নেত্রকোনার মদনে টিসিবির চাল পাচারকালে যুবদল নেতাসহ তিনজনকে আটক করেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে টিসিবির ২৫ বস্তা চালসহ তাদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তবে থানায় নেওয়ার পথে যুবদল নেতাকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

গত শুক্রবার রাতে নায়েকপুর ইউনিয়নের কাইটাইল বাজারসংলগ্ন ওয়াহেদ ইটভাটার কাছে একটি শ্যালো ইঞ্জিনচালিত হ্যান্ডট্রলি ভর্তি ২৫ বস্তা টিসিবির চালসহ তাদের আটক করেন এলাকাবাসী।

আটক তিনজন হলেন– টিসিবির ডিলার শামছুল হক চ্যাম্পিয়ন, একজন স্কুলছাত্র ও হ্যান্ডট্রলি চালক আলম মিয়া। তারা চানগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে শামছুল হক চ্যাম্পিয়ন নেত্রকোনা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ও মদন উপজেলার চানগাঁও ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য। গত ডিসেম্বরে তাঁকে অসদাচরণের কারণে যুবদলের সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এ ঘটনায় মদন থানার ওসি ও ঘটনাস্থলে থাকা এসআই ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। দায়িত্বে থাকা এসআই সাইদুল ইসালম বলেন, ‘আটকদের নিয়ে যাওয়ার পথে আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে শামছুল হক চ্যাম্পিয়ন নামে একজন পালিয়ে যায়।’ আর ওসি নাঈম মুহাম্মদ নাহিদ হাসান বলেন, সেনাবাহিনী আটকদের হস্তান্তরের আগেই কৌশলে পালিয়ে যায় ওই ব্যক্তি।

জানা গেছে, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নায়েকপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে টিসিবির ২৫ বস্তা চাল একটি হ্যান্ডট্রলিতে করে নিয়ে যাচ্ছিলেন ওই তিনজন। পথে কাইটাইল বাজারের কাছে একটি ইটভাটার পাশে এলাকাবাসী চাল ভর্তি হ্যান্ডট্রলিটি আটক করেন। খবর পেয়ে মদন অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পের সদস্যরা গিয়ে হ্যান্ডট্রলিসহ চালগুলো জব্দ করেন। এ সময় তিনজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন সেনা সদস্যরা।

অভিযোগ রয়েছে, থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে কৌশলে যুবদল নেতা শামছুল হক চ্যাম্পিয়নকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। বাকি দু’জনকে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। পরে এক কিশোরকে তাঁর মায়ের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। কারণ সে স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষার্থী, তাঁর পরীক্ষা চলমান।

আটকদের বিরুদ্ধে মদন থানায় শনিবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নায়েকপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) কৃষ্ণ চন্দ্র সরকার। তিনি জানান, তাঁকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বলেছে মামলায় স্বাক্ষর দিতে। তাই তিনি শুধু স্বাক্ষর দিয়েছেন। তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। তিনি ওই আসামিদের চেনেন না।

মদন থানার ওসি নাঈম মুহাম্মদ নাহিদ হাসান জানান, তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। তবে চ্যাম্পিয়নকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগটি সত্য নয়। পুলিশের কাছে হস্তান্তরের আগেই সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে কৌশলে পালিয়ে যান তিনি। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। হ্যান্ডট্রলি চালক আলম মিয়াকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন ত রক ন আটক র সদস য য বদল

এছাড়াও পড়ুন:

জামিনে মুক্তির পরই ভারতে পালিয়েছেন এসআই আকবর, দাবি নিহতের মায়ের

সিলেটে পুলিশের হেফাজতে নিহত রায়হান আহমদ (৩৪) হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাময়িক বরখাস্ত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়া জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরই ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে দাবি করেছেন নিহত রায়হানের মা সালমা বেগম। আজ বুধবার বেলা একটার দিকে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ দাবি করেন।

সালমা বেগম বলেন, আকবর হোসেন প্রথমেই ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তখন পুলিশ অনেক কষ্টে কানাইঘাটের ডনা সীমান্ত থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল। জামিন পেয়েই যে পালানোর চেষ্টা করবেন, সেটা স্বাভাবিক ছিল।

২০২০ সালের ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে রায়হান আহমদকে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ। পরে ১১ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী। পরে মহানগর পুলিশের অনুসন্ধান কমিটি অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করে। এরপর হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রধান অভিযুক্ত আকবরকে ৯ নভেম্বর কানাইঘাট সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন।

২০২১ সালের ৫ মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় পিবিআই। অভিযোগপত্রে এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে প্রধান অভিযুক্ত করা হয়। অন্য অভিযুক্তরা হলেন এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল হারুন অর রশিদ ও টিটু চন্দ্র দাস, ফাঁড়ির ‘টু-আইসি’ পদে থাকা এসআই হাসান উদ্দিন ও আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত রোববার আকবর হোসেন উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বের হন। এরপর মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষ পিটিশন ফর লিভ টু আপিল দায়ের করে। শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজ উচ্চ আদালতের আদেশ স্থগিত করেন। পাশাপাশি আকবর হোসেনকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।

সালমা বেগম বলেন, হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ছয় আসামির মধ্যে আবদুল্লাহ আল নোমান শুরু থেকেই পলাতক। কারাগারে থাকা পাঁচজনের মধ্যে চারজনই জামিনে মুক্ত আছেন। যার কারণে পুরো পরিবার ও মামলার সাক্ষীরা শঙ্কিত ও নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় মামলার বিচারকাজ প্রভাবিত করার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য তিনি ন্যায়বিচার পেতে প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতি আবেদন জানান।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, সহসভাপতি আমির হোসেন, দুর্নীতি মুক্তকরণ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ হোসেন, সিলেট যুব উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি আফিকুর রহমান, আখালিয়ার মুরব্বি ছানাউল্লাহ ছানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তাঁরা আকবর হোসেনকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা ও দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির দাবি জানান।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী আবুল ফজল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার তাঁর জামিন স্থগিত হয়েছে। তাঁকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আত্মসমর্পণ না করলে তাঁকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গ্রেপ্তার করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আ.লীগ কর্মী সন্দেহে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে তিনজন আটক
  • পৃথক হলো ঢাবি ও সাত কলেজ
  • জামিনে মুক্তির পরই ভারতে পালিয়েছেন এসআই আকবর, দাবি নিহতের মায়ের
  • শ্রমিক লীগ নেতার মৃত্যুর ৭ মাস পর জানা গেল, শ্বাসরোধে হত্যা, গ্রেপ্তার ৩