নাগরিকদের দোরগোড়ায় কনস্যুলার সেবা পৌঁছে দিতে সরকার এবার বিভাগীয় পর্যায়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার দপ্তর চালু করতে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পাঁচ দশক পর প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামে একটি কনস্যুলার দপ্তর পরিচালনা করতে যাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আঞ্চলিক দপ্তরটি চালু হলে প্রবাসী বাংলাদেশি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের আর নানা ধরনের অপরিহার্য নথিপত্র সত্যায়নের জন্য ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যেতে হবে না। এতে তাঁদের সময় ও খরচের সাশ্রয় হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, গত মাসে সরকারের উচ্চপর্যায়ে চট্টগ্রামে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার দপ্তর চালুর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এই মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাগরিকদের কনস্যুলার সেবা দিতে আঞ্চলিক দপ্তর রয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আঞ্চলিক শাখা রয়েছে কলকাতা, মুম্বাই, চেন্নাই ও গুয়াহাটিতে। আর পাকিস্তানের করাচি, লাহোর, কোয়েটা ও পেশোয়ারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্যাম্প দপ্তর রয়েছে। এসব অফিস কনস্যুলার সেবা দেওয়ার পাশাপাশি আঞ্চলিক কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড সমন্বয়ের কাজও করে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, গত মাসে সরকারের উচ্চপর্যায়ে চট্টগ্রামে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার দপ্তর চালুর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.

নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবার চট্টগ্রামে আঞ্চলিক অফিস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রবাসী ও সাধারণ নাগরিকদের কনস্যুলার সেবা দিতে এই দপ্তর চালু করা হবে। একজন পরিচালকের নেতৃত্বে কয়েকজন স্টাফ নিয়ে প্রাথমিকভাবে কার্যক্রম শুরু হবে। দপ্তরটি চালুর বিষয়ে প্রাথমিক প্রস্তুতি চলছে।

দপ্তরটি চালু হলে প্রবাসী বাংলাদেশি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যেতে হবে না।

সচিব জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দপ্তর চালু হলে শুধু কনস্যুলার সেবা নয়, চট্টগ্রামে সহকারী ভারতীয় হাইকমিশনারের অফিসের সঙ্গে কূটনৈতিক কার্যক্রম সমন্বয়ের কাজও করা যাবে। পাশাপাশি দপ্তরটি আঞ্চলিক পর্যায়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সফর, প্রতিনিধিদলের সমন্বয় ও প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামে মন্ত্রণালয়ের দপ্তর চালু হলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগের লোকজন সরাসরি কনস্যুলার সেবা পাবেন। বর্তমানে নথিপত্র সত্যায়নের জন্য তাঁদের ঢাকায় যেতে হয়। নতুন এই আঞ্চলিক অফিস চালু হলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, ফেনী ও নোয়াখালী অঞ্চলের জনগণ স্থানীয়ভাবে এসব সেবা পাবেন। এতে সময় বাঁচবে, সেবার মানও উন্নত হবে।

সেবার মধ্যে রয়েছে শিক্ষাসনদ, বিয়ে ও আইনি নানা ধরনের সনদ, জন্মসনদসহ ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পরিসরে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সত্যায়ন, পাসপোর্ট ও ভিসাসংক্রান্ত সহায়তা, প্রবাসী নাগরিকদের ও তাঁদের পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় জরুরি সেবা ইত্যাদি।

যেসব সেবা পাবেন নাগরিকেরা

চট্টগ্রামে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত আঞ্চলিক দপ্তরটিতে বিদেশে কর্মরত ও বিদেশগামী নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সব কনস্যুলার সেবা দেওয়া হবে। এসব সেবার মধ্যে রয়েছে শিক্ষাসনদ, বিয়ে ও আইনি নানা ধরনের সনদ, জন্মসনদসহ ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পরিসরে প্রয়োজনীয় নথিপত্র সত্যায়ন, পাসপোর্ট ও ভিসাসংক্রান্ত সহায়তা, প্রবাসী নাগরিকদের ও তাঁদের পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় জরুরি সেবা ইত্যাদি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কনস য ল র স ব দ র পর ব র র র কনস য ল র পর য য় র জন য প রব স

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলিম সভ্যতায় রসায়নের সোনালি যুগ

গোলাপজলের মিষ্টি সুবাস থেকে শুরু করে কেরোসিনের জ্বালানি শক্তি—মুসলিম সভ্যতার রসায়নবিদরা একটি সমৃদ্ধ রসায়নের জগত উপহার দিয়েছেন। নবম শতাব্দী থেকে তারা পাতন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জীবনকে আরও সুন্দর ও কার্যকর করেছেন। তাদের আবিষ্কার আধুনিক রসায়নের ভিত্তি স্থাপন করেছে, যা আজও আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়।

