সর্বোচ্চ পরিবেশবান্ধব কারখানার দেশে চামড়ায় দীনতা
Published: 7th, August 2025 GMT
পোশাক খাতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব কারখানা এখন বাংলাদেশে। এমনকি বিশ্বে এই খাতের শ্রেষ্ঠ ২০টি পরিবেশবান্ধব কারখানার মধ্যে ১৮টিই এ দেশের। আর দেশে এই খাতে মোট পরিবেশবান্ধব কারখানার সংখ্যা ২৩০। এসব কারখানা জ্বালানি ও পানিসাশ্রয়ী। এ রকম কারখানায় দূষণের মাত্রাও কম। সফলতাও বড়। যেমন বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ, যার বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। অন্যদিকে দেশের চামড়াশিল্পে ঠিক পোশাকের বিপরীত চিত্র দেখা যায়।
চামড়ার আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ থাকতে হয়। কিন্তু দেশে এলডব্লিউজির সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ৮, যা প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। ফলে ইউরোপের বাজার ধরতে না পেরে চীনের কাছে খুব সস্তায় চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। আর চামড়া পণ্য রপ্তানির জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে আমদানি করা চামড়ার ওপর।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত। তা সত্ত্বেও গত এক দশকে এ খাতের উল্লেখযোগ্য বিকাশ ঘটেনি। দেশের মোট বার্ষিক পোশাক রপ্তানি আয় প্রায় ৪০ বিলিয়ন (১ বিলিয়নে ১০০ কোটি) মার্কিন ডলারে পৌঁছালেও চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি ১ থেকে দেড় বিলিয়ন ডলারেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এলডব্লিউজি সনদ প্রাপ্তিতে পিছিয়ে থাকায় বাংলাদেশ ইউরোপের বাজার ধরতে পারছেন না বলে জানান খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মো.
এলডব্লিউজির তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আড়াই হাজারের বেশি চামড়াশিল্প প্রতিষ্ঠান এই সনদ পেয়েছে। এর মধ্যে ইতালির ৯৬০টি, ভারতের ৩০১টি, চীনের ২৭৩টি, পাকিস্তানের ৬২টি, ভিয়েতনামের ২৭টি, তাইওয়ানের ২৪টি ও থাইল্যান্ডের ২২টি প্রতিষ্ঠান এলডব্লিউজি সনদ পেয়েছে।
এলডব্লিউজি সনদ পেতে ১৭টি বিভাগে মোট ১ হাজার ৭১০ নম্বর পেতে হয়। যার মধ্যে ৩০০ নম্বর পেতে হয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়। মোট নম্বরের ৫০ শতাংশ পেলেই একটি প্রতিষ্ঠানটিকে ‘নিরীক্ষিত’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এলডব্লিউজি এক নোটিশে জানায়, সিইটিপিতে সমস্যা থাকায় সাভারের কোনো ট্যানারি অডিটের যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে না। তবে কোনো ট্যানারি যদি সাভারের সিইটিপির সঙ্গে যুক্ত না থাকে, তাহলে আলাদা বিষয়। তবে তাদের অবশ্যই নিজস্ব ইটিপি থাকতে হবে। হেমায়েতপুর সিইটিপির তরল বর্জ্য পরিশোধনের সক্ষমতা দৈনিক ২৫ হাজার ঘনমিটার। তবে ট্যানারিগুলো পুরোদমে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করলে ৪০ হাজার ঘনমিটার ছাড়িয়ে যায়। ফলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নির্দিষ্ট মানের মধ্যে রাখা যায় না। সে জন্যই এলডব্লিউজি কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কার্যকর সিইটিপি ও এলডব্লিউজি সনদ ছাড়া এ শিল্পের টিকে থাকা সম্ভব নয়। যেমন সনদটি না থাকায় ‘সদর ট্যানারি’র ব্যবসা কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ। ইউরোপের ৭-৮টি ক্রেতা তাদের ছেড়ে চলে গেছে। এতে ব্যবসা বন্ধের উপক্রম দেখে প্রতিষ্ঠানটি এখন হেমায়েতপুরে নিজেরাই ইটিপি স্থাপন করছে।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতি ঘণ্টায় ৫ ঘনমিটার সক্ষমতার ইটিপি স্থাপন করছি আমরা। এতে ২ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে। আমাদের অবশিষ্ট বিদেশি ক্রেতা জানিয়ে দিয়েছে ২০২৬ সালের মধ্যে ইটিপি না হলে তারাও চলে যাবে। তা ছাড়া শুধু চীননির্ভর একক বাজার দিয়ে ব্যবসা করা যায় না।’
