Risingbd:
2025-11-08@10:05:54 GMT

বিএনপির ৩১ দফা: পাঠ ও বিবেচনা

Published: 8th, November 2025 GMT

বিএনপির ৩১ দফা: পাঠ ও বিবেচনা

রূপরেখা হিসেবে বিএনপির ৩১ দফা অভিনন্দন পাওয়ার দাবি রাখে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র বিশ্বসভায় আত্মসত্তার রাজনীতি নিয়ে দাঁড়াতে হলে এই দফার বাস্তবায়ন অপরিহার্য। জনগণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির প্রসঙ্গ দফাসমূহে যথাযথভাবে হাজির রয়েছে। প্রশ্ন হলো, বিএনপি কি পারবে প্রতিটি দফার অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে?

মঞ্চে কোনো নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার আগে অনেকদিন ধরে অনুশীলন করতে হয় মহড়া কক্ষে। ড্রেস রিহার্সেল পর্ব পেরিয়ে নাটকটা দর্শকের সামনে হাজিরের চূড়ান্ত অনুমোদন পায় সংগঠনের তরফে। ঠিক তেমনি কোনো দফা বা রূপরেখা বাস্তবায়ন করতে হলে দলের ভেতরে তার অনুশীলন বা চর্চা জরুরি, অপরিহার্যও বটে। বলছি, বিএনপির ৩১ দফা রূপরেখার যে বিষয়গুলো দলের অভ্যন্তরে প্রয়োগ বা বাস্তবায়ন করা যায়, সেসব আদতে করা হয় কি? দল হতে পারে জাতীয়ভাবে কোনো কিছু কার্যকর করার আগে মহড়াকক্ষ বিশেষ।

আরো পড়ুন:

‘জামায়াতের রাজনীতি শুরু হয় জিয়াউর রহমানের নীতির কারণে’

জিয়াউর রহমান স্থাপিত ইবির ভিত্তিপ্রস্তরে শ্রদ্ধাঞ্জলি

অবশ্য, এরকম পরিকল্পনা বা সিদ্ধান্ত যেহেতু নেওয়া হয়েছে; বিএনপির তরফে সেসবের বোঝাপড়া, অনুশীলন, অধ্যাবসায়, অনুসন্ধান, গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে বলেও ধরে নেওয়া যায়। ‘বৃক্ষ তুমি কি, ফলে পরিচয়’। বিএনপি’র এখন পরিচয় দেওয়ার সময় এসেছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে কি এর আগে বিএনপি এরকম কিছু করেনি? অবশ্যই করেছে। তবে, আগের অবস্থা আর এখনকার অবস্থার মধ্যে তফাৎ রয়েছে। বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে পাড়ি দিয়ে এসেছে দীর্ঘ এক সময়। পরিণত কিংবা দায়িত্বশীল বলতে যা বোঝায় সংগঠন হিসেবে এখন ঠিক তাই। ক্ষমতায় ও ক্ষমতার বাইরে থাকার অভিজ্ঞতায় দলটি ঋদ্ধ। ক্ষমতার রাজনীতির বৈরী ও অসহিষ্ণু আচরণে তারা পরিণত হয়েছে কষ্টিপাথরে। ফলে, এই বিএনপির কাছে মানুষের প্রত্যাশাও পাহাড় ছোঁয়া।  

মনে রাখতে হবে, গত ১৫ বছরে রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। সেই বাস্তবতার ঢেউ লেগেছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও। প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের কারণে বাস্তবিকই বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয় এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করছে বিশ্বকে। ছোট-বড় সবাই এখন দিন রাতের একটা লম্বা সময় যুক্ত থাকে এখানে। পৃথিবীর কোনো এক প্রান্তে কোনো কিছু ঘটলে মুহূর্তের মধ্যে তা চাউর হয়ে যাচ্ছে সর্বত্র, ভৌগলিক সীমারেখা ছাড়িয়ে। জনমত প্রভাবিত হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দ্বারা। ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানকেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রভাবিত করেছে। এই বাস্তবতার নজির কেবল বাংলাদেশে নয়, শ্রীলঙ্কা, নেপালসহ মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকার দেশগুলোতেও মিলেছে।

