ইন্দোনেশিয়ায় বৃত্তিতে স্নাতক, মাস্টার্স ও পিএইচডিতে পড়াশোনার সুযোগ
Published: 7th, August 2025 GMT
ভ্রমণের কারণে এবং মুসলিম বিশ্বের দেশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়া আমাদের অনেকের কাছে পরিচিত। এই দেশটির উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো নানা বৃত্তি দেয় প্রতিবছর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য দেশটির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটাস সেবেলাস মারেট (ইউএনএস) বৃত্তির ঘোষণা দিয়েছে। পূর্ণ এবং আংশিক দুই স্কলারশিপে অনার্স, মাস্টার্স ও পিএইচডিতে পড়াশোনার সুযোগ আছে। তবে সব বিষয়ে বৃত্তির ব্যবস্থা থাকলেও মেডিকেল অনুষদে বৃত্তির সংখ্যা কম বা আসন সীমিত।
২০২৬ সালের আগস্ট সেশনের জন্য এখন আবেদন চলছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা স্নাতক, মাস্টার্স এবং পিএইচডি পর্যায়ে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। বৃত্তির পাশাপাশি নিজ খরচেও শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে পারবেন। আবেদনের আগে সব নিয়ম এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ভালোভাবে পড়ে নিতে হবে।
বৃত্তির ধরন—
১.
*সম্পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ
*মাসিক ভাতা: স্নাতক পর্যায়ে ১৫ লাখ রুপিয়া, মাস্টার্সে ১৭ লাখ ৫০ হাজার রুপিয়া এবং পিএইচডি পর্যায়ে ২২ লাখ ৫০ হাজার রুপিয়া পাবেন শিক্ষার্থীরা।
*বিনা মূল্যে ইন্দোনেশিয়ার ভাষা শিক্ষার কোর্স
*স্বাস্থ্যবিমা
২. আংশিক বৃত্তি (Partial Scholarship)
*টিউশন ফি মওকুফ
*বিনা মূল্যে ইন্দোনেশিয়ান ভাষা শিক্ষার কোর্স
*স্বাস্থ্যবিমা
আবেদনের যোগ্যতা—
*আবেদনকারীকে ইন্দোনেশিয়ার বাইরের দেশের নাগরিক হতে হবে
*স্নাতক পর্যায়ের পড়াশোনার জন্য আবেদনকারীর বয়স ২৪ বছরের কম হতে হবে
*অপরাধমূলক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বা শরণার্থী নয় এমন শিক্ষার্থী হতে হবে
*ইংরেজিতে দক্ষতা থাকতে হবে। টোয়েফলে কমপক্ষে ৪৫০ (বিজ্ঞান)/৫০০ (সমাজবিজ্ঞান) বা সমান স্কোর থাকতে হবে
*ইউএনএস-এ পড়ার ব্যাপারে আগ্রহ থাকতে হবে
*অনলাইন সাক্ষাৎকারে ইচ্ছুক হতে হবে
*সব প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে
আরও পড়ুনহার্ভার্ডসহ ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সালমানের, বাবা–মা’র তিন সূত্রেই বাজিমাত০৬ আগস্ট ২০২৫প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট—
*সদ্য তোলা ছবি (জেপিজি/পিএনজি, সর্বোচ্চ ৩০০ কেবি)
*পাসপোর্ট (কমপক্ষে ১৮ মাসের মেয়াদসহ)
*সনদপত্র ও ট্রান্সক্রিপ্ট (ইংরেজি বা ইন্দোনেশিয়ান)
*সাম্প্রতিক সময়ে নেওয়া স্বাস্থ্য সনদ
*জীবনবৃত্তান্ত (বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম্যাটে)
*আর্থিক বিবরণী (বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম্যাটে)
*পার্সোনাল স্টেটমেন্ট (বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম্যাটে)
*ইংরেজি দক্ষতার সনদ
*ইন্দোনেশিয়ান ভাষার সনদ (যদি থাকে)
*দুটি রেফারেন্স লেটার (শুধু মাস্টার্স ও পিএইচডির জন্য)