সনদ পেলে লাভ কী
দেশে চামড়া খাতের ৮টি প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত এলডব্লিউজি সনদ পেয়েছে। সেগুলো হচ্ছে এপেক্স ফুটওয়্যার, রিফ লেদার, এবিসি লেদার, সুপারেক্স লেদার, সাফ লেদার, সিমোনা ট্যানিং, সংশিন লেদার বিডি ও অস্টান লিমিটেড। এর মধ্যে চামড়াশিল্প নগরের একমাত্র প্রতিষ্ঠান সিমোনা ট্যানিং।
চট্টগ্রামভিত্তিক রীফ লেদার ২০১৫ সালে নিজস্ব ইটিপি স্থাপন করে ২০১৯ সালে এলডব্লিউজি সনদ পায়। এটি স্থাপনে তারা বিনিয়োগ করেছে সাড়ে ৫ কোটি টাকা।
রীফ লেদারের পরিচালক মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত অর্ডার আছে। আমরা দর–কষাকষি করতে পারছি, যা ঢাকার ট্যানারিগুলো পারছে না। যে চামড়া আমরা দেড় ডলারে প্রতি বর্গফুট বিক্রি করছি, সেটি তারা চীনে ৫০-৭০ সেন্টে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।’
কেমন বিনিয়োগ লাগে
চামড়া কারখানা পরিবেশবান্ধব করতে ২ থেকে ৫ কোটি টাকায় নিজস্ব ইটিপি স্থাপন করতে হয়। অন্যদিকে পোশাক কারখানা পরিবেশবান্ধব করতে বিনিয়োগের দরকার হয় ৮-১০ কোটি টাকা।
ট্যানারির মালিকেরা বলছেন, পদ্ধতিগত জটিলতা, আর্থিক সক্ষমতা ও জায়গার সংকটে নিজস্ব ইটিপি স্থাপন করা সবার পক্ষে সম্ভব হবে না। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাখাওয়াত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, শিল্পনগরে নিজস্ব ইটিপি স্থাপনের জায়গা ও আর্থিক সক্ষমতা সবার নেই। তাই সরকার বিদ্যমান সিইটিপির সক্ষমতা বাড়ালে দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। কারণ, এটা বাধ্যতামূলক। আর সনদ ছাড়া এ শিল্পের দুরবস্থা দূর হবে না।’
এদিকে পোশাক খাতে পরিবেশবান্ধব কারখানার স্বীকৃতি পেতে অতিরিক্ত ২০-২৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে হবে বলে জানান খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আর প্লাটিনাম মানের হতে গেলে বাড়তি পরিবেশবান্ধব খালি জায়গা রাখতে হয়। এতে ব্যয় ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। ফতুল্লা অ্যাপারেলস ২০২২ সালে পরিবেশবান্ধব কারখানার স্বীকৃতি পেয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে শামীম এহসান প্রথম আলোকে বলেন, ৫০ কোটি টাকায় একটি কারখানা স্থাপন করতে গেলে ৮-১০ কোটি টাকা ব্যয় হয় কারখানা পরিবেশবান্ধব করতে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিকের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ৬টি প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব ইটিপি স্থাপনের অনুমতি দিয়েছিলাম। আরও কয়কটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হবে। এতে প্রায় ১২ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য শোধনের চাপ কমবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ জ র ঘনম ট র প রথম আল ক র স ইট প স ইট প র সনদ প য় বর জ য ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
সর্বোচ্চ পরিবেশবান্ধব কারখানার দেশে চামড়ায় দীনতা