সমাজমাধ্যমের যেমন ভালো দিক আছে, তেমনি মন্দ দিকও ঢের। সঠিক-বেঠিক খবর-ছবিতে ঠাসা ভার্চুয়াল দুনিয়া। এ কারণে এই মাধ্যম সম্পর্কে সচেতনতা ও সতর্কতার বিকল্প নেই। পাশাপাশি প্রয়োজন নিজেদের এই সময়ের সাপেক্ষে যোগ্য করে তোলা। সেই যোগ্যতা দৃশ্যমান হতে হবে ব্যক্তিতে, প্রতিষ্ঠানে, দলে এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও। তবেই মঙ্গল হবে দেশ ও দশের, আখেরে কল্যাণও। বিএনপি প্রণীত ৩১ দফা রূপরেখায় রয়েছে সেই যোগ্যতার ছাপ ও পরিচয়, সর্বোৎকৃষ্টভাবে। এখন দেখার বিষয় ক্ষমতায় গেলে তারা কীভাবে রূপরেখাসমূহ বাস্তবায়ন করে, আদতে কতটুকু করে। আশাবাদ রাখতে চাই পুরোপুরিই। তবে, আশঙ্কাও রয়েছে অতীত অভিজ্ঞতার কারণে।

এ দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো, দলগুলো ক্ষমতাসীন আর ক্ষমতাহীন অবস্থায় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের জায়গায় অভিন্ন থাকেনি। রাজপথে যে দলের নেতাকর্মীরা গণতন্ত্র ও সুশাসনে সাক্ষাৎ দেবদূত-জনগণের জন্য আত্মোৎসর্গীত মহাপ্রাণ; গদিনসীন হলে রাজপথের রূপটি আড়ালে পড়ে যায়। এখন সময় বদলেছে, বিশেষ করে প্রযুক্তির কল্যাণে। দলগুলো যদি এই বদলের স্বরূপ বুঝতে না পারে তাহলে তারা রাজনীতিতে অপাংক্তেও হয়ে উঠবে। বিএনপি এসব ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক বলেই মনে হয়। বিশেষ করে দলের ৩১ দফা রূপরেখায় ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে তেমনটাই দৃশ্যমান হয়েছে। এখন দেখার পালা, ক্ষমতার সঙ্গ পেলে এইসব অঙ্গীকার কতোটা সত্যে পরিণত হয়। দেশ ও জাতি রয়েছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণসমূহ দেখার অপেক্ষায়।

আগের তুলনায় এ দেশের ছাত্রসমাজ এখন যথেষ্ট সচেতন, সাহসী, দেশপ্রেমিক ও সংঘবদ্ধ এক শক্তি। ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে আমরা তার পরিচয় পেয়েছি। ছাত্ররা এখন সবকিছুতে তাদের ন্যায্য হিস্যা বুঝে নিতে চায়। অন্যায়ের অবসান, দেশ ও জাতির অগ্রগমন, জনগণের উন্নয়নসহ সুখী-সমৃদ্ধ একটা দেশ প্রত্যাশা করে তারা। ছাত্ররা এটাও জানে, এই প্রত্যাশা অমূলক বা অসম্ভব কিছু নয়। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। বিগত দিনগুলোতে দেশের উন্নয়ন ও রাষ্ট্র সংহতির প্রশ্নে দলগুলো টম অ্যান্ড জেরির ভূমিকায় অভিনয় করেছে। অথচ তারা চাইলে সবই সম্ভব, এমনকি অসম্ভবকেও। বিএনপির ৩১ দফা রূপরেখাতেও সেটা প্রমাণিত হয়েছে। এই দফাসমূহে বিএনপি যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাতে প্রমাণিত হয় যে, একটা রাজনৈতিক দল চাইলে সত্যিই আমাদের দেশটা সমূলে পাল্টে দিতে পারে। এই রূপরেখায় সেটা স্পষ্টাকারে প্রমাণিত হয়েছে। এখন ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিএনপি যদি কোন কারণে এই দফাগুলো বাস্তবায়ন না করে, গুরুত্ব দিতে ভুলে যায়, গড়িমসিতে কেবলই সময়ক্ষেপণ করে, তাহলে তার মাশুলও বিএনপিকে পরিশোধ করতে হবে কড়ায়গন্ডায় মেপে মেপে। এবং সেটা অবশ্যই অকল্পনীয় ও অপ্রত্যাশিতভাবে।

