আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে হয় প্রবারণা পূর্ণিমা। প্রবারণায় মাঙ্গলিক রথটানা উৎসবে মেতে ওঠেন মারমা ও রাখাইন তরুণ-তরুণীরা। মারমা ভাষায় এই উৎসবকে বলা হয় ‘রাথাঃ পোয়ে’। অনেকে আবার বলেন ‘সাংফোওয়া হ্নাং’। বাংলায় একে বলা যায় ‘শারদীয় উৎসব’।

প্রবারণায় হাজারো তরুণ-তরুণী নেচে–গেয়ে ও শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে উদ্‌যাপন করে এই রথটানা উৎসব। ‘ছংরাসি ওয়াগ্যোয়াই হ্লা, রাথাঃ পোয়ে লাগাইত মে’ (শরৎ ঋতু এসেছে, আশ্বিনে চলো রথটানা উৎসবে) গান গেয়ে রথ টানেন তরুণ-তরুণীরা।

বান্দরবানে এবার প্রবারণা ও রথটানা উৎসব শুরু হবে আজ রোববার। তিন দিনের উৎসবের জন্য পক্ষকালব্যাপী প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা শহরের উজানিপাড়া মাঠে রাজহংসীর আদলে দৃষ্টিনন্দন রথ তৈরি করছেন কারুশিল্পীরা। গাছ, বাঁশ, বেত ও নানা উপকরণে বিশাল রথ তৈরি শুরু হয় গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে।

সাতজন শিল্পী রাজহংসীর আদলে রথটি তৈরি করেছেন। দলের প্রধান ক্য অং সিং মারমা জানান, রথে কাগজের বিহার বসানো হয়, কারুকাজ করতে হয় বুদ্ধমূর্তির আসনটিতে। এমনভাবে রথ তৈরি করা হয়, যাতে এর সামনে এলেই উপাসকদের ধর্মীয় শ্রদ্ধা ও ভক্তি বোধ জাগ্রত হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন ও মঙ্গল কামনায় মোমবাতি প্রজ্বালনের বাতিঘরও অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে স্থাপন করার প্রয়োজন পড়ে। তারপর রথে চাকা ও রশি সংযোজন এবং নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য বাঁশের ভেলা তৈরি করতে হয়। মঙ্গল রথের পাশাপাশি কুশপুত্তলিকার মতো ফুকসুমা নামে অশুভ দেবতার প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়ে থাকে। ফুকসুমা আনার কারণ হচ্ছে, মাঙ্গলিক কাজ অশুভ বা মারেরা (শত্রু) ভন্ডুল করার চেষ্টা করে, যদিও শেষ পর্যন্ত শুভ কাজেরই জয় হয়।

প্রবারণার এই রথটানা উৎসব কখন থেকে, কীভাবে এল জানতে চাওয়া হয় লেখক ও গবেষক মংক্য শোয়েনু নেভী মারমার কাছে। তিনি জানান, বোমাং রাজপরিবার ও তাঁদের অনুসারীরা ১৮০৪ সালে বান্দরবান শহরের গোড়াপত্তন করেন। বোমাং রাজা সাকহ্না ঞো চৌধুরীর আমলে ১৮৯৪ সালে বান্দরবানে স্থায়ীভাবে রাজবিহার স্থাপিত হয়েছে। তখন থেকে প্রবারণায় রথটানা উৎসব হয়ে আসছে। অর্থাৎ প্রায় ১৩১ বছর ধরে রথটানা উৎসব হয়ে আসছে বান্দরবানে।

প্রবারণার এই রথটানা উৎসব কখন থেকে, কীভাবে এল জানতে চাওয়া হয় লেখক ও গবেষক মংক্য শোয়েনু নেভী মারমার কাছে। তিনি জানান, বোমাং রাজপরিবার ও তাদের অনুসারীরা ১৮০৪ সালে বান্দরবান শহরের গোড়াপত্তন করে। বোমাং রাজা সাকহ্না ঞো চৌধুরীর আমলে ১৮৯৪ সালে বান্দরবানে স্থায়ীভাবে রাজবিহার স্থাপিত হয়েছে। তখন থেকে প্রবারণায় রথটানা উৎসব হয়ে আসছে। অর্থাৎ প্রায় ১৩১ বছর ধরে রথটানা উৎসব হয়ে আসছে বান্দরবানে।

আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে অশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস ভিক্ষুরা ‘বর্ষাবাস’ পালন করেন। এ সময় ভিক্ষুরা জরুরি কোনো কাজ ছাড়া বৌদ্ধবিহারের বাইরে যান না। বর্ষাবাসের সমাপনী অনুষ্ঠানকে বলা হয় প্রবারণা উৎসব। মারমা ভাষায় একে বলে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে।

