নেত্রকোনায় সরকারি ৩১টি গাছ কাটায় বিএনপি নেতার নামে মামলা
Published: 25th, November 2025 GMT
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় একটি গ্রামীণ সড়কের পাশে থাকা ৩১টি মেহগনিগাছ কেটে ফেলায় রেজাউল হাসান ভূঁইয়া ওরফে সুমন (৩৮) নামে বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার উপজেলার মাসকা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. আবদুল জলিল বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
আসামি রেজাউল হাসান ভূঁইয়া মাসকা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও পিজাহাতি গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মাসকা ইউনিয়নের দিঘলী-আলমপুর কাঁচা রাস্তাটি পাকা করার জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। ৪ কিলোমিটার ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ওই রাস্তার সংস্কারকাজ পায় মোহাম্মদ ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু কাজটি বাস্তবায়ন করছেন বিএনপি নেতা রেজাউল। তিনি দিঘলী এলাকায় সড়কের পাশে থাকা সরকারি ৩১টি মেহগনিগাছ কর্তৃপক্ষের অনুমতি বা টেন্ডার ছাড়াই কেটে ফেলেন। গাছগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৮ লাখ টাকা হবে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রেজাউল হাসান ভূঁইয়ার নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত চারজনকে আসামি করে মামলা করা হয়। এ ছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।
স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, ১৮ নভেম্বর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাছগুলো কাটা হয়। এলাকাবাসী বাধা দিতে গেলে উপজেলা প্রশাসনের নাম করে ঠিকাদারের লোকজন গাছগুলো কেটে ফেলেন।
দিঘলী গ্রামের বাসিন্দা জিলু মিয়া বলেন, ‘সরকারিভাবে আমাদের জমির পাশে রাস্তায় প্রায় ২৫ বছর আগে গাছগুলো রোপণ করা হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল গাছ বিক্রি হলে আমরা কিছু অংশ পাব। তাই দীর্ঘদিন ধরে গাছগুলো দেখাশোনা করছিলাম। কিন্তু রাস্তা পাকা করার অজুহাতে ইউএনওর নাম বলে বিএনপি নেতা রেজাউল হাসান ভূঁইয়া গাছগুলো কেটে নিয়ে গেছেন।’
একই গ্রামের সনজু রহমান বলেন, ১৮ নভেম্বর সকাল থেকে গাছগুলো কাটার পর রাতে সরানোর সময় সন্দেহ হলে গ্রামবাসী শিমুলতলা বাজারের কাছ থেকে ৩৯টি ডোম (কাটা অংশ) আটক করে প্রশাসনকে জানায়।
এ বিষয়ে জানতে রেজাউল হাসান ভূঁইয়ার মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেছিলেন, রাস্তা প্রশস্ত ও পাকা করার জন্য নিজ খরচে গাছগুলো কেটেছিলেন। নির্মাণকাজের সময়সীমা কম থাকায় দ্রুত গাছ কাটতে হয়েছে। তবে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে গাছগুলো কাটার পর সব এক জায়গায় রাখা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, ‘ঠিকাদার ইচ্ছা করলেই এভাবে গাছ কাটতে পারেন না। এ ছাড়া ইউএনওর নাম ভাঙিয়ে গাছ কাটাও বেআইনি। সহকারী ভূমি কমিশনারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আজ মঙ্গলবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা আছে। এ ছাড়া এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে।’
কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জ উল হ স ন ভ উপজ ল সরক র ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
‘এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর’
২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা। এই ফুটবল কিংবদন্তির পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর মৃত্যুর পর প্রথম আলোতে ছাপা হওয়া উৎপল শুভ্রর লেখাটি আবার প্রকাশ করা হলো।
‘বন্ধু’র সঙ্গে স্বর্গে ফুটবল খেলতে চেয়েছেন পেলে। ডিয়েগো ম্যারাডোনা কি সেই অপেক্ষায় থাকবেন? নাকি মৃত্যুর ওপারের রহস্যময় ওই জগতে এরই মধ্যে বল নিয়ে কারিকুরি শুরু করে দিয়েছেন?
কল্পচোখে যখনই দেখতে চাইছি, ম্যারাডোনা এখন কী করছেন, যে ছবিটি চোখে ভেসে উঠছে, তাতে হয় তাঁর আকাশমুখী মাথায় বল নাচছে, নয়তো বাঁ পায়ে। আহ্, জাদুকরি সেই বাঁ পা!
খেলা ছেড়েছেন সেই কবে! ছাড়ার পরও কত কিছুই না করেছেন! কথায়, কাজে, সম্ভবত তার চেয়েও বেশি অকাজে নিত্যদিনই তিনি খবর। ম্যারাডোনা কোথাও গেছেন আর কোনো ঝামেলা বাধাননি, কই, এমন তো মনেই পড়ছে না। তারপরও সবকিছু ছাপিয়ে সবার মনে অনপনেয় যে ছবিটা আঁকা, তা ফুটবল পায়ে ম্যারাডোনার।আশ্চর্যই বলতে হবে, যাঁরা তাঁকে খেলতে দেখেননি, এমনকি তাঁদের মনেও।
ফুটবল ইতিহাসে বিখ্যাত বাঁ পা বললে প্রথমেই মনে পড়বে ফেরেঙ্ক পুসকাসকে। ‘ম্যাজিক্যাল ম্যাগিয়ার্স’ নামে অমর হয়ে থাকা পাঁচের দশকের সেই হাঙ্গেরি দলের প্রাণভোমরা। ‘দ্য গ্যালোপিং মেজর’-এর ৮৫ আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৮৪ গোল এখনো বিস্ময় জাগায়, কিন্তু স্পর্শের দূরত্বে গিয়েও তাঁর বিশ্বকাপ হাতে নেওয়া হয়নি।
জাদুকরি বাঁ পায়ের আধুনিকতম সংস্করণ লিওনেল মেসিকেও পুড়িয়েছে একই দীর্ঘশ্বাস (পরের বিশ্বকাপেই অবশ্য দীর্ঘশ্বাসকে মাটি দিয়ে বিশ্বকাপ হাতে তুলেছেন মেসি)। ডিয়েগো ম্যারাডোনার বাঁ পা এখানেই একমেবাদ্বিতীয়ম হয়ে যায়। কোনো ফুটবলারকে যাচাইয়ের চূড়ান্ত যে কষ্টিপাথর বিশ্বকাপ, সেখানেই ম্যারাডোনা দেখা দিয়েছেন পরিপূর্ণ মহিমায়। এক অর্থে যেখানে তিনি পেলের চেয়েও এগিয়ে। সংখ্যায় অবশ্যই নয়, পেলের তিনটি বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ড কেউ ছুঁতে পারেননি, কোনো দিন কেউ পারবেন না বলে ঘোষণা দিয়ে দেওয়ায়ও কোনো ঝুঁকি দেখি না। কিন্তু প্রায় একক কৃতিত্বে ট্রফি জিতে একটা বিশ্বকাপকে নিজের নামাঙ্কিত করে রাখার কীর্তিতে পেলেও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী নন। এখানে ম্যারাডোনার সঙ্গে তুলনা হতে পারে শুধু ১৯৬২ বিশ্বকাপের গারিঞ্চার।
ম্যারাডোনা এখনো ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে। ছবিটি তাঁর মৃত্যুর পর নেপলসে তোলা