আনুপাতিক হারে ভোটের (পিআর) দাবি সামনে এনে জামায়াতে ইসলামী মাঠে আন্দোলনে নেমে বিএনপি নেতাদের ব্যস্ত রাখলেও নিজেরা বর্তমান পদ্ধতিতেই নির্বাচনী প্রস্তুতিতে এগিয়ে আছে। দেশের নির্বাচনী আসনের প্রায় সব কটিতে তারা সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাদের পোস্টারও টানানো হচ্ছে কোথাও কোথাও। স্থানীয় নেতা–কর্মীরা সেটি সানন্দে মেনে নিয়েছেন এবং সম্ভাব্য প্রার্থীর পক্ষে জোর প্রচারও চালাচ্ছেন।

প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়েও তাঁরা আগের মতো—যিনি যত প্রবীণ, তিনি বড় হকদার; এই নীতির ব্যতিক্রম ঘটিয়ে দলটি বেশ কিছু আসনে তরুণ নেতাদের বেছে নিয়েছে। এ কারণে প্রবীণ কয়েকজন নেতা বাদ পড়লেও কোনো প্রতিবাদ বা আপত্তি ওঠেনি। এটাই হচ্ছে দলটির সাংগঠনিক শৃঙ্খলা। একসময় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিতেও এই শৃঙ্খলা বজায় ছিল। এখন সেখানেও গ্রুপিং, ভাগাভাগি।

আরও পড়ুনবিএনপি যখন সবচেয়ে বেশি অপতথ্যের শিকার৩১ আগস্ট ২০২৫

অন্যদিকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী দল হিসেবে পরিচিত বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন করার আগে দলীয় সংঘাত মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে বলা হলো, এ পর্যন্ত সাত হাজার নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কতটি সংঘাতের ঘটনায় কতজনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেই হিসাব দিয়ে বিএনপি নেতৃত্ব আত্মতৃপ্তি পেতে পারেন; কিন্তু মানুষ দেখতে চায় দলের নেতা–কর্মীদের সংঘাত বন্ধ হচ্ছে কি না। শৃঙ্খলা আনা যাচ্ছে কি না।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, গত বছরের আগস্ট থেকে এ বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত আট মাসে ৭৬ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে কেবল বিএনপির অভ্যন্তরীণ সহিংসতায় মারা গেছেন ৫৮ জন। মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর হিসাব করলে এই সংখ্যা শতকের ঘর ছাড়িয়ে যাবে।

এ ক্ষেত্রে বিএনপির নেতারা যেসব দোহাই দেন, সেটি ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগের নেতারাও দিতেন। তঁাদের বড় দল, বিশাল কর্মী বাহিনী। দু–চারটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতেই পারে; কিন্তু ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর কী হবে? তারা কার কাছে প্রতিকার চাইবে? এখানে বলার সুযোগ নেই যে অনুপ্রবেশকারীরা এসে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

এখানেও বিএনপি পিছিয়ে আছে। জামায়াতের এ কৌশল মোকাবিলায় নারী ভোটারদের লক্ষ্য করে বিএনপিও নারীসম্পৃক্ত কর্মসূচি নিচ্ছে। ১৪ অক্টোবর খুলনা থেকে তাদের এই কর্মসূচি শুরু হবে। কিন্তু বিএনপি নেতৃত্ব এত দিন সময় নিল কেন? মাঠে তো তাঁরাই নির্বাচনের কথা বেশি বলছেন। কিন্তু নির্বাচনের প্রস্তুতিতে কেন তাঁরা পিছিয়ে?

