অবশেষে সরে গেলেন তানভীর হায়দার, নতুন প্রক্টর শহীদ সরওয়ার্দী
Published: 21st, September 2025 GMT
দীর্ঘ আন্দোলন, অনশন ও সমালোচনার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব ছাড়লেন অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ। দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্তির দিন তিনি দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিলেন। আজ রোববার বেলা আড়াইটার দিকে প্রক্টর কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, ‘এক বছর মেয়াদ পূর্ণ করা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। কারণ, আগে যাঁরা প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁরা মেয়াদ পূরণ করতে পারেননি। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কোনো প্রক্টরিয়াল বডিরই এক বছর দায়িত্ব পালন করা ঠিক হবে না। এক বছর অনেক লম্বা সময়। আমাদের দেশে এখনো প্রক্টরিয়াল বডির জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেই।’
আরও পড়ুনউপাচার্যের আশ্বাসে ৫২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন ৯ শিক্ষার্থী১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক আন্দোলন হয়েছে। ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটসহ একাধিক ছাত্রসংগঠন প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেছে। আন্দোলনের কারণে পদত্যাগ করছেন কি না, এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ। তিনি বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নিয়েছিলাম এক বছরের জন্য। সেটারই এক বছর পূর্ণ হলো। উপাচার্যের সঙ্গে এই বিষয়ে যোগাযোগ করতে পারেন। আমি আমার মেয়াদ পুনরায় বৃদ্ধি করব না; বাকিরা বৃদ্ধি করবেন কি না, সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।’
অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর। সে হিসাবে আজ তাঁর মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর আগে গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট রাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে প্রক্টরিয়াল বডির দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে অভিযোগ তোলেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। এর পর থেকে প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিতে একাধিক কর্মসূচি পালিত হয়। এ ছাড়া ইসালামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ এনে শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরাও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেছেন। সম্প্রতি প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিসহ সাত দাবিতে ৯ সেপ্টেম্বর অনশন করেন ৯ শিক্ষার্থী। পরে উপাচার্যের আশ্বাসে ৫২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙেন। অবশ্য শুধু এবারই নয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেই প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি উঠেছে। ছাত্রীদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য করার অভিযোগে ওই মাস থেকেই পদত্যাগ দাবি করে আসছে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।
আরও পড়ুনছাত্রীদের সহকারী প্রক্টরের হুঁশিয়ারি, রাত ১০টার মধ্যে হলে না ঢুকলে আসন বাতিল০১ আগস্ট ২০২৫নতুন প্রক্টর হোসেন শহীদ সরওয়ার্দীএদিকে সদ্য সাবেক প্রক্টর দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার পরই নতুন প্রক্টর নিয়োগ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এই পদে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের রাজনৈতিক সংগঠন সাদা দলের সদস্য। দলটি ক্যাম্পাসে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী হিসেবে পরিচিত। তবে শুধু বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম নামে আলাদা সংগঠন রয়েছে। ওই সংগঠনের নেতাদের দাবি, সাদা দল শুধু জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন।
আজ বিকেল চারটার দিকে প্রথম আলোকে নতুন প্রক্টর নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ দুই বছরের জন্য গবেষণা ও প্রকাশনা দপ্তরের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী ছাড়াও প্রক্টরিয়াল বডিতে আরেকজন সদস্য যুক্ত হয়েছেন। তিনি হলেন রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আককাছ আহমেদ। আর বাকি প্রক্টরিয়াল বডি একই রকম থাকবে।
আরও পড়ুন‘অনুগত’ ছাত্রদের সহকারী প্রক্টর বললেন, ‘চাপ দাও, দাবি আদায় করো’২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পদত য গ র দ ব ত ব শ বব দ য দ র আর ফ এক বছর করব ন বছর র স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
পোষ্য কোটা ফেরানোর প্রতিবাদে কাফনের কাপড় জড়িয়ে আমরণ অনশনে এক শিক্ষার্থী
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এক শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেছেন। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তিনি মাথা ও শরীরে কাফনের কাপড় জড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এ কর্মসূচি শুরু করেন।
ওই শিক্ষার্থীর নাম আসাদুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অনশনের সময় তাঁর পেছনে রাখা ব্যানারে লেখা ছিল—‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা নামক বিষফোঁড়া পুনর্বহাল রাখার প্রতিবাদে আমরণ অনশন ধর্মঘট’।
আসাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোষ্য কোটা নামক বিষফোঁড়া মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এটাকে নির্মূল করার জন্যই আমার এ কর্মসূচি। জুলাই আন্দোলনে যে কোটার বিরুদ্ধে এত রক্তপাত, এত মৃত্যু, স্বৈরশাসকের পতন হলো, সেই কোটা আবার ফিরেছে। আমি কোটার পক্ষে নই। যদি কোটা দেওয়া হয়, সেটা কৃষক-শ্রমিক-মজুরের সন্তানদের দেওয়া হোক। এই কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমার অনশন চলবে। আমি কোনো খাবার-পানি খাব না। এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কেউ আসেনি। রাতে এখানেই অবস্থান করব।’
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১০টি শর্তে পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনের সভাপতিত্বে সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ভর্তি উপকমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই প্রতিবাদ শুরু করেন। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চলে। আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পরও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, পোষ্য কোটা একটি মীমাংসিত ইস্যু। এটি অন্যায্য ও অযৌক্তিক একটি কোটা। তাঁরা প্রয়োজনে রক্ত দেবেন, তবু ক্যাম্পাসে এ কোটা ফিরতে দেবেন না। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন ঘিরে যখন ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তখন এ সিদ্ধান্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না বলে তাঁরা জানান।
কোটা পুনর্বহালের বিষয়ে শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘোষিত ২১ সেপ্টেম্বরের রাকসু নির্বাচনে শাটডাউন কর্মসূচির প্রভাব পড়ার শঙ্কা ছিল। এ জন্য একাডেমিক কাউন্সিলের ভর্তি উপকমিটি এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা যা চান, সেটাই হবে। কারণ, তাঁরা শান্তিপূর্ণ একটি বিশ্ববিদ্যালয় চান।