ছাত্রসমাজ যেহেতু একবার জেগে উঠেছে- রাষ্ট্র মেরামত, সামাজিক সাম্য, বৈষম্য নিরসন, গণতন্ত্র, বাক্ স্বাধীনতা, সুশাসন ও ন্যায়বিচারের প্রশ্নে; তখন এসব বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তারা আর ক্ষান্ত হবে না। সচেতন একটা শক্তি হিসেবে ওরা দেশজুড়ে আবির্ভূত হওয়ায়, তাদের যে নয়ছয় বুঝিয়ে ঘরে ফেরানো যাবে, তাও সম্ভব নয়। তারা গণ-অভ্যুত্থানের ফসল ঘরে তুলতে চায়। ছাত্রদের সঙ্গে আমজনতাও শরিক হয়েছে অধিকার আদায়ের এই লম্বাসারিতে। এ কারণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপি যদি সরকার গঠন করে, তাহলে তাদের হানিমুন পিরিয়ড পার করার কোন সুযোগ নেই। প্রথম দিন থেকেই জারি রাখতে হবে ৩১ দফা বাস্তবায়নের লড়াই।

আশার কথা, বিএনপি যেহেতু তাদের করণীয় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, তাই সদিচ্ছা থাকলে এগুলো বাস্তবায়ন করা অবশ্যই সম্ভব। যে কোন কাজের যদি সুষ্ঠু পরিকল্পনা করা সম্ভব হয়, তা হলে তার অর্ধেকটা তখনই হয়ে যায়। বিএনপির এই রূপরেখায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র, সুশাসন, ন্যায়বিচার, সামাজিক সুরক্ষা, বাক্ স্বাধীনতা, বৈষম্য নিরসনসহ সুনির্দিষ্ট ৩১টি বিষয়ে বিস্তারিতভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ কারণে আন্তরিকভাব চাইলে এর বাস্তবায়ন দুরুহ হবে না। হয়তো একদিনে হবে না, এক বছরে হবে না, এক মেয়াদে হবে না। কিন্তু শুরু করলে সেটা যে একদিন না একদিন হবেই হবে, এ ব্যাপারে কোন সংশয় ও সন্দেহের কারণ নেই। জনগণ কোন রাজনৈতিক দলের ওপরই তার সাধ্যের চেয়ে বেশি কিছু চাপিয়ে দিতে চায় না। তারা দেখতে চায় তাদের আগ্রহ, সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা যতটুকু সেটা দৃশ্যমান হোক। বাংলাদেশ পুনর্গঠনের রূপরেখারও উপরও তাদের প্রত্যাশা অতটুকুই।

আগামী দিনের বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বিএনপির এই ৩১ দফার ওপর। স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশের মানুষ আশায় বুক বেঁধে আছে অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে। বেদনার হলো, আমরা কেবল ভৌগলিক স্বাধীনতা পেয়েছি, বাকিটা এখনও অধরা। রাজনীতির নামে এ দেশের মানুষ বারবার প্রতারণার শিকার হয়েছে। গণতন্ত্রকে এ দেশে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকাশের পথ থেকেছে অমসৃণ ও কণ্টকযুক্ত। কখনো কখনো আশার আলো দেখা গেলেও তা স্থায়ী হয়নি। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর মানুষ আশাবাদি হলেও, সে আশার গুড়ে বালি পড়েছে। তিন জোটের রূপরেখা বাস্তবায়নে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর কোন দলই আগ্রহী হয়নি। এমনকি নির্বাচনের সময় দলের পক্ষ থেকে যে ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে, নির্বাচিত হয়ে তার অনেক কিছু বেমালুম ভুলে যাওয়ার ইতিহাস রয়েছে।

