দেশে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত হেমন্ত ও শীত—মূলত এই দুটি ঋতুর দেখা পাওয়া যায়। শীতকে ভ্রমণপ্রেমীদের প্রিয় ঋতু বলেই ধরে নেওয়া হয়। শীতের আমেজে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আনন্দ তো আলাদা বটেই, তবে হৃদয়ে প্রশান্তির ছোঁয়া পেতে হেমন্তের জুড়ি নেই। যাঁরা প্রকৃতিকে গভীরভাবে অনুভব করতে চান, তাঁরা হেমন্তকে রাখতে পারেন পছন্দের তালিকার শীর্ষে।

তবে শুধু ঘুরতে বের হয়ে গেলেই কিন্তু হবে না, খেয়াল রাখতে হবে কোন সময়ে কোথায় গেলে ভ্রমণ হবে সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য। অনেক সময় দেখা যায়, আমরা কোনো জায়গায় শুধু জনপ্রিয়তার গল্প শুনেই ঘুরতে চলে যাই। সেখানে যাওয়ার পর হয়তো অনেকেরই মন ভরে না। আবার পর্যটন মৌসুমে এসব জায়গায় মানুষের সমাগম বেশি থাকে। তবে এমন বেশ কিছু স্থান রয়েছে, যেখানে নিরিবিলি পরিবেশে ঘুরে বেড়ানো যায়, কাটানো যায় নিজের মতো মানসম্মত সময়। তেমনই কিছু ভ্রমণ স্থান সম্পর্কে জানা যাক।

১.

তেঁতুলিয়া

এই সময়টি উত্তরের জেলাগুলো ঘুরে আসার জন্য একেবারেই আদর্শ সময়। দেশের অন্য জেলাগুলোর চেয়ে উত্তরে, বিশেষভাবে পঞ্চগড়ে শীতের আমেজ শুরু হয়ে যায় কিছুটা আগে থেকেই। এখানে দিন শুরু হয় সকালের হালকা কুয়াশায় দূর্বাঘাসের ওপর পড়ে থাকা শিউলি ফুলের স্বর্গীয় ঘ্রাণ দিয়ে। সেই সঙ্গে নতুন গাছের খেজুরের রস আর নবান্নের নতুন চালের রকমারি পিঠা তো আছেই। রাস্তার মোড়ে সাজানো থাকে পিঠার পসরা। বিকেল-সন্ধ্যাগুলো সেজে ওঠে অপরূপ সাজে। যার বর্ণনা লেখার ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়, নিজ চোখে এসব দৃশ্য অবলোকন করতে হবে। একা বা বন্ধু-স্বজনদের নিয়ে চলে যেতে পারেন তেঁতুলিয়ার প্রাচীন কোনো রাস্তায়, যেখানে বিকেলের আকাশে ভেসে ওঠে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য। দূরের সেই হিমালয় উঁকি দিয়ে জানান দেয় তার রহস্যঘেরা অস্তিত্ব। অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় দিনই পশ্চিম আকাশে খালি চোখে এখান থেকে দেখতে পাবেন এ দৃশ্য। সেই সঙ্গে পাবেন রাস্তার ধারে সারি সারি চায়ের বাগান। এর নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। এ ছাড়া ঘুরে আসতে পারেন মহানন্দা নদী, তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো ও বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট।

২. নলজুড়ি

সিলেটের গোয়াইনঘাটের ছোট্ট জনপদ নলজুড়ি। নলজুড়ির দৃশ্য কিছুটা ভারতের কাশ্মীরের সঙ্গে মিল রয়েছে, তাই অনেকেই একে বলেন ‘বাংলার কাশ্মীর’, আবার কেউ বলেন ‘সিলেটের পেহেলগাম’। এই ছোট জনপদটির প্রধান আকর্ষণ হলো বিশাল সবুজ খেলার মাঠ, যা স্থানীয়ভাবে নলজুড়ি খাসিয়া হাওর খেলার মাঠ নামে পরিচিত। যাঁরা জীবনের ব্যস্ততায় ক্লান্ত, তাঁরা এই সময়ে একঘেয়ে জীবনের সব ক্লান্তি মেটাতে কিছুদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন এই এলাকা থেকে। নলজুড়ির দিগন্তজুড়ে মেঘালয়ের সবুজ পাহাড় এবং টিলার সমাহার এটিকে এক মনোরম উপত্যকার রূপ দিয়েছে। বছরজুড়েই প্রকৃতির অপার এক সৌন্দর্যের পসরা বিছিয়ে বসে থাকে নলজুড়ি। জাফলং-তামাবিল সড়কের কাছে অবস্থিত এই শান্ত ও কোলাহলমুক্ত স্থানটি প্রকৃতিপ্রেমী ও আলোকচিত্রীদের জন্য এক নতুন ঠিকানা।