এখানে তিনটি উদাহরণ দিই। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ২৯ সেপ্টেম্বর নরসিংদী সদরের চরাঞ্চলে আবারও বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে যুবদলের স্থানীয় এক নেতা নিহত হয়েছেন। সেপ্টেম্বর মাসে ওই এলাকায় এ নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপি যখন নির্যাতন–নিপীড়নের শিকার, তখনো অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নরসিংদীতে দলীয় নেতা–কর্মী মারা গেছেন।

নরসিংদীর পাশের জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পরিস্থিতিও কম উদ্বেগজনক নয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানাকে ‘বহিরাগত’ উল্লেখ করে তাঁকে ঠেকাতে একজোট হয়েছেন দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশী সাত নেতা। আগামী নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে প্রার্থী হতে চান বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা। সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি চট্টগ্রাম–৬ (রাউজান) আসনে। সেখানে এখন পর্যন্ত ১৫ জন খুন হয়েছেন। আসনটিতে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও উত্তর জেলা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার। এই দুই নেতার অনুসারীরাই সেখানে সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন। অথচ আওয়ামী লীগ আমলে উভয় পক্ষের অনুসারীরাই নির্যাতন–নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, মামলা–গ্রেপ্তারের কারণে দীর্ঘদিন ঘরছাড়া ছিলেন।

আরও পড়ুনবিএনপিই কি তবে মধ্যপন্থী রাজনীতির শেষ ভরসা২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কেবল নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রাউজান নয়; দেশের অনেক জেলা–উপজেলায় যে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল, তার পেছনেও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তাঁরা ভাবেন পেশিশক্তি দেখাতে পারলেই মনোনয়ন পেয়ে যাবেন। এর সমাধান হতে পারত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রার্থী মনোনয়ন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সর্বস্তরের দলের নেতৃত্ব গঠন। বিএনপির নেতারা বলেন, আওয়ামী দুঃশাসনের কারণে তাঁরা ঠিকমতো সম্মেলন করতে পারেননি। কিন্তু মুক্ত স্বাধীন ১১ মাসে তাঁরা কতটি উপজেলা, জেলা, পৌরসভা ও মহানগর কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে করেছেন, এই প্রশ্ন করা নিশ্চয়ই অযৌক্তিক হবে না।

প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে বিএনপি নেতৃত্ব এখন বলছেন, যেসব আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি বা প্রার্থিতা নিয়ে সাংঘাতিক বিরোধ রয়েছে, যা মিটমাট না হলে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার আশঙ্কা আছে, এমন এলাকাগুলোর দিকেই তাঁরা নজর দিচ্ছেন। সে জন্য স্থায়ী কমিটির কয়েকজন নেতাকে বিভাগভিত্তিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা দলের একক প্রার্থী নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আসনভিত্তিক সম্ভাব্য প্রার্থীদের একসঙ্গে গুলশানের কার্যালয়ে ডেকে কথা বলছেন। কাজটি অনেক আগেই করা যেত। দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বেশ সতর্কতার সঙ্গে বলেছেন, এটি চূড়ান্ত তালিকা নয়; বরং নির্বাচনপূর্ব ‘প্রাক্‌–রাজনৈতিক প্রক্রিয়া’। যে নামেই ডাকা হোক না কেন, সেটি দলীয় কোন্দল মেটাবে কি না বড় প্রশ্ন।

বিএনপির একাধিক নেতা জানান, এবার প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় দলটি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে মাঠপর্যায়ে সাংগঠনিক দক্ষতা, আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং এলাকার জনসম্পৃক্ততাকে। অতীতে আর্থিক সামর্থ্য ও প্রভাবশালীদের ওপর নির্ভর করার প্রবণতা থাকলেও এবার তৃণমূল নেতাদের মতামতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে। নীতিগত সিদ্ধান্ত আর কার্যকারিতার মাঝখানে যে বিরাট ফারাক আছে, সেটিও তাঁদের মনে করিয়ে দিই। এমন অনেক আসন আছে, যেখানে বিএনপির একাধিক বড় নেতা আছেন, সেসব আসনে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করবেন, সেটিও ভাবার বিষয়। বিএনপি তো এখন ক্ষমতার কাছাকাছি। ২০১৮ সালে নিগৃহীত অবস্থায়ও মনোনয়ন নিয়ে মারামারি, মহাসচিবের বাড়িতে হামলার ঘটনাও ঘটতে দেখেছি। ফলে নেতাদের আশ্বাস ও জরিপ কতটা কাজে লাগবে, সেসব ভেবে দেখার বিষয়।  

