আফগানিস্তানে তালেবান শাসনামলে শিক্ষা ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে নতুন এক ধারা গড়ে উঠছে। তালেবান কর্তৃপক্ষ ইসলামি শরিয়াহ আর আফগান মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। এ জন্য দেশটির বিশ্ববিদ্যালয় ও গ্রন্থাগারগুলোয় শত শত বই ও পাঠ্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে, করছে। এর মধ্যে যেমন আফগানিস্তান ও পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন লেখকের বই রয়েছে; তেমনি রয়েছে বিভিন্ন ইরানি লেখক ও ব্রিটিশশাসিত ভারতীয় উপমহাদেশে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদির মতো বহু ইসলামি চিন্তাধারার ব্যক্তির বইও।

নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপট

আফগানিস্তানে ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে শিক্ষা ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে। ২০২৪ সালে কাবুলের গ্রন্থাগারগুলোয় ৪০০টি বই নিষিদ্ধ করতে তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকায় গণতন্ত্র, নারী অধিকার, শিয়া মতবাদ ও প্রতিরোধ নেতা আহমদ শাহ মাসুদের জীবনী-সংক্রান্ত বই ছিল। এসব বই গ্রন্থাগার ও বইয়ের দোকান থেকে সরানো এবং বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয় (আমু টিভি, ২৬ অক্টোবর ২০২৪)।

এ বছরের ১৩ জুলাই তালেবান সরকারের চারটি মন্ত্রণালয়—ধর্মীয় নির্দেশনা, হজ ও ধর্মবিষয়ক, তথ্য ও সংস্কৃতি এবং উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ বৈঠকে বই নিয়ন্ত্রণের বিস্তারিত পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা মোল্লা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার নির্দেশে গঠিত ১৪ সদস্যের একটি কমিটি দেশব্যাপী বই পর্যালোচনার দায়িত্ব পায়।

এ বছরের ১৩ জুলাই তালেবান সরকারের চারটি মন্ত্রণালয়—ধর্মীয় নির্দেশনা, হজ ও ধর্মবিষয়ক, তথ্য ও সংস্কৃতি এবং উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ বৈঠকে বই নিয়ন্ত্রণের বিস্তারিত পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা মোল্লা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার নির্দেশে গঠিত ১৪ সদস্যের একটি কমিটি দেশব্যাপী বই পর্যালোচনার দায়িত্ব পায়।

আফগানিস্তানের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী নূর মোহাম্মদ সাকিব জানান, এ উদ্যোগের লক্ষ্য হলো, এমন বই সরিয়ে ফেলা, যা ইসলাম ও আফগান মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। পাশাপাশি এসব বইয়ের পরিবর্তে বিশুদ্ধ ও ইসলামি বিষয়বস্তু প্রচার করা (ইনডিপেনডেন্ট ইউকে, ২৮ জুলাই ২০২৫)।

গত ৪ সেপ্টেম্বর তালেবান সরকারের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী জিয়াউর রহমান আরিওবি একটি চিঠিতে ১৮টি পাঠ্যবিষয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের ঘোষণা দেন। এসব পাঠক্রম শরিয়াহর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলা হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ২০১টি বিষয় সমালোচনামূলক দৃষ্টিকোণ থেকে পড়ানোর ব্যাপারে পর্যালোচনাধীন রয়েছে। তালেবান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ নিয়ন্ত্রণ শিক্ষাব্যবস্থাকে ‘ইমারতে ইসলামিয়ার’ কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা অপরিহার্য (ইনডিপেনডেন্ট পার্সিয়ান, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪)।

এর আগে গত ২৫ আগস্টের এক বৈঠকে কমিটি ৩৫৪টি বই পর্যালোচনা করে জানিয়েছিল, নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকা দীর্ঘ হতে পারে। হেরাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গ্রন্থাগারের তত্ত্বাবধান কমিটি ইতিমধ্যে ৬২০টি বই নিষিদ্ধ করেছে। এসব বই তাক থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এসব বইকে গণতন্ত্র বা তালেবানবিরোধী, শিয়াবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে (ইনডিপেনডেন্ট পার্সিয়ান, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪)।

