দুনিয়াজুড়ে ‘সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্রের’ নেতৃত্বে যে যুদ্ধ, আগ্রাসন ও হস্তক্ষেপ চলছে তা থেকে বাংলাদেশ মুক্ত নয় বলে মনে করেন লেখক শিবিরের জাতীয় সম্মেলনে অংশ নেওয়া বক্তারা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর দেশ থেকে ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও ফ্যাসিবাদী সংবিধান ও রাষ্ট্রকাঠামো এখনো বিরাজমান বলেও মন্তব্য করেন তাঁরা।

এদিকে এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দেশের পেশাজীবী সমাজ ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বক্তারা।

আজ শুক্রবার বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের জনগণের সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে নয়া সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলুন’ শিরোনামে বাংলাদেশ লেখক শিবিরের ১৬তম জাতীয় সম্মেলনে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

সম্মেলনের শুরুতে ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানের শহীদ এবং সম্প্রতি ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে শোক প্রস্তাব করা হয়। প্রয়াত কবিদের স্মরণেও শোক প্রস্তাব করা হয় সম্মেলনে।

সম্মেলনে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক কমরেড ফয়জুল হাকিম বলেন, ‘দুনিয়াজুড়ে সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যে যুদ্ধ, আগ্রাসন ও হস্তক্ষেপের যে তৎপরতা আমরা লক্ষ্য করছি; তা থেকে আমাদের দেশ মুক্ত নয়। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ভারতের সম্রাজ্যবাদী মদতপুষ্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার উৎখাত করা হলেও ফ্যাসিবাদী সংবিধান ও ব্যবস্থা বহাল রয়েছে।’

ফয়জুল হাকিম আরও বলেন, ‘এর ওপর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নানা রকম যোগসাজশ ও চুক্তি সম্পাদনের পাঁয়তারা করছে। এসব ব্যাপারে দেশের লেখক, চিন্তক, পাঠক ও সংস্কৃতিকর্মীরা দৃঢ় ভূমিকা রাখবেন।’

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার বলেন, ‘ছাত্র-শ্রমিক, জনতা জীবন দিয়ে হাসিনার দীর্ঘদিনের মসনদ গুঁড়িয়ে দিয়েছে। দেশের মানুষের যে মনোজগৎ দীর্ঘদিন ধরে সাম্রাজ্যবাদী ভারত নিয়ন্ত্রণ করে আসছে, রাজনৈতিকভাবে আধিপত্য বিস্তার ও হস্তক্ষেপ করে আসছে, সে আধিপত্য খর্ব হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাই, জুলাই আন্দোলন–পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রকাঠামোর কোনো পরিবর্তন হয়নি।’

মিতু সরকার আরও বলেন, ‘বিগত ১৬ বছর হাসিনা জনগণের রাজনৈতিক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছেন। শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকদের একটা অংশকে নানা সুবিধা দিয়ে দালালে পরিণত করেছেন। কিন্তু এ পেশাজীবীদের একটি অংশ দীর্ঘদিন দেশের মানুষের জন্য এ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়েছে। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ লেখক শিবিরও ছিল।’

জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস বলেছেন, ‘সাংস্কৃতিক আন্দোলন বিপ্লবকে এগিয়ে দেয়। আর বিপ্লব সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করে, মুক্তিও দেয়। জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে, সামাজিক পরিবর্তন, সরকার ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিনির্মাণে বাংলাদেশ লেখক শিবির আন্দোলন করছে। আমরা তাকে স্বাগত জানাই।’

লেখক শিবিরের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বলেন, ‘আজ লেখক শিবিরের ১৬তম সম্মেলন। ২০২২ সালের পর থেকে ফ্যাসিবাদী শাসনের বৈরিতায় আমরা আমাদের তেমন কার্যকলাপ পরিচালনা করতে পারেনি। তবে সবকিছু উপেক্ষা করে যেমন ২০২৪–এর গণ–অভ্যুত্থানে লেখক শিবির কাজ করেছে, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের উত্তরণ ও রাষ্ট্রকাঠামো বিনির্মাণে আগামী দিনেও লেখক শিবির কাজ করে যাবে।’

সমাজ পরিবর্তন একটি রাজনৈতিক বিষয়, কিন্তু লেখক শিবির সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে সেই রাজনৈতিক সংগ্রামের সহযোদ্ধা বলে উল্লেখ করেন এটির সভাপতি মইন উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘নিপীড়নমূলক সমাজ ব্যবস্থাকে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম যদি আঘাত না করে, তাহলে সে ধরনের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে কোনো লাভ নেই। লেখক শিবির এমন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম করতে চায়, যা এ দেশে সব নিপীড়ন ও প্রতিক্রিয়ামূলক কর্মকাণ্ডকে আঘাত করে।’

আবিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বিবর্তনের সভাপতি এম এম ফয়জুল হক, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা সৌমিত্র দস্তিদার, গণসংহতি ফ্রন্টের সমন্বয়ক ইফতেখার আহমেদ প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ষ ট রক ঠ ম র জন ত ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুর সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব।’’

তিনি মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান এলে যেকোনো অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া ঠেকানো যাবে।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনকে যদি অনিশ্চিত করা হয় বা বিলম্বিত করা হয়, তাহলে তার সুযোগ নেবে ফ্যাসিবাদী বা অসাংবিধানিক শক্তি। এর পরিণতি জাতি অতীতে বহুবার ভোগ করেছে। আমরা আবার সে পরিস্থিতি চাই না।’’

অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে পৃথক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই সাংবিধানিকভাবে এই সরকার গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সে দেওয়া সেই মতামত এখনো বহাল আছে। এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা আসলে রাজনৈতিক বক্তব্য, এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।’’

সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘যেকোনো সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে তা আগামীকাল বা পরশু চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমরা এমন খারাপ নজির জাতির সামনে আনতে চাই না। তাই সমাধানের বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। সবাইকে বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’’

পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের অধিকার আছে। তবে পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, শেষ পর্যন্ত জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’’

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ঝুঁকি থেকে যায়। তাতে রাষ্ট্র ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব হয় না। আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারি না।’’

সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘জনগণই হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এই দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বারবার গণতন্ত্রকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।’’

আগামী সংসদে কিছু মৌলিক বিষয়ে সংশোধনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে একমত হয়েছি। তবে, ঐকমত্য কমিশনের সনদের ভেতরে যেসব পরিবর্তন হবে, সেগুলোতে অবশ্যই গণভোট নিতে হবে।’’

ঢাকা/আসাদ/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
  • জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে: জামায়াত নেতা রফিকুল
  • বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্য না হলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই: এবি পার্টি
  • রোহিঙ্গা সমস্যায় রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে
  • হুংকার দিয়ে জাতীয় নির্বাচন ঠেকান যাবে না: জাহিদ হোসেন
  • মাঠের জবাব মাঠে দেওয়া হবে: সালাহউদ্দিন 
  • জামায়াত কীভাবে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে: আনিসুল ইসলাম মাহমুদ
  • জুলাই সনদ নিয়ে যেসব বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে
  • ফরিদপুরে সীমানা নিয়ে ডিসির চিঠি, এলাকাবাসীর ৫ দাবি
  • জামায়া‌তের তিন‌ দি‌নের কর্মসূচি ঘোষণা