*গবেষণা প্রস্তাব (শুধু পিএইচডির জন্য)
*ফরম্যাট লিংক
আরও পড়ুনঅস্ট্রেলিয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের দিল সুখবর, অগ্রাধিকারে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া২২ ঘণ্টা আগেবৃত্তির মেয়াদ—
*স্নাতক: ৮ সেমিস্টার
*মাস্টার্স: ৪ সেমিস্টার
*পিএইচডি: ৬ সেমিস্টার
জিপিএ রাখতে হবে কমপক্ষে: সমাজবিজ্ঞান: ৩ এবং প্রকৌশল ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে ২ দশমিক ৭৫।
আবেদনের পদ্ধতি—
১. Letter of Offer ডাউনলোড করুন
২. কোর্স তালিকা ঘুরে দেখুন
৩. নিজ দেশের ইন্দোনেশিয়ান দূতাবাস/কনস্যুলেটে যোগাযোগ করে রিকমেন্ডেশন লেটার নিন।
৪. অনলাইন আবেদন করুন
আবেদনের শেষ সময়: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য ঢুঁ মারুন
আরও পড়ুনকমনওয়েলথ ফেলোশিপে আবেদনের সুযোগ, মাসে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকার সঙ্গে নানা সুবিধা৩০ জুলাই ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইন দ ন শ য় ন ফরম য ট প এইচড পর য য় র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ: ‘রিকমেন্ডেশন’ লেটার কেন ‘তদবির’ হয়ে ওঠে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে এক প্রার্থীর প্রবেশপত্র ভুলবশত বিশ্ববিদ্যালয়টির সহ-উপাচার্য ফরিদ খানের ফেসবুকের ‘স্টোরিতে’ চলে এসেছে। সহ-উপাচার্যের দাবি, তাঁর ছেলে মুঠোফোন খেলার ছলে ওই প্রার্থীর ‘প্রবেশপত্র’ চলে আসে, যার জন্য তিনি ‘ক্ষমা প্রার্থনা’ করেন।
তবে বিষয়টি এখানেই শেষ হয়নি, এই প্রবেশপত্রে এক রাজনৈতিক দলের সাবেক সংসদ সদস্যের নাম ও জেলার নাম হস্তাক্ষরে স্বাক্ষর করা হয়েছে, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে বলছে, সহ-উপাচার্যের এই ‘ভুলবশত’ আপলোড অভ্যুত্থান–পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগব্যবস্থার সামগ্রিক চিত্র তুলে আনছে, বিশেষ করে ‘তদবিরচর্চা’ আগের মতো আছে। অরাজনৈতিক সরকারের সময়ে রাজনৈতিক সুপারিশ ঠিক কতটা কাজে লাগছে, তা সময় বলে দেবে, তবে আপাতত এই আলোচনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগে ‘সুপারিশনামা’ প্রয়োজনীয়তা বিষয়ক।
আমাদের দেশে সবার ধারণা থাকে, কারও নামে সুপারিশ করা মানে খারাপ বা অসৎ উদ্দেশ্যে চাকরি/নিয়োগে প্রভাব বিস্তার করা। প্রার্থীর যোগ্যতা থাকুক না থাকুক, এমন সুপারিশনামা পাওয়ার পর ‘নিয়োগকর্তা’রা সেই সুপারিশকারীর ওজন মেপে সিদ্ধান্ত নেন, চাকরি দেন কিংবা দেওয়ার সুযোগ করে দেন। এই বহুল চর্চিত বিষয়টি আমাদের দেশে ‘স্বজনপ্রীতি’ একটি বড় অনুষঙ্গ।
আরও পড়ুনবিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষার যৌক্তিকতা কতটুকু০১ আগস্ট ২০২৫কয়েক দশক ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক নিয়োগে দেশের মন্ত্রী, এমপি, স্থানীয় প্রভাবশালীদের সুপারিশ জোগাড় করা ‘প্রার্থীদের’ যোগ্যতা হিসেবে দেখা হয়। একাডেমিক যোগ্যতা যেটাই থাকুক না, ক্ষমতাশালীদের এমন সুপারিশে যে কাজ হয়, তার নিদর্শন শত শত আছে। সম্ভবত এসব কারণে গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ চাকরি হারিয়েছেন, মূলত আগের সরকারের সুপারিশে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে।
