ভিনিসিয়ুসকে জীবনের ‘অন্যতম সুন্দর শট’ শিখিয়েছেন মদরিচ
Published: 24th, September 2025 GMT
সম্প্রতি লা লিগায় বেঞ্চে বসানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করে সমালোচনার মুখে ছিলেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। সেই সমালোচনার জবাব দেওয়ার জন্য ভিনিসিয়ুস হয়তো ভেতরে–ভেতরে তেতে ছিলেন।
সেই জবাবটা বেশ ভালোভাবেই দিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে গতকাল লেভান্তের বিপক্ষে রিয়াল মাদ্রিদের জেতা ম্যাচে যে গোলটি করেছেন, সেটা অনেক দিন মনে রাখার মতো।
ম্যাচের ২৮ মিনিটের খেলা চলছিল তখন। ডান প্রান্তে লেভান্তের বক্সের বাইরে বল পান ফেদে ভালভের্দে। আলতো পাসে বল বাড়ান বক্সে থাকা ভিনিসিয়ুসের উদ্দেশে। ভিনির সামনে তখন লেভান্তের দুই খেলোয়াড়। তাঁদের মাঝ দিয়ে বুটের বাইরের অংশের ব্যবহারে শট নেন ভিনি। বলটা হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে বাঁক নিয়ে দূরের পোস্ট দিয়ে জড়িয়ে যায় জালে। গোল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎসবে মেতে ওঠেন ভিনিসহ রিয়ালের ফুটবলাররা। ম্যাচটি ৪–১ গোলে জিতেছে রিয়াল।
আরও পড়ুনদূরন্ত এমবাপ্পের ডানায় চড়ে উড়ছে রিয়াল১৫ ঘণ্টা আগেভিনির দুর্দান্ত এই লক্ষ্যভেদের পরই এখন আলোচনার কেন্দ্রে তাঁর করা গোলটি। ভিনিসিয়ুস যে ধরনের শটে গোল করেছেন, সেটা বলা হয় ‘ট্রিভেল্লা’ শট। এমন শট বা পাসের ক্ষেত্রে খেলোয়াড়েরা পায়ের বাইরের অংশ (আউট সাইড অব দ্য ফুট) ব্যবহার করেন। এতে বল বাঁক খেয়ে খানিকটা দিক বদলে ফেলে, যা প্রতিপক্ষকে অনেক সময় বিভ্রান্ত করে। গতকাল রাতে ভিনিসিয়ুসের শটটাও ছিল তেমনই একটি শট।
রিয়ালে থাকতে লুকা মদরিচ এই ট্রিভেল্লা শটে প্রতিপক্ষকে বোকা বানাতেন। ম্যাচ শেষে গতকাল এই শটটি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মদরিচের প্রসঙ্গ টেনেছেন ভিনি। রিয়াল মাদ্রিদ টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মজা করে ভিনি বলেছেন, এই শট তিনি মদরিচের কাছ থেকে শেখেন, ‘মদরিচ আমাকে শিখিয়েছে। আমরা চাপ সামলে, বল দখলে রেখে ভালো খেলেছি। এভাবে খেলে আমাদের জিততে পারব। আমি বাইরে (পায়ের বাইরের অংশে) ভালো, আশা করি এটা চালিয়ে যেতে পারব। আমার মনে হয় এটা আমার সবচেয়ে সুন্দর শটগুলোর একটি।’
দলের জয় নিয়ে ভিনিসিয়ুস যোগ করেন, ‘(জয়ের) মূল চাবিকাঠি হলো রক্ষণ, ঐক্য আর টিমওয়ার্ক। আমরা যদি এভাবে খেলতে থাকি, তাহলে এ মৌসুমে অবশ্যই সফল হতে পারব।’
আরও পড়ুনরিয়ালে সর্বোচ্চ বেতন দাবি ভিনিসিয়ুসের, এখন কত পান২৩ জুলাই ২০২৫রিয়াল পরের ম্যাচ খেলবে নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে। মাদ্রিদ ডার্বির এই ম্যাচ নিয়ে ভিনি বলেছেন, ‘আমরা ডার্বির জন্য ভীষণ মুখিয়ে আছি। এখন একটু বিশ্রাম নিতে হবে আর এই জয়ের আনন্দ উপভোগ করতে হবে। আশা করি শনিবারও আমরা জিতব।’
ম্যাচ শেষে ভিনিকে নিয়ে রিয়াল কোচ জাবি আলোনসো বলেন, ‘ভিনি খুব পূর্ণাঙ্গ ও ভালো একটি ম্যাচ খেলেছে। আমি তাকে নিয়ে আনন্দিত।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মদর চ
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংস্কারের প্রতি প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে
বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের অবনতির পর্বে, গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। এ জন্য সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের প্রতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে।
চলতি মাসে বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়া ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার ফ্রান্সের স্ত্রাসবুর্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দপ্তরে প্রতিবেদনটি পেশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন উপস্থাপনের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সফরে আসা প্রতিনিধিদলের প্রধান মুনির সাতোরি।
মুনির সাতোরি বলেন, ‘আমাদের সফরের দুটি উদ্দেশ্য ছিল। একটি হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করা ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে মানবাধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, প্রায় বিস্মৃত হতে যাওয়া রোহিঙ্গাদের পাশে থাকা। রোহিঙ্গা সংকট যাতে হারিয়ে না যায়, সে জন্য এটি ইইউর রাজনৈতিক এজেন্ডায় আবারও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকাজ নিয়ে মুনির সাতোরি বলেন, ‘এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতার প্রস্তাব করেছি।’
