দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে খুলনা মহানগর পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দারকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। আজ বুধবার রাতে খুলনা বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে বিএনপি নেতারা বলছেন, খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনার বাড়ি ভাঙচুরসহ চারটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ও নানা অভিযোগে অভিযুক্ত উপপরিদর্শক (এসআই) সুকান্তকে স্থানীয় জনগণ ধরে এনে খানজাহান আলী থানা–পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। কিন্তু কেএমপি কমিশনার মো.

জুলফিকার আলী হায়দারের নির্দেশে রাতে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে দলটি।

বিবৃতিতে বিএনপি নেতারা বলেন, কমিশনার দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন এবং পতিত সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুলনা থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। একই সঙ্গে এসআই সুকান্তকে ছেড়ে দেওয়ার পেছনে কমিশনার ছাড়াও অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাঁকেও অপসারণ ও বিভাগীয় শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানান নেতারা।

আরও পড়ুনখুলনা মহানগর পুলিশের সদর দপ্তর ঘেরাও, ফটকে তালা৩ ঘণ্টা আগে

বিবৃতি দেওয়া নেতারা হলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী, মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোমরেজুল ইসলাম, মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সাদী, মাসুদ পারভেজ ও চৌধুরী হাসানুর রশিদ।

বিএনপির বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ৩৬ জুলাই–পরবর্তী সময়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এতে খুলনার আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে। সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্যে নগরজুড়ে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। খুন ও সন্ত্রাস এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নেতারা বলেন, এমন ব্যর্থ কর্মকর্তার পক্ষে বিভাগীয় শহরের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা সম্ভব নয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানমুখী আন্দোলনের সময় এসআই সুকান্তর বিরুদ্ধে হামলার শত শত অভিযোগ রয়েছে। এমন এক অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা আইনের অপব্যবহার এবং পুলিশের পক্ষপাতমূলক আচরণের দৃষ্টান্ত। কমিশনারকে অপসারণ করা না হলে খুলনাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি নেতারা।

আরও পড়ুনখুলনায় এসআইকে মারধর করে পুলিশে দিলেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা২৪ জুন ২০২৫

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ডায়াবেটিসে ভোগা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়া কঠিন হলো

ডায়াবেটিসে ভুগছেন যাঁরা, বসবাসের জন্য তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে উঠল। এমন নির্দিষ্ট কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে তাঁদের ভিসার আবেদন বাতিল করা যাবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এই নির্দেশনা গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দূতাবাস ও কনস্যুলার কর্মকর্তাদের কাছে এমন নির্দেশনা পাঠিয়েছে। তাতে যুক্তি দেখানো হয়েছে, এ ধরনের ব্যক্তিরা তাঁদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা বা বয়সের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের খরচের বোঝা বাড়িয়ে দিতে পারেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে ভিসা কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো নির্দেশনায় এমন নতুন কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে, যার ভিত্তিতে তাঁরা ভিসার আবেদনকারীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য ঘোষণা করতে পারবেন। এর মধ্যে আছে বেশি বয়স বা এমন কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা, যার জন্য ওই ব্যক্তিরা সরকারি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল থাকবেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন নির্দেশনায় আবেদনকারীর স্বাস্থ্যগত দিকের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। যেসব স্বাস্থ্যগত অবস্থায় ভিসার আবেদন বাতিল করা যাবে, সে তালিকাটি আরও দীর্ঘ হয়েছে। ভিসা কর্মকর্তাদের আবেদনকারীর স্বাস্থ্যগত অবস্থার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আগের চেয়ে আরও বেড়েছে।

ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র অনেক বছর ধরেই সম্ভাব্য অভিবাসীদের স্বাস্থ্যগত তথ্য যাচাই–বাছাই করে আসছে। যেমন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত কি না, তা পরীক্ষা করা ও টিকার ইতিহাস যাচাই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন নির্দেশনায় আবেদনকারীর স্বাস্থ্যগত দিকের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। যেসব স্বাস্থ্যগত অবস্থায় ভিসার আবেদন বাতিল করা যাবে, সে তালিকাটি আরও দীর্ঘ হয়েছে। ভিসা কর্মকর্তাদের আবেদনকারীর স্বাস্থ্যগত অবস্থার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আগের চেয়ে আরও বেড়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসনবিরোধী এক বিতর্কিত অভিযানের অংশ হিসেবে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই অভিযানের লক্ষ্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রে অননুমোদিতভাবে বসবাস করা অভিবাসীদের বিতাড়িত করা ও নতুন অভিবাসীদের ঠেকানো। এই অভিযানের অংশ হিসেবে নিয়মিত গণগ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া নির্দিষ্ট দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ করা এবং অভিবাসীর প্রবেশ সীমিত করার মতো পরিকল্পনাও করা হয়েছে।

আইনি সহায়তাবিষয়ক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ক্যাথলিক লিগ্যাল ইমিগ্রেশন নেটওয়ার্কের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চার্লস হুইলার বলেন, নতুন নির্দেশনায় ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ায় অভিবাসীদের স্বাস্থ্যকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। এই নির্দেশনা প্রায় সব ভিসা আবেদনকারীর জন্য প্রযোজ্য হলেও খুব সম্ভবত যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করছেন, শুধু তাঁদের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হবে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভিসা কর্মকর্তাদের অবশ্যই আবেদনকারীর স্বাস্থ্যগত অবস্থা যাচাই করতে হবে। যেমন হৃদ্‌রোগ, শ্বাসনালির রোগ, ক্যানসার, ডায়াবেটিস, বিপাকজনিত রোগ, স্নায়ুবিষয়ক সমস্যা এবং মানসিক সমস্যাসহ যেসব স্বাস্থ্য সমস্যার ক্ষেত্রে লাখ লাখ ডলার মূল্যের সুরক্ষা দিতে হবে, সেগুলো বিবেচনা করতে হবে।

বিশ্বের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছে। হৃদ্‌রোগও খুব দেখা যায়। বিশ্বজুড়ে মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর একটি এটি।

নির্দেশনায় আবেদনকারীদের স্থূলতার বিষয়টিও বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। কারণ, এটি হাঁপানি, নিদ্রাহীনতা এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে। অভিবাসীদের কারও এসব সমস্যা থাকলে তিনি সরকারের জন্য অতিরিক্ত খরচের বোঝা তৈরি করবেন। আর তা মাথায় রেখে ওই ব্যক্তির আবেদন খারিজ করে দেওয়া যেতে পারে।

নির্দেশনায় আবেদনকারীদের স্থূলতার বিষয়টিও বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। কারণ, এটি হাঁপানি, নিদ্রাহীনতা ও উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে। অভিবাসীদের কারও এসব সমস্যা থাকলে তিনি সরকারের জন্য অতিরিক্ত খরচের বোঝা তৈরি করবেন। আর তা মাথায় রেখে ওই ব্যক্তির আবেদন খারিজ করে দেওয়া যেতে পারে।

এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া পাওয়া যায়নি।

আবেদনকারী ব্যক্তি সরকারি সহায়তা ছাড়া নিজেই নিজের চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারবেন কি না, সে বিষয়টিও বিবেচনা করতে ভিসা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তবে আইনজীবী চার্লস হুইলার বলেছেন, নির্দেশনাটি পররাষ্ট্র দপ্তরের নিজস্ব হ্যান্ডবুক ফরেন অ্যাফেয়ার্স ম্যানুয়ালের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হচ্ছে। কারণ সেখানে বলা হয়েছে, ‘এটা হতে পারে’ এমন অনুমানের ভিত্তিতে ভিসা কর্মকর্তারা কোনো আবেদন বাতিল করতে পারেন না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