নিষিদ্ধ পাঠ্যবিষয়

নিষিদ্ধ পাঠ্যবিষয়ের মধ্যে রয়েছে—ইসলামি রাজনৈতিক আন্দোলন, আফগানিস্তানের সাংবিধানিক আইন, ধর্মের ইতিহাস, নারীর সমাজবিজ্ঞান, জনসংযোগে নারীর ভূমিকা, সুশাসন, নির্বাচনীব্যবস্থা, আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ব্যবস্থা, লিঙ্গ ও উন্নয়ন, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র, বিশ্বায়ন ও উন্নয়ন, নৈতিক দর্শন, নারী-পুরুষ সমতার বৈচিত্র্যপূর্ণ কর্মসংস্থান ও সাংগঠনিক নেতৃত্ব।

গত ২৫ আগস্টের এক বৈঠকে কমিটি ৩৫৪টি বই পর্যালোচনা করে জানিয়েছিল, নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকা দীর্ঘ হতে পারে। হেরাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গ্রন্থাগারের তত্ত্বাবধান কমিটি ইতিমধ্যে ৬২০টি বই নিষিদ্ধ করেছে। এসব বই তাক থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

এসব বিষয় আগে আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদে বাধ্যতামূলক কোর্স হিসেবে পড়ানো হতো। তালেবান জানিয়েছে, এসব পাঠ্যবিষয় শরিয়াহ ও ইসলামি আমিরাতের নীতির সঙ্গে একদম সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

প্রভাবশালী ইসলামি চিন্তাধারার বই নিষিদ্ধ

নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকায় প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ ইসলামি চিন্তাধারার লেখকদের বই আছে। এর মধ্যে আফগান লেখকেরাও রয়েছেন। আছেন সালাফি মতাদর্শের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব নজদির কিতাব আত-তাওহিদ, উপমহাদেশে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীর কোরআনের মূল ধারণাবিষয়ক লেখা কোরআন কি চার বনিয়াদি ইসতিলাহি (ফোর কি কনসেপ্টস ইন দ্য কোরআন), মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা সাইয়েদ কুতুব শহীদের আল-আদালাতুল ইজতিমাইয়্যাতু ফিল ইসলাম (সোশ্যাল জাস্টিস ইন ইসলাম), উনিশ শতকের প্যান-ইসলামিজমের প্রবক্তা জামালউদ্দীন আফগানির ইসলামী সংস্কারবিষয়ক জীবনী ও রচনা।

আরও রয়েছে সোভিয়েতবিরোধী আফগান জিহাদের অগ্রগণ্য নেতা ও ওসামা বিন লাদেনের আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে পরিচিত আবদুল্লাহ আজ্জামের রচনাবলি, প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ ইউসুফ আল-কারযাভির আল-হালাল ওয়াল-হারাম ফিল ইসলাম (দ্য লফুল অ্যান্ড দ্য প্রহিবিটেড ইন ইসলাম), ইরানের সমাজতত্ত্ববিদ আলী শরিয়াতির ইসলামি সমাজতত্ত্ব বিষয়ক লেখা, শিয়া ধর্মতত্ত্ববিদ মোরতেজা মোতাহহারির ইসলামি দর্শনবিষয়ক বই এবং গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাবিষয়ক লেখক রামিন জাহানবেগলুর বই।

আরও পড়ুননারী ও ইরানি লেখকদের বই নিষিদ্ধ করল তালেবান১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পশ্চিমা লেখকদের বই

পশ্চিমা বিশ্বের বহু জনপ্রিয় রচনাও নিষিদ্ধের তালিকায় রেখেছে তালেবান। ইউভাল নোয়া হারারির স্যাপিয়েন্স, চতুর্দশ শতাব্দীর ইতালীয় কবি দান্তের রূপকধর্মী সাহিত্যকর্ম দ্য ডিভাইন কমেডি, জোসেফ স্মিথের দ্য বুক অব মরমন এবং লেবানিজ কবি ও দার্শনিক কাহলিল জিবরানের দ্য প্রফেট এ তালিকায় জায়গা পেয়েছে।