সেই ইতিহাসের ফাঁদে পা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ, ফলে যা হওয়ার তাই-ই হয়েছে। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত দেখা গেছে; অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এক মেয়াদ পর ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। একবার বিএনপি, একবার আওয়ামী লীগ-  এভাবেই পরিবর্তন হয়েছে। সেই জায়গায় যখনই তারা ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে করেছে, তখনই রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের ভরাডুবি বা বিলুপ্তিকরণ নিশ্চিত হয়ে গেছে, অপেক্ষা ছিল কেবল পতন ঘণ্টার। তাদের কৃতকর্মই ২০২৪ এ জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানকে অনিবার্য করে তুলেছে। এর মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত হয়, জনগণ হয়তো ছাড় দেয়, কিন্তু ছেড়ে দেয় না। এই ঘটনা থেকে সকল রাজনৈতিক দলের শিক্ষা নেয়ার সুযোগ রয়েছে।

ইতিহাসের ট্র্যাজেডি হলো, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলো তো নয়ই। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ক্ষেত্রে একথা আবার শতভাগ সত্য। ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে স্বৈরশাসক আইয়ুব শাহীর পতন ঘটে। দুই দশকের মধ্যে আগমন ঘটে আরেক স্বৈরাচার এরশাদের। ১৯৯০-এ পতন হয় তার। আইয়ুব-এরশাদ দুইজনই ছিল সেনাবাহিনী থেকে আসা সামরিক স্বৈরাচার। এরপর শেখ হাসিনা হয়ে ওঠেন রাজনৈতিক স্বৈরাচার। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিলে ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইলের একটা ভূখণ্ডে কি মাত্র সাড়ে পাঁচ দশকের মধ্যে তিনটা গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হতে পারে? পৃথিবীর কোথাও কি এ রকম নজির রয়েছে?

২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান কেবল স্বৈরাচার পতনের জন্য ছিল না, একইসঙ্গে ছিল বাংলাদেশ পুনর্গঠনের আন্দোলন। এবার বাংলাদেশের সামনে মস্তো বড়ো এক সুযোগ এসেছে। এই সুযোগ সহসা আসে না। এর আগে এসেছিল ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু যথার্থভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। না হলে কী হয়, তার সাক্ষ্য রয়েছে ইতিহাসে। এবারও যদি পুনর্গঠন সম্ভব না হয়, তা হলে আগামীর বাংলাদেশ গভীরতর এক সংকটের মধ্যে পড়বে। যা কারোরই কাম্য নয়। এ মুহূর্তে সন্দেহাতীতভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। কেবল দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকের বিবেচনায় বড় নয়, অভিজ্ঞতাতেও সমৃদ্ধ। দলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে জনগণের কাছে আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। ২০২৪-এর গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সেই জায়গাটা আরও বেড়েছে। এই অবস্থায় বিএনপির ওপর নির্ভর করছে আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে।

দেশের বেশিরভাগ মানুষের প্রত্যাশার ভার এখন তাদের ওপর। ফলে, দল হিসেবে বিএনপির ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই। হঠকারি কোনো কিছু করা যৌক্তিক হবে না। এ কারণে, বিএনপিকে ৩১ দফা বাস্তবায়নে দৃশ্যমানভাবে আন্তরিক হতে হবে। এর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে জুলাই সনদের বিষয়গুলোও। বিবিসি’র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যথার্থই বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে দলটি ৩১ দফা ও জুলাই সনদের প্রতি সমান গুরুত্ব দিবে।

বিএনপি ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে, ৩১ দফা রূপরেখা অনুযায়ী বাংলাদেশ গড়তে আগ্রহী ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, নানাভাবে তা দৃশ্যমান হয়ে আসছে। এই রূপরেখা ঘোষিত হয় ২০২৩-এর জুলাই মাসে। তখন বিএনপি রাজনীতিতে অস্তিত্ব ধরে রাখার লড়াইয়ে ব্যস্ত। সেই সময়ের ক্ষমতাসীন দল যতভাবে একটা রাজনৈতিক দলের ওপর খড়গহস্ত হওয়া যায় তার সবটাই করে গেছে। এই অবস্থায় বিএনপি দেশ নিয়ে ভেবেছে এবং বেশ কিছু ব্যাপারে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত দিয়ে বাংলাদেশ পুনর্গঠনে ৩১ দফা রূপরেখা ঘোষণা করেছে।

