সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ বাড়ার বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে: অর্থ উপদেষ্টা
Published: 22nd, June 2025 GMT
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ অনেক বেড়ে যাওয়ায় ‘আমরা উদ্বিগ্ন’। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গতকাল রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ে বাজেট অনুমোদন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। অর্থ সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ কেন বেড়েছে এমন প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘কেন গেল, কীভাবে গেলে তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। তবে আমাদের অনেক লোকজন দেশের বাইরে রয়েছেন। তারা বাংলাদেশ অর্থ না পাঠিয়ে ওখানে রাখতে পারে। তবে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। কারণ এটি খুব চিন্তার।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনের পর পুরো অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ ছিল। সম্ভবত নির্বাচনের পরই ক্ষমতাশীনরা ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিল যে, সময় হয়তো ঘনিয়ে আসছে। সে সময় সম্ভবত অনেকে অর্থ পাচার করেছেন। বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াসলি আলাপ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য সংস্থা এ নিয়ে কাজ করছে।’
প্রসঙ্গত, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের নামে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে ২০২৪ সাল শেষে তাদের দেশের ব্যাংকগুলোর লেনদেন স্থিতির পরিসংখ্যান প্রকাশ করে।
এতে দেখা যায়, ২০২৪ সাল শেষে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বাংলাদেশিদের নামে জমা রয়েছে রয়েছে ৫৯ কোটি ৮২ লাখ সুইস ফ্রাঁ। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ফ্রাঁ ১৫০ টাকা ধরে ) যার পরিমাণ ৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। ২০২৩ সাল শেষে ছিল মাত্র ২ কোটি ৬৪ লাখ ফ্রাঁ। এখনকার বিনিময় হার ধরলে যার পরিমাণ ৩৯৬ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নামে থাকা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২৩ গুণ।
সুইস ব্যাংকে থাকা অর্থের একটি অংশ পাচার হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হয়। তবে পাচার সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। এমনকি গ্রাহক আমানত হিসাবে কার কত অর্থ আছে তাও জানা যায় না। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গোপনীয়তার স্বার্থে সমস্ত ডাটা সমন্বিতভাবে প্রকাশ করে। আলাদাভাবে কোনো গ্রাহক বা ব্যাংকের তথ্য এ প্রতিবেদনে নেই।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
হোটেল বয় থেকে কনটেন্ট ক্রিয়েটর বিল্লাল, মাসে আয় লাখ লাখ টাকা
একসময় হোটেল বয় হিসেবে কাজ করতেন শেরপুরের নকলার বিল্লাল হোসেন। বেতন ছিল মাসে ১০ হাজার টাকা। সেই বিল্লালের এখন মাসিক আয় কয়েক লাখ টাকা। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভিডিও তৈরি করে এই আয় করেন।
বিল্লাল এখন ফেসবুকে জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর। তাঁর পেজের নাম ‘থটস অব বিল্লাল’, অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। ছন্দে ছন্দে কথা বলে বানানো ভিডিও তিনি ফেসবুকে প্রকাশ করেন। সেসব ভিডিওর লাখ লাখ ভিউ হয়। সেই ভিউর ভিত্তিতেই তিনি ফেসবুক থেকে টাকা আয় করেন।
উপজেলার হুজুরীকান্দা গ্রামের মৃত কৃষক আবুল কালামের ছেলে বিল্লাল। নিজের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, এসএসসি পাস করেছেন ২০১৩ সালে, এইচএসসি ২০১৫ সালে। এরপর তিনি বিএসসিতে ভর্তি হন। খরচ চালাতে প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেন। পরে ২০১৯ সালে হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্সে ভর্তি হন।
পরের বছর চাকরির খোঁজে কক্সবাজারে গিয়ে বিল্লাল একটি হোটেলে কাজ পান। মাস শেষে পেতেন ১০ হাজার টাকা। করোনার প্রকোপ শুরু হলে চাকরি হারান তিনি। এরপর তাঁর মনে হয়, তিনি বিদেশে যাবেন। এক দালালকে ৬০ হাজার টাকাও দেন। তবে তিনি প্রতারণার শিকার হন। ২০২১ সালে আবার কক্সবাজারে গিয়ে একটি হোটেলে আট হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেন। সেই সময় তিনি হোটেলের অতিথিদের চলাফেরা, খাওয়াদাওয়া ও আদবকেতা শেখার চেষ্টা করতেন।
হোটেলে চাকরির সময়টায় বিল্লাল মন দিয়ে পত্রিকা পড়তেন। ইউটিউবে রান্নার রেসিপি দেখতেন। নিজে রান্না করে নতুন স্বাদের খাবার তৈরির চেষ্টা করতেন। ২০২৩ সালের শেষ দিকে ‘থটস অব বিল্লাল’ নামের ফেসবুক পেজ খুলে তিনি ভিডিও পোস্ট করতে শুরু করেন। ভিডিওতে থাকত নিজের রান্না, জীবনের কথা ও মানবিক নানা গল্প। যখন থেকে বিল্লাল ছন্দে ছন্দে ছোট ছোট ভিডিও বা রিলস তৈরি করা শুরু করলেন, তখন থেকে তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকল।
২০২৪ সালের আগস্টে বিল্লাল হোটেলের চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি কনটেন্ট তৈরির কাজে মন দেন। মাত্র কয়েক মাসে তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা ৩ লাখ থেকে বেড়ে প্রায় ৩০ লাখের কাছাকাছি। বিল্লাল হোসেন বলেন, ২০২৪ সালের আগস্টে ফেসবুক থেকে তাঁর আয় ছিল আট লাখ টাকা। ডিসেম্বরে তাঁর আয় দাঁড়ায় ১৫ লাখ ১৭ হাজার টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১৬ লাখ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ১৪ লাখ ৬৭ হাজার, মার্চে ৪ লাখ ১৪ হাজার ও এপ্রিলে ৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা আয় করেছেন তিনি।
ভিডিও তৈরির কাজে বিল্লালকে সহযোগিতা করেন রাকিবুল হাসান। তিনিও হোটেলে কাজ করতেন। সেই চাকরি ছেড়ে এখন বিল্লালের সঙ্গেই আছেন। মাসে বেতন পান ৫০ হাজার টাকা। বিল্লালের পেজে গিয়ে দেখা গেল, অসহায় অনেক মানুষের গল্প তিনি তুলে ধরেছেন। ফলোয়ারদের কেউ কেউ তাঁদের জন্য সাহায্য পাঠালে তিনি সেগুলো পৌঁছে দেন। ভিডিও প্রকাশ করে সেই কথাও সবাইকে জানিয়ে দেন।
বিল্লাল তাঁর সফলতার জন্য মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, এসব কাজ শুরুর জন্য তাঁর একটি স্মার্টফোনের দরকার ছিল। তাঁর মা একটি বাছুর বিক্রি করে তাঁকে সাড়ে ১৮ হাজার টাকা দেন। সেই টাকায় তিনি একটি স্মার্টফোন কেনেন। এই ফোন দিয়েই বদলে যেতে থাকে বিল্লালের জীবন। বিল্লাল স্বপ্ন দেখেন, আরও বড় পরিসরে কিছু করার। তাঁর চাওয়া, গ্রামের ছেলেরা যেন তাঁকে দেখে উৎসাহ পান, তাঁরা যেন প্রতিজ্ঞা করেন—‘আমিও পারব’।