রাজধানীর পুরান ঢাকায় শহীদনগরে গলায় খাবার আটকে মোছা. রাফিয়া নামের তিন বছর বয়সী এক শিশু মারা গেছে। আজ শুক্রবার দুপুরে শহীদনগরে ভাড়া বাসায় রাফিয়াকে চায়ে ডুবিয়ে পরোটা খাওয়ানোর সময় এ ঘটনা ঘটে।

এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে রাফিয়া ছোট। তাদের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায়। রাফিয়ার বাবা সুজন খাঁ পেশায় ভ্যানচালক।

রাফিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বাবা সুজন খাঁ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাফিয়াকে চায়ে ডুবিয়ে পরোটা খাওয়াচ্ছিলেন তার মা (রাত্রি বেগম)। একপর্যায়ে গলায় পরোটার অংশ আটকে গেলে সে অচেতন হয়ে পড়ে। এ সময় রাফিয়াকে পানি পান করানো হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় রাফিয়াকে বেলা সোয়া একটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের পরিদর্শক মো.

ফারুক বলেন, বেলা সোয়া একটার দিকে রাফিয়াকে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে। ঘটনাটি লালবাগ থানায় জানানো হয়েছে।

চিকিৎসক রাফিয়াকে মৃত ঘোষণার পর মা রাত্রি বেগম মেয়েকে কোলে নিয়ে নির্বাক তাকিয়েছিলেন। পাশে বসে বাবা দুই হাত নিজের মাথায় রেখে কাঁদছিলেন।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মুরাদনগরে ড্রেজার সিন্ডিকেট, হুমকিতে কৃষি উৎপাদন

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পূর্ব ধৈইর পশ্চিম ইউনিয়নের কোরবানপুর ও খোষঘর এলাকায় অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কৃষিজমি থেকে উর্বর মাটি ও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ধ্বংস হচ্ছে তিন ফসলি জমি, ক্ষয়ে যাচ্ছে মাটির স্তর, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আশপাশের জমি এবং হুমকির মুখে পড়ছে স্থানীয় কৃষকদের জীবিকা। অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনের অভিযানের পর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও আবার আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে মাঠে নামে ড্রেজার সিন্ডিকেট।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, বর্তমানে মুরাদনগর উপজেলার কোরবানপুরে ৪টি, পেন্নাই গ্রামে ২টি, রোয়াচলা গ্রামে ২টি, ছালিয়াকান্দি ইউনিয়নে ৫টি, দারোরা ইউনিয়নে ৩টি, ধামঘর ইউনিয়নে ২টিসহ মুকলিশপুর, সীমানার পাড়, জুগিরখিল প্রভৃতি এলাকায় নিয়মিত ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলনের মহোৎসব চলছে।

বছরের পর বছর ধরে এই ড্রেজার সিন্ডিকেট ফসলি জমি থেকে মাটি ও বালু তুলছে। স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালালে কয়েক দিন থেমে থাকে মাটি উত্তোলন, পরে আবার সক্রিয় হয়। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন দীর্ঘমেয়াদী কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় ড্রেজার ব্যবসায়ীরা হয়ে উঠেছে বেপরোয়া।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেছেন, “প্রতিদিন জমি থেকে বালু তুলে নেওয়া হচ্ছে। একসময় যে জমিতে ধান, গম, ডালসহ অনেক কিছু হতো, এখন সেখানে পানি জমে থাকে। চাষাবাদ তো দূরের কথা, জমি আর জমি নেই।”

আরেকজন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বলেন, “আমরা বারবার ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে প্রশাসনের কাছে বলেছি। কিন্তু, কিছুদিনের জন্য বন্ধ হলেও পরে আগের মতোই ড্রেজার চলে। সবাই দেখেও না দেখার ভান করে।”

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার এবং আজাদ দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় একাধিক ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। কোরবানপুর জিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের পুকুর থেকে শুরু করে কোরবানপুর নতুন কবরস্থানের পাশ পর্যন্ত ৩-৪টি স্থানে ড্রেজার মেশিন নিয়মিত চলছে।

ড্রেজার ব্যবসায়ী সারোয়ার অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, ড্রেজার শুধু আমার একার চলছে না। পাশেই তো আজাদ ও মামুনের ড্রেজার চলছে। আগে ওগুলো বন্ধ করুন, পরে আমারটা করব।

অন্য ড্রেজার ব্যবসায়ী আজাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পাভেল খান পাপ্পু বলেছেন, “অবৈধ ড্রেজিংয়ের কারণে প্রতিবছর প্রায় ১ থেকে ২ শতাংশ কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। গত বছর থেকে এ বছর প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হেক্টর জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে গেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে ফসল উৎপাদনে।”

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাকিব হাসান খান বলেছেন, “আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর কোরবানপুর এলাকায় ইতোমধ্যে ২০-২৫ বার অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযোগ পেলেই আমরা অভিযানে যাই। তবে, অভিযান শেষে তারা আবার নতুন পাইপ ও ড্রেজার বসিয়ে মাটি উত্তোলন শুরু করে। এগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে জমির মালিকদের নিয়মিত মামলা করার পরামর্শ দিয়ে থাকি।”

ঢাকা/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুরাদনগরে ড্রেজার সিন্ডিকেট, হুমকিতে কৃষি উৎপাদন