অখণ্ড অবসরে লম্বা সময় ‘যুদ্ধের’ প্রস্তুতি
Published: 6th, August 2025 GMT
ভারত আসবে না তা আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছে। তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলতে আগস্টেই আসার কথা ছিল। কিন্তু দেশের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকায় সফর পিছিয়েছে তারা।
এশিয়া কাপের আগে ভারত সিরিজ ছিল বাংলাদেশের জন্য প্রস্তুতির মঞ্চ। সিরিজ না হওয়ায় বিসিবি নেদারল্যান্ডসকে বাংলাদেশে খেলতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে ডাচরা আসবেন ২৬ আগস্ট। ক্রিকেটারদের এই অখণ্ড অবসরের সময়টাকে কাজে লাগাতে বিসিবি আয়োজন করেছে বিশেষ ক্যাম্প। যেখানে স্কিল অনুশীলনের সঙ্গে আছে ফিটনেস সেশন।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম আজ বুধবার থেকে শুরু হয়েছে এই প্রস্তুতি। শুরুর দশ দিন কেবল ফিটনেস ট্রেনিং। এ সময়ে থাকবে বিশ্রামও। পরে শুরু স্কিল সেশনে। ঢাকার পর সিলেটেও হবে এই অনুশীলন। ফাঁকে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টিও খেলবে দল। এরপর আবার অনুশীলন। এরপর এশিয়া কাপ খেলতে সংযুক্ত আরব আমিরাত ভ্রমণ।
আরো পড়ুন:
পুলের ক্রিকেটার নিয়ে সারা বছর বাংলা টাইগার্স ক্যাম্প
কোচিংয়ে আগ্রহ বাড়ছে ক্রিকেটারদের
শান্ত, সৌম্য, মোস্তাফিজুর, নাহিদ, জাকের, শামীম, নাসুমরা আজ ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছেন জিমনেশিয়ামে। এই অবসরের সময়টাকে কাজে লাগাতে চান ক্রিকেটাররা। আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেট টানা খেলার উপর থাকায় ফিটনেস নিয়ে তেমন কাজ করার সুযোগ পান না তারা। এবারের ফিটনেস ট্রেনিং সেশনটাকে তারা এক লম্বা সময়ের ‘যুদ্ধের’ প্রস্তুতি হিসেবেই নিয়েছেন। যেন সামনের ছয় মাস ফিটনেস ইস্যুতে ভুগতে না হয়।
সাইফ উদ্দিন ইনজুরি প্রবণ। স্কিলে তেমন সমস্যা নেই। কিন্তু ফিটনেস নিয়েই যত সমস্যা। এই ১০ দিন তিনি পুরোপুরি ফিটনেস নিয়ে কাজ করবেন বলে জানালেন। যেন লম্বা সময় জাতীয় দলকে সার্ভিস দিতে পারেন। ১৪ আগস্ট পর্যন্ত চলবে এই ক্যাম্প। ফিটনেস ক্যাম্পের শেষদিকে ১২ ও ১৩ আগস্ট দলের সঙ্গে যোগ দেবেন বিদেশি কোচিং স্টাফের সদস্যরা। ১৫ আগস্ট থেকে ক্রিকেটারদের স্কিল ক্যাম্প শুরু হবে।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টন স ন য় প রস ত ত আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
হামলার পর সাঁওতালপাড়া ফাঁকা
একটি হামলার পর ফাঁকা হয়ে গেছে রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগসারা গ্রামের একটি সাঁওতালপাড়া। পাড়াটিতে মোট ১২টি বাড়ি থাকলেও সোমবার (৪ আগস্ট) দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, কেবল এক বৃদ্ধা ছাড়া কোনো বাড়িতে আর কেউ নেই। বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করা অবস্থায় পড়ে আছে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ঘরের জিনিসপত্র।
বারনই নদীর তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পুলের ওপর প্রায় পাঁচ বছর আগে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ১২টি পরিবার এই পাড়ায় ঘর তৈরি করেন। এর মধ্যে সাতটি সাঁওতাল, চারটি ধাঙ্গড় (ওরাঁও) ও একটি রবিদাস সম্প্রদায়ের পরিবার। পাড়ার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বারনই নদী। নদীর পড়েই মো. বাবলু নামের এক বিএনপিকর্মীর জমি। এই জমির সামনের জায়গায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পরিবারগুলো বসবাস করায় তিনি আগে থেকে ক্ষুব্ধ ছিলেন। যদিও এই জায়গা পাউবোর।