৩. সোনাদিয়া দ্বীপ

সমুদ্রবিলাসীদের জন্য সোনাদিয়া দ্বীপ একটি আদর্শ ভ্রমণ-গন্তব্য। তিনদিকে সমুদ্রঘেরা এই চরটির ম্যানগ্রোভ বন এবং দুর্লভ জীববৈচিত্র্যই ভ্রমণপিপাসুদের টানে। গোধূলির সময় সমুদ্রসৈকতে লাল কাঁকড়ার বিচরণ, সাগরলতায় ঢাকা বালিয়াড়িতে কাছিমের আনাগোনা, খোঁয়াজকৈতর, বদরকৈতর, সরুঠোঁটি গঙ্গাকৈতর, গুলিন্দা, টিটি জিরিয়া, মধুবাজ, কানি ও যাঠুয়া বকসহ বিভিন্ন ধরনের গাঙচিলের দেখা পাওয়া যায় শীতের মৌসুমে। শীতের শুরু থেকে বসন্তকাল অর্থাৎ নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া দ্বীপ ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত সময়। এই সময়টিতেই এখানের পরিবেশ ও আবহাওয়া ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে অনুকূল থাকে। সেই সঙ্গে আরেকটি বিশেষ আকর্ষণ হলো ‘ক্যাম্পিং’। পূর্ণিমা রাতে এখানে ক্যাম্পিং হতে পারে আপনার জীবনের সেরা অভিজ্ঞতাগুলোর মধ্যে একটি।

৪. মহামায়া লেক

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের মিরসরাইয়ে অবস্থিত একটি মনোরম কৃত্রিম জলাধার। পাহাড়ঘেরা সবুজ প্রকৃতির বুকে তৈরি লেকটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক হিসেবে পরিচিত। মূলত সেচ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্দেশে তৈরি হলেও বর্তমানে এটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। লেকের চারপাশে পাহাড়, ঝরনা আর সবুজ বন ভ্রমণপিপাসুদের টানে। এখানে নৌকা ভ্রমণ, কায়াকিং, সুইমিং, ক্যাম্পিংসহ নানা রোমাঞ্চকর কার্যক্রম উপভোগ করা যায়। লেকের পাশেই রয়েছে ছোট-বড় ঝরনা, যার জলধারা এর সৌন্দর্যকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। একঘেয়ে জীবনের ক্লান্তি এড়াতে এই সময়ে ঘুরে আসতে পারেন মহামায়া লেক থেকে। প্রকৃতিপ্রেমী কিংবা অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য এই লেক হতে পারে এক আদর্শ গন্তব্য।

৫. নাপিত্তাছড়া ট্রেইল

অ্যাডভেঞ্চার যাঁদের নেশা, তাঁদের জন্য নাপিত্তাছড়া হতে পারে এই সময়ের জন্য আদর্শ একটি গন্তব্য। চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত নাপিত্তাছড়া ঝরনা আর সেখানে পৌঁছানোর ঝিরিপথটিই মূলত ‘নাপিত্তাছড়া ট্রেইল’ নামে পরিচিত। এটির মূল আকর্ষণ হলো এর বৈচিত্র্যময় পথ। কখনো সরু ঝিরিপথ, কখনো পিচ্ছিল পাথর, আবার কখনো কোমরপানির স্রোত পার হয়ে এগোতে হয়। পথজুড়ে শোনা যায় ঝিরি জলের শব্দ আর পাখির ডাক। কয়েক ঘণ্টা হাঁটার পর সামনে হাজির হয় দৃষ্টিনন্দন জলপ্রপাত, যা ক্লান্ত ভ্রমণকারীর জন্য একধরনের পুরস্কারের মতো। নাপিত্তাছড়ায় মূল ঝরনার পাশাপাশি আরও কয়েকটি ছোট ঝরনা ও প্রাকৃতিক জলাশয় রয়েছে। এখানে ভ্রমণ করলে পাহাড়ি প্রকৃতি, সবুজ বনভূমি ও জলপ্রপাতের মিলন একসঙ্গে উপভোগ করা যায়। তবে নাপিত্তাছড়া ট্রেইল একেবারেই অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য। কারণ এখানে যাওয়ার পথটি সহজ নয়, এর জন্য শারীরিকভাবে ফিট থাকা জরুরি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র জন য এই সময় জ বন র প রক ত আদর শ ভ রমণ

এছাড়াও পড়ুন:

উৎপত্তিস্থল মাধবদীতে এপাশ-ওপাশ দুলছিল উঁচু ভবনগুলো, মাটিতে ফাটল

ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদীর সবচেয়ে বড় ভবন জে অ্যান্ড জে টাওয়ার। ১৪ তলা টাওয়ারটির দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থতলাজুড়ে একটি বেসরকারি হাসপাতাল। পঞ্চম থেকে ১৪ তলা পর্যন্ত ৪৮টি ফ্ল্যাটে লোকজনের বসবাস।

হাসপাতালটির চেয়ারম্যান সনেট মো. নোমান ভূমিকম্পের সময় হাসপাতালেই ছিলেন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘পুরো ভবনটি এপাশ-ওপাশ দুলছিল। হাসপাতালের রোগীসহ সবাই হুড়োহুড়ি শুরু করেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাতে স্যালাইনসহ কয়েকজন রোগীকে নিচে নেমে যেতে দেখা যায়। ভবনটির চারটি এক্সিট পয়েন্ট থাকায় ভালোভাবে সবাই নেমে যেতে পারেন।’

ভবনটির তত্ত্বাবধায়ক ইয়াসির আরাফাত ও নিরাপত্তা প্রহরী মো. ফালু মিয়া জানান, এমন ভূমিকম্প তিনি আগে কখনো দেখেননি। কম্পন শেষ হলে সবাই আবার বাসাবাড়ি ও হাসপাতালে ফিরে যান।

মারাত্মক ভয় পেয়েছিলাম, দোকানে লোকজনের সঙ্গে আমি নিজেও সব রেখে সড়কের মাঝখানে বের হয়ে পড়ছিলাম।পৌরসভাসংলগ্ন চা–দোকানি বজলু মিয়া

নরসিংদী সদর হাসপাতাল, ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে ভূমিকম্পে আহত এ পর্যন্ত ৮০ জন ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ভূমিকম্পের সময় নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি সাবস্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে সাবস্টেশনটির যন্ত্রাংশ পুড়ে গেলে পলাশ ও ঘোড়াশালের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

পলাশ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. আবদুল শহিদ জানান, তাঁদের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. এনামুল হক জানান, ভূমিকম্পে এ আগুনের সূত্রপাত। বেলা দুইটার পর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।

ঘোড়াশাল ঈদগাহ রোডের মারকাসুল সুন্নাহ তাহফিজুল কোরআন মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি সালাউদ্দিন আনসারী বলেন, ‘আমাদের মাদ্রাসার ছয়তলা ভবনের চার-পাঁচটি জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা সবাই আতঙ্কিত।’

ফজলুল হক বলেন, ভূমিকম্পের সময় বাড়ির বাসিন্দাদের অন্তত ৮০ জন অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ পুরো বাড়ি কেঁপে উঠলে অধিকাংশই হুড়োহুড়ি করে নিচে নেমে আসেন। সবাই এতটাই আতঙ্কিত ছিলেন যে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে কেউ কেউ হাত–পায়ে আঘাত পেয়েছেন। কপাল ভালো, বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।‘এত ভয় কখনো পাইনি’

ছোট মাধবদী এলাকার একটি পাঁচতলা ভবনের তৃতীয় তলার বাসিন্দা জসিম মিয়া স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বের হয়ে রাস্তায় চলে আসেন। তিনি বলছিলেন, ‘ভূমিকম্পের এমন ঝাঁকুনি আমার জীবনে আর কখনো দেখি নাই। সব বাড়িঘরের ভেতর থেকে লোকজন রাস্তায় চলে আসছিলেন। আতঙ্কে শুধু আল্লাহকে ডাকছিলাম।’

পৌরসভাসংলগ্ন চা–দোকানি বজলু মিয়া বলেন, ‘মারাত্মক ভয় পেয়েছিলাম, দোকানে লোকজনের সঙ্গে আমি নিজেও সব রেখে সড়কের মাঝখানে বের হয়ে পড়ছিলাম।’

গৃহবধূ সালমা আক্তার (৩৫) গরুরহাট এলাকার একটি সাততলা ভবনের পাঁচতলায় চার বছর বয়সী শিশুসন্তান নিয়ে থাকেন। ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ভবনের অন্য বাসিন্দাদের সঙ্গে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে পায়ে ব্যথা পান। তিনি বলেন, ‘এত ভয় কখনো পাইনি।’

বিরামপুর এলাকার ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন (৫২) বলেন, জীবনে তিনি এমন ভয়ংকর ভূমিকম্প আগে কখনো দেখেননি।