প্রতিনিধিদলের সদস্য ইজাবেল উইসেলার-লিমা বলেন, যখন বিশ্বে নাটকীয়ভাবে গণতন্ত্র অবনতির পথে, তখন বাংলাদেশ পথ পরিবর্তন করে দেখিয়েছে যে গণতন্ত্রের পথে যাওয়া যায়। তারা চেষ্টা করছে গণতন্ত্রের দিকে যাওয়ার। আর এ জন্য সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এটা আশা করা জরুরি যে সামনে নির্বাচন হবে এবং তা প্রতিযোগিতামূলক হবে, যা হওয়া উচিত। অন্তর্বর্তী সরকার এ জন্য চেষ্টা করছে।
রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে ইজাবেল বলেন, ‘কক্সবাজার বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির। সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজা সংকটের কারণে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি মানুষ ভুলে যাচ্ছে। এ সংকট আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠেছে। কারণ, মিয়ানমার তাদের দায়িত্ব নিচ্ছে না। আর বাংলাদেশও দরিদ্র দেশ। বাংলাদেশের নিজেরই বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে। ফলে রোহিঙ্গাদের জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিয়ে নেওয়া তাদের জন্য সম্ভব নয়। রোহিঙ্গা সংকটের এখনকার চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বাংলাদেশ বর্তমানে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে অবস্থায় রয়েছে।’
প্রতিনিধিদলের আরেক সদস্য আরকাদিউজ মুলারজিক বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরে সবচেয়ে বেশি মানবিক অনুদান আসে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো থেকে, যদিও আগে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা দিত। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রতি প্রতিশ্রুতি খুবই নগণ্য, এটি আশ্চর্যজনক এবং গ্রহণযোগ্য নয়। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বদলে অনেক দূরে থাকা ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোকে এর দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বড় অংশগ্রহণকারী হওয়া উচিত ছিল। বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গেও কথা বলা উচিত। কারণ, বর্তমানে আমরা ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি নিয়ে দর–কষাকষি করছি।’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিনিধিদলের সদস্য ক্যাটারিনা ভিয়েরা বলেন, এটি পরিষ্কার যে বাংলাদেশ ইতিহাসে দেশটি বর্তমানে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটি একটি সুযোগ সত্যিকারের অগ্রগতির। শিগগিরই হয়তো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের ভেতরে গ্রহণযোগ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সবাই নির্বাচনটি স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দেখতে চায়। এ বিষয়গুলো শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্বের থেকে আসেনি, এসেছে নাগরিক সমাজ, ছাত্র ও যুব আন্দোলনের পক্ষ থেকেও, যাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। তারা নিজেদের মধ্যে সংলাপের মধ্যে রয়েছে। যদিও অনুতাপের বিষয় হচ্ছে ধর্মীয়, লিঙ্গ ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু এবং নারীদের এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ নেই। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সমাজ গঠনে এখানে উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।
আরকাদিউজ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে সংস্কারে উৎসাহ, যারা সংস্কারে কাজ করছেন, তাঁদের প্রতি সংহতি প্রকাশ ও গণতান্ত্রিক কাঠামোয় গঠনমূলক সহযোগিতা করে ইইউ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশ্ব যখন গণতন্ত্রের উল্টো পথে যাত্রা করছে, তখন বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের আশা করার অবকাশ রয়েছে। গণতন্ত্রের পথে আরও অনেক কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় বাংলাদেশ সামনে দিকে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেবে বলে মনে করি। এটি এখন নির্ভর করছে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের প্রতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে।’
১৬ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার উপকমিটির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ সফর করে। এ সময়ে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, বেসরকারি সংস্থা, নাগরিক সমাজ সংগঠন, শ্রমিক প্রতিনিধি এবং মাঠপর্যায়ে কর্মরত বহুপক্ষীয় সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে।
এ ছাড়া প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরও পরিদর্শন করে।