গত বুধবার (৩০ জুলাই) সকালে বাবলুর সঙ্গে পাড়াবাসীদের হাতাহাতি হয়। এরপর দুপুর ও সন্ধ্যায় দুই দফা হামলা হয় পাড়াটিতে। এর পরপরই লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।
আরো পড়ুন:
যশোরে সাংবাদিকের ছেলে ছুরিকাহত
বগুড়া সদর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ককে কুপিয়ে আহত
সোমবার সকালে পাড়ায় গিয়ে শুধু হিমেন রবিদাসের বাড়িতে তাঁর শাশুড়ি অমলা দাসীকে পাওয়া যায়। তিনি জানান, নওগাঁর নিয়ামতপুর থেকে চিকিৎসার জন্য এখানে এসেছেন ১৫ দিন আগে। হাঁটতে পারেন না বলে এখানেই রয়েছেন। অমলা বলেন, ‘‘কয়দিন আগে গণ্ডগোল হয়েছে। তারপর তো কেউ বাড়ি নেই। আমি চলতে পারি না, তাই আছি।’’
পাড়ার পরবর্তী বাড়িগুলোতে কাউকে পাওয়া যায়নি। কোথাও বিদ্যুৎ বিল ঝুলছে, কোথাও দরজা তালাবদ্ধ, কোথাও দরজা খোলা, তবে কেউ নেই। কোনো ঘরে বিছানায় মশারি টানানো, মেঝেতে পচে যাওয়া ভাত, আবার কোথাও টিনের ঘরে হামলার চিহ্ন রয়েছে স্পষ্ট।
পুলের ওপর দিয়ে একজন ভ্যানচালক হেঁটে যাচ্ছিলেন। তিনি জানান, ঘটনার দিন সকালে কয়েকজন পাড়াবাসী মদ খাচ্ছিলেন। সেই সময় পাশের জমির মালিক বাবলু তাদের নিষেধ করলে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে এক নারী বাবলুর শার্টের কলার ধরে, এরপর বাবলুকে মারধর করা হয়। এরপর বাবলু লোকজন নিয়ে এসে দুই দফা হামলা করেন।
ওই এলাকায় পাওয়া যায় বিএনপিকর্মী বাবলুর স্ত্রী ডলি বেগমকে। তিনি জানালেন, তার স্বামী বাজারে গেছেন। তিনি শ্রমিকদের খাবার দিতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘ওরা আমাদের জমির সামনে বাড়ি করেছে, খুব অত্যাচার করে। মদ খেতে নিষেধ করায় আমার স্বামীকে মেরেছে। পরে আমার স্বামীও লোকজন নিয়ে আসে। কিন্তু কাউকে মারেনি। ওরাই ভয়ে পালিয়ে গেছে।’’ ঘরবাড়ি ভাঙচুরের বিষয়ে ডলি দাবি করেন, ‘‘ওরাই নিজেরাই ভেঙেছে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘পুলিশ এসে বলেছে, সাঁওতালরা থাকবে, কেউ কিছু বলবে না। এতই যদি দরদ হয়, তাহলে এদের নিয়ে গিয়ে বাড়ি করে দিক।’’
মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয় এই পাড়ার সর্দার শ্যামল মুর্মুর সঙ্গে। তিনি জানান, আগে তারা রাজশাহীর গোদাগাড়ীর পাকড়ি এলাকায় থাকতেন। কৃষিকাজের জন্য বাগসারা এলাকায় আসতেন। দূরত্বের কারণে স্থানীয় তিন কাউন্সিলরের পরামর্শে তারা পাউবোর এই জায়গায় ঘর তোলেন। হামলার পর যে যেদিকে পেরেছেন চলে গেছেন।
শ্যামল বলেন, ‘‘ঘটনার দিন বাবলু পাড়ার এক নারীকে খারাপ ভাষায় গালি দিচ্ছিলেন। নিষেধ করায় তিনি ওই নারীকে মারেন। তখন আমাদের যুবকরাও তাকে একটু মারে। এরপর বিকেলে বাবলু লোকজন নিয়ে এসে আমাদের তিনজনকে মারে। পরে পুলিশ এসে সবাইকে শান্ত থাকার কথা বলে চলে যায়। কিন্তু সন্ধ্যার আগেই বাবলু আবার লোকজন নিয়ে এসে আমাদের ওপর হামলা করে। তাদের কাছে হাঁসুয়া, বল্লম, ছোরা ছিল।’’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘আমার নিজের বাড়ি থেকে ১০ হাজার টাকা, ২৫টি কবুতর লুট হয়েছে। কেউ কিছু নিয়ে পালাতে পারেনি। হরি আর তার বাড়িওয়ালি ১২ হাজার টাকাসহ বস্তায় জিনিসপত্র ভরে পালাতে গেলে পথ থেকে সেটাও কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমরা এখনো ভয়ে আছি।’’
সাঁওতালদের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত আমান আজিজ বলেন, ‘‘বিষয়টি জানার পর থানার ওসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’
পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘উভয় পক্ষই থানায় অভিযোগ দিয়েছে। সাঁওতালদের কয়েকজন আহত হয়েছেন। মামলা করতে বলা হয়েছে, কিন্তু কেউ এখনো মামলা করেনি। মামলা না করলে তো আমরা কিছু করতে পারি না।’’
ঢাকা/কেয়া/বকুল