মন খারাপ করো না, একদিন সারা দেশের মানুষ তোমার জন্মদিন উদ্যাপন করবে...
Published: 4th, October 2025 GMT
আশির দশকের শেষ দিক। ধানমন্ডির ১৫ নম্বরের একটি মেস। চার–পাঁচজন তরুণ ভাগাভাগি করে থাকেন সেখানে। রান্নাঘরে প্রতিদিনের মেনু—ডাল–ভাত–ভর্তা, যার স্বাদ কখনো অতি নোনতা, কখনো আবার একেবারেই লবণহীন। টানাটানির কারণে এক প্লেট খিচুড়িও ভাগাভাগি করে খেতে হতো। সাবান বা শ্যাম্পুর বোতল মাঝেমধ্যেই উধাও হয়ে যেত।
সেই ছোট্ট মেসে একজন তরুণ প্রতিদিন ভাবতেন—একদিন তাঁর নাম সবাই জানবে, তাঁকে দেখবে টেলিভিশনের পর্দায়, প্রশংসা করবে অভিনয়ের জন্য। তরুণটির নাম ছিল পুলক। আজকের জনপ্রিয় অভিনেতা জাহিদ হাসান। আজ তাঁর জন্মদিন। ১৯৬৭ সালের আজকের দিনে সিরাজগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন জাহিদ হাসান। বেড়ে ওঠাও সেখানে।
মেসজীবনের গল্প
পড়াশোনা বা চাকরি—যেকোনো স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তরুণ বয়সে যাঁরা ঢাকা শহরে আসেন, তাঁদের অনেকের সঙ্গেই হোস্টেল ও মেসজীবনের নিবিড় সম্পর্ক থাকে। জাহিদ হাসানের জীবনেও সেই অভিজ্ঞতা রয়েছে। মা–বাবার আদরের ছেলে হয়েও একসময় তাঁকে কাটাতে হয়েছিল টানাপোড়েন ভরা মেসজীবন। সিরাজগঞ্জ থেকে আশির দশকের শেষ দিকে ঢাকায় এসে তিনি ধানমন্ডি ১৫ নম্বরে এক মেসে ওঠেন। চার–পাঁচজনের সঙ্গে ভাগাভাগি করে থাকতে হতো একটি ঘরে। মেসের খাবারের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা একটা ঘরে চার–পাঁচজন থাকতাম। বুয়া রান্না করতেন। প্রায় সময়ই খাবার মুখে তোলা যেত না। পরে নিজেরা ভাজিটাজি রান্না করে খেয়ে নিতাম। তবে কষ্টের মধ্যেও একধরনের শান্তি আছে, আবার অশান্তিও আছে। জীবনে কোনো কিছুই সহজে পাওয়া যায় না। তাই কষ্টের পরের সুখটা আসলে অন্য রকম।’
জন্মদিনের স্মৃতি
মেসজীবনের মধ্যেও নিজের জন্মদিন নিয়ে একটি ঘটনার কথা আজও মনে রেখেছেন তিনি। জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমি পরিবারের ছোট ছেলে। তাই আলাদা একটা নজর সবারই ছিল। ছোটবেলায় জন্মদিনে মা পায়েসসহ কত সুন্দর সুন্দর খাবার বানাতেন। কেক আনা হতো, চানাচুর, কলা—আরও কত কী! ঢাকায় আসার পর মেস ও হলজীবন শুরু হলো। ১৯৮৯ সালে একদিন মেসের ঘর ঝাড়ু দিচ্ছিলাম। তখন এক সঙ্গীর বাবা বেড়াতে এলেন। তিনি আইনজীবী ছিলেন। জন্মদিনের কথা শুনে বলেছিলেন, “মন খারাপ কোরো না পুলক, এমন একটা দিন আসবে, যেদিন সারা দেশের মানুষ তোমার জন্মদিন উদ্যাপন করবে।” এখন যখন জন্মদিনে রেডিও, টেলিভিশন, পত্রিকায় আমাকে নিয়ে আলোচনা হয়, তখনই ওই আঙ্কেলের কথা মনে পড়ে।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বেপরোয়া গতিতে চলে গাড়ি, বাড়ছে ঝুঁকি
চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মানা হচ্ছে না নির্ধারিত গতিসীমা। ফাঁকা পেলেই সেখানে দ্রুতগতিতে চলছে যানবাহন। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও চলছে মোটরসাইকেল। গত বছরের আগস্ট মাসে পরীক্ষামূলক চালুর পর দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দুই মোটরসাইকেল আরোহী। সম্প্রতি দুর্ঘটনার তালিকায় যোগ হয়েছে প্রাইভেট কার। এ ঘটনার পর আবারও আলোচনায় আসে এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচলের নিয়মনীতি।
চলতি নভেম্বর মাসেই দুটি প্রাইভেট কার উল্টে যায় এই উড়ালসড়কে। এতে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বাঁক, চালকদের গতিসীমা না মানা এবং বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর কারণে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সিডিএ বলছে, এগুলো স্বাভাবিক বাঁক। চলাচলে কোনো ঝুঁকি নেই। গতিসীমা না মেনে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।
নগর পুলিশের বন্দর অঞ্চলের তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে নভেম্বর মাসের দুটি দুর্ঘটনা গতি না মানার কারণে হয়েছে। ট্রাফিক বিভাগ গাড়ির গতিসীমার বিষয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক-বন্দর) কবীর আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘গতি না মানা একটি কারণ। পাশাপাশি অনেক বাঁক আছে সেখানে। আমরা আমাদের দিক থেকে চেষ্টা করি দুর্ঘটনারোধে ব্যবস্থা নিতে।’