এই নিবন্ধে জাবির ইবন হাইয়ান, আল-রাজি ও আল-কিন্দির মতো পথপ্রদর্শকদের হাত ধরে মুসলিম সভ্যতার রসায়নের সোনালি যুগের সন্ধান করা হয়েছে।

পাতনের প্রথম ফল ছিল গোলাপজল, যা ছিল খাবার, পানীয়, সুগন্ধি ও প্রসাধনীতে অপরিহার্য। আল-কিন্দি সুগন্ধির রসায়ন বিষয়ে একটি গ্রন্থ লিখেছিলেন, যাতে ছিল ১০৭টি ভিন্ন সুগন্ধির রেসিপি।পাতন প্রক্রিয়া: রসায়নের হৃৎপিণ্ড

নবম শতকের মাঝামাঝি মুসলিম রসায়নবিদরা স্ফটিকায়ন, জারণ, বাষ্পীভবন, পরিশোধন ও ফিল্টারেশনের মতো প্রক্রিয়া সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। (১০০১ ইনভেনশনস: দি এন্ডিউরিং লিগ্যাসি অব মুসলিম সিভিলাইজেশন, ৪র্থ সংস্করণ, পৃ. ৯০)

তাদের পরীক্ষাকে নির্ভুল করতে তারা সূক্ষ্ম দাঁড়িপাল্লা আবিষ্কার করেন, যা রাসায়নিক নমুনা ওজনের জন্য ব্যবহৃত হতো। এই পরীক্ষাগুলোর পাশাপাশি তারা নতুন তাত্ত্বিক ধারণা ও রাসায়নিক ধারণা প্রবর্তন করেন, যার কিছু কিছু টিকে ছিল শতাব্দীর পর শতাব্দী। পাতন প্রক্রিয়া ছিল তাদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান, যা তরল পদার্থকে ফুটিয়ে তার বিশুদ্ধ উপাদান আলাদা করার একটি শিল্প ছিল।

পাতনের প্রথম ফল ছিল গোলাপজল, যা ছিল খাবার, পানীয়, সুগন্ধি ও প্রসাধনীতে অপরিহার্য। আল-কিন্দি সুগন্ধির রসায়ন বিষয়ে একটি গ্রন্থ লিখেছিলেন, যাতে ছিল ১০৭টি ভিন্ন সুগন্ধির রেসিপি। (১০০১ ইনভেনশনস: দি এন্ডিউরিং লিগ্যাসি অব মুসলিম সিভিলাইজেশন, ৪র্থ সংস্করণ, পৃ. ৯১)

এই প্রক্রিয়া আধুনিক সুগন্ধি শিল্পের ভিত্তি স্থাপন করেছে।

আরও পড়ুনমুসলিম সমাজকে বিজ্ঞানমুখী করার উপায়০২ আগস্ট ২০২৫জাবির ইবন হাইয়ান: রসায়নের পথিকৃৎ

জাবির ইবন হাইয়ান (৭২২-৮১৫), পশ্চিমে গেবার নামে পরিচিত, ছিলেন রসায়নের জনক। কুফায় একজন ওষুধ ব্যবসায়ীর পুত্র হিসেবে তিনি পরিশোধন, স্ফটিকায়ন, পাতন, জারণ ও ফিল্টারেশনের মতো প্রক্রিয়াগুলো উন্নত করেন। (আর. আরনালদেজ-এল. ম্যাসিগনন, ইন অ্যানসিয়েন্ট অ্যান্ড মেডিয়েভাল সায়েন্স, লন্ডন: থেমস অ্যান্ড হাডসন: ১৯৬৩, পৃ. ৪১৩)

তিনি এমন কাগজ তৈরির চেষ্টা করেছিলেন যা পুড়ত না এবং এমন কালি যা অন্ধকারে পড়া যায়।

তিনি অ্যালেম্বিক স্টিল ব্যবহার করে পাতন প্রক্রিয়া পরিচালনা করতেন, যা তরলকে ফুটিয়ে বিশুদ্ধ উপাদান সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হতো। তিনি এমন কাগজ তৈরির চেষ্টা করেছিলেন যা পুড়ত না এবং এমন কালি যা অন্ধকারে পড়া যায়।

জাবির পদার্থের শ্রেণিবিভাগ ও রাসায়নিক জ্ঞান সংগঠনের নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলো পরবর্তী শতাব্দীতে ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয় এবং ১৭শ শতাব্দী পর্যন্ত পুনঃপ্রকাশিত হয়। (১০০১ ইনভেনশনস: দি এন্ডিউরিং লিগ্যাসি অব মুসলিম সিভিলাইজেশন, ৪র্থ সংস্করণ, পৃ. ৯৩)

তাঁর কাজ আধুনিক রসায়নের ভিত্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মদ পাতন করে বিশুদ্ধ অ্যালকোহল তৈরি

সম্পর্কিত নিবন্ধ