্য গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আংশিক কমিটি অনুমোদন করা হলো। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের দপ্তরে জমা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হলো।

কমিটি ঘোষণার বিষয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি মো. নির্জন বলেন, “সম্প্রতি ঘোষিত ১২ সদস্যের কমিটি সর্বসম্মতির ভিত্তিতেই গঠিত হয়েছে। গণ বিশ্ববিদ্যালয় একটি রাজনীতি-মুক্ত ক্যাম্পাস এবং আমরা ছাত্ররাও সে ধারণা মাথায় রেখেই এখানে ভর্তি হয়েছিলাম। এ প্রসঙ্গে আমি বলতে চাই, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে কোনো দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করি না। আমাদের ছাড়াও আরো অনেক সংগঠন নানা ধরনের কাজ করে থাকে। তাহলে শুধু আমাদের কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উঠলে সেটিকে বৈষম্যমূলক মনে করা যেতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “কমিটি গঠনের বিষয়ে এখনো প্রশাসনের সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। তবে আমরা এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলবো। তবে প্রশাসন অনেক ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় না। তাই বলে কি আমাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকার থাকবে না?”

কমিটি ঘোষণার বিষয়ে ছাত্রদলের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম. রাজিবুল ইসলাম তালুকদার বিন্দু বলেন, “রাজনীতি নিষিদ্ধ এই শব্দের সঙ্গে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কিছু আইনকানুন করা আছে। বিশ্ববিদ্যলয়ের ভেতরে রাজনীতি করা যাবে না। আমরা তাদের এ নিয়মকে শ্রদ্ধা করি। এজন্যই আমরা যেসব রাজনীতি করি তা সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় বাইরে। কারণ রাজনীতি বাংলাদেশের  নাগরিকের একটি সাংবিধানিক অধিকার। ছাত্রদল ক্যাম্পাসে যেন সুস্থ শিক্ষার পরিবেশ থাকে এই বিবেচনা করেই ছাত্র  রাজনীতি করে। সুতরাং আমরা ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে রাজনীতি করি না।”

তিনি আরও বলেন, “বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টের দেখবেন লাভজনক প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে তারা বিভিন্ন রকমের দুর্নীতি করে থাকে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকমের ফি আরোপ করে থাকে। সেগুলো নিয়ে আমাদেরই কাজ করতে হবে। তারা তাদের মন মত একটি আইন করে রাখছে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় ভেতর কাজ করতে দেবে না, সেহেতু আমরা বিশ্ববিদ্যালয় বাইরে। তবে এ নিয়ে আমরা হাইকোটে  রিট করলে জিতে যাবো। কিন্তু আমরা তা করছি না। আমি ছাত্রদের কথা মাথায় রেখে ছাত্র রাজনীতি করছি  এবং ভবিষ্যৎ করব। 

ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, “গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাসঙ্গিক নীতিমালায় এবং প্রসপেক্টাসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুনরায় একটি নোটিশ জারি করা হয়েছে। নোটিশ প্রদানের পরও যদি কোনো সংগঠন বা ব্যক্তি রাজনৈতিক কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে, তাহলে তা স্পষ্টভাবে নীতিমালার লঙ্ঘন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

১৯৯৮ সালে গণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সেই সময় থেকেই ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ। ক্যাম্পাসে সুস্থ রাজনীতির স্বার্থে ২০১৩ সালে শুরু হয় ছাত্র সংসদের কার্যক্রম। সবশেষ ২০১৮ সালে তৃতীয়বারের মতো গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ক্যাম্পাসে গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ক্যারিয়ার ক্লাব, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, ডিবেটিং সোসাইটি, অগ্নিসেতুসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যক্রম রয়েছে।

ঢাকা/সানজিদা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল র জন ত ক আম দ র র কম ট কম ট র উল ল খ স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

মাদারীপুরের সাবেক দুই ডিসিসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান

শিবচরে পদ্মা সেতু রেললাইন সংযোগ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মাদারীপুরের সাবেক দুই জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন ও মো. ওয়াহিদুল ইসলামসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই)  দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় এ সংক্রান্ত নোটিশ মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সাবেক দুই জেলা প্রশাসকসহ অভিযুক্তদের কাছে পাঠিয়েছে ।

দুদক সূত্র জানায়, পদ্মা রেললাইন সংযোগ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক দুই জেলা প্রশাসকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন জন্য দুদক মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামানকে দলনেতা ও উপ-সহকারী পরিচালক মো. সাইদুর রহমান অপুকে সদস্য করে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। 

আরো পড়ুন:

খুকৃবির সাবেক উপাচার্যসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

কুবির নতুন ক্যাম্পাসের জমি ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ, তথ্য চেয়েছে দুদক

অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ১৯ ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ এর বিধি ৮ অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য এবং চাহিদাপত্র চেয়ে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে তারা হলেন- মাদারীপুর সাবেক জেলা প্রশাসক মো. ওহিদুল ইসলাম, সাবেক জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন, সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সৈয়দ ফারুক আহম্মদ, সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ঝোটন চন্দ্র, মাদারীপুরের সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস।

‎মোহাম্মদ সুমন শিবলী, প্রমথ রঞ্জন ঘটক, ‎আল মামুন, মো. নাজমুল হক সুমন, মাদারীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ‎কানুনগো (ভারপ্রাপ্ত) মো. নাসির উদ্দিন, মো. আবুল হোসেন, রেজাউল হক এবং মাদারীপুর কালেক্টরেট রেকর্ড রুম শাখার রেকর্ড কিপার মানিক চন্দ্র মন্ডল।

দুর্নীতি দমন কমিশন মাদারীপুরের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান বলেন, “মাদারীপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম ও ড. রহিমা খাতুনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে তথ্য ও বিভিন্ন চাহিদাপত্র চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত নোটিশ অভিযুক্তদের কাছে পাঠানো হয়েছে।”

ঢাকা/বেলাল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