বিক্ষোভ-বিতর্কের মধ্যেই ভেনিসে ব্যয়বহুল বিয়ে সারছেন বেজোস-সানচেজ, কী কী থাকছে
Published: 25th, June 2025 GMT
বিশ্বের অন্যতম ধনকুবের জেফ বেজোস ও সাবেক সাংবাদিক লরেন সানচেজ এই সপ্তাহে বিয়ে করছেন। ইতালির ভেনিস শহরে তিন দিনব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। তবে লাখ লাখ ডলারের এই আয়োজন নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে অসন্তোষও বাড়ছে।
কোথায় ও কবে বিয়ে?
বৃহস্পতিবার ভেনিসে ৬১ বছর বয়সী জেফ বেজোস এবং ৫৫ বছর বয়সী লরেন সানচেজের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে। বিয়ের মূল অনুষ্ঠান হবে শনিবার। তবে ঠিক কোন জায়গায় এ অনুষ্ঠান হবে তা জানানো হয়নি। সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, ভেনিসের দ্বীপ সান জর্জিও মাজোরেতে মূল অনুষ্ঠান হতে পারে।
এটি বেজোসের দ্বিতীয় বিয়ে। সমাজসেবী ম্যাকেঞ্জি স্কট তাঁর প্রথম স্ত্রী। ২০১৯ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। সানচেজেরও এটি দ্বিতীয় বিয়ে। তাঁর সাবেক স্বামী প্যাট্রিক হোয়াইটসেল মেধাবী উদ্যোক্তাদের সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান ‘এন্ডেভার’-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান। তাঁদেরও ২০১৯ সালে বিচ্ছেদ হয়।
বেজোস ও সানচেজের বিয়ের আয়োজনকে কেন্দ্র করে ভেনিসে বিক্ষোভও হচ্ছে। বিক্ষোভের মুখে অনুষ্ঠানের একটি ভেন্যুও পরিবর্তন করা হয়েছে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, শুরুতে ভেনিস শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত চতুর্দশ শতাব্দীর ঐতিহাসিক গ্রান্দে স্কোলা মিজেরিকর্দিয়া ভবনে ২৮ জুন বিবাহোত্তর একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল। তবে স্থানীয় মানুষের চাপ ও প্রতিবাদের কারণে অনুষ্ঠানটি ভেনিস শহরের উপকণ্ঠে একটি শিপইয়ার্ডে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ভেন্যু পরিবর্তনের এ ঘটনাকে নিজেদের সাফল্য হিসেবে ঘোষণা করেছে ‘নো স্পেস ফর বেজোস’ নামের একটি বিক্ষোভকারী সংগঠন।
বিয়েতে কত খরচ হচ্ছে?ভেনিসে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান আয়োজন বাবদ ৬ কোটি ৪০ লাখ থেকে ৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার খরচ হতে পারে। ইতালির ভেনেতো অঞ্চলের স্থানীয় সরকারের প্রেসিডেন্ট লুকা জাইয়ার বরাতে দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল এ তথ্য জানিয়েছে। ভেনিস এ অঞ্চলের অধীন।
বেজোস-সানচেজ জুটির ঘনিষ্ঠদের বরাতে একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এই বিশাল আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় ৮০ শতাংশ পণ্য ও সেবা ভেনিসের স্থানীয় দোকানদার ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই নেওয়া হচ্ছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে স্থানীয়ভাবে তৈরি পেস্ট্রি এবং বিখ্যাত মুরানো দ্বীপ থেকে আনা হাতে তৈরি কাচের সামগ্রী।
ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, জেফ বেজোসের সম্পদের পরিমাণ ২৩ হাজার কোটি ডলার। তিনি বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় তার ওপরে আছেন মার্ক জাকারবার্গ ও ইলন মাস্ক।
কারা থাকছেন বিয়েতে?বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, জেফ বেজোস ও লরেন সানচেজ তাঁদের বিয়েতে প্রায় ২০০ অতিথিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে অনেক তারকা ব্যক্তিত্ব উপস্থিত থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে যাঁদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাঁরা হলেন অভিনেতা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও, গায়ক মিক জ্যাগার, রিয়েলিটি তারকা কিম কার্ডাশিয়ান, উপস্থাপিকা অপরাহ উইনফ্রে, অভিনেতা অরল্যান্ডো ব্লুম, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প।
