বিদ্যুৎ বিভাগের আওতায় ৩৩/১১ কেভি জিআইএস প্রযুক্তির ১০টি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র (সাবস্টেশন) নির্মাণে ব্যয় হবে ২৩৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ সংক্রান্ত দুটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

সভা সূত্রে জানা গেছে, টার্নকি ভিত্তিতে ৫টি ৩৩/১১ কেভি  উপন্দ্রের ডিজাইন, সাপ্লাই, ইন্সস্টলেশন , টেস্টিং অ্যান্ড কমিশনিং প্রভৃতির জন্য এক ধাপ দুই খাম পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৭টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। তার মধ্যে ৫টি প্রস্তাব বাণিজ্যিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া শেষে টিইসি খেকে সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান আইডিয়াল ইলেক্ট্রিকাল এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড ঢাকাম প্রকল্পটি বাস্তায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১২৩ কোটি ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৬ টাকা।

সভায় টার্নকি ভিত্তিতে ৫টি ৩৩/১১ কেভি উপন্দ্রের ডিজাইন, সাপ্লাই, ইন্সস্টলেশন, টেস্টিং অ্যান্ড কমিশনিং প্রভৃতি সম্পূর্ণ যা যা প্রয়োজন এবং ভূমি উন্নয়নসহ কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি (ডব্লিউ-১ লট-২) । এক ধাপ দুই খাম পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৮টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। তার মধ্যে ৫টি প্রস্তাব বাণিজ্যিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া শেষে টিইসি থেকে সুপারিশকৃত সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান আইডিয়াল ইলেক্ট্রিকাল এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড ঢাকাম প্রকল্পটি বাস্তায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১১৬ কোটি ৬৭ লাখ ২২ হাজার ৫৪৭ টাকা।

ঢাকা/হাসনাত/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রস ত ব দরপত র

এছাড়াও পড়ুন:

থাইরয়েড ক্যানসারের ওষুধ নেই

দেশে থাইরয়েড ক্যানসার চিকিৎসার একটি ওষুধ নেই। ছয় মাস ধরে রোগীরা এই ওষুধ পাচ্ছেন না। কবে নাগাদ ওষুধটি পাওয়া যাবে, তা ঠিকভাবে জানা যাচ্ছে না। অনিশ্চয়তা ও হতাশায় দিন কাটছে রোগীদের।

থাইরয়েড ক্যানসারের অস্ত্রোপচারের পর রোগীকে ক্যাপসুল আকারের এই ওষুধ খাওয়ানো হয়। রেডিও অ্যাকটিভ আয়োডিন (আরএআই) নামের এই ওষুধ দেশে তৈরি হয় না। বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। ওষুধটিতে তেজস্ক্রিয় উপাদান আছে। শুধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এই ওষুধ আমদানি করে। পরমাণু শক্তি কমিশন ঠিক সময়ে পদক্ষেপ না নেওয়ায় সংকটে পড়েছেন রোগীরা।

এমনই একজন থাইরয়েড ক্যানসারের রোগী ষাটোর্ধ্ব নূরজাহান বেগম। তাঁর মেয়ে রুমা ১৪ আগস্ট প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মা বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে থাকা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেসে (নিনমাস) চিকিৎসা নেন। ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি ওষুধটি পাচ্ছেন না। তাঁর অবস্থা ভালো নয়, হাত-পা ফুলে গেছে।

নিনমাসে থাকা কাগজপত্রে দেখা যায়, ১২ ফেব্রুয়ারি ওষুধটির জন্য নূরজাহান বেগমের নামে ১৫ হাজার ৩০০ টাকা জমা দিয়েছে তাঁর পরিবার। সেই থেকে তাঁরা ওষুধের অপেক্ষায় আছেন।

