ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তি সব ফাস্ট বোলারের দল। ওয়েস হল, ম্যালকম মার্শাল, জোয়েল গার্নার, মাইকেল হোল্ডিং, কলিন ক্রফট, অ্যান্ডি রবার্টস, কোর্টনি ওয়ালশ, কার্টলি অ্যামব্রোস, ইয়ান বিশপ....কত কত বিখ্যাত সব নাম!

শুধুই কি ফাস্ট বোলার, টেস্টে ইতিহাসে ৩০০ উইকেট নেওয়া প্রথম স্পিনারও তো একজন ক্যারিবিয়ান—ল্যান্স গিবস।

তবে এসব এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সোনালি অতীত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের প্রবল দাপট এখন প্রায় গল্প হয়ে গেছে। যদিও এখনো ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা মাঝেমধ্যেই অতীত কিংবদন্তিদের কথা মনে করিয়ে দেন। বাংলাদেশ সময় কাল রাতেই যেমন মনে করালেন জেইডেন সিলস ও শামার জোসেফ। ব্রিজটাউনে এই দুই তরুণ ক্যারিবীয় পেসার মিলে ধসিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস। সিলস নিয়েছেন ৬০ রানে ৫ উইকেট, শামার জোসেফ ৪ উইকেট নিয়েছেন ৪৬ রানে। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস তাতে থেমেছে ১৮০ রানেই।

১৯ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৮০ উইকেট নেওয়া সিলস তৃতীয়বার পেলেন এক ইনিংসে ৫ উইকেট। টেস্টে ২৩ বছর বয়সী পেসারের বোলিং গড় রীতিমতো ঈর্ষণীয়—২১.

৬২। টেস্টে যেসব ক্যারিবীয় বোলার ৫০–এর বেশি উইকেট নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে গড়ে ব্রিজটাউন টেস্টের প্রথম দিন শেষে সিলস আছেন চারে। সিলসের ওপরে থাকা তিনটি নামের আগে কিংবদন্তি বিশেষণ ব্যবহার করতেই হয়—ম্যালকম মার্শাল (২০.৯৪), জোয়েল গার্নার (২০.৯৭) ও কার্টলি অ্যামব্রোস (২০.৯৯)।

জশ ইংলিসকে ফেরানোর পর জেইডেন সিলস (ডানে)

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উইক ট ন প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

সংগীতশিল্পী থেকে নিউইয়র্কের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি

কীভাবে একটি শহরকে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য অধিক বসবাসযোগ্য করে তোলা যায়? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে এই মুহূর্তে শুনতে হবে জোহরান মামদানির কথা। তিনি আগামী ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নিউইয়র্ক সিটির নির্বাচনে মেয়র পদে ডেমোক্রেট দলের সম্ভাব্য প্রার্থী।

মামদানি বলছেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় ন্যায্য মূল্যের মুদি দোকান খোলা। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য নতুন দুই লাখ অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ। বাসা ভাড়া আগামী চার বছর বাড়ানো নিষিদ্ধ করা। বিনাখরচে শিশু দিবাযত্নের ব্যবস্থা করা। বিনাভাড়ার সরকারি বাস চালু করা। 

মনে রাখতে হবে, মামদানির বয়স ৩৩। অশ্বেতাঙ্গ। তার ওপর মুসলিম। প্রথাগত রাজনীতিবিদ নন। ছিলেন সংগীতশিল্পী। তিনি যে বাসায় থাকেন এর মাসিক ভাড়া ২ হাজার ২৫০ ডলার। তার কোনো গাড়ি নেই। যাবতীয় সম্পদের মূল্য ২ লাখ ডলার। তার এই সম্ভাব্য মনোনয়নে নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশিসহ দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে।

মামদানির জন্ম উগান্ডার কাম্পালায়। সাত বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে নিউইয়র্কে আসেন। তার মা ভারতীয় বংশোদ্ভূত চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার। বাবা উগান্ডান পণ্ডিত, বর্তমানে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন।

ট্রাম্প ও মামদানি পাল্টাপাল্টি খোঁচা

মামদানির বক্তব্য এরই মধ্যে ভোটারদের মনোযোগ কেড়েছে। প্রচারণার কৌশলও ছিল চোখে পড়ার মতো। তিনি বাসা ভাড়ার বিষয় তুলে ধরতে আটলান্টিক সাগরে ডুব দিয়েছেন। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতাকে তুলে ধরার জন্য একটি বারিতো (মেক্সিক্যান খাবার) দিয়ে পাতাল রেলে সাবওয়েতে রমজানের ইফতার করে রোজা ভাঙেন। ভোটের আগের দিন পুরো ম্যানহাটন হেঁটেছেন এবং ভোটারদের সঙ্গে সেলফি তুলেছেন।