আরেকটি সমস্যা হলো, যেসব আসন বিএনপি সহযোগীদের ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছে, সেসব আসনে দলের নেতাদের সামাল দিতে পারবে কি না? ইতিমধ্যে বেশ কিছু আসনে সহযোগীদের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। সহযোগী একটি দলের প্রধান আক্ষেপ করে জানিয়েছেন, ‘তাঁকে নিজ এলাকায় সমাবেশ করতে লন্ডনে ফোন করতে হয়েছে। স্থানীয় বিএনপির নেতারা এতটাই বেপরোয়া।’

আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নারী ভোটারদের লক্ষ্য করে জামায়াত সারা দেশে নিজেদের মহিলা বিভাগের কর্মীদের মাঠে নামিয়েছে। কুমিল্লার বরুড়া থেকে এক সাংবাদিক বন্ধু জানান, সেখানে ঘরে ঘরে জামায়াতের নারী কর্মীরা প্রচারে নেমেছেন। তাঁরা প্রতিটি বাড়িতে যাচ্ছেন, তাঁদের সমস্যার কথা জানতে চাইছেন। আর পুরুষ কর্মীরা হাটবাজারে সমাবেশ করছেন, মসজিদে মুসল্লিদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন।

এখানেও বিএনপি পিছিয়ে আছে। জামায়াতের এ কৌশল মোকাবিলায় নারী ভোটারদের লক্ষ্য করে বিএনপিও নারীসম্পৃক্ত কর্মসূচি নিচ্ছে। ১৪ অক্টোবর খুলনা থেকে তাদের এই কর্মসূচি শুরু হবে। কিন্তু বিএনপি নেতৃত্ব এত দিন সময় নিল কেন? মাঠে তো তাঁরাই নির্বাচনের কথা বেশি বলছেন। কিন্তু নির্বাচনের প্রস্তুতিতে কেন তাঁরা পিছিয়ে?

সোহরাব হাসান সাংবাদিক ও কবি

[email protected]

মতামত লেখকের নিজস্ব

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় স প ট ম বর প রক র য় র লক ষ য ব এনপ র সব আসন স ঘর ষ কর ম র হয় ছ ন গঠন ক বলছ ন আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ফাঁকা রাখা ঢাকার ৭টি আসন নিয়ে কী চিন্তা বিএনপিতে

ঢাকার ২০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ফাঁকা রাখা ৭টি আসনে প্রার্থিতা এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এসব আসনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জোট ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এ রকম দুটি দলের দুজন নেতাকে ঢাকায় আসন ছাড় দিচ্ছে বিএনপি।

আরেকটি আসনে ইসলামপন্থী একটি দলের শীর্ষ নেতার কথা ভাবা হচ্ছে। বাকি চারটি আসনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

৩ নভেম্বর ২৩৭টি সংসদীয় আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে বিএনপি। অবশ্য এক দিন পরই মাদারীপুর-১ আসনে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন স্থগিত করা হয়। জাতীয় সংসদের আসনসংখ্যা ৩০০ (সংরক্ষিত নারী আসন বাদে)।

এখন পর্যন্ত ৬৩টি আসনে প্রার্থিতার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপি। এর মধ্যে ঢাকার ৭টি আসন রয়েছে। আসনগুলো হলো রাজধানীর লালবাগ, চকবাজার, বংশাল, কামরাঙ্গীরচর (আংশিক) ও কোতোয়ালি (আংশিক) এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৭ আসন; সবুজবাগ, খিলগাঁও ও মুগদা এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৯; ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, কলাবাগান ও হাজারীবাগ এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১০; মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেরেবাংলা নগর (আংশিক) নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৩; ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ও গুলশান-বনানী এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭; বৃহত্তর উত্তরা ও বিমানবন্দর এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৮ এবং ধামরাই উপজেলা নিয়ে গঠিত ঢাকা-২০ আসন।

জোট ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এ রকম দুটি দলের দুজন নেতাকে ঢাকায় আসন ছাড় দিচ্ছে বিএনপি।