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খালেকুজ্জামান ক্যানসারের প্রাদুর্ভাব নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি বলেন, ‘জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার নিবন্ধনের (২০২৩ সালে শুরু হয়ে চলমান) তথ্য অনুযায়ী দেশে থাইরয়েড ক্যানসারের অবস্থান দশম। দেশে আনুমানিক সাত হাজার থাইরয়েড ক্যানসারের রোগী রয়েছেন। এটি দেশের সব ক্যানসার রোগীর ৩ দশমিক ৭ শতাংশ।’

তবে অস্ত্রোপচারের পর ঠিক কত মানুষের এই ওষুধ দরকার, তা কারও কাছ থেকে জানা যায়নি।

অস্ত্রোপচারের পরও কারও শরীরে ক্যানসার কোষ থেকে গেলে এই ওষুধ তা ধ্বংস করে। ওষুধটি কারও একবার খেতে হয়, কারও ক্ষেত্রে একাধিকবার খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে।থাইরয়েড, ক্যানসার ও আরএআই

থাইরয়েড হলো গলার সামনের দিকে থাকা প্রজাপতি আকৃতির একটি গ্রন্থি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, থাইরয়েড শরীরের বিপাকক্রিয়া ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এই গ্রন্থির কোষগুলো অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেলে তাকে থাইরয়েড ক্যানসার বলে। এটি গলার সামনের দিকে পিণ্ড বা ফোলা অংশ হিসেবে দেখা দেয়, যা সাধারণত ব্যথাহীন হয়।

থাইরয়েড ক্যানসার রোগীদের অস্ত্রোপচারের পর রেডিও অ্যাকটিভ আয়োডিন (আরএআই) নামের ওষুধটি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। এটা ক্যাপসুল আকারে খাওয়ানো হয়। যাঁরা ওষুধটি ব্যবহার করেন, তাঁদের পাঁচ দিন কিছুটা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পৃথক কক্ষে রাখা হয়, যেন তেজস্ক্রিয়তায় অন্য কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। অস্ত্রোপচারের পরও কারও শরীরে ক্যানসার কোষ থেকে গেলে এই ওষুধ তা ধ্বংস করে। ওষুধটি কারও একবার খেতে হয়, কারও ক্ষেত্রে একাধিকবার খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে।

কোথায় চিকিৎসা হয়

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অটোল্যারিংগোলজি-হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে থাইরয়েড ক্যানসারের অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর রোগীদের ওই ওষুধ খাওয়ানো হয় শুধু পরমাণু শক্তি কমিশন অনুমোদিত সরকারি হাসপাতালে।

থাইরয়েড ক্যানসারের অস্ত্রোপচারের পর ওষুধটি খাওয়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে দেশের ২২টি কেন্দ্রে। রাজধানীতে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল এবং জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউটে এই ব্যবস্থা আছে। বাকি ১৭টি কেন্দ্র দেশের বিভিন্ন জেলার সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এসব কেন্দ্র পরিচালনা করে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন।

১৫ দিন পর ওষুধটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। কিন্তু এখানে এসে জানলেন ওষুধ নেই, বাংলাদেশে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। কবে পাওয়া যাবে, তা নিশ্চিত নয়।রোগী ফিরে যাচ্ছে

১৪ আগস্ট বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি-ব্লকের ৯ তলায় কথা হয় কে এম মেজবাউল কবিরের সঙ্গে। তিনি নিনমাসের কারিগরি কর্মকর্তা। অন্যান্য কাজের সঙ্গে কোন রোগী কোন তারিখে ওষুধটি পাবেন, তিনি সেই হিসাব রাখেন।

কে এম মেজবাউল কবির বলেন, এই কেন্দ্র থেকে সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে রোগীদের ওষুধটি দেওয়া হয়েছিল। এই কেন্দ্রে প্রায় ২০০ জন থাইরয়েড ক্যানসারের রোগী চিকিৎসা নেন। তাঁরা অনেকেই ওষুধটির জন্য টাকা জমা দিয়েছেন। ওষুধটি এল কি না, তা জানার জন্য রোগী বা রোগীর আত্মীয়রা নিয়মিত ফোন করেন। অনেকে সশরীর আসেন।

