কেএমপি কমিশনারকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের দাবি খুলনা বিএনপির
Published: 25th, June 2025 GMT
দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে খুলনা মহানগর পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দারকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। আজ বুধবার রাতে খুলনা বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বিএনপি নেতারা বলছেন, খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনার বাড়ি ভাঙচুরসহ চারটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ও নানা অভিযোগে অভিযুক্ত উপপরিদর্শক (এসআই) সুকান্তকে স্থানীয় জনগণ ধরে এনে খানজাহান আলী থানা–পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। কিন্তু কেএমপি কমিশনার মো.
বিবৃতিতে বিএনপি নেতারা বলেন, কমিশনার দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন এবং পতিত সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুলনা থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। একই সঙ্গে এসআই সুকান্তকে ছেড়ে দেওয়ার পেছনে কমিশনার ছাড়াও অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাঁকেও অপসারণ ও বিভাগীয় শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানান নেতারা।
আরও পড়ুনখুলনা মহানগর পুলিশের সদর দপ্তর ঘেরাও, ফটকে তালা৩ ঘণ্টা আগেবিবৃতি দেওয়া নেতারা হলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী, মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোমরেজুল ইসলাম, মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সাদী, মাসুদ পারভেজ ও চৌধুরী হাসানুর রশিদ।
বিএনপির বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ৩৬ জুলাই–পরবর্তী সময়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এতে খুলনার আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে। সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্যে নগরজুড়ে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। খুন ও সন্ত্রাস এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নেতারা বলেন, এমন ব্যর্থ কর্মকর্তার পক্ষে বিভাগীয় শহরের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা সম্ভব নয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানমুখী আন্দোলনের সময় এসআই সুকান্তর বিরুদ্ধে হামলার শত শত অভিযোগ রয়েছে। এমন এক অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা আইনের অপব্যবহার এবং পুলিশের পক্ষপাতমূলক আচরণের দৃষ্টান্ত। কমিশনারকে অপসারণ করা না হলে খুলনাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
আরও পড়ুনখুলনায় এসআইকে মারধর করে পুলিশে দিলেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা২৪ জুন ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জয়পুরহাটে রিমান্ডে নিয়ে আসামিকে নির্যাতন, এসআইকে থানা থেকে প্রত্যাহার
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে পুলিশি হেফাজতে (রিমান্ড) নির্যাতনের ঘটনায় চিকিৎসক দিয়ে আসামির শরীর পরীক্ষা করে আঘাতসংক্রান্ত প্রতিবেদন এবং সিভিল সার্জনকে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জয়পুরহাটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এ আদেশ দেন।
আক্কেলপুর থানার উপপরির্দশক (এসআই) গোলাম রব্বানীর বিরুদ্ধে পুলিশি হেফাজতে থাকা ওই আসামিকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। আদালতের আদেশের পর গোলাম রব্বানীকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
আক্কেলপুর থানা সূত্রে জানা যায়, গত মার্চে ইসলামী ব্যাংকের আক্কেলপুর এজেন্ট শাখায় গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধরা পড়ে। এ ঘটনায় থানা ও আদালতে পৃথক আটটি মামলা করা হয়। এসব মামলায় তিনজনকে আসামি করা হয়। তাঁরা হলেন এজেন্ট শাখার মালিক জাহিদুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক রিজওয়ানা ফারজানা ও ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা। তিন আসামি কারাগারে ছিলেন। ৪ আগস্ট তিন আসামিকে তিন দিনের পুলিশি হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আসামি সোহেল রানা পুলিশি হেফাজতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই গোলাম রব্বানী গতকাল আদালতে মাসুদ রানাকে হাজির করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রের্কডের আবেদন করেন এবং আরও পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতের নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেন। তবে আদালত ওই আবেদন নামঞ্জুর করে একটি আদেশ দেন।
আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, আসামি জাহিদুল ইসলাম ও রিজওয়ানা ফারজানাকে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁরা এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন বলে দোষ স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানান। অপর আসামি মাসুদ রানাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানান, ৪ আগস্ট তাঁকে পুলিশি হেফাজতে এনে এসআই গোলাম রব্বানী জানালার সঙ্গে হাতকড়া লটকায়ে বেধড়ক মারপিট করেছেন। তাঁর শরীরের ক্ষতচিহ্ন আদালতের পরীলক্ষিত হয়। তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে ইচ্ছুক নন। এ ছাড়া পুলিশি হেফাজতে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করায় তাঁর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার আইনগত সুযোগ নেই।
আদালত একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক দিয়ে মাসুদ রানার দেহ পরীক্ষা করে শরীরের আঘাতসংক্রান্ত প্রতিবেদন জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে আগামী ১০ আগস্ট দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, আসামি মাসুদ রানার জবানবন্দি পর্যালোচনায় দেখা যায়, আক্কেলপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আসামির শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ না করেই পুলিশের কথা শুনে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। এটি দায়িত্বের চরম অবহেলা। ঘটনাটি তদন্ত করে ১৭ আগস্ট সিভিল সার্জনকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে এসআই গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তিনজন আসামির কাউকেই পুলিশি হোফাজতে নির্যাতন করিনি। আসামি মাসুদ রানা টাকা আত্মসাতের কথা গ্রাহকদের সামনে স্বীকার করেছেন। এখন মামলাগুলো অভিযোগপত্র প্রস্তুতের পর্যায়ে রয়েছে। মাসুদ রানা মামলা থেকে বাঁচতে কৌশল খুঁজছেন।’
জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, এসআই গোলাম রব্বানী পুলিশি হেফাজতে থাকা আসামির সঙ্গে অপেশাদার আচরণ করেছেন। এ কারণে তাঁকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।