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, ঢাকা-৭ আসনটি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হককে ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা আছে। তবে এখন পর্যন্ত মামুনুল হকের সম্মতি পাওয়া যায়নি। যদিও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বর্তমানে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনসহ আটটি দলের সঙ্গে পাঁচ দফা দাবির (অন্যতম দাবি হচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করা) আন্দোলনে রয়েছে। এরপরও মামুনুল হকের সঙ্গে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা যোগাযোগ রাখছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ঢাকা-১৭ আসনে বিএনপি ছাড় দিচ্ছে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমানকে (পার্থ)। বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। নিজের নির্বাচনী এলাকায় পোস্টার লাগিয়ে প্রার্থিতা জানান দিয়েছেন আন্দালিভ রহমান।

একইভাবে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজকেও আসন (ঢাকা-১৩) ছাড় দিচ্ছে বিএনপি। তিনি ইতিমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় পোস্টার লাগিয়ে প্রচার শুরু করেছেন।

ঢাকা-১৭ আসনে বিএনপি ছাড় দিচ্ছে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমানকে (পার্থ)। বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। নিজের নির্বাচনী এলাকায় পোস্টার লাগিয়ে প্রার্থিতা জানান দিয়েছেন আন্দালিভ রহমান।এক পরিবার এক প্রার্থী ‘নীতি’

ঢাকা-৯ আসনেও প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। এই আসনে জোটের নাকি দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, সেটিও নিশ্চিত নয়। এ আসনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস মনোনয়ন চান। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী। মির্জা আব্বাসকে ঢাকা-৮ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

এবার এক পরিবার থেকে একজনকে প্রার্থী করার ‘নীতি’ নিয়েছে বিএনপি। এ কারণে আফরোজা আব্বাস বাদ পড়েছেন, দলে এমন আলোচনা আছে। যদি দু-একজনের ক্ষেত্রে এই নীতি শিথিল করা হয়, তাহলে আফরোজা আব্বাস মনোনয়ন পেতে পারেন। অথবা দলের অন্য কোনো নেতাকেও প্রার্থী করা হতে পারে।

এই আসনে নির্বাচন করতে চান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা। এনসিপির সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হলে তাঁকে বিএনপি সমর্থন দিতে পারে, এমন আলোচনাও আছে।

ঢাকা-১০ ও ২০ আসন

ঢাকা-১০ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনায় আছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম ও শেখ রবিউল আলম (রবি)। দুজনের মধ্যে অসীম বিএনপির চেয়ারপারসনের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক সহায়ক কমিটির সদস্য, অন্যদিকে রবিউল বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য।

নাসির উদ্দিন অসীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার আসনের ৪২ শতাংশ ভোটার আমাদের নোয়াখালী অঞ্চলের। আশা করি, মনোনয়নের ক্ষেত্রে দল এ বিষয়টি বিবেচনায় নেবে।’

এই আসনে (ঢাকা-১০) ভোটার হওয়ার আবেদন করেছেন (৯ নভেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতা হলে উপদেষ্টার পদ ছেড়ে এই আসনে তিনি প্রার্থী হতে পারেন, এমন আলোচনাও আছে। তবে তিনি এই আসন থেকেই নির্বাচন করবেন কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।

৯ নভেম্বর ধানমন্ডি থানা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভোটার হওয়ার আবেদন জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেছিলেন, ‘এখন পর্যন্ত পরিকল্পনা স্বতন্ত্র নির্বাচন করার। তারপর দেখা যাক।’

অন্যদিকে ঢাকা-২০ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী চারজন। তাঁরা হলেন ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তমিজ উদ্দিন, জাতীয়তাবাদী যুবদলের ঢাকা জেলা সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস (মুরাদ), জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ ও ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান (অভি)। তাঁদের মধ্যে তমিজ উদ্দিন ও ইয়াসিন ফেরদৌসকে নিয়ে আলোচনা বেশি হচ্ছে।

আমার নামে ৩২৯টি মামলা। দুটি মামলায় সাজা হয়েছে। আড়াই বছর জেলে ছিলাম। প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই দলের শীর্ষ নেতৃত্বে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নেবে।এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনএকজনকে ঠেকাতে তিন নেতার ‘জোট’

