ঐকমত্য না হলে সনদ বাস্তবায়নে একাধিক প্রক্রিয়া নিয়ে প্রস্তাব দেবে কমিশন: আলী রীয়াজ
Published: 5th, October 2025 GMT
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হলে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে একাধিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রস্তাব দেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
আজ রোববার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চতুর্থ দিনের আলোচনার শুরুতে এসব কথা বলেন কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান–সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে এ আলোচনা হয়।
আজ মূলত সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলোর মতপার্থক্য কতটা কমেছে, তা শুনতে চাইবে ঐকমত্য কমিশন। দলগুলো চাইলে বিশেষজ্ঞদের সুনির্দিষ্ট ও পরিমার্জিত পরামর্শগুলোও প্রস্তাব আকারে তুলে ধরবে কমিশন।
৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। এর খসড়া চূড়ান্ত হলেও বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি দলগুলোর। আজ আলোচনা শেষ করার কথা রয়েছে। তবে শেষ করতে না পারলে আর এক দিন আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে দলগুলোর স্বাক্ষরের মাধ্যমে সনদকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে চায় কমিশন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘জুলাই সনদের বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে ছয়টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আমরা বলেছিলাম, এই ছয়টি প্রক্রিয়ার বিষয়ে আলাপ–আলোচনার মধ্য দিয়ে যদি এটাকে একটি জায়গায় আনা যায়। উপস্থিত ৩০টি রাজনৈতিক দল যদি একটি প্রস্তাব দেয়, তাহলে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সানন্দে সেই প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারব। আমরা বলব, সেই একটি প্রস্তাব আছে, এটা বাস্তবায়নের পথ; এভাবে আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) বিবেচনা করতে পারেন।’
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের সর্বশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বরের আলোচনায় যেসব বিষয় উঠে এসেছিল, সেগুলো বিশেষজ্ঞদের জানিয়েছেন বলে জানান ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি। তিনি বলেন, তারই ভিত্তিতে তাঁরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁদের আগের অবস্থানকে ব্যাখ্যাও করেছেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আপনাদের মধ্যে একমত হওয়ার জায়গা তৈরি হলে এটা বাস্তবায়ন করা সহজতর হবে। দ্রুততার সঙ্গে করা সম্ভব হবে।’ এসব বিষয় নিয়ে কমিশন সকালে প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশনের প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছে বলেও জানান আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টা সব সময় এ বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন বলে জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে তাগিদ দিয়েছেন বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াসহ বিশেষত সনদকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে সবার স্বাক্ষরিত রাজনৈতিক দলিলে পরিণত করা যায় কি না, সে বিষয়ে তাঁদের তাগিদ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
১৫ অক্টোবরের আগে এই প্রক্রিয়া শেষ করার ওপর জোর দেন আলী রীয়াজ। রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমরা দেখতে পাচ্ছি, রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক ব্যস্ততা আছে। নির্বাচনী প্রস্তুতি আছে। আপনারা বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেন, সেগুলো যেন বাধাবিঘ্ন না হয়, সেটা আমরা করতে চাই। তা ছাড়া মেয়াদের দিক থেকে ১৫ অক্টোবরই মেয়াদ শেষ হবে। তারও আগে আমরা এটা শেষ করতে চাই।’
রাজনৈতিক দলগুলো যদি দলগত বিবেচনার বাইরে গিয়ে সম্মিলিতভাবে কোনো প্রস্তাব দিতে পারে, সেটা নিয়ে কমিশন আলাপ–আলোচনা করবে বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, তারই পটভূমিতে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, যদি আজকে ৩০টি রাজনৈতিক দল এক জায়গায় আসে, তাহলে আমরা আর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসবই না। কিন্তু যদি প্রয়োজন হয়, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবার বসার, তাহলে সেটা আমরা বসব।’
বৈঠকে আলী রীয়াজ ছাড়াও ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব দ দলগ ল র স প রক র য ঐকমত য শ ষ কর
এছাড়াও পড়ুন:
দলগুলোর সঙ্গে আজ আবার ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা
জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে আজ রোববার আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আজ মূলত সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলোর মতপার্থক্য কতটা কমেছে, তা শুনতে চাইবে কমিশন। দলগুলো চাইলে বিশেষজ্ঞদের সুনির্দিষ্ট ও পরিমার্জিত পরামর্শগুলোও প্রস্তাব আকারে তুলে ধরবে ঐকমত্য কমিশন।
আজ বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে এই আলোচনা শুরু হবে। ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, এর আগে সকাল ১০টায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবেন কমিশনের সদস্যরা।
৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। এর খসড়া চূড়ান্ত হলেও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। এ কারণে আটকে আছে জুলাই সনদ। বাস্তবায়নের উপায় ঠিক করতে এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে কমিশন। ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন দিন আলোচনা হলেও ঐকমত্য হয়নি।
কমিশন সূত্র জানায়, আলোচনা আজ শেষ করতে না পারলে আরও এক দিন তা হতে পারে। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে দলগুলোর স্বাক্ষরের মাধ্যমে সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে চায় কমিশন।
জুলাই সনদে বেশ কিছু প্রস্তাব আছে, যেগুলো নির্বাহী আদেশ ও অধ্যাদেশ জারি করে বাস্তবায়ন করা যায়। এ বিষয়ে ঐকমত্য আছে। মূল বিতর্ক সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন নিয়ে।
এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ প্রস্তাব আকারে তুলে ধরেছিল কমিশন। সে প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার একটি ‘সংবিধান আদেশ’ জারি করতে পারে। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। এরপর আদেশটি নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট করা যেতে পারে।
তবে বিএনপিসহ বেশ কিছু দল এই প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে। পরে বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে ঐকমত্য কমিশন আবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে দুই দিন আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বা প্রস্তাবটি পরিমার্জন করে আরও সুনির্দিষ্ট ও বিস্তৃত করা হয়েছে। সংবিধান আদেশ জারি ও গণভোটের পাশাপাশি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে জুলাই সনদ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার বিষয়টিও যুক্ত করা হবে। এর পাশাপাশি গণপরিষদ বা সংবিধান সংস্কার সভা গঠনের বিষয় আলোচনায় আসতে পারে। গণভোট হলে তা জাতীয় নির্বাচনের দিনই হতে পারে। আর গণপরিষদ করা হলে সেটাও আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে করা যায়। সে ক্ষেত্রে আগামী সংসদ একই সঙ্গে গণপরিষদ ও জাতীয় সংসদ হিসেবে কাজ করবে।
সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি প্রশ্নে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান ভিন্ন। বিএনপি মনে করে, সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের একমাত্র বৈধ পথ বা ফোরাম হচ্ছে জাতীয় সংসদ। আগামী সংসদের মাধ্যমে এগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এর বাইরে অন্য কোনো উপায়ে সংবিধান সংস্কার করা সম্ভব কি না, সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ারও পক্ষে দলটি।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী চায় সংবিধান আদেশ ও পরে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। এর ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন হতে হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চায় গণপরিষদের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা হোক।
সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাব বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে মোট ছয়টি সুপারিশ পেয়েছিল কমিশন। সেগুলো হলো গণভোট, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ, গণপরিষদ গঠন, আগামী সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন, সংসদকে সংবিধান সংস্কার সভা হিসেবে প্রতিষ্ঠা এবং সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া।
ঐকমত্য কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল শনিবার সংসদ ভবনে কমিশন কার্যালয়ে বৈঠক করে কমিশন। সেখানে বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত পর্যালোচনা করা হয়।
বৈঠকে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ঐকমত্য গঠনপ্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও বৈঠকে অংশ নেন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা মনে করছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার দীর্ঘ বিরতিতে দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আলোচনায় মতপার্থক্য কমে এসেছে। কমিশন আশা করে, আজকের আলোচনায় মতপার্থক্য কমে সুনির্দিষ্ট এক-দুটি প্রস্তাবের মধ্যে সীমিত থাকবে দলগুলো।