এ সব নিয়ে বিতর্কও কম হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও খোঁচা মারতে ছাড়েনি। তিনি ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘জোহরান মামদানি শতভাগ কমিউনিস্ট পাগল। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারি জিতে এখন মেয়র হওয়ার পথে। আগেও কিছু উগ্র বামপন্থি দেখেছি। কিন্তু এবার ব্যাপারটা হাস্যকর হয়ে গেছে। তার চেহারা বিশ্রী, কণ্ঠস্বর বিরক্তিকর, আর বুদ্ধিও কম।’

এদিকে মামদানিও ছেড়ে কথা বলেননি। তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন। একজন প্রগতিশীল মুসলিম অভিবাসী।’ এটা স্পষ্ট যে অভিবাসী ও সরকারি ব্যয় সাশ্রয়ের নীতিতে ট্রাম্প অবিচল, এর বিপরীত মেরুতে মামদানি।

বাংলাদেশি নারীদের ধন্যবাদ

নিউইয়র্ক সিটির ৩৯ নম্বর কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট থেকে ডেমোক্রেটিক পার্টির কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শাহানা হানিফ। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৩০ হাজার ৫৯২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মায়া কর্নবার্গ পেয়েছেন ১১ হাজার ৪৬৭ ভোট।
এই বিষয়টি মাথায় রেখে মামদানি এবং শাহানা যৌথভাবে বাংলায় একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করেছেন। মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তব্যে সামদানি তার হয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচারণায় অংশ নেওয়া ‘বাংলাদেশি আন্টিদেরও ধন্যবাদ’ দেন।

এ বিষয়ে নিউইয়র্ক প্রবাসী আতাউর রহমান সমকালকে বলেন, জোহরান সামদানি মুসলিম এবং সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রী। তিনি নির্বাচনে জিতলে তা হবে বিশাল অর্জন। তিনি ফিলিস্তিন সমর্থক। সামাজিক ন্যায়বিচারের একনিষ্ঠ কর্মী।

মামদানির চমক

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার কাছাকাছি চলে এসেছেন জোহরান মামদানি। পঁচানব্বই শতাংশ ভোট গণনার পর দেখা যাচ্ছে মামদানি ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো ৩৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবারে মামদানির এই জয় নিউইয়র্ক এবং জাতীয় পর্যায়ে প্রগতিশীল ও তরুণ ডেমোক্র্যাটদের জন্য বড় অর্জন। এটা ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে প্রগতিশীল পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এবং নেতৃত্বে নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাটদের জন্য বড় ধাক্কা

মামদানির এই জয় প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাটদের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখছেন অনেকে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, রাজনীতিবিদ জিম ক্লাইবার্নসহ একাধিক প্রভাবশালী নেতা অ্যান্ড্রু কুওমোর পক্ষে ছিলেন। তবে এই পরাজয় দলের মধ্যে প্রজন্ম এবং মতাদর্শের দ্বন্দ্ব স্পষ্ট করেছে। নিউইয়র্ক টাইমস সম্পাদকীয় বোর্ড কোনো প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান না নিলেও মামদানির সমালোচনা করেছিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, বোর্ড জনমত বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। বোর্ড সদস্য মারা গে লিখেছেন, ‘ডেমোক্র্যাটিক ভোটাররা জানিয়ে দিয়েছেন তারা নতুন পথে হাঁটতে প্রস্তুত।’

সাবির্ক বিষয়ে প্রবাসী নাট্যকার খান শওকত সমকালকে বলেন, ‘৩৫ বছর ধরে আমি নিউইয়র্কে আছি। সাবেক গভর্নর এন্ড্রু কুমোকে আমরা মন থেকে চাচ্ছিলাম না। ২০২১ সালে তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ দায়ের করেছিলেন এক নারী। সেই ঘটনায় তাকে নির্বাচিত গভর্নরের পদ ছাড়তে হয়েছিল। বিষয়টি আজও আমরা ভুলতে পারিনি। সংগত কারণেই আমরা নতুন মুখ চাচ্ছিলাম। দল থেকে ১১জন প্রার্থী প্রাইমারি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মামদানির পরিকল্পনা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে আমি তাকে পছন্দ করছি। তরুণদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে।’

নিউইয়র্কের ব্রুকলিন প্রবাসী আম্বিয়া বেগম অন্তরা বলেন, মেয়র হিসেবে জোহরান মামদানিকে পছন্দ করার পেছনে আমার স্পষ্ট কিছু কারণ রয়েছে। তিনি অভিবাসীবান্ধব, বিলিয়নিয়ারদের নন- সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি। গরিব, মধ্যবিত্ত, শ্রমজীবী মানুষের পাশে দাঁড়ানো তাঁর রাজনীতির ভিত্তি। বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিয়ে তার পরিকল্পনা স্পষ্ট। তিনি মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় কমিউনিটির গর্ব। সবমিলিয়ে নিউইয়র্ককে মানবিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে জোহরান মামদানির মতো নেতা প্রয়োজন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