পোশাক খাতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব কারখানা এখন বাংলাদেশে। এমনকি বিশ্বে এই খাতের শ্রেষ্ঠ ২০টি পরিবেশবান্ধব কারখানার মধ্যে ১৮টিই এ দেশের। আর দেশে এই খাতে মোট পরিবেশবান্ধব কারখানার সংখ্যা ২৩০। এসব কারখানা জ্বালানি ও পানিসাশ্রয়ী। এ রকম কারখানায় দূষণের মাত্রাও কম। সফলতাও বড়। যেমন বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ, যার বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। অন্যদিকে দেশের চামড়াশিল্পে ঠিক পোশাকের বিপরীত চিত্র দেখা যায়।
চামড়ার আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ থাকতে হয়। কিন্তু দেশে এলডব্লিউজির সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ৮, যা প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। ফলে ইউরোপের বাজার ধরতে না পেরে চীনের কাছে খুব সস্তায় চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। আর চামড়া পণ্য রপ্তানির জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে আমদানি করা চামড়ার ওপর।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত। তা সত্ত্বেও গত এক দশকে এ খাতের উল্লেখযোগ্য বিকাশ ঘটেনি। দেশের মোট বার্ষিক পোশাক রপ্তানি আয় প্রায় ৪০ বিলিয়ন (১ বিলিয়নে ১০০ কোটি) মার্কিন ডলারে পৌঁছালেও চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি ১ থেকে দেড় বিলিয়ন ডলারেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এলডব্লিউজি সনদ প্রাপ্তিতে পিছিয়ে থাকায় বাংলাদেশ ইউরোপের বাজার ধরতে পারছেন না বলে জানান খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. আবু ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (সিইটিপি) সুবিধা কার্যকরের উদ্যোগ নিতে হবে। কিছু প্রতিষ্ঠানকে বর্জ্য পরিশোধন বা ইটিপির অনুমোদন দিতে হবে। সাভারের চামড়াশিল্প নগরের সিইটিপির সক্ষমতা ২৫ হাজার ঘনমিটার বলা হলেও কার্যকারিতা ১৫ হাজার ঘনমিটারের। তাই সাভার চামড়াশিল্প নগরে নতুন কয়েকটি ইটিপি স্থাপন করতে হবে।
এলডব্লিউজির তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আড়াই হাজারের বেশি চামড়াশিল্প প্রতিষ্ঠান এই সনদ পেয়েছে। এর মধ্যে ইতালির ৯৬০টি, ভারতের ৩০১টি, চীনের ২৭৩টি, পাকিস্তানের ৬২টি, ভিয়েতনামের ২৭টি, তাইওয়ানের ২৪টি ও থাইল্যান্ডের ২২টি প্রতিষ্ঠান এলডব্লিউজি সনদ পেয়েছে।
এলডব্লিউজি সনদ পেতে ১৭টি বিভাগে মোট ১ হাজার ৭১০ নম্বর পেতে হয়। যার মধ্যে ৩০০ নম্বর পেতে হয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়। মোট নম্বরের ৫০ শতাংশ পেলেই একটি প্রতিষ্ঠানটিকে ‘নিরীক্ষিত’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এলডব্লিউজি এক নোটিশে জানায়, সিইটিপিতে সমস্যা থাকায় সাভারের কোনো ট্যানারি অডিটের যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে না। তবে কোনো ট্যানারি যদি সাভারের সিইটিপির সঙ্গে যুক্ত না থাকে, তাহলে আলাদা বিষয়। তবে তাদের অবশ্যই নিজস্ব ইটিপি থাকতে হবে। হেমায়েতপুর সিইটিপির তরল বর্জ্য পরিশোধনের সক্ষমতা দৈনিক ২৫ হাজার ঘনমিটার। তবে ট্যানারিগুলো পুরোদমে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করলে ৪০ হাজার ঘনমিটার ছাড়িয়ে যায়। ফলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নির্দিষ্ট মানের মধ্যে রাখা যায় না। সে জন্যই এলডব্লিউজি কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কার্যকর সিইটিপি ও এলডব্লিউজি সনদ ছাড়া এ শিল্পের টিকে থাকা সম্ভব নয়। যেমন সনদটি না থাকায় ‘সদর ট্যানারি’র ব্যবসা কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ। ইউরোপের ৭-৮টি ক্রেতা তাদের ছেড়ে চলে গেছে। এতে ব্যবসা বন্ধের উপক্রম দেখে প্রতিষ্ঠানটি এখন হেমায়েতপুরে নিজেরাই ইটিপি স্থাপন করছে।