পোশাক খাতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব কারখানা এখন বাংলাদেশে। এমনকি বিশ্বে এই খাতের শ্রেষ্ঠ ২০টি পরিবেশবান্ধব কারখানার মধ্যে ১৮টিই এ দেশের। আর দেশে এই খাতে মোট পরিবেশবান্ধব কারখানার সংখ্যা ২৩০। এসব কারখানা জ্বালানি ও পানিসাশ্রয়ী। এ রকম কারখানায় দূষণের মাত্রাও কম। সফলতাও বড়। যেমন বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ, যার বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। অন্যদিকে দেশের চামড়াশিল্পে ঠিক পোশাকের বিপরীত চিত্র দেখা যায়।

চামড়ার আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ থাকতে হয়। কিন্তু দেশে এলডব্লিউজির সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ৮, যা প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। ফলে ইউরোপের বাজার ধরতে না পেরে চীনের কাছে খুব সস্তায় চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। আর চামড়া পণ্য রপ্তানির জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে আমদানি করা চামড়ার ওপর।

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত। তা সত্ত্বেও গত এক দশকে এ খাতের উল্লেখযোগ্য বিকাশ ঘটেনি। দেশের মোট বার্ষিক পোশাক রপ্তানি আয় প্রায় ৪০ বিলিয়ন (১ বিলিয়নে ১০০ কোটি) মার্কিন ডলারে পৌঁছালেও চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি ১ থেকে দেড় বিলিয়ন ডলারেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এলডব্লিউজি সনদ প্রাপ্তিতে পিছিয়ে থাকায় বাংলাদেশ ইউরোপের বাজার ধরতে পারছেন না বলে জানান খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মো.

আবু ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (সিইটিপি) সুবিধা কার্যকরের উদ্যোগ নিতে হবে। কিছু প্রতিষ্ঠানকে বর্জ্য পরিশোধন বা ইটিপির অনুমোদন দিতে হবে। সাভারের চামড়াশিল্প নগরের সিইটিপির সক্ষমতা ২৫ হাজার ঘনমিটার বলা হলেও কার্যকারিতা ১৫ হাজার ঘনমিটারের। তাই সাভার চামড়াশিল্প নগরে নতুন কয়েকটি ইটিপি স্থাপন করতে হবে।

এলডব্লিউজির তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আড়াই হাজারের বেশি চামড়াশিল্প প্রতিষ্ঠান এই সনদ পেয়েছে। এর মধ্যে ইতালির ৯৬০টি, ভারতের ৩০১টি, চীনের ২৭৩টি, পাকিস্তানের ৬২টি, ভিয়েতনামের ২৭টি, তাইওয়ানের ২৪টি ও থাইল্যান্ডের ২২টি প্রতিষ্ঠান এলডব্লিউজি সনদ পেয়েছে।