এ ছাড়া আছে জন আর্ট শোল্টের বিশ্বায়নবিষয়ক বিশ্লেষণ গ্লোবালাইজেশন: আ ক্রিটিকাল ইন্ট্রোডাকশন, কার্ল এইচ বোটান ও ভিনসেন্ট হ্যাজলটনের জনসংযোগ তত্ত্ব পাবলিক রিলেশনস থিওরি, ক্যাথরিন মিলারের অর্গানাইজেশনাল কমিউনিকেশন, সমাজবিজ্ঞানী ব্রুস জে কোহেনের ইন্ট্রোডাকশন টু সোশিওলজি, লুইস এ কোসারের মাস্টার্স অব সোশিওলজিক্যাল থট এবং জর্জ রিৎজারের সমাজবিজ্ঞান তত্ত্বের বই কনটেম্পোরারি সোশিওলজিক্যাল থিওরি।

তালেবান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের লক্ষ্য হলো ইসলামি ও আফগান মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি শিক্ষা আর সাংস্কৃতিক পরিবেশ গড়ে তোলা। এ প্রক্রিয়ায় তারা ধর্মীয় শিক্ষার ওপর জোর দিচ্ছে এবং সব অনুষদে শরিয়াহ-সম্পর্কিত কোর্স বাড়িয়েছে।

আফগান বইয়েও ‘না’

কয়েকজন আফগান শিক্ষাবিদের লেখা বই নিষিদ্ধ করেছে তালেবান। যেমন—শামসুস সাদাত জাহেদির ইন্টারন্যাশনাল সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট, আবদুর রহমান সেলিমের কম্পারেটিভ হিউম্যান রাইটস, দেশটির সাবেক উপবিচারমন্ত্রী (২০২১ সালের আগে) জাকিয়া আদেলির লেখা পলিটিক্যাল টার্মিনোলজি অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস, নাসরুল্লাহ স্তানকজাইয়ের আইনের বই প্রিন্সিপালস অব ল, আবদুল কাইয়ুম সাজ্জাদির আফগানিস্তানের রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান পলিটিক্যাল সোশিওলজি অব আফগানিস্তান এবং আবদুর রহমান আলমের পশ্চিমা দর্শনের ইতিহাস হিস্ট্রি অব ওয়েস্টার্ন ফিলোসফি।

রাজনীতির খড়্গ ইরানি বইয়ে

ইনডিপেনডেন্ট পার্সিয়ানের তথ্য অনুযায়ী, নিষিদ্ধ বইয়ের মধ্যে প্রায় ৩১০টি ইরানি লেখক বা প্রকাশকের বই রয়েছে। এসব বইকে শিয়া মতাদর্শ বা বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে বিবেচনা করা হয়েছে। ইরানের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্কের উত্তেজনার কারণে নিষিদ্ধের তালিকায় তাঁদের বই থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশেষ করে পানির অধিকার এবং ইরান থেকে ১৫ লাখের বেশি আফগান শরণার্থী বহিষ্কারের বিষয়টি এ প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

আরও পড়ুনআফগানিস্তানে তিনটি বিষয় নজর কেড়েছে, নারী শিক্ষার বিষয় আপত্তিকর ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শিক্ষা ও প্রকাশনা শিল্পে প্রভাব

বই নিষিদ্ধের এ ব্যবস্থা আফগানিস্তানের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। কাবুলের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনডিপেনডেন্ট পার্সিয়ানকে বলেন, ‘এসব বইয়ের বিকল্প তৈরি করা সময়সাপেক্ষ। অনেক ক্ষেত্রে বিকল্প উপকরণ এখনো প্রস্তুত নেই।’ এ পরিস্থিতি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পড়াশোনা আর পাঠদানে বাধা সৃষ্টি করছে।

বই নিষিদ্ধের কারণে দেশটিতে প্রকাশনা শিল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কাবুলের একজন প্রকাশক জানিয়েছেন, তালেবানের সীমান্ত কর্মকর্তারা ইরান থেকে আমদানি করা বই পরীক্ষা করেন। প্রায়ই সেগুলো প্রবেশে বাধা দেন।

