বরগুনা বিএনপিতে দুটি পক্ষ। এক পক্ষের নেতৃত্বে মোল্লা পরিবার এবং আরেক পক্ষ কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নুরুল ইসলাম মনির অনুসারী। মনিরের বিরুদ্ধে এলাকায় না থাকার অভিযোগ। আর এলাকায় সক্রিয় মোল্লা পরিবারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আত্মীয়তার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জেলা কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার আগে ছয় উপজেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছিল বিএনপি। মেয়াদোত্তীর্ণ সেই কমিটিগুলো বহাল। দু’পক্ষের বিরোধে হচ্ছে না কমিটি, গতি পাচ্ছে না সাংগঠনিক কার্যক্রম। ফলে ৫ আগস্টের পর বিএনপির সুদিনেও বরগুনায় দলটির দৈন্যদশা কাটেনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেশত্যাগের পর শেখ হাসিনার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যে কথোপকথন প্রথম ছড়িয়ে পড়েছিল, তা ছিল বরগুনা আওয়ামী লীগ নেতার। গত ১২ আগস্ট রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবিরের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। এ নিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় জাহাঙ্গীর গ্রেপ্তার হলেও কয়েক দিনের মধ্যে জামিন পান। যদিও কারাফটক থেকে তাঁকে আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বরগুনায় নেতাকর্মীর ঈদ উপহার বিতরণ, মহান বিজয় এবং স্বাধীনতা দিবসে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি পালিত হয়। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালিত হয়।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি হয়েছিল ২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল। উপজেলা কমিটি গঠনে আহ্বায়ক মো.

মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লা ও সদস্য সচিব তরিকুজ্জামান টিটুর (প্রয়াত) অর্থ লেনদেনের অডিও ছড়িয়ে পড়ে। ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল কমিটি বিলুপ্ত হয়।

জেলায় দুটি সংসদীয় আসন। এর মধ্যে বরগুনা-১ (সদর-আমতলী-তালতলী) আসনে বিএনপি কোনো দিন জেতেনি। বেশির ভাগ ভোটে জয়ী আওয়ামী লীগের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীও হতে পারেনি।

মনির বিরুদ্ধে অভিযোগ

বিএনপির মনোনয়নে একমাত্র সংসদ সদস্য (এমপি) হয়েছিলেন নুরুল ইসলাম মনি। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি বরগুনা-২ (পাথরঘাটা-বামনা-বেতাগী) আসনে এমপি হন ২০০১ সালে। ১৯৮৮ ও ১৯৯১-এর স্বতন্ত্র এমপি মনি ১৯৯৩ সালে দলটিতে যোগ দেন। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে তিনি দু’বার নিজ এলাকা পাথরঘাটায় গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর মনির অনুসারীরা তৎপর হলে তা ভালোভাবে নেয়নি জেলা সদরে দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দেওয়া মোল্লা পরিবার।

মোল্লা পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ

অন্যদিকে, বছরের পর বছর জেলা সদরে নেতৃত্বে থাকা মোল্লা পরিবার দলকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে; বরং দলকে পারিবারিককরণের অভিযোগ রয়েছে। বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লা ও তাঁর আগের সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা পরস্পরের চাচাতো ভাই। ফারুকের স্ত্রী আফরোজা বুলবুল জেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি। নজরুলের ভাই জাহিদ মোল্লা জেলা যুবদলের এবং চাচাতো ভাই নাসির মোল্লা শ্রমিক দলের সভাপতি। আরও দুই চাচাতো ভাই ফিরোজ্জামান মামুন মোল্লা কেন্দ্রীয় শ্রমবিষয়ক সহসম্পাদক ও বাবুল মোল্লা কাঁঠালতলী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি।

আবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে মোল্লা পরিবারের আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। নজরুল মোল্লার জামাতা হলেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাসেল। চাচাতো ভাই লাভলু মোল্লা কাঁঠালতলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। কেন্দ্রীয় নেতা মামুন মোল্লার দুই খালাতো ভাইয়ের একজন মনিরুল ইসলাম মনির সর্বশেষ পরিষদের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আরেকজন তানভীর আহমেদ সিদ্দিক জেলা যুবলীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক। মামুনের মামা মন্টু মোল্লা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক।

সংশ্লিষ্ট নেতাদের বক্তব্য

জেলা বিএনপির দুরবস্থার জন্য সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম মনিকে দায়ী করেছেন সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মোল্লা। তিনি বলেন, ‘মনি স্বতন্ত্র এমপি অবস্থায় ১৯৯৩ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। বলয় তৈরির জন্য প্রকৃত নেতাকর্মীকে বাদ দিয়ে সুবিধাবাদীদের স্থান দিয়েছেন। মনিসহ তাঁর অনুসারীরা দলের খারাপ সময়ে কেটে পড়েন।’ কমিটিতে মোল্লা পরিবারের আধিক্য ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আত্মীয়তা প্রসঙ্গে নজরুল বলেন, ‘মোল্লা বংশ অনেক বড়। প্রায় সবাই প্রত্যক্ষভাবে বিএনপি করেন। অনেক রাজনীতিবিদ অন্য দলের নেতাদের আত্মীয়।’ তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে মেয়ে প্রেমের সম্পর্কে তাঁর অমতে বিয়ে করেছেন বলে জানান নজরুল।

কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নুরুল ইসলাম মনি কারও নামোল্লেখ না করে বলেন, ‘জেলা সদরে বিএনপি একটি পরিবারের বৃত্তে বন্দি। এ পরিবারটির সঙ্গে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। তারা দিনে বিএনপি, রাতে আওয়ামী লীগ। শুধু এই পরিবারটির জন্য বরগুনায় বিএনপি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াতে পারেনি।’ এলাকায় অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে মনি জানান, যাওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। আওয়ামী লীগ আমলে পাথরঘাটায় গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন। সংবাদপত্রে এর ছবিও ছাপা হয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘২০২৩ সালে অল্প সময়ে দুটি কমিটি করেছি। দুটিই ফ্লপ। একটির বিরুদ্ধে অর্থ বাণিজ্য, আরেকটি সাংগঠনিক দক্ষতা দেখাতে ব্যর্থ। এ কারণে কমিটিগুলো বিলুপ্ত করা হয়েছে। এরপর আন্দোলন-সংগ্রাম, সরকার পতন নানা কারণে এগোনো যায়নি। এখন কমিটি গঠন প্রক্রিয়াধীন।’ কোন্দলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপির মতো বড় দলে অনেক যোগ্য নেতা আছেন। এদের মধ্যে পদের প্রতিযোগিতা আছে। এটা কোন্দল না।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বর শ ল বরগ ন পর ব র র ব এনপ র নজর ল গঠন ক আওয় ম বরগ ন

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিক তুহিনের মোবাইল ফোন খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ 

সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবের ভিডিও ধারণ ও সত্য উন্মোচন করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন। তাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় জড়িত আট জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে এই হত্যাকাণ্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ রয়েছে তার ব্যবহত মোবাইল ফোনে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুলিশ তার মোবাইল উদ্ধার করতে পারেনি। 

ধারণা করা হচ্ছে সাংবাদিক তুহিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা গেলে ঘটনার রহস্য আরও বেশি স্পষ্ট ও স্বচ্ছ প্রমাণিত হবে। সচেতন মহল ও সাংবাদিক সমাজ বলছে, মোবাইল ফোন পাওয়া গেলে ঘটনার মোড় ঘুরে যেতে পারে। এসকল সন্ত্রাসী, তাদের মদদদাতা ও হত্যার আসল রহস্য বের হয়ে আসতো। 

নিহত সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন। 

তার সহকর্মী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সাংবাদিক তুহিন দু’টি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন। তিনি চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপানা নিয়ে ভিডিও ধারণ করতেন। স্পর্শকাতর ছাড়া মোটামুটি সব ভিডিও তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিতেন। 

হত্যাকাণ্ড সংঘটিত এলাকা চান্দনা চৌরাস্তা এলাকাতেই অধিকাংশ সময় কাটাতেন তুহিন। যার কারণে এ এলাকার মোটামুটি সব অনিয়ম ও অপরাধীরা তার পরিচিত ছিল। 

সিসিটিভি ফুটেজের চিত্র ও পুলিশের ভাষ্যমতে, গত বৃহস্পতিবার বাদশা নামে এক ব্যক্তি ব্যাংক হতে ২৫ হাজার টাকা তুলে ফিরছিলেন। এসময় আসামি গোলাপী তাকে হানিট্রাপে ফেলার চেষ্টা করে। এটি যখন বাদশা বুঝতে পারে, তখন তার থেকে ছুটতে চায় এবং কিল-ঘুষি মারে। এসময় আগে থেকে ওৎপেতে থাকা অন্য আসামিরা এসে একটি মুদী দোকানে বাদশাকে কোপানো শুরু করে। বাদশা প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াতে থাকে। 

ঘটনাটি সাংবাদিক তুহিন নিজের পেশাগত কারণেই ভিডিও করে। আসামিরা সাংবাদিক তুহিনকে ভিডিও ডিলেট করতে বলে কিন্তু তিনি রাজি হননি। এক পর্যায়ে ওই আসামিরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

স্থানীয় দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাতে প্রথমে চান্দনা চৌরাস্তায় শাপলা ম্যানশনের সন্ত্রাসীরা বাদশা নামে লোকটার উপরে হামলা করে। ওই ঘটনার ২০-৩০ মিনিট পর ঘটনাস্থলের ঠিক বিপরীত পাশে মসজিদ মার্কেটের সামনে চায়ের দোকানে সাংবাদিকের উপর হামলা করে। এই দীর্ঘ সময় সন্ত্রাসীদের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শোডাউন দিতেও দেখা গেছে। 

গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন খান বলেন, “নিহত সাংবাদিকের দু’টি মোবাইল ফোন ছিল কিন্তু এখনো তার খোঁজ আমরা পাইনি। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদেও পাওয়া যায়নি ফোন। আমরা তার নম্বর ট্রেকিং করে রেখেছি। ফোন বন্ধ থাকায় লোকেশনও সনাক্ত করা যাচ্ছে না। আমরা ফোনটি উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/রেজাউল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