এলডব্লিউজি সনদ পেতে ১৭টি বিভাগে মোট ১ হাজার ৭১০ নম্বর পেতে হয়। যার মধ্যে ৩০০ নম্বর পেতে হয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়। মোট নম্বরের ৫০ শতাংশ পেলেই একটি প্রতিষ্ঠানটিকে ‘নিরীক্ষিত’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এলডব্লিউজি এক নোটিশে জানায়, সিইটিপিতে সমস্যা থাকায় সাভারের কোনো ট্যানারি অডিটের যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে না। তবে কোনো ট্যানারি যদি সাভারের সিইটিপির সঙ্গে যুক্ত না থাকে, তাহলে আলাদা বিষয়। তবে তাদের অবশ্যই নিজস্ব ইটিপি থাকতে হবে। হেমায়েতপুর সিইটিপির তরল বর্জ্য পরিশোধনের সক্ষমতা দৈনিক ২৫ হাজার ঘনমিটার। তবে ট্যানারিগুলো পুরোদমে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করলে ৪০ হাজার ঘনমিটার ছাড়িয়ে যায়। ফলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নির্দিষ্ট মানের মধ্যে রাখা যায় না। সে জন্যই এলডব্লিউজি কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কার্যকর সিইটিপি ও এলডব্লিউজি সনদ ছাড়া এ শিল্পের টিকে থাকা সম্ভব নয়। যেমন সনদটি না থাকায় ‘সদর ট্যানারি’র ব্যবসা কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ। ইউরোপের ৭-৮টি ক্রেতা তাদের ছেড়ে চলে গেছে। এতে ব্যবসা বন্ধের উপক্রম দেখে প্রতিষ্ঠানটি এখন হেমায়েতপুরে নিজেরাই ইটিপি স্থাপন করছে।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতি ঘণ্টায় ৫ ঘনমিটার সক্ষমতার ইটিপি স্থাপন করছি আমরা। এতে ২ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে। আমাদের অবশিষ্ট বিদেশি ক্রেতা জানিয়ে দিয়েছে ২০২৬ সালের মধ্যে ইটিপি না হলে তারাও চলে যাবে। তা ছাড়া শুধু চীননির্ভর একক বাজার দিয়ে ব্যবসা করা যায় না।’

সনদ পেলে লাভ কী

দেশে চামড়া খাতের ৮টি প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত এলডব্লিউজি সনদ পেয়েছে। সেগুলো হচ্ছে এপেক্স ফুটওয়্যার, রিফ লেদার, এবিসি লেদার, সুপারেক্স লেদার, সাফ লেদার, সিমোনা ট্যানিং, সংশিন লেদার বিডি ও অস্টান লিমিটেড। এর মধ্যে চামড়াশিল্প নগরের একমাত্র প্রতিষ্ঠান সিমোনা ট্যানিং।

চট্টগ্রামভিত্তিক রীফ লেদার ২০১৫ সালে নিজস্ব ইটিপি স্থাপন করে ২০১৯ সালে এলডব্লিউজি সনদ পায়। এটি স্থাপনে তারা বিনিয়োগ করেছে সাড়ে ৫ কোটি টাকা।

রীফ লেদারের পরিচালক মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত অর্ডার আছে। আমরা দর–কষাকষি করতে পারছি, যা ঢাকার ট্যানারিগুলো পারছে না। যে চামড়া আমরা দেড় ডলারে প্রতি বর্গফুট বিক্রি করছি, সেটি তারা চীনে ৫০-৭০ সেন্টে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।’

কেমন বিনিয়োগ লাগে

চামড়া কারখানা পরিবেশবান্ধব করতে ২ থেকে ৫ কোটি টাকায় নিজস্ব ইটিপি স্থাপন করতে হয়। অন্যদিকে পোশাক কারখানা পরিবেশবান্ধব করতে বিনিয়োগের দরকার হয় ৮-১০ কোটি টাকা।

ট্যানারির মালিকেরা বলছেন, পদ্ধতিগত জটিলতা, আর্থিক সক্ষমতা ও জায়গার সংকটে নিজস্ব ইটিপি স্থাপন করা সবার পক্ষে সম্ভব হবে না। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাখাওয়াত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, শিল্পনগরে নিজস্ব ইটিপি স্থাপনের জায়গা ও আর্থিক সক্ষমতা সবার নেই। তাই সরকার বিদ্যমান সিইটিপির সক্ষমতা বাড়ালে দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। কারণ, এটা বাধ্যতামূলক। আর সনদ ছাড়া এ শিল্পের দুরবস্থা দূর হবে না।’