ইতালির সংবাদপত্র কোরিয়েরে দেল্লা সেরার খবরে বলা হয়েছে, ভেনিসের মার্কো পোলো বিমানবন্দরে ৯৫টির বেশি ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ নামার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়েই বোঝা যায়, এই বিয়ে শুধুই ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান নয়, এটি হবে বিখ্যাতদের এক মিলনমেলা।
কে এই লরেন সানচেজ?ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক জেফ বেজোসের হবু স্ত্রী লরেন সানচেজ একসময় টিভি সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি এখন শিশুতোষ বই লেখেন। বেজোস ও সানচেজের সম্পর্কের কথা ২০১৯ সালে প্রকাশ্যে আসে। ২০২৩ সালে তাঁদের বাগদান হয়।
সম্প্রতি শুধু নারীদের নিয়ে পরিচালিত একটি মহাকাশ ভ্রমণে অংশ নিয়েছিলেন সানচেজ। এটি ছিল প্রথম কোনো মহাকাশ ফ্লাইট, যেটি শুধু নারীদের নিয়ে পরিচালিত হয়েছে। এর উদ্যোক্তা ছিল মার্কিন মহাকাশযান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘ব্লু অরিজিন’। বেজোস এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। মহাকাশ ভ্রমণকারী এই নারীর দলে আরও ছিলেন সাংবাদিক গেইল কিং এবং গায়িকা কেটি পেরি।
সানচেজ নিজেও একজন লাইসেন্সধারী পাইলট। ২০২১ সালে বেজোস নিজে মহাকাশ থেকে ফিরে আসার পর নারীদের নিয়ে একটি বিশেষ ফ্লাইট আয়োজনের ধারণাটি সানচেজই তাঁকে দেন।
আরও পড়ুনভেনিসে জেফ বেজোসের বিয়ের আয়োজন করতে দিতে চান না স্থানীয় বাসিন্দারা১৫ জুন ২০২৫বিক্ষোভ কেন হচ্ছে?ভেনিসে বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি জেফ বেজোস ও লরেন সানচেজের বিয়ের আয়োজন ঘিরে অনেক স্থানীয় বাসিন্দার মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। তাঁদের অভিযোগ, শহরটির কর্তৃপক্ষ ধনী পর্যটকদের স্বাগত জানালেও সাধারণ মানুষের সমস্যাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
ইউরোপজুড়ে বেড়ে চলা পর্যটনবিরোধী ক্ষোভের প্রতিফলন দেখা গেছে এখানে। গত সপ্তাহে ভেনিসসহ ইউরোপের অনেক জনপ্রিয় শহরের স্থানীয় মানুষেরা পর্যটকদের ঢলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নামেন। সমালোচকদের কেউ কেউ বলছেন, ভ্রমণকারীদের ভিড়ের কারণে বাড়িভাড়া বেড়ে যাচ্ছে, এতে স্থানীয় মানুষজন শহর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে।
এই পরিস্থিতির কারণে ভেনিস শহর কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় বছরের মতো নিয়ম করেছে যে গ্রীষ্মের নির্দিষ্ট সময়ে যাঁরা শুধু এক দিনের জন্য ভেনিসে ঘুরতে আসবেন, তাঁদের শহরে ঢোকার জন্য কর দিতে হবে।
ভেনিসে বেজোস ও সানচেজের বিয়ের আয়োজন নিয়ে যে প্রতিবাদ চলছে, তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘নো স্পেস ফর বেজোস’। বাসস্থানের দাবিতে সোচ্চার থাকা ব্যক্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠনসহ এক ডজনের বেশি স্থানীয় সংগঠন এ বিক্ষোভকে সমর্থন দিচ্ছে।
সোমবার ভেনিসের কেন্দ্রীয় সেন্ট মার্কস স্কয়ারে গ্রিনপিসের কয়েকজন কর্মী একটি বিশাল ব্যানার বিছিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ জানান.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ ন স শহর অন ষ ঠ ন র বর ত
এছাড়াও পড়ুন:
পূজার ছুটিতে বান্দরবানে পর্যটকের ভিড়
চারপাশে সবুজ পাহাড়, আঁকাবাঁকা পথ আর পাহাড়চূড়ায় ভেসে থাকা মেঘ যেন প্রকৃতির অনিন্দ্য সুন্দর এক ক্যানভাস। বর্ষা মৌসুমে এ দৃশ্য আরো মোহনীয় হয়ে ওঠে। আকাশ আর পাহাড়ের মিলনে সৃষ্টি হয় অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্যপট, যা ভ্রমণপিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ হয়ে ওঠে। এই সৌন্দর্যের টানেই ছুটে আসেন হাজারো মানুষ পাহাড়কন্যা বান্দরবানে।
এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে টানা চার দিন সরকারি ছুটির দ্বিতীয় দিনেও বান্দরবানে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। হোটেল, রিসোর্ট, কটেজ কোথাও সিট খালি নেই। শহরের প্রতিটি হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজে শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, সম্প্রতি পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে সহিংসতার কারণে পর্যটকরা সেদিক থেকে কিছুটা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ফলে, বিকল্প হিসেবে নিরাপদ ও মনোরম পর্যটন স্পট বান্দরবানই হয়ে উঠেছে ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম পছন্দ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর উৎসবের উচ্ছ্বাস মিলে যেন নতুন প্রাণ সঞ্চার হয়েছে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে।
বান্দরবান শহরের আশপাশের জনপ্রিয় পর্যটন স্পটগুলোতে দেখা গেছে পর্যটকদের ভিড়। নীলাচল, শৈলপ্রপাত, গোল্ডেন মন্দির এবং মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণপিপাসুরা দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। খোলা জিপে (চাদের গাড়ি) বা বন্ধুদের সাথে মোটরসাইকেলে চেপে ছুটে যাচ্ছেন গন্তব্যের পথে। পাহাড়ের চূড়ায় গোল টেবিলে বসে কেউ কেউ আড্ডায় মেতে উঠেছেন। স্মরণীয় মুহূর্তগুলো ধরে রাখতে দর্শনার্থীরা স্মৃতি হিসেবে তা ক্যামেরাবন্দি করে রাখছেন।
বান্দরবানের মেঘলা পর্যটন স্পটে কথা হয় ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মোহাম্মদ জামাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সময় পেলেই আমি বান্দরবানে ছুটে আসি। প্রকৃতির যে অপরূপ সৌন্দর্য এখানে, না এলে কেউ তা উপলব্ধি করতে পারবেন না। সত্যিই বাংলাদেশের প্রকৃতির আসল রূপ লুকিয়ে আছে এই পাহাড়ে। আমার মনে হয়, পাহাড়ে ঘুরতে চাইলে বান্দরবানই সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা।
আরেক পর্যটক রফিকুল আলম বলেন, এখনো বর্ষার রঙে রঙিন পাহাড়। ভরে আছে সবুজে। পাহাড় একেক সময় একেক রূপ ধারণ করে। ঝর্ণাগুলোও দারুণ। রুপালি ঝর্ণা ও শৈলপ্রপাত দেখছি। স্রোতের মতো পানি ওপর থেকে টুপটাপ নেমে আসছে। এমন মনোরম পরিবেশে ঘুরে বেড়ানো সত্যিই অসাধারণ।
খুলনা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক নজরুল ইসলাম বলেন, পূজার ছুটিতে পরিবারকে নিয়ে প্রথমবারের মতো বান্দরবান ভ্রমণে এসেছি। পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই আমাদের মুগ্ধ করেছে। বিশেষ করে, আমার ছোট ছেলে পাহাড়ঘেরা এই মনোরম পরিবেশে দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছে। তার উচ্ছ্বাস আর হাসিখুশি মুখ দেখে আমারও মন ভরে যাচ্ছে।
বান্দরবান জেলা আবাসিক হোটেল-মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, গত ৬ জুন রুমার বগা লেক এবং থানচির তিন্দু ও তুমাতুঙ্গি এলাকায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। এর পর থেকে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। কেওক্রাডং খোলার পর পর্যটক আরো বেড়েছে।
তিনি আরো জানান, দুর্গাপূজার ছুটিতে প্রচুর পর্যটক বান্দরবানে এসেছেন। হোটেল-মোটেলগুলো ১ অক্টোবর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত শতভাগ বুকিং হয়েছে।
থানচির নাফাখুম পর্যটকদের জন্য দ্রুত উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন বান্দরবান জেলা আবাসিক হোটেল-মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন।
পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে বান্দরবান জেলা ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ হাসান ইকবাল চৌধুরী বলেছেন, শারদীয়া দুর্গাপূজার ছুটিতে বান্দরবানে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হয়েছে। বান্দরবানের মেঘলা, নীলাচল, প্রান্তিক লেকসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য টহল অব্যাহত রয়েছে। সাদা পোশাকেও তদারকি চলছে।
তিনি বলেন, বান্দরবানে কিছু দুর্গম অঞ্চল আছে। সেখানে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সমন্বয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। আশা করছি, যারা বান্দরবানে ঘুরতে আসছেন, তারা নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারবেন।
ঢাকা/চাইমং/রফিক