তারপর রাজনীতিতে অনেক কিছু ঘটে গেছে। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে বিএনপি এখন প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। কিন্তু ৩১ দফা রূপরেখার ব্যাপারে তাদের অবস্থানের কোনো প্রকার নড়চড় হয়নি। এখন পর্যন্ত বিএনপির কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মীর কেউই ঠারেঠারেও বলেনি এসব দফার ব্যাপারে অসহিষ্ণু কোনো কথা। এই রূপরেখায় দলটি যে বিশেষ দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে তা স্পষ্ট হয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রমে। লক্ষ্যণীয়, তাদের অনেকগুলো বিষয় বিএনপির ভাবনায় আগেই রেখাপাত করেছে এবং সেই অনুযায়ী ক্ষমতায় গেলে প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা চরম সংকটের মধ্যে থাকাবস্থাতেই তারা ঘোষণা করেছে। ফলে, দলটি ক্ষমতার বাইরে থাকলেও দেশ নিয়ে যে গুরুত্বের সঙ্গে ভেবেছে তার প্রতিফলন ঘটেছে ৩১ দফায়। বিরোধীদলে, রাজপথে, লড়াইয়ের মাঠে থাকলেও বিএনপির ভাবনায় যে দেশ হাজির থাকে, ক্ষমতাসীন হয়েও যেন সেই দেশ ভাবনার দেখা মেলে- এই প্রত্যাশা সকলের।

লেখক: চিন্তক, সাংবাদিক ও গবেষক

ঢাকা/তারা

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ জ ল ই গণঅভ য ত থ ন ক ষমত স ন এই র পর খ গণতন ত র ২০২৪ এর র জন ত ত র পর খ য় র র জন ত স ব ধ নত ক ষমত য় ক ষমত র জনগণ র ২০২৪ এ ন র জন ন হয় ছ পর য য় র ওপর র অবস অবস থ অবশ য র গঠন দলগ ল হওয় র

এছাড়াও পড়ুন:

ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেলেন ঢাবির ৭৪ শিক্ষক-শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের শিক্ষার্থীদের তিন বছরের (২০২১, ২০২২ ও ২০২৩) এবং শিক্ষকদের পাঁচ বছরের (২০২১, ২০২২, ২০২৩, ২০২৪ ও ২০২৫) ডিনস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে।

অনুষদের ৫টি বিভাগের মোট ৪৪ জন শিক্ষার্থী ডিনস অ্যাওয়ার্ড পান। এছাড়া দেশে-বিদেশে প্রকাশিত গবেষণা গ্রন্থ এবং স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত মৌলিক প্রবন্ধের জন্য ৩০ জন শিক্ষককে ডিনস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।

আরো পড়ুন:

ঢাবিতে শুরু হচ্ছে ইকবাল ও নজরুলকে নিয়ে আন্তর্জাতিক কনফারেন্স

ঢাবি প্রক্টরকে হুমকি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের হাতে এ অ্যাওয়ার্ড তুলে দেওয়া হয়।

ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. উপমা কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সোনালী ব্যাগের উদ্ভাবক ও বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের সাবেক বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহমেদ খান ডিনস অ্যাওয়ার্ড স্পিকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

বিভাগীয় চেয়ারম্যানরা ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত শিক্ষকদের নাম ঘোষণা করেন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. উপমা কবির।

এ সময় বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, প্রাধ্যক্ষ, অনুষদের শিক্ষক ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানটি জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ করা হয়।