এদিকে পোশাক খাতে পরিবেশবান্ধব কারখানার স্বীকৃতি পেতে অতিরিক্ত ২০-২৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে হবে বলে জানান খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আর প্লাটিনাম মানের হতে গেলে বাড়তি পরিবেশবান্ধব খালি জায়গা রাখতে হয়। এতে ব্যয় ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। ফতুল্লা অ্যাপারেলস ২০২২ সালে পরিবেশবান্ধব কারখানার স্বীকৃতি পেয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে শামীম এহসান প্রথম আলোকে বলেন, ৫০ কোটি টাকায় একটি কারখানা স্থাপন করতে গেলে ৮-১০ কোটি টাকা ব্যয় হয় কারখানা পরিবেশবান্ধব করতে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিকের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ৬টি প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব ইটিপি স্থাপনের অনুমতি দিয়েছিলাম। আরও কয়কটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হবে। এতে প্রায় ১২ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য শোধনের চাপ কমবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ জ র ঘনম ট র প রথম আল ক র স ইট প স ইট প র সনদ প য় বর জ য ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

মালয়েশিয়ায় রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা আটকে আছে শুল্ক বাধায়

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শ্রমবাজার। আট লাখের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করেন দেশটিতে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও তাতে বাংলাদেশের হিস্যা অনেক কম। বিশেষ করে উচ্চ শুল্ক বাধার কারণে দেশটিতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি আশানুরূপ বাড়ছে না।

বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে মালয়েশিয়াকে ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। অথচ ভারত, চীন ও পাকিস্তানের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো শুল্কমুক্ত বা কম শুল্ক–সুবিধায় দেশটিতে পণ্য রপ্তানি করছে। কারণ, এসব দেশের সঙ্গে মালয়েশিয়ার দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ রয়েছে।

এফটিএ না থাকায় মালয়েশিয়াতে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকেরা তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছেন। এ জন্য তাঁরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশটির সঙ্গে এফটিএ করার দাবি জানিয়েছেন।

২৮০ কোটি ডলারের বাণিজ্য

বর্তমানে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে মোট দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২৮০ কোটি মার্কিন ডলারের। এর মধ্যে বাংলাদেশ রপ্তানি করে মাত্র ২৫–৩০ কোটি ডলারের পণ্য, যা মোট বাণিজ্যের মাত্র ৮-১০ শতাংশ। অর্থাৎ দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্যে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে তেল (বিশেষত পাম তেল), ইলেকট্রনিকস ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক ও সার, নির্মাণসামগ্রী ও খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে মালয়েশিয়া। আর বাংলাদেশ থেকে মূলত তৈরি পোশাক, বিভিন্ন ধরনের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য এবং ভোক্তাসামগ্রী রপ্তানি হয় মালয়েশিয়াতে। বাংলাদেশের প্রাণ গ্রুপ, স্কয়ার, আকিজ গ্রুপ, ওয়ালটন, মুন্নু সিরামিকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য রপ্তানি করে থাকে। এ ছাড়া তৈরি পোশাক খাতের বিভিন্ন কোম্পানি দেশটিতে পণ্য রপ্তানি করে।

তবে মালয়েশিয়ার ভোক্তা বাজার অনেক বড়। সঠিক নীতি গ্রহণ করলে এই বাজারে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের সামনে। মালয়েশিয়ার পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য অনুসারে, দেশটিতে প্রায় সাড়ে তিন কোটি লোকের বাস। এ ছাড়া দেশটিতে ২১ লাখের বেশি বিদেশি কর্মী রয়েছেন, যার প্রায় ৩৮ শতাংশের বেশি বাংলাদেশি (৮ লাখের বেশি)।

হালাল পণ্যের বৃহৎ বাজার

মালয়েশিয়ার বহির্মুখী বাণিজ্য উন্নয়ন করপোরেশনের (ম্যাট্রেড) তথ্য অনুসারে, দেশটিতে হালাল খাদ্যপণ্যের বাজার প্রায় ৫ হাজার কোটি (৫০ বিলিয়ন) ডলারের বেশি। এসব পণ্যের চাহিদা মেটাতে দেশটি ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডসহ প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২ হাজার কোটি (২০ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি করে।

