চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি আসলেই বিশ্বের সেরা
Published: 12th, August 2025 GMT
প্রযুক্তি বিশ্বে তাক লাগানো চীনের জন্য নতুন কিছু নয়। প্রথমবারের মতো দেশটির একটি হিউম্যানয়েড রোবট পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হয়েছে। রোবটটিকে দেওয়া হবে নাট্যকলা, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা। সুয়ে বা–০১ নামের রোবটটিকে সাংহাই থিয়েটার একাডেমিতে নাট্যকলা বিষয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামের শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি করানো হয়েছে।
এটি একটি মাত্র খবর। এমন অনেক কিছু করে দেশটি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অর্জন নিয়ে প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট একটি প্রতিবেদন ছাপিয়েছে। ‘আর চায়না’জ ইউনিভার্সিটিজ রিয়েলি দ্য বেস্ট ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ শিরোনামে এই প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে সায়েন্স ও টেকনোলজির ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্য নামকরা উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে কমিউনিস্ট–শাসিত দেশটি।
আন্তর্জাতিক অনেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্চশিক্ষার জন্য অন্যতম জনপ্রিয় দেশ চীন। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। বেশি বৃত্তি, বৃত্তি ছাড়াও কম খরচে উচ্চমানের শিক্ষার সুযোগ, লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকরির সুযোগ, চায়নিজ বা ইংরেজি ভাষায় পড়ার সুযোগসহ নানা কারণে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি বৈশ্বিক শিক্ষার্থীদের আগ্রহ চরমে।
যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানবিষয়ক খ্যাতনামা সাময়িকী নেচার বছর দশেক আগে ১৪৫টি বিখ্যাত জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের অবদানের হিসাব রাখা শুরু করে। ২০১৬ সালে যখন প্রথম নেচার ইনডেক্স প্রকাশ করা হয়, তখন চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্সেস (সিএএস) প্রথম স্থানে থাকলেও শীর্ষ ১০–এ মার্কিন ও ইউরোপীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোরই আধিপত্য ছিল। এ তালিকায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছিল দ্বিতীয়, আর স্ট্যানফোর্ড ও এমআইটি ছিল পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে ছিল ফরাসি ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চ (সিএনআরএস) ও জার্মানির ম্যাক্স প্লাঙ্ক সোসাইটি। সপ্তম ও অষ্টম স্থানে ছিল জার্মানির হেলমহোলৎজ অ্যাসোসিয়েশন অব জার্মান রিসার্চ সেন্টারস ও টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়। আর তালিকার নবম ও দশম স্থানে অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়।
কিন্তু এই চিত্র ধীরে ধীরে পাল্টাতে থাকে। ২০২০ সালে চীনের বেইজিংয়ের সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষ ১০–এ ঢুকে পড়ে। ২০২২ সাল নাগাদ অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ এই তালিকা থেকে ছিটকে পড়ে যায়। এই জায়গায় চলে আসে দুটি চীনা প্রতিষ্ঠান। ২০২৪ সালে এসে শীর্ষ ১০–এ টিকে থাকে মাত্র তিনটি পশ্চিমা প্রতিষ্ঠান—হার্ভার্ড, সিএনআরএস ও ম্যাক্স প্লাঙ্ক সোসাইটি। এ বছর হার্ভার্ড দ্বিতীয় ও ম্যাক্স প্লাঙ্ক নবম স্থানে আছে। শীর্ষ ১০–এর আটটি প্রতিষ্ঠানই এখন চীনের।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের সিমন্স ডিসটিংগুইশড স্কলার অ্যাওয়ার্ড, জিপিএ ৩.৩ হলে আবেদন০৬ মে ২০২৫
এই পরিবর্তন চীনের গবেষণা সক্ষমতার বাস্তব ও দ্রুত উন্নতির ফল। গত দশকে গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যয় প্রকৃত অর্থে বছরে প্রায় ৯ শতাংশ করে বাড়িয়েছে চীন। ২০২৩ সালে ক্রয়ক্ষমতার নিরিখে সরকারি ও উচ্চশিক্ষা খাতে সম্মিলিত গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়কেই ছাড়িয়ে গেছে সি চিন পিং–এর দেশটি। বিদেশে কর্মরত অনেক চীনা গবেষককেও ফিরিয়ে আনা হয়েছে দেশে।
