আমানতের টাকা ফেরতের দাবিতে ষষ্ঠ দিনের মতো মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ঘেরাও
Published: 18th, November 2025 GMT
জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতি থেকে আমানতের টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করে প্রশাসনিক সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করা হয়। বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত চলবে এই কর্মসূচি চলবে বলে তাঁরা ঘোষণা দিয়েছেন।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, ষষ্ঠ দিনের এই কর্মসূচি চলছে। তবে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো উদ্যোগ নেই। তাঁরা (কর্মকর্তারা) বাড়িতে অবস্থান করছেন। আর তাঁরা (আন্দোলনকারী) খেয়ে, না খেয়ে কষ্টার্জিত টাকার জন্য কর্মসূচি পালন করছেন।
‘মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানতকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’–এর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এতে ভুক্তভোগীদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও অংশ নেন। এক বছর ধরে এই ব্যানারে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল, মশালমিছিল, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ও একাধিকবার উপজেলা পরিষদ ঘেরাওসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কিন্তু কোনো গ্রাহকই টাকা ফেরত পাননি।
আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে ভুক্তভোগীরা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে জড়ো হন। এরপর তাঁরা পরিষদের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে কার্যালয় ঘেরাও করেন। এতে উপজেলা পরিষদসহ ২৩টি দপ্তরের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় সেখানে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।
আমানতের অর্থ উদ্ধার কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাফিজুর রহমান বলেন, ‘সত্যি কথা যদি বলি, এই সমিতিগুলোর মালিকসহ কর্মকর্তা টাকা নিয়ে আত্মগোপনে যাওয়ার পর থেকেই প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনক। আন্দোলকারীরা এভাবে টানা কর্মসূচি পালন করছেন। কিন্তু প্রশাসনের কোনো নড়াচড়া নেই। আন্দোলনকে আরও বেগবান করা হবে।’
জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহকের ৭৩০ কোটি টাকা সমবায় সমিতিগুলোয় ছিল। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের দাবি, ২৩টি সমিতির মধ্যে আল–আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধনু অন্যতম। ছয়টি সমিতির কাছে জমা আছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি। শুধু মাদারগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের একটি হিসাব করে দেখা গেছে, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা সমিতিগুলোয় আছে। এ ছাড়া ইসলামপুর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী ও জামালপুর সদরে কয়েক হাজার গ্রাহক আছেন।
আমানতের অর্থ উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক শিবলুল বারী বলেন, টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তা ছাড়া কেউ ঘরে ফিরবেন না। যেভাবে আন্দোলন চলছে, ঠিক এইভাবেই চলতে থাকবে। এই আন্দোলনের ছয় দিনের মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশানুরূপ কোনো আলোচনা বা আশ্বাস পাওয়া যায়নি। ফলে আন্দোলন অব্যাহত আছে। আন্দোলনকে আরও বেগবান করার জন্য কমিটির সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাদির শাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছে। তাঁদের দাবি, বড় বড় সমিতির মালিকপক্ষকে এখানে আসতে হবে। কিন্তু আমরা বড় বড় সমিতির মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছি না। কারণ, তাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে আত্মগোপনে রয়েছেন। ফলে আন্দোলনকারীরা তাঁদের ঘেরাও কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন।বিষয়গুলো আমি প্রতিদিনিই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে যাচ্ছি। এর বেশি এখন আর কিছুই করার নেই।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম দ রগঞ জ ঘ র ও কর উপজ ল সমব য়
এছাড়াও পড়ুন:
সাতক্ষীরা–২ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ বিএনপির একাংশের
সাতক্ষীরা–২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে দলের একাংশের নেতা–কর্মীরা সাতক্ষীরা–খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছেন। ‘সাতক্ষীরা–২ আসনের সর্বস্তরের সাধারণ জনগণ’–এর ব্যানারে অনুষ্ঠিত এ বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে লাবসা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) টানা সাতবারের চেয়ারম্যান আবদুল আলিমকে দলীয় মনোনয়নের দাবি জানানো হয়। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মিলবাজার ও আমতলা মোড় এলাকায় প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সকাল ১০টার দিকে সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে মিছিল এসে জড়ো হয় শহরের মিলবাজার এলাকায়। এ সময় কয়েক হাজার নেতা–কর্মী সমবেত হলে সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলের সামনে ঘোনা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে বক্তব্য দেন সাতক্ষীরা পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাক, লাবসা ইউপি বিএনপির সভাপতি সফিকুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক আবুল বাসার, সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য নজিবুর রহমান, আবুল হাসান ও আতিয়ার রহমান।
আবদুল আলিমের সমর্থকদের অভিযোগ, ২০২৪ সালের ২৫ এপ্রিল আলিপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় আব্দুর রউফকে বহিষ্কার করা হয়। সেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের কোনো ঘোষণা না থাকা সত্ত্বেও তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া ত্যাগী নেতা–কর্মীদের প্রতি অবমূল্যায়ন।
বক্তারা বলেন, ১৯৮৮ সাল থেকে লাবসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আবদুল আলিম। তিনি দীর্ঘ ১৯ বছর সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া তিনি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সদস্যসচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। দলের দুঃসময়ে আন্দোলন–সংগ্রামে তিনি মাঠে ছিলেন। তিনি দুর্দিনে দলের নেতা–কর্মীদের পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন। তিনি একাধিকবার গ্রেপ্তারও হয়েছেন। প্রার্থী পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আবু জাহিদ বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ইউপি নির্বাচন করায় আব্দুর রউফকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের কোনো চিঠি আমরা পাইনি।’
৩ নভেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে সাতক্ষীরা–২ আসনে মনোনয়ন পান আলিপুর ইউপির চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রউফ।