মংক্য শোয়েনু নেভী মারমা বলেন, প্রবারণা বা ওয়াগ্যোয়াই উৎসবের একটি ঐতিহ্য হলো রথপূজার উৎসব। তবে এই রথপূজা উৎসব শুধু প্রবারণায় করতে হবে, এমন নয়। এটি মূলত বৃষ্টির দেবতা ও জলবুদ্ধ হিসেবে পরিচিত অর্হৎ (নির্বাণপ্রাপ্ত ধ্যানী) উপগুপ্তের উদ্দেশে বর্ষা শেষে শরৎকালে করা হয়। মারমা লোকসমাজের বিশ্বাস, উপগুপ্ত অর্হৎ ঝড়, বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রশমন করেন।

মারমা লোকসমাজের উপাখ্যান অনুযায়ী, হাইসাওয়াদি (হংসবতী রাজ্য, বর্তমান মিয়ানমার) রাজ্যে কোনো এককালে পাহাড় কেটে, বনজঙ্গল উজাড় করে চৈত্য বা জাদি নির্মাণ করা হয়েছিল। এ কারণে দেবতা রুষ্ট হওয়ায় ঝড়–বৃষ্টি–বন্যায় বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। হাইসাওয়াদিরাজ তখন স্বপ্নে দেখেন একমাত্র জলবুদ্ধ উপগুপ্ত এটির প্রশমন করতে পারবেন। কারণ, তিনি মৎস্যকন্যার সন্তান এবং জলে তাঁর অধিষ্ঠান। রথ টেনে অর্হৎ উপগুপ্তকে পূজা করে হাইসাওয়াদি রাজ্যে আবার সুখ ও শান্তি ফিরে আসে। তখন থেকে অর্হৎ উপগুপ্তের উদ্দেশে ঝড়, বৃষ্টি ও খরা-বন্যার বিপর্যয় প্রশমনের কামনায় রথটানা উৎসব ও জলে রথকে উৎসর্গ করে ভাসিয়ে দেওয়া ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে। হংসবতী রাজ্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে রাজহংসীর আদলে রথ তৈরি করা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ন দরব ন উৎসব হয় উপগ প ত

এছাড়াও পড়ুন:

আত্মবিশ্বাস নিয়ে নিজের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে

জিসান চৌধূরী, তাসনিম ভূঁইয়া, ফারহান আঞ্জুমরা ১৭ বন্ধু উত্তরা থেকে এসেছিলেন ফ্যান্টাসি কিংডমে এইচএসসিতে জিপিএ–৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থী উৎসবে যোগ দিতে। তাঁরা সবাই মাইলস্টোন কলেজ থেকে এবার এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। আজ বুধবার সকাল থেকে এখানে শুরু হয়েছিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পাওয়া শিক্ষর্থীদের নিয়ে ‘প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি-প্রথম আলো কৃতী শিক্ষার্থী উৎসব’।

‘স্বপ্ন থেকে সাফল্যের পথে’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সারা দেশের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের নিয়ে উৎসব হচ্ছে এবারই প্রথম। ১০ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে শুরু হয়েছে এই উৎসব। আজ হলো ঢাকায়। প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থী ঢাকার এই উৎসবে অংশ নিতে অনলাইনে নিবন্ধন করেন। উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি।

সকালে শিক্ষার্থীরা তাঁদের নিবন্ধন দেখিয়ে ফ্যান্টাসি কিংডমে প্রবেশের রিস্টব্যান্ড এবং রাইড ও খাবারের কুপন; ক্রেস্ট ও সনদপত্র সংগ্রহ করেন। ভেতরে প্রবেশ করে তাঁরা আনন্দ–উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন।

অনুষ্ঠানে ছিল ব্যান্ডদল ওয়ারফেজের পরিবেশনা। ফ্যান্টাসি কিংডম, আশুলিয়া; ১৯ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আত্মবিশ্বাস নিয়ে নিজের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে
  • ফ্যান্টাসি কিংডমে সেলফি-রাইড ও গানে গানে মেতেছেন কৃতী শিক্ষার্থীরা
  • গোপালগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব
  • ফ্যান্টাসি কিংডমে কৃতী শিক্ষার্থী উৎসব শুরু
  • নবান্ন উৎসবে উথলীতে মাছের মেলা
  • ইস্পাহানি-প্রথম আলো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল: ট্রফি নিয়ে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ফুটবল–উৎসব
  • ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিধসে নিহত ১৮, নিখোঁজ অনেক
  • জানা গেল রাজামৌলির ছবির নাম, থাকছেন মহেশ বাবু-প্রিয়াঙ্কা
  • দেশের প্রথম নারী এভারেস্টজয়ী নিশাত মজুমদারের জয়ের গল্প আসছে
  • মুগ্ধ করল নবান্ন উৎসবে ধান কাটার প্রতিযোগিতা