আরও পড়ুনআফগানিস্তানের দুই বই বিক্রেতার গল্প৩০ জুলাই ২০২১

হেরাতের একজন সাক্ষরতাকর্মী জানান, তিনটি পৃথক তালিকায় ৬২০টি বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাঠাগারগুলো থেকে এসব বই সরিয়ে ফেলা হয়েছে (ইনডিপেনডেন্ট পার্সিয়ান, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪)।

তালেবান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের লক্ষ্য হলো ইসলামি ও আফগান মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি শিক্ষা আর সাংস্কৃতিক পরিবেশ গড়ে তোলা। এ প্রক্রিয়ায় তারা ধর্মীয় শিক্ষার ওপর জোর দিচ্ছে। সব অনুষদে শরিয়াহ-সম্পর্কিত কোর্স বাড়িয়েছে।

তালেবান নেতা মোল্লা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার নির্দেশে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে, যাঁরা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের শরিয়াহ শিক্ষা দিচ্ছেন।

আরও পড়ুনআফগান বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের নিষিদ্ধ করল তালেবান২১ ডিসেম্বর ২০২২.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন র ন ষ দ ধ বইয় র ন ষ দ ধ কর ছ গ রন থ গ র স প ট ম বর গণতন ত র স শ ওলজ ব যবস থ এসব বই ন ত কর র জন ত মন ত র তত ত ব দ র বই ইন ট র প রক শ এসব ব ব ষয়ক ইসল ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%

এশিয়াসহ বিশ্বের চালের বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এশিয়ায় চালের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূলত বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

থাইল্যান্ডসহ চালের অন্যান্য বড় উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারেও চালের দাম কমছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্যসূচক অনুযায়ী, চলতি বছর চালের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমনকি বিশ্ববাজার চালের দাম আগস্ট মাসে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। খবর দ্য নেশনের

থাইল্যান্ডে চালের দামের এই নিম্নমুখী প্রবণতা একদম নতুন কিছু নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষিবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকেরা ধানের আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন।

থাইল্যান্ডে গত বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৩৮ ডলার। থাইল্যান্ডের কৃষি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ১৪ বছরে থাই সরকারের জনতুষ্টিমূলক নীতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে প্রায় ৪০ বিালিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হলেও একধরনের নীতিগত ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষকেরা প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বাড়ানো কিংবা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত হয়েছেন।

সেই সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটাও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো চালের গুণগত মানের উন্নতি করেছে। আধুনিকতা এনেছে উৎপাদনব্যবস্থায়। ফলে তারা কম খরচে ভালো মানের চাল রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু থাইল্যান্ড এখনো ভর্তুকিনির্ভর ব্যবস্থায় আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এফএওর সূচক কমেছে

প্রতি মাসেই খাদ্যমূল্যসূচক করে থাকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক নেমে এসেছে ৯৮ দশমিক ৪–এ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা ছিল ১১৩ দশমিক ৬। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক ছিল ১২৫ দশমিক ৭। সেই হিসাবে এক বছরে চালের দাম কমেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।

চালের দামের এই পতন শুরু হয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ধাপে ধাপে রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করে তখন। এ ঘটনা চালের বাজারে বড় প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের

অথচ ২০২৪ সালের শুরুতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। তখন ভারত একের পর এক রপ্তানি সীমাবদ্ধতা জারি করলে ২০০৮ সালের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়। অন্যান্য উৎপাদক দেশেও সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর পর থেকে চালের দাম কমতে শুরু করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নীরবতা ভেঙে হঠাৎ রাজনীতিকে ‘না’ বলে দিলেন শমসের মুবিন চৌধুরী
  • পাড়ার মঞ্চ থেকে বড় পর্দায় 
  • বিকল্প শক্তির উত্থানে নভেম্বরের শেষে ‘জাতীয় কনভেনশন’ করবে বাম ঘরানার দলগুলো
  • থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%