ডিনস অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলেন-জগন্নাথ বিশ্বাস, মো. নিজাম উদ্দিন তানিম, শ্রাবণী সরকার, নাজমুল হাসান নাঈম, আফসানা আনজুম আঁখি, নুসাইবা এহসান, আসমা ইয়াসমিন খান রিমু, মেহরিন ফাত্তাহা, কায়সারী ফেরদৌস, মোহাম্মদ আজমাঈন ফাতিন (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং), নিশাত তামান্না আদিবা, এহসানুল হক, মো. শাহিদুল ইসলাম, মো. আহসানুল হক মামুন, মো. আব্দুল হাসনাত, সাহাল জুবায়ের, তাইমিমা মাহবুব, ফাইরুজ তাহিয়া, ফাতেমা-তুজ-জহুরা (ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল), মো. আমিনুল কাদের বুলবুল, শাবাব মুর্শেদ, রাহিব হাসান, জহির সাদিক মনন, তাহমিদ মোসাদ্দেক, মহিদুল হক মৃদুল, আবদুল্লাহ ইবনে হানিফ আরিয়ান, মাবসুর ফাতিন বিন হোসাইন, ইত্তেহাদ সালেহ চৌধুরী, সৌমিক শাফকাত অভ্র (কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল), এইচ রাইনাদ খান রোহান, কে. এম. সৌরভ, মো. নবীর হোসেন, মো. ফাহিম ফরায়েজি, তাসফিয়া রহমান রিভা, মাহমুদুল হাসান তামিম, জেরিন তাহসিন আনজুম, তাসনুভা তামিসা অর্পি, ফারহান লাবিব অর্ণব (নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং), মিকদাম-আল-মাদ রৌন, আব্দুল মোনাফ চৌধুরী, হুমায়রা রশিদ, সানিয়া কায়েনাত চৌধুরী, মো. এহতেশামুল হক, আতিক তাজওয়ার (রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং)।

ডিনস অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষকরা হলেন- অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক (২০২১, ২০২৩, ২০২৫), মো. তানভীর আলম (২০২৪) (কম্পিউটার বিজ্ঞান অ্যান্ড প্রকৌশল), ড. আবুল খায়ের মল্লিক (২০২১, ২০২৩), অধ্যাপক ড. মো. নুরনবী (২০২৪), ড. তাসলিম উর রশিদ (২০২২, ২০২৩), অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুল ইসলাম মোল্লা (২০২৪), সাদিত বিহঙ্গ মালিথা (২০২১) (ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল), ড. সেঁজুতি রহমান (২০২১, ২০২৩, ২০২৪) (রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং), মো. আরিফুল ইসলাম (২০২৩), মো. সিফাত-ই-আরমান ভূঁইয়া (২০২৩, ২০২৫), ড. মো. মেহেদী হাসান (২০২৪), মো. হোসাইন শাহাদাত (২০২১), ড. অনিমেষ পাল (২০২১, ২০২৫), অধ্যাপক ড. আফরোজা শেলি (২০২২, ২০২৫) (নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং), ড. মাইনুল হোসেন (২০২২, ২০২৪, ২০২৫), ড. শেখ মো. মাহমুদুল ইসলাম (২০২২, ২০২৩), ড. মো. আহসান হাবীব (২০২৫), ইমতিয়াজ আহমেদ (২০২৪) (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং)।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, “মেধাকে মূল্যায়ন করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। একই সঙ্গে অভিভাবকদেরও আমরা সঙ্গে রাখতে পেরেছি। আসলে আপনারাও আমাদেরই অংশ।”

উপাচার্য বলেন, “মেধার অন্যতম ভিত্তি হলো পরিশ্রম। মনে রাখতে হবে, সাফল্যের পেছনে অনেকের অবদান থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের যে পরম্পরা তা তোমরা ধরে রেখেছো। এটাই আমাদের গর্ব। তবে মনে রাখতে হবে অহংবোধ যেন আমাদের মধ্যে জাগ্রত না হয়।”

ঢাকা/সৌরভ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান কী
  • ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেলেন ঢাবির ৭৪ শিক্ষক-শিক্ষার্থী
  • পাকিস্তানের টিটিপির হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত গোপালগঞ্জের রতন
  • বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু ৭ নভেম্বরের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে
  • ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভেন্যুর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ
  • প্রথমবারের মতো সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্ট প্রকাশ করলো এনআরবিসি ব্যাংক
  • কানাডায় পোস্টগ্র্যাজুয়েশন ওয়ার্ক পারমিট, যে ১০ ভুলে বাতিল হয় আবেদন
  • অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৮.১৭%