প্রশ্ন সেটা নয়, সারা বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ভর্তি থেকে শুরু করে পোস্টডক, গবেষক এবং শিক্ষক নিয়োগে রিকমেন্ডেশন বা সুপারিশপত্র থাকা, সেই সব নিয়োগের যোগ্যতার বা আবেদনের অন্যতম শর্ত। এই শর্ত পূরণ প্রত্যেক প্রার্থীর জন্য জরুরি। কারণ, এমন রিকমেন্ডেশন ওই প্রার্থীর যোগ্যতা নিরূপণের একটি বড় হাতিয়ার হিসেবে ধরা হয়। তাই একাডেমিক সনদের পাশাপাশি আবেদনপত্রে ‘রেফারেন্স’ হিসেবে তিন–চারজনের নাম উল্লেখ করতে হয়, যা পরবর্তী সময়ে নিয়োগ বোর্ড ওই প্রার্থীর জন্য তাঁদের কাছ থেকে সুপারিশপত্র সংগ্রহ করে।
প্রার্থীর জন্য কারা কারা সুপারিশ করবেন, তার কিছু শর্তও দেওয়া থাকে। যেমন প্রার্থীর পিএইচডি তত্ত্বাবধায়ক, তাঁর সর্বশেষ কর্মস্থলের তত্ত্বাবধায়ক/নিয়োগকর্তা কিংবা প্রার্থীর সঙ্গে কাজ করেছেন, এমন ব্যক্তি যিনি তাঁকে ভালো করে জানেন। এসব সুপারিশের ওপর নির্ভর করে সেই প্রার্থীর মৌলিক গুণাবলি। কারণ, দেশের বাইরে যাঁরা সুপারিশপত্র লেখেন, তাঁরা মূলত প্রার্থীর বিষয়ে সততার সঙ্গে লেখেন। ফলে দেশের বাইরের শিক্ষক নিয়োগে এমন সুপারিশনামা বড্ড বেশি কাজের হয়ে থাকে। আর এটাই সর্বজনীন নিয়ম।
কিন্তু এই আদর্শিক নিয়ম বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজন হলেও আমাদের দেশের শিক্ষক নিয়োগের ‘বিজ্ঞপ্তিতে’ এমন সুপারিশপত্র চাওয়ার কোনো নজির দেখিনি। তবে আবেদনপত্রের সঙ্গে সেঁটে দেওয়া এমপি/মন্ত্রী/মেয়র কিংবা সচিবদের সুপারিশনামার ওপর ভর করে প্রার্থী বাছাইয়ের দুর্লভ নিয়োগ আমাদের দেশে বছরের পর বছর ধরে চলে আছে। যাদের সঙ্গে ন্যূনতম যোগাযোগ নেই, যে প্রার্থীকে কোনো দিন দেখেনি, সেই প্রার্থীর হয়ে লিখে, আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি, তিনি অমুক আদর্শের লোক, আপনি তাঁর বিষয়টি দেখতে পারেন, এই সব কথা বলে উপাচার্য বরাবর চিঠি দেয় মূলত প্রার্থীর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে।
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, একাডেমিক নিয়োগে প্রার্থীর সঙ্গে ওই সুপারিশকারীরা না করেছে একাডেমিক কাজ, না করেছে তাঁর গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক। অথচ তাঁরাই করছেন চাকরির সুপারিশ, যা কেবল অনৈতিক চর্চাই নয়, দেশকে সামগ্রিক পিছিয়ে ফেলার বড় কৌশলমাত্র। কেন তাঁরা এই কাজ করেন?
এই প্রশ্নের সহজ উত্তর আর্থিক সুবিধা আর দ্বিতীয়টি রাজনৈতিক দলের লোকবল বৃদ্ধি। যদিও অনেক সময় দেখা যায়, কেবল আর্থিক সুবিধার জন্য ভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের তাঁরা সুপারিশ করে চাকরি পাইয়ে দেন। ফলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগব্যবস্থা এতটাই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে যে সেখানে মেরুদণ্ডওয়ালা শিক্ষক খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য ফরিদ খানের ফেসবুকের ‘স্টোরিতে’ চলে আসা শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