বাংলাদেশও দেশটিতে হালাল পণ্য রপ্তানি শুরু করেছে। তবে এখনো তা পরিমাণে খুব কম, মাত্র ৪ থেকে ৫ কোটি ডলারের আশপাশে। বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, শুধু শুল্ক বাধা দূর করা গেলেই দেশটিতে ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলারের হালাল পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হবে। অর্থাৎ হালাল পণ্যের রপ্তানি বাড়বে পাঁচ গুণ।

মালয়েশিয়ায় স্থানীয় সরবরাহকারী কোম্পানির (পিনাকেল ফুডস) মাধ্যমে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য রপ্তানি করছে বাংলাদেশের শীর্ষ কোম্পানি প্রাণ গ্রুপ। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে মসলা, নুডলস, জুস, ড্রিংকস, বিস্কুট, কুকিজ প্রভৃতি। গত চার দিনে মালয়েশিয়ার অন্তত ছয়টি বড় বড় শপিং মল ও সুপারমার্কেট ঘুরে সবগুলোতে প্রাণের পণ্য দেখা গেছে। এ ছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন মুদিদোকানেও প্রাণ ব্র্যান্ডের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে।

প্রাণের কর্মকর্তারা জানান, মালয়েশিয়ার মানুষ নুডলস, বিভিন্ন ধরনের স্ন্যাকস, ফ্রোজেন খাদ্যপণ্য, বিস্কুট, জুস, বেভারেজ প্রভৃতি পছন্দ করেন। এ ছাড়া সেখানে প্রচুর প্রবাসী বাংলাদেশিও রয়েছেন। এটি তাদের জন্য বড় সুযোগ।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাধা দেশটির সঙ্গে কোনো ব্যবসায়িক চুক্তি না থাকা। এ কারণে ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে। আমরা যদি বিনা শুল্কে প্রাণের পণ্য রপ্তানির সুযোগ পাই, তবে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বাজার ধরতে পারব। এতে দেশটিতে শুধু প্রাণের পণ্যের রপ্তানিই পাঁচ গুণ বাড়বে বলে আমরা আশা করি।’

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মাহবুব আলম শাহ বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি থাকায় তারা বাজার দখল করছে। এ বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ৩০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে টিকে থাকা কঠিন।’

বাণিজ্য চুক্তির অগ্রগতি কম

মালয়েশিয়ার সঙ্গে প্রায় এক দশক ধরে এফটিএ নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করছে বাংলাদেশ। কিন্তু সেটি এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনার টেবিলে ওঠেনি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রক্রিয়ায় কিছুটা গতি এসেছে।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, বর্তমানে মালয়েশিয়ার সঙ্গে ভারত, পাকিস্তানসহ প্রায় ১৪টি দেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) রয়েছে। গত প্রায় এক দশক ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে এফটিএ করার জন্য নানা সময়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে মালয়েশিয়া সফর করেন। এর পর থেকে দুই দেশের মধ্যে এফটিএ নিয়ে পুনরায় আলোচনা শুরু হয়েছে।

দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি এফটিএ নিয়ে দর–কষাকষির জন্য একটি টার্মস অব রেফারেন্সের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এটির অনুমোদন হলে উভয় পক্ষ আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসতে পারে।

মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার (উপহাইকমিশনার) মোসাম্মাত শাহানারা মনিকা বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় আমাদের বাজার সম্ভাবনা প্রচুর, কিন্তু শুল্ক ও বিধিনিষেধের সহজীকরণ ছাড়া টিকে থাকা কঠিন।’ তিনি জানান, এফটিএ নিয়ে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হতে পারে।

শাহানারা মনিকা আরও বলেন, প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রপ্তানি বাড়াতে হলে এফটিএর বিকল্প নেই। তবে পণ্যের পাশাপাশি সেবা খাতের মাধ্যমেও বাণিজ্য–ঘাটতি পূরণের সুযোগ রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