মাধবদীর নওয়াপাড়া এলাকার ছয়তলা ভবনের মালিক ফজলুল হক। তাঁর বাড়ির ২০টি ফ্ল্যাটে শতাধিক মানুষের বসবাস। ফজলুল হক বলেন, ভূমিকম্পের সময় বাড়ির বাসিন্দাদের অন্তত ৮০ জন অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ পুরো বাড়ি কেঁপে উঠলে অধিকাংশই হুড়োহুড়ি করে নিচে নেমে আসেন। সবাই এতটাই আতঙ্কিত ছিলেন যে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে কেউ কেউ হাত–পায়ে আঘাত পেয়েছেন। কপাল ভালো, বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।

নরসিংদীতে যাঁদের মৃত্যু

ভূমিকম্পের প্রভাবে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নরসিংদী সদর উপজেলায় পার্শ্ববর্তী বহুতল ভবনের নির্মাণসামগ্রী ধসে বাবা-ছেলে দুজন, পলাশ উপজেলায় মাটির ঘরের দেয়াল ধসে একজন ও স্ট্রোক করে একজন এবং শিবপুর উপজেলায় গাছ থেকে পড়ে একজন নিহত হয়েছেন।

সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের গাবতলী এলাকায় ভূমিকম্পের সময় পার্শ্ববর্তী এক বহুতল ভবনের নির্মাণসামগ্রী ছিটকে একতলা ভবনের ছাদ ধসে বাবা-ছেলে নিহত হয়েছেন। দুপুরে ঢাকায় নেওয়ার পথে ছেলের ও বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবার মৃত্যু হয়। নিহত বাবা-ছেলে হলেন, মো. দেলোয়ার হোসেন (৩৭) ও মো. ওমর ফারুক (৯)। দেলোয়ার হোসেন গাবতলী এলাকার মৃত আবদুল আজিজের ছেলে। বাবা-ছেলের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেন নিহত দেলোয়ারের ভাই জাকির হোসেন।

পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নের মালিতা গ্রামের পশ্চিমপাড়া এলাকার মাটির ঘরের দেয়াল ধসে নিহত ব্যক্তির নাম কাজম আলী ভূঁইয়া (৭৫)। তিনি ওই এলাকার মৃত বশর উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে। দুর্ঘটনার সময় দুই নাতি-নাতনিকে নিয়ে ওই মাটির ঘরটিতে অবস্থান করছিলেন তিনি।

পলাশ উপজেলার অন্তত দুটি স্থানে ভূমিকম্পের প্রভাবে মাটিতে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে একটি পৌর এলাকার দড়িহাওলাপাড়ার বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের কাঁচা রাস্তায় ফাটল দেখা দিয়েছে।

পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের কাজীরচর গ্রামের নয়াপাড়ায় ভূমিকম্পের সময় স্ট্রোক করে মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম নাসির উদ্দীন (৬৫)। ওই সময় ঘরের ভেতরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি।

এ ছাড়া শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের আজকিতলা গ্রামে ভূমিকম্পের সময় গাছ থেকে পড়ে গিয়ে ফোরকান মিয়া (৩৫) নামের একজনের মৃত্যু হয়। সন্ধ্যায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

ভূমিকম্পে তাঁর মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করে শিবপুর থানার ওসি আফজাল হোসেন জানান, ভূমিকম্পের সময় ফোরকান মিয়া গাছের ওপরে ছিলেন। তীব্র ঝাঁকুনিতে তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে যান। পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা তাঁকে হাসপাতালে নেন। সন্ধ্যায় নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

ভূমিকম্পে মাটিতে ফাটল

পলাশ উপজেলার অন্তত দুটি স্থানে ভূমিকম্পের প্রভাবে মাটিতে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে একটি পৌর এলাকার দড়িহাওলাপাড়ার বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের কাঁচা রাস্তায় ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই স্কুল অ্যান্ড কলেজটির পরিচালক আরিফ পাঠান জানান, তাঁদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়ার রাস্তা হিসেবে সড়কটি ব্যবহৃত হয়। গতকাল সকালে ভূমিকম্পের সময় তীব্র ঝাঁকুনিতে কাঁচা সড়কটিতে ফাটল দেখা দেয়।

এ ছাড়া পৌর এলাকার লেবুপাড়ার ঘোড়াশাল ডেইরি ফার্ম নামের একটি গরুর খামারে দীর্ঘ ফাটল দেখা দিয়েছে। খামারের আঙিনার মাঝবরাবর এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত একাধিক ফাটল দেখা দেয়। ভূমিকম্পের সময় এসব ফাটল দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মরত শ্রমিকেরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