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতি ঘণ্টায় ৫ ঘনমিটার সক্ষমতার ইটিপি স্থাপন করছি আমরা। এতে ২ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে। আমাদের অবশিষ্ট বিদেশি ক্রেতা জানিয়ে দিয়েছে ২০২৬ সালের মধ্যে ইটিপি না হলে তারাও চলে যাবে। তা ছাড়া শুধু চীননির্ভর একক বাজার দিয়ে ব্যবসা করা যায় না।’
সনদ পেলে লাভ কী
দেশে চামড়া খাতের ৮টি প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত এলডব্লিউজি সনদ পেয়েছে। সেগুলো হচ্ছে এপেক্স ফুটওয়্যার, রিফ লেদার, এবিসি লেদার, সুপারেক্স লেদার, সাফ লেদার, সিমোনা ট্যানিং, সংশিন লেদার বিডি ও অস্টান লিমিটেড। এর মধ্যে চামড়াশিল্প নগরের একমাত্র প্রতিষ্ঠান সিমোনা ট্যানিং।
চট্টগ্রামভিত্তিক রীফ লেদার ২০১৫ সালে নিজস্ব ইটিপি স্থাপন করে ২০১৯ সালে এলডব্লিউজি সনদ পায়। এটি স্থাপনে তারা বিনিয়োগ করেছে সাড়ে ৫ কোটি টাকা।
রীফ লেদারের পরিচালক মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত অর্ডার আছে। আমরা দর–কষাকষি করতে পারছি, যা ঢাকার ট্যানারিগুলো পারছে না। যে চামড়া আমরা দেড় ডলারে প্রতি বর্গফুট বিক্রি করছি, সেটি তারা চীনে ৫০-৭০ সেন্টে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।’
কেমন বিনিয়োগ লাগে
চামড়া কারখানা পরিবেশবান্ধব করতে ২ থেকে ৫ কোটি টাকায় নিজস্ব ইটিপি স্থাপন করতে হয়। অন্যদিকে পোশাক কারখানা পরিবেশবান্ধব করতে বিনিয়োগের দরকার হয় ৮-১০ কোটি টাকা।
ট্যানারির মালিকেরা বলছেন, পদ্ধতিগত জটিলতা, আর্থিক সক্ষমতা ও জায়গার সংকটে নিজস্ব ইটিপি স্থাপন করা সবার পক্ষে সম্ভব হবে না। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাখাওয়াত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, শিল্পনগরে নিজস্ব ইটিপি স্থাপনের জায়গা ও আর্থিক সক্ষমতা সবার নেই। তাই সরকার বিদ্যমান সিইটিপির সক্ষমতা বাড়ালে দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। কারণ, এটা বাধ্যতামূলক। আর সনদ ছাড়া এ শিল্পের দুরবস্থা দূর হবে না।’
এদিকে পোশাক খাতে পরিবেশবান্ধব কারখানার স্বীকৃতি পেতে অতিরিক্ত ২০-২৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে হবে বলে জানান খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আর প্লাটিনাম মানের হতে গেলে বাড়তি পরিবেশবান্ধব খালি জায়গা রাখতে হয়। এতে ব্যয় ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। ফতুল্লা অ্যাপারেলস ২০২২ সালে পরিবেশবান্ধব কারখানার স্বীকৃতি পেয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে শামীম এহসান প্রথম আলোকে বলেন, ৫০ কোটি টাকায় একটি কারখানা স্থাপন করতে গেলে ৮-১০ কোটি টাকা ব্যয় হয় কারখানা পরিবেশবান্ধব করতে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিকের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ৬টি প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব ইটিপি স্থাপনের অনুমতি দিয়েছিলাম। আরও কয়কটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হবে। এতে প্রায় ১২ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য শোধনের চাপ কমবে।’