সুমুদ: ইসরায়েলের দখলদারি, হত্যাকাণ্ড ও অবরোধের মধ্যে ফিলিস্তিনিদের এক সৃজনশীল জীবনধারা
Published: 10th, October 2025 GMT
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার কারণে ‘সুমুদ’ শব্দটি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আরবি সুমুদ শব্দের অর্থ দৃঢ়তা, অটল থাকা বা অধ্যবসায়। কখনো কখনো যাবতীয় প্রতিকূল পরিবেশ-পরিস্থিতি সত্ত্বেও ঘুরে দাঁড়ানোকে সুমুদ বলা হয়। কিন্তু প্রায় আট দশক ধরে ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক দখলদারি ও নানা মাত্রার আগ্রাসনের মুখে থাকা ফিলিস্তিনিদের জীবনে সুমুদ আক্ষরিক অর্থের সীমানা ছাড়িয়ে গভীর ও বহুমুখী অর্থ তৈরি করে চলছে।
ফিলিস্তিনিদের জীবনে সুমুদ শব্দ যুগে যুগে কীভাবে নিত্যনতুন আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ধারণার জন্ম দিয়েছে, সেটার ইতিহাস লম্বা। সংক্ষেপে বললে, দীর্ঘ পরিক্রমায় সুমুদ ফিলিস্তিনিদের জাতীয় পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। সুমুদকে ঘিরে গড়ে ওঠা নতুন ধরনের চিন্তা ও জ্ঞানের ধারা এরই মধ্যে ফিলিস্তিনের গণ্ডি ছাড়িয়ে গেছে।
সুমুদের ধারণা যেভাবে এল
ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের কাছে ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূখণ্ড থেকে উচ্ছেদ ও বিতাড়িত হওয়ার ইতিহাস কম করে হলেও ১০০ বছরের পুরোনো। তবে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে-পরে এক বছরের মধ্যে অন্তত ৫৩০টি ফিলিস্তিনি গ্রাম এবং শহর ধ্বংস ও দখল, প্রায় ১৩ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা এবং আরও সাড়ে ৭ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা হয়। এ ঘটনা তাঁদের কাছে নাকবা বা মহাবিপর্যয় হিসেবে পরিচিত।
সন্তান জন্ম দেওয়া ও ঘরবাড়ি গড়া থেকে শুরু করে সাক্ষ্য দেওয়া (আদালতে) এবং লড়াই করা পর্যন্ত সবই সুমুদ।এডওয়ার্ড ওয়াদি সাইদ, ফিলিস্তিন বংশোদ্ভূত মার্কিন চিন্তাবিদনাকবার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল যেসব শহর দখল করে, সেগুলোর মধ্যে ইয়াফা (জাফা), হাইফা, লুদ (লিড), রামলা, নেগেভ মরুভূমির প্রধান বসতি বিরুত-সাবা ও আক্কা অন্যতম। জাতিসংঘের ১৯৪৭ সালের ফিলিস্তিন বিভাজন পরিকল্পনায় এসব শহর প্রস্তাবিত ‘আরব রাষ্ট্রের’ অংশ ছিল।
নাকবার পর ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনিদের জাতীয় জীবনে দ্বিতীয় বড় ধাক্কা আসে। এ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা, জেরুজালেম, সিরিয়ার গোলান মালভূমি ও মিসরের সিনাই উপদ্বীপ দখল করে নেয় ইসরায়েল। আনুমানিক তিন লাখ ফিলিস্তিনি নতুন করে বাস্তুচ্যুত হন। ফিলিস্তিনিদের কাছে এ ঘটনা নাকসা বা মহাপ্রত্যাঘাত হিসেবে পরিচিত। জাতীয় জীবনের এ ক্রান্তিকালে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সুমুদের ধারণা শিকড়ের মতো বিস্তার করতে এবং ডালপালা হয়ে মেলতে শুরু করে।
ইসরায়েলের তল্লাশিচৌকিগুলো ফিলিস্তিনিদের দৈনন্দিন জীবনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অধিকৃত পশ্চিম তীরের বেথলেহেমে একজন বৃদ্ধ ফিলিস্তিনি পবিত্র আল-আকসা মসজিদে যেতে অনুমতি পাওয়ার অপেক্ষা করছেন। ২০২৫ সালের মার্চে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
মিসরে দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় ইসরায়েলকে কী শর্ত দিল হামাস
মিসরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো পরোক্ষ আলোচনা হয়েছে। হামাসের কর্মকর্তারা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা অনুযায়ী ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করবে এবং সেনা প্রত্যাহার করে নেবে—এমন নিশ্চয়তা চান তাঁরা।
মিসরের পর্যটন শহর শারম-আল-শেখে গতকাল মঙ্গলবার ওই আলোচনা হয়। এদিন ছিল গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার দ্বিতীয় বছর পূর্তি। হোয়াইট হাউসে এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, গাজা নিয়ে চুক্তি হওয়ার ‘বাস্তব সম্ভাবনা’ আছে।
মিসরে আজ বুধবারও আলোচনা হবে। ওই আলোচনায় যোগ দিতে কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও মিসরে যাচ্ছেন।
গতকাল হামাসসহ ফিলিস্তিনের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমন্বিত জোটের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। এতে সব উপায়ে প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে। জোরালোভাবে বলা হয়েছে, ‘ফিলিস্তিনি জনগণের অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই।’
কথাটি মূলত ট্রাম্পের পরিকল্পনায় হামাসের অস্ত্র সমর্পণের যে দাবির কথা বলা হয়েছে, সেটিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ফাওজি বারহুম বলেছেন, তাঁদের আলোচকেরা যুদ্ধের অবসান চাইছেন। তাঁরা চাইছেন, গাজা থেকে দখলদার সেনারা পুরোপুরি সরে যাক।
কিন্তু ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহারের বিষয়টি অস্পষ্ট। ধাপে ধাপে সেনাদের কবে প্রত্যাহার করা হবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি দেওয়া হয়নি। সেনাদের ধাপে ধাপে তখনই প্রত্যাহার করা হবে, যখন হামাস তাদের কাছে জিম্মি থাকা ৪৮ ইসরায়েলিকে মুক্তি দেবে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই জিম্মিদের মধ্যে ২০ জন এখনো বেঁচে আছেন।
আরও পড়ুনএকদিকে আলোচনা, অন্যদিকে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল ১২ ঘণ্টা আগেহামাসের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, গতকালের আলোচনায় ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির দিন-তারিখ নির্ধারণ এবং ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শেষ ইসরায়েলি বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি ইসরায়েলি সেনাদের চূড়ান্ত প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য হামাসের পক্ষ থেকে জোর দেওয়া হয়েছে।
মিসরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-কাহেরা নিউজের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, হামাসের শীর্ষ আলোচক খলিল আল-হায়া বলেছেন, সংগঠনটি দখলদার বাহিনীকে এক সেকেন্ডের জন্যও বিশ্বাস করে না।
আল-হায়া আরও বলেন, যুদ্ধ শেষ হবে এবং তা যে নতুন করে আর শুরু হবে না, তার নিশ্চয়তা চায় হামাস।
মিসরে আলোচনা চলার মধ্যেও গাজা উপত্যকায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি সরকারি সংবাদ সংস্থা ওয়াফার তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার গাজায় ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার ট্রাম্প ইসরায়েলকে গাজায় বোমা হামলা বন্ধের আহ্বান জানানোর পরও ইসরায়েল থামেনি। শুধু সেদিন থেকে গতকাল পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ১০৪ জন নিহত হয়েছেন।