গবেষকদের ফেরানোর সুফলও পেয়েছে দেশটি। চীন এখন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের চেয়ে বেশি প্রভাবশালী গবেষণাপত্র (সবচেয়ে বেশি উদ্ধৃত হওয়া গবেষণাপত্রগুলোর ১ শতাংশ) প্রকাশ করে। রসায়ন, প্রকৌশল ও ম্যাটেরিয়াল সায়েন্সের মতো ক্ষেত্রে এখন বিশ্বসেরা বিবেচনা করা হয় চীনকে। ব্যাপক হারে উচ্চমানের কম্পিউটার সায়েন্সে গবেষণাও চলছে সেখানে। ২০২৫ সালের সূচক অনুযায়ী চতুর্থ স্থানে আছে ঝেজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী চীনের অত্যাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কোম্পানি ডিপসিক–এর প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েনফেং।
ফাইল ছবিউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ র ষ ১০ এ প রক শ য ক তর
এছাড়াও পড়ুন:
আধুনিক টিভির যত আধুনিক সুবিধা
টেলিভিশনকে বাংলায় বলা হয় ‘দূরদর্শন’। মাত্র কয়েক বছর আগেও এটি সত্যিই ছিল দূরদর্শনের মাধ্যম—দূরের কোনো ঘটনা চোখের সামনে এনে দেওয়ার একটি যন্ত্র। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে টিভির সংজ্ঞা, উদ্দেশ্য ও ব্যবহার। প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতিতে আজকাল টিভি হয়ে উঠেছে একটি ‘স্মার্ট হাব’, যেখানে সিনেমা দেখা, গেম খেলা, ভিডিও কল করা, এমনকি বাড়ির অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইসও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আধুনিক টিভিগুলোর সুবিধা কেবল ছবি বা সাউন্ডে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এগুলো এখন ব্যবহারকারীদের এনে দিয়েছে একসঙ্গে বিনোদন, সংযোগ, যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণের নতুন এক এক্সপেরিয়েন্স।
স্মার্ট অপারেটিং সিস্টেমবর্তমান প্রজন্মের টিভিগুলো শুধু নাটক কিংবা সিনেমা দেখার একটি স্ক্রিন নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ স্মার্ট ডিভাইস। স্মার্ট টিভিতে অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) হিসেবে টাইজেন, অ্যান্ড্রয়েড টিভি, রোকু টিভি এবং ওয়েবওএস ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এই সিস্টেমগুলোর মাধ্যমেই বর্তমান যুগের টিভিগুলো হয়ে উঠছে আধুনিক থেকে আধুনিকতর। ব্যবহারকারীরা এখন চাইলেই স্মার্ট টিভিগুলোতে নেটফ্লিক্স, ইউটিউব, স্পটিফাই, অ্যামাজন প্রাইম কিংবা যেকোনো ওটিটি প্ল্যাটফর্মও সরাসরি উপভোগ করতে পারেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘অ্যাপ স্টোর ইন্টিগ্রেশন’। টিভিতেই এখন মোবাইলের মতো অ্যাপ ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যায়। ওয়েদার অ্যাপ, গেমস, নিউজ—এমনকি ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপও ব্যবহার করা যায় টিভির বড় স্ক্রিনে।
ভয়েস কন্ট্রোল: কথা বলেই নিয়ন্ত্রণরিমোট খোঁজার ঝামেলা এখন যেন অতীত। আগে টিভির সবকিছু রিমোট দ্বারা পরিচালিত হলেও এখনকার আধুনিক টিভিগুলোতে আছে ভয়েস কন্ট্রোল—যেখানে ব্যবহারকারীর ভয়েস দ্বারাই টিভি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই প্রযুক্তি বিক্সবি, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, অ্যালেক্সার মতো ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের মাধ্যমে কাজ করে। এর পাশাপাশি কিছু হাই-এন্ড মডেলে রয়েছে জেসচার কন্ট্রোল—যেখানে হাত নাড়লেই টিভি রেসপন্স করে। টিভি চালু-বন্ধ করা, চ্যানেল পরিবর্তন—এমনকি ভলিউম বাড়ানো-কমানোর মতো কাজও করা যায় হাতের ইশারায়। এ ক্ষেত্রে গ্যালাক্সি ওয়াচের কথা বলা যায়। এটি হাতের নড়াচড়াকে শনাক্ত করে এসব কমান্ড কার্যকর করে।
মাল্টি-ডিভাইস কানেকটিভিটি: এক স্ক্রিনে সব সংযোগবর্তমানে টিভি শুধু সম্প্রচার মাধ্যম নয়; এটি হয়ে উঠেছে একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল ইউনিট। মোবাইল ফোন, স্পিকার, ল্যাপটপ, গেমিং কনসোল—সব ডিভাইস এখন টিভির সঙ্গে সহজেই সংযুক্ত করা যায়।
বেশির ভাগ স্মার্ট টিভিতে রয়েছে ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ, এইচডিএমআই এআরসি, এয়ার প্লে, মিরাকাস্টসহ বিভিন্ন সুবিধা। ফলে ব্যবহারকারী চাইলে নিজের ফোনের ছবি, ভিডিও বা প্রেজেন্টেশন মুহূর্তেই বড় স্ক্রিনে শেয়ার করতে পারেন। সেই সঙ্গে আধুনিক টিভিগুলোতে রয়েছে গেমারদের জন্য এইচডিএমআই ২.১ পোর্ট এবং কম ইনপুট ল্যাগযুক্ত ডিসপ্লে, যা গেমিং এক্সপেরিয়েন্সকে করে তোলে আরও স্মুথ।
আধুনিক টিভিগুলো ব্যবহারকারীদের এনে দিয়েছে একসঙ্গে বিনোদন, সংযোগ, যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণের নতুন এক এক্সপেরিয়েন্স