২০১৭ সালে অনুমোদিত হওয়া এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজ সাড়ে সাত বছরেও পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সিডিএর তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৯২ শতাংশ। এর মূল অংশের উদ্বোধন হয় ২০২৩ সালের নভেম্বরে। সে সময় ‘মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী-সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ে’ নামে এর উদ্বোধন করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এর নাম পরিবর্তন করে শহীদ ওয়াসিম আকরামের নামে করা হয়। এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ব্যয় ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ের দেওয়ানহাট, বারিক বিল্ডিং, সল্টগোলা, ইপিজেড, কাঠগড় এলাকায় বাঁক রয়েছে। বাঁকগুলোতেও গাড়ির গতি কমানোর প্রবণতা কম চালকদের। এক্সপ্রেসওয়ের অনেক জায়গায় গাড়ি থামিয়ে যাত্রীরা বের হয়ে আসেন। ঝুঁকিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতেও দেখা যায়। এসবের কারণে সেখানে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।সিডিএ সূত্র জানায়, এক্সপ্রেসওয়েতে সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করা হয় ৬০ কিলোমিটার। তবে আঁকাবাঁকা অংশে সর্বোচ্চ গতিসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৪০ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি থামানো বা দাঁড় করিয়ে রাখা এবং গাড়ি থেকে নামা নিষিদ্ধ। পরীক্ষামূলক যান চলাচলের সময় সাময়িকভাবে ট্রাক, বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে চলছে মোটরসাইকেল।
সরেজমিন দেখা যায়, এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচলরত গাড়ির অধিকাংশই সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল। এ ছাড়া বড় একটি অংশ কার ও মাইক্রোবাস। চলাচলের সময় অধিকাংশ গাড়িই গতিসীমা মেনে চলছে না। গতিসীমার মাপার জন্য কোথাও নেই যন্ত্র বা ক্যামেরা। কিছু স্থানে গতিরোধক থাকলেও নির্ধারিত গতির চেয়ে বেশি গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন চালকেরা।
চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ের দেওয়ানহাট, বারিক বিল্ডিং, সল্টগোলা, ইপিজেড, কাঠগড় এলাকায় বাঁক রয়েছে। বাঁকগুলোতেও গাড়ির গতি কমানোর প্রবণতা কম চালকদের। এক্সপ্রেসওয়ের অনেক জায়গায় গাড়ি থামিয়ে যাত্রীরা বের হয়ে আসেন। ঝুঁকিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতেও দেখা যায়। এসবের কারণে সেখানে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।
গতি না মানা একটি কারণ। পাশাপাশি অনেক বাঁক আছে সেখানে। আমরা আমাদের দিক থেকে চেষ্টা করি দুর্ঘটনারোধে ব্যবস্থা নিতে।কবীর আহম্মেদ, উপকমিশনার (ট্রাফিক-বন্দর), চট্টগ্রাম নগর পুলিশএলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারী গাড়িচালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক্সপ্রেসওয়েতে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। কখনো পেছন থেকে এসে সামনের গাড়িকে ধাক্কা দেয়। কখনো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি পড়ে যায়। যদিও ছোট দুর্ঘটনায় অভিযোগ না করায় পুলিশের কাছে সঠিক পরিসংখ্যান নেই। ৫ ও ১২ নভেম্বর এক্সপ্রেসওয়ের ওপরে দুটি প্রাইভেট কার উল্টে যায়। দুই ঘটনায় হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। দুটোই এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা অংশে। একটি পতেঙ্গা থানা এলাকায়।
সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে নিরাপদে গাড়ি চলাচলের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাঁকগুলোতে গতিরোধক বসানো হয়েছে। আলোকায়নের ব্যবস্থা রয়েছে। একটু পরপর গতিসীমা, বাঁক, গতিরোধকের তথ্য জানিয়ে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চালক ও যাত্রীরা তা মানতে চান না। নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশি গতিতে গাড়ি চালালে স্বাভাবিকভাবে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যাবে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারী গাড়িচালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক্সপ্রেসওয়েতে কখনো পেছন থেকে এসে সামনের গাড়িকে ধাক্কা দেয়। কখনো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি পড়ে যায়। সম্প্রতি দুটি ঘটনাতেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি ও সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বহু স্থানে প্রকৌশলগত ত্রুটির কারণে তীব্র বাঁক আছে, যেখানে গতিরোধক বাড়তি ঝুঁকি তৈরি করছে। দুর্ঘটনা রোধে এসব বাঁকে গতি কমানো এবং ছোট যান, বিশেষত মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থার সঙ্গে চালকদেরও নিয়ম মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।