বৃহত্তর উত্তরার ঢাকা-১৮ আসনটি জোটের শরিক, নাকি দলীয় প্রার্থী দেওয়া হবে, সে সিদ্ধান্তে এখনো নিতে পারেনি বিএনপি। এই আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। রাতের ভোট হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সেই নির্বাচনে তিনি বড় ব্যবধানে হেরে গেলেও ৭২ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। এবারও তাঁকে সেখানে প্রার্থী করা হবে কি না, নিশ্চিত নয়। এই আসনে এবারও বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা কোনো দলের নেতাকে প্রার্থী করার বিষয়টি আলোচনায় আছে।

এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে চারজনকে নিয়ে আলোচনা বেশি। তাঁরা হলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান (সেগুন) ও এম কফিল উদ্দিন এবং সদস্যসচিব মোস্তফা জামান। ২০২০ সালের উপনির্বাচনে এই আসনে (সাহারা খাতুনের মৃত্যুর পর) বিএনপি প্রার্থী করেছিল এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনকে। ওই নির্বাচনেও কেন্দ্র দখলসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল।

এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার নামে ৩২৯টি মামলা। দুটি মামলায় সাজা হয়েছে। আড়াই বছর জেলে ছিলাম। প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই দলের শীর্ষ নেতৃত্বে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নেবে।’

স্থানীয়ভাবে আমরা যারা আছি, তারা দেখলাম একটা লোক এখানে এসেছে। ওই ব্যক্তির লোকজনের বিরুদ্ধেই এলাকায় নানা ধরনের অভিযোগ। সে জন্য আমরা এক হয়েছিএম কফিল উদ্দিন

স্থানীয় বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের ১০ জন নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহত্তর উত্তরায় বিএনপিতে বিভক্তি রয়েছে। নির্বাচন ঘিরে সেটি আরও বেড়েছে। এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনকে ঠেকাতে অন্য তিন মনোনয়নপ্রত্যাশী একজোট হয়েছেন। সম্প্রতি এই তিনজন এক মঞ্চে বক্তৃতাও করেছেন।

তিনজন মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে এম কফিল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে আমরা যারা আছি, তারা দেখলাম একটা লোক এখানে এসেছে। ওই ব্যক্তির লোকজনের বিরুদ্ধেই এলাকায় নানা ধরনের অভিযোগ। সে জন্য আমরা এক হয়েছি।’

উত্তরা বিএনপির একজন নেতা জানান, একজোট হওয়া তিন নেতা এখন চাইছেন এই আসন থেকে মীর মাহবুবুর রহমান (স্নিগ্ধ) প্রার্থী হোক। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ভাই স্নিগ্ধ। তিনি সম্প্রতি বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন।

কাফরুল এলাকা নিয়ে ঢাকা-১৫ আসন গঠিত। এখানে বিএনপি প্রার্থী করেছে শফিকুল ইসলাম খানকে (মিলটন)। এই আসনেও প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য দলের বিভিন্ন পর্যায় থেকে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে।কিছু আসনে ক্ষোভ-বিক্ষোভও আছে

যেসব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে, তার মধ্যে কিছু আসনের প্রার্থী নিয়ে বিতর্ক বা প্রশ্ন রয়েছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ রয়েছে।

ঢাকা-১২ আসনে গতকাল শনিবারও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ারুজ্জামানের অনুসারীরা। যদিও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, হাতিরঝিল, শেরেবাংলা নগরের একাংশ নিয়ে গঠিত এই আসনে বিএনপি প্রার্থী করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সাইফুল আলমকে (নীরব)।

এখানে প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য বিএনপির নেতা-কর্মীদের একটি অংশ বিক্ষোভের পাশাপাশি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ করেছেন বলেও জানা গেছে।

কাফরুল এলাকা নিয়ে ঢাকা-১৫ আসন গঠিত। এখানে বিএনপি প্রার্থী করেছে শফিকুল ইসলাম খানকে (মিলটন)। এই আসনেও প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য দলের বিভিন্ন পর্যায় থেকে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, শিগগিরই খালি আসনগুলোতে মনোনয়ন ঘোষণা করা হবে। আর যে আসনগুলোর প্রার্থী নিয়ে বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে, সেগুলোতে পরিবর্তন আসতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফাঁকা রাখা ঢাকার ৭টি আসন নিয়ে কী চিন্তা বিএনপিতে