এই প্রতিবেদক উপস্থিত থাকার সময় ওই দিন বেলা ১১টায় দুজন রোগীর আত্মীয় এসেছিলেন ওষুধের ব্যাপারে খোঁজ নিতে। এ ছাড়া একজন চিকিৎসক এসেছিলেন তাঁর আত্মীয়কে নিয়ে। ওই আত্মীয়ের অস্ত্রোপচার হয়েছে। ১৫ দিন পর ওষুধটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। কিন্তু এখানে এসে জানলেন ওষুধ নেই, বাংলাদেশে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। কবে পাওয়া যাবে, তা নিশ্চিত নয়।

অনিশ্চিত ওষুধ

ওষুধটির ব্যাপারে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিনমাসের পরিচালক অধ্যাপক এ কে এম ফজলুল বারী প্রথম আলোকে বলেন, খুব শিগগির রোগীরা পেয়ে যাবেন। ঠিক কবে নাগাদ রোগীরা পেতে পারেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে থাকা নিনমাসেও একই পরিস্থিতি চলছে। তবে কোনো কেন্দ্র থেকে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হচ্ছে না। সবাই পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ও একজন সদস্যের (জীববিজ্ঞান) সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। দুই দিন বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও কমিশনের চেয়ারম্যান এবং ওই সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, এ মাসের শেষের দিকে রোগীরা ওষুধটি পেয়ে যাবেন বলে পরমাণু শক্তি কমিশন থেকে তাঁকে জানানো হয়েছে।

এমন হওয়া উচিত নয়

কেন রোগীরা ওষুধটি পাচ্ছেন না, কেন মজুত ফুরিয়ে গেল, সেই উত্তর কেউ দিচ্ছেন না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বলেছেন, একটি দরপত্র বাতিল হওয়ার কারণে এই পরিস্থিতি হয়েছে।

নিনমাসের একটি সূত্র জানিয়েছে, ওষুধ আনার কাজটি পেয়েছিল সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান। তবে ঠিক সময়ে ওষুধ সরবরাহ করতে পারেনি। তখন দরপত্রের কাজটি বাতিল হয়। সরকার বিশেষ ব্যবস্থায় এ মাসের শেষ দিকে সীমিত পরিমাণ ওষুধ দেশে আনছে। নতুন দরপত্রের প্রক্রিয়াও শেষের পথে।

ঠিক সময়ে ওষুধ না পাওয়ার ঝুঁকি অনেক। এতে রোগীরা সরকার ও হাসপাতালের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। কোনো কোনো রোগী হয়তো চিকিৎসা নিতে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন। ওষুধ নেই জেনে চিকিৎসকেরা থাইরয়েড ক্যানসারে অস্ত্রোপচার থেকেও বিরত থাকছেন।

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অটোল্যারিংগোলজি-হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঠিক সময়ে ওষুধ না পেলে ক্যানসার আবার ফিরে আসতে পারে, এটাই সবচেয়ে বড় ঝুঁকি।

গত ২৭ এপ্রিল ঢাকা জেলার দোহার এলাকার মো. সবুজ হোসেনের থাইরয়েড ক্যানসারের অস্ত্রোপচার হয়। তারপর ওই ওষুধের জন্য তিনি বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ঘুরেছেন। কাজ হয়নি। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিনমাস থেকে তাঁকে জানানো হয়েছে, আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর ওষুধটি দেওয়া হবে। ওষুধ ও পাঁচ দিন ভর্তি থাকা বাবদ তিনি মোট ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। এই বেসরকারি চাকরিজীবীর এ পর্যন্ত সোয়া দুই লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে।

এরই মধ্যে মো. সবুজ হোসেন মগবাজারের একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঠিক সময়ে ওষুধ না খাওয়ার কারণে তাঁর অসুস্থতা বেড়েছে। গত বুধবার আবারও অস্ত্রোপচার হয়েছে। তিনি জানেন না সামনে কী আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • থাইরয়েড ক্যানসারের ওষুধ নেই