বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীরা দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চান বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব এ কে এম আলী নেওয়াজ। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সেই লক্ষ্যে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আজ বুধবার দুপুরে বরিশালে কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে এ কে এম আলী নেওয়াজ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। ইসির সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগীদের ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও এর চ্যালেঞ্জসমূহ’ শীর্ষক এ মতবিনিময় সভা হয়। সভায় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতেরা অংশ নেন। এতে মাঠপর্যায়ের শীর্ষ নির্বাচন কর্মকর্তারাও যোগ দেন।

বুধবার দুই দিনের সফরে ইউএনডিপি প্রতিনিধি, সুইডেন, নরওয়ে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার বরিশালে আসেন। তাঁরা সফরের প্রথম দিন ইসির মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ, তা মোকাবিলায় কী ধরনের সহযোগিতা করতে পারে, সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়। আজ বেলা একটা থেকে দুইটা পর্যন্ত বরিশালের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ সভা হয়। তবে বৈঠক শেষে কোনো রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি।

সভায় উপস্থিত একটি সূত্র জানায়, বৈঠকে ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন আরাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভা শেষে তাঁরা বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসির অতিরিক্ত সচিব এ কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, ‘বিদেশিরা বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে কমিশনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে আইন সংস্কার ও প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সহায়তা প্রসঙ্গও বৈঠকে আলোচনায় স্থান পায়। আমরা কূটনীতিকদের আশ্বস্ত করে বলেছি, বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। সেই লক্ষ্যে কমিশন সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।’

ভবিষ্যতে নির্বাচন একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে, এমন প্রত্যাশা করেছেন রাষ্ট্রদূতেরা। নির্বাচন কমিশনের এই অগ্রযাত্রায় তাঁরা শামিল হয়ে পাশাপাশি থেকে কাজ করার জন্য আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানান এ কে এম আলী নেওয়াজ। তিনি বলেন, ‘আগামী ত্রয়োদশ নির্বাচনের জন্য একটি মাস নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা নির্বাচনটাকে সবার জন্য উন্মুক্ত রেখেছি। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করে যাওয়া হচ্ছে।’

ইসির অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, ‘বিদেশি রাষ্ট্রদূতেরা বিশেষ করে জানতে চেয়েছেন, নারী ভোটারদের কীভাবে বেশি অংশগ্রহণ করানো যায়, সে বিষয়ে আমরা কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমরা তাঁদের বলেছি, এ বিষয়ে আমরা বদ্ধপরিকর। তাঁরা আমাদের কাছে নির্বাচনের খুঁটিনাটি নানা বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তাঁরা আমাদের বক্তব্যে সন্তুষ্ট হয়েছেন। ভবিষ্যতে এই নির্বাচন একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে, সে ব্যাপারে তাঁরা আশ্বস্ত হয়েছেন।’

দুই দিনের সফরে কূটনীতিকেরা প্রথম দিনে নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও বরিশালের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করবেন বলে জানা গেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য লক ষ য অব ধ ও বর শ ল

এছাড়াও পড়ুন:

জাতিসংঘে আওয়ামী লীগের চিঠিতে কাজ হবে না: তৌহিদ হোসেন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারিগরি সহযোগিতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ জাতিসংঘে যে চিঠি দিয়েছে, তাতে কোনো কাজ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ঢাকা দপ্তরে পাঠানো চিঠির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি এ কথা বলেন।

তৌহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জাতিসংঘকে দেওয়া আওয়ামী লীগের এ ধরনের চিঠিতে কোনো কাজ হবে না।

প্রসঙ্গত বাংলাদেশে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নয়’ এমন নির্বাচনে সহযোগিতা থেকে সরে আসার অনুরোধ জানিয়ে ১ নভেম্বর বাংলাদেশে ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধিকে চিঠি পাঠান আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি ওই চিঠির অনুলিপি জাতিসংঘের মহাসচিব, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি, জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদসহ জাতিসংঘের কাজে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় দিয়েছেন।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকছে না আওয়ামী লীগের। জাতিসংঘে পাঠানো দলটির ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত হওয়ার আগপর্যন্ত আমরা জাতিসংঘ এবং ইউএনডিপির প্রতি নির্বাচনী সহযোগিতা স্থগিতের আহ্বান জানাই। আমরা বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে জাতীয় সংলাপ ও সমঝোতাকে উৎসাহিত করার এবং যেকোনো নির্বাচনী সম্পৃক্ততার মূল ভিত্তি হিসেবে মানবাধিকার ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’

‘বাংলাদেশে ইউএনডিপির নির্বাচনী সহযোগিতা এবং জাতিসংঘ সনদের নিরপেক্ষতা, রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও মৌলিক অধিকারের মূলনীতি লঙ্ঘনের বিষয়ে উদ্বেগ’ শিরোনামে ইউএনডিপিকে চিঠি পাঠায় আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশে ইউএনডিপির নির্বাচনী সহযোগিতা, ব্যালট প্রজেক্ট এবং আসন্ন নির্বাচনের বিষয়ে সংস্থার প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার বিষয়ে আমরা গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করছি যে নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলকও নয়, বিশ্বাসযোগ্যও নয়। এ ধরনের সম্পৃক্ততা আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘের মূলনীতি এবং অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রসারের ক্ষেত্রে ইউএনডিপির ম্যান্ডেট লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি করে।’

প্রসঙ্গত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য হবে কি না, এ প্রশ্ন তোলা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার অভিযোগ রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বৈষম্যবিরোধী আইনের অধ্যাদেশ জারির দাবি দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের
  • জাতিসংঘে আওয়ামী লীগের চিঠিতে কাজ হবে না